সম্পাদকের কলমে
লেখা পাঠানোর জন্য
Total Pageviews
পোস্ট কার্ড
বিজন রায়
অফিসের কিছু কাগজ-পত্র বাড়িতে রাখিতাম।বিপদে পড়িলে কখন কি কাজে লাগে।যে এটাচী লইয়া অফিসে যাইতাম, --- অবসরের পর তাহাতেই সব সঞ্চিত ছিল।এখন আবর্জনা তূল্য।
গৃহীণী কহিল-- বিদেয় কর।পুরানো দস্তাবেজ মমতা ভরে দেখিতেছিলাম।এতকাল কি করিয়া চাকুরি করিলাম,ভাবিয়া আমোদ হইল।হেড অফিসের যে সমস্ত পত্রাঘাত রাতের ঘুম কারিয়া নিত , তাহারা এখন মৃয়মান।জরাজীর্ণ ।সন্তর্পণে দেখিতে লাগিলাম।ইতিহাস।ফেলিতে মন চাহে না।মনে হয় এই সেদিনের কথা।সমস্ত কিছু মনে আছে ।স্মৃতি সততই সুখের।বোধ হয় অতীতে ডুবিয়া গিয়াছিলাম। --- আজ কি নাওয়া খাওয়া হবে না?
ঠিকই তো! অনেক বেলা হইয়াছে।কি রাখিব কি ফেলিব ঠিক করিতে পারিতেছি না।কাগজের ফাঁকে একটি পোস্ট কার্ড নজরে আসিল ।লেখা মলিন হইয়াছে।আমার চক্ষু সজল হইল।যত্নসহ দেরাজে রাখিয়া হাঁক পাড়িলাম --- বাক্স সুদ্ধ ফেলে দাও ।
তারিখ, চার /চার /বাহাত্তর।মা লিখিয়াছেন।
কল্যাণিয়াসু । কি সুন্দর হস্তাক্ষর ।তোমার কোন পৌঁছ সংবাদ পাই নি।আশা করি কুশলে আছো ।
শুনেছি কুচবিহারে খুব ঠান্ডা ।একটি ফুল হাতা পুলওভার হোল্ডঅলে দিয়েছি।গায়ে দিও।রাতে মাথায় টুপি দিতে ভুলো না।আমি কোনটাই শুনি নাই ।কলিকাতার ছেলে।এ সব পোষায় না।যদিও সংক্ষিপ্ত চাদরে হি হি কাঁপিতাম।গ্রাহ্য করিতাম না।অফিসে স্যুট পরা দস্তুর ।আমার হাত কাটা সোয়েটার দৃষ্টি আকর্ষণ করিত।শুভানুধ্যায়ীরা কহিত,--- বিডিওসাহেব , গায়ে অন্তত একটা কোট দিন ।আমার সৌভাগ্য বেশি দিন উত্তর বঙ্গে কাটাইতে হয় নাই ।
এই রূপে দুই চারি বৎসর করিয়া বহু স্থানে কাটাইলাম।বহু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হইল।পূর্বে সাঁতার জানিতাম না।হাবুডুবু খাইতাম।এখন আমি দক্ষ সাঁতারু।কর্মস্থলে সম্মান মিলিয়াছে।পরিবার পরিজন ভুলিয়া অফিসকেই যখন ধ্যান জ্ঞান করিয়াছি , খবর আসিল --- তীরে তরী ভিড়িয়াছে।
অবসর লইয়াছি , তাও অনেক দিন হইল।এখন বয়স সত্তর অতিক্রান্ত ।সল্টলেকের এক আবাসন
এ থিতু হইয়াছি।শীতের সকাল।ব্যালকনিতে বসিয়া কাগজ পড়িতেছি।পিঠে এক ফালি রোদ।মাথায় বাঁদুরে টুপি।গায়ে ফুল হাতা পুলওভার ।সহসা কানে আসিল , --- এতদিনে খোকার বুদ্ধি হয়েছে।
পনেরো বৎসরের অধিককাল মা গত হইয়াছেন।
0 comments:
Post a Comment