সম্পাদকের কলমে
নারায়ণ দেবনাথ-
সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম ।
ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম ।
নমস্কার সহ
অঙ্কুর রায়
সংখ্যার সম্পাদক
অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী
প্রধান সম্পাদক
লেখা পাঠানোর জন্য
আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com
Total Pageviews
By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.
নক্কুবাবুর ভূতুড়ে সংগ্রহশালা
মৃণাল পাল
-নতুন নাকি হে এ পাড়াতে?
-আজ্ঞে মাস তিনেক মাত্র।
-ও তাই জন্য চেনা ঠেকছে না।তা থাকা হয় কোনদিকে?
-রায়বাবু মানে অঘোর চন্দ্র রায়ের বাড়িতে ভাড়া এসেছি।এই মাস তিনেক।
-বুঝলুম।তা নক্কুকে চেনো নাকি? আমার বন্ধু লোক।অঘোরের বাড়ির পিছনের বড় তিনতলা বাড়িটা?ওটাই তো ওর বাড়ি!
-আজ্ঞে নামটা কেমন শোনা শোনা।কিন্তু দেখা সাক্ষাৎ হয়নি।আলাপ তো নয়ই।মানে পাড়ার লোকেরাই যেন..........মানে সবাই কিসব বলে ওনার সম্পর্কে ......মানে.....ওই আর কি।
-কি বলে হে!! তুমি তো অবাক করলে দেখছি! নক্কু তো খুব গুণী লোক!দেশ বিদেশের লোক তাকে চেনে! তার নামে আবার কে কি বলল!
-না মানে ওনার কি সব ভুতুড়ে ব্যাপার স্যাপার আছে।কিসব জিনিস জড়ো করে মিউজিয়াম বানিয়েছেন।সেটা আবার নাকি ভূতেরা পাহারা দেয়!......আমার আবার ভূতে বেজায় ভয়।মানে বুঝলেন কিনা....ওই আর কি! তাই একটু ....হে হে ....মানে দূরত্ব......।
-ভূত ! হা হা! তা সত্যিই ভুতুড়ে কান্ড বুঝলে! তাহলে শোনো সেই গল্প বলি তোমায়। নক্কু হলো গিয়ে নকুল চন্দ্র চোঙদার।আমার বাল্যবন্ধু।ছোট থেকে ওর সখ মানে বাংলায় যাকে বলে হবি ছিল বিভিন্ন ছোট খাটো একটু অদ্ভুত জিনিসপত্র জমানো।যেমন ধর বাবুইপাখির বাসা, চিলের পালক,পুরোনো রেল লাইনের বাতি,কাঠেরপুতুল এইসব।যত দিন গেল ততই এই জিনিসপত্র জমানোর নেশা তাকে চেপে ধরতে লাগলো।চাকরি বাকরি করলো,বিয়ে থা করলো।কিন্তু নেশা তো কাটলোই না। দিন দিন বাড়তে লাগলো। এদিকে জমানো জিনিসের ঠেলায় বাড়ি ভর্তি।পৈতৃক তিনতলা বাড়ির সব ঘর বিভিন্ন জিনিসে ঠাসা।
-ও বাবা এত রীতিমতো সংগ্রহশালা!
-তাহলে আর বলছি কি। নক্কু সারাজীবন এইসব জমিয়ে জমিয়ে কাটিয়ে দিল। একমাত্র ছেলে চাকরি নিয়ে দিল্লি চলে গেল।গিন্নি দিল্লি আর ভাটপাড়া যাতায়াত।সব কিছুই ঠিক ছিল কিন্তু গোল বাধলো বছর পাঁচেক আগে।
-গোল।ভূতে ধরলো নাকি!
-আঃ।থামো তো হে।নক্কুকে দেখেছো? নব্বই বছরেও পেটানো চেহারা।দুশো ডন দেয়।ভূতে ধরবে নক্কুকে!
-তাহলে?
-ভূত নয় হে সে আরো বাজে জিনিস।তাদের বলে প্রোমোটার।লোকের জায়গা ঘর ভেঙে তছনছ করে আকাশছোঁয়া ফ্লাট বানায়।পুলিশ-মন্ত্রী সব তাদের হাতে।একবার তাদের পাল্লায় পড়েছ কি মরেছ।
-শেষে নক্কু বাবুকে প্রোমোটার ধরলো নাকি?
-তাহলে আর বলছি কি! পাঁচ কাঠা জমির উপর তিনতলা বাড়ি।সেটাকে ভেঙে শপিং মল বানাবে।এদিকে নক্কু প্রাণ থাকতে বাড়ি বিক্রি করবে না।আর তারাও ছাড়বে না।টানাপোড়েন জমে উঠলো।আর বাড়ি বিক্রিই বা করে কি করে।তার সাধের সংগ্রহশালার কি হবে?এত এত অদ্ভুত জিনিস থাকবে কোথায়?
-তারপর?
-তারপর একদিন প্রমোটার বলল" আজ এসপার কি ওসপার"।জনা দশেক গুন্ডা নিয়ে হানা দিলো নক্কুর বাড়িতে।ইয়া ইয়া চেহারা তাদের। দুশমনের মতো দেখতে।হাতে ছুরি, কোমরে পিস্তল।দরজা ভেঙ্গে তারা ঢুকে পড়ল নক্কুর বৈঠকখানায়।এদিকে হয়েছে এক কান্ড।সেদিন সকালেই নক্কু রেলের মাঠ থেকে কুড়িয়ে পেয়েছে একটা সবুজ রঙের অদ্ভুতদর্শন শিশি। যার মুখটা ছিল বন্ধ।ভিতরে কি আছে বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই।আর অনেক চেষ্টা করেও মুখের ছিপি খোলা যায়নি। এদিকে হয়েছে এক কান্ড।গুন্ডাগুলো দরজা ঠেলে ঢোকার সময় নক্কুকে মেরেছে এক ধাক্কা আর সেই ধাক্কাতেই সবুজ শিশি মাটিতে পড়ে ফেটে চৌচির।তার মধ্যেই ছিল সিরিঙ্গে ভূতটা।সঙ্গে সঙ্গে সে এসেছে বেরিয়ে।
-ভূত!এই মরেছে।ওরে বাবা।এবার কি হবে???
-আরে খামোখা ভয় পেও না।শোনোই না।মুক্তির আনন্দে সেই ভূত শুরু করেছে প্রলয় নাচন।তার ভুতুড়ে নৃত্য দেখে গুন্ডারা সব অজ্ঞান।পালিয়ে যেতে পথ পায়না।সেই থেকে নক্কুর বাড়ির দিকেও কেউ তাকায় না।
-ও বাবা সেই ভূত কি ওখানেই থাকে?রাম রাম।রক্ষে করো প্রভু।
-কাউকে বলো না যেন।সেই ভূত তো সেদিনই পগার পার।ভূতকে আর কেই বা ধরে রেখেছে।কিন্তু রটনাটা আছে।ভুতের গল্প লোকমুখে ছড়াতে দেরি হয়নি।তাতে নক্কুর সুবিধা।ভূতের ভয়ে কেউ ওদিকে বড়ো একটা যায়না।সেই প্রমোটারও পগার পার।গুন্ডারাও শুনেছি রাস্তায় নক্কুকে দেখলে আভূমি সেলাম বাজায়।
বুঝলে হে নক্কুর এখন সময় ভালো।শুনছি কেন্দ্রীয় সরকার থেকে ওর সংগ্রহশালাটা অধিগ্রহণ করা হবে।
Subscribe to:
Comments (Atom)

0 comments:
Post a Comment