সম্পাদকের কলমে

নারায়ণ দেবনাথ- সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম । ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম । নমস্কার সহ অঙ্কুর রায় সংখ্যার সম্পাদক অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী প্রধান সম্পাদক

লেখা পাঠানোর জন্য

আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com

Total Pageviews

By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.

 সর্পভ্রম

                      দীপক কুমার মাইতি

            

 

      বিকালের সুর্যালোকে জঙ্গল ও পাহাড়ে ঘেরা ‘টিপকাই’ স্টেশনের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে ঋত্বিকা চারিদিক দেখতে লাগল। কলকাতা থেকে তার প্রথম বাইরে আসা। এত সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যে হয় তার অজানা ছিল। দ্বিদল বলে – তুমি এখানে বসে নিশ্চিন্তে বিশ্রাম কর। এখান থেকে ধুবড়ি প্রায় তিন কিলোমিটার। একটা গাড়ি ব্যবস্থা করেই ফিরব।

      ঋত্বিকা অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। ভাবে নির্জন স্টেশনে একা থাকবে?  বুঝতে পেরে দ্বিদল হেসে ওঠে  – ভয় নেই। আমি একজনকে ফোন করেছি। সে গাড়ি নিয়ে আসছে। বেশি সময় লাগবে না। এখানকার ওয়েটিং হল খুব নোংরা। তোমার অসুবিধা হবে। আমি যাই?

      ঋত্বিকা সম্মতি জানায়। দ্বিদল চলে যায়। ওর যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে ঋত্বিকা গত সাত দিনে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে ভাবতে থাকে। হাসে ভাবে একেই বোধ হয় ‘উঠ ছুঁড়ি তোর বিয়ে’ বলে। সেদিন শনিবার। মায়ের সাথে শপিং মলে গিয়েছিল। দুজনে কিছু কেনাকাটা করছিল। এক মহিলা এসে তাদের সামনে দাঁড়ায় – ঋতু না! আমায় চিনতে পারিস?

      ঋতু এক পলক দেখেন মহিলাকে – জয়ন্তী না! কতদিন পর দেখলাম! শুনেছিলাম তুই দুবাইতে আছিস? কবে ফিরলি? তোর বর আসেনি? ছেলেমেয়ে কজন?

      হেসে ওঠে জয়ন্তী – দাঁড়া দাঁড়া তুই তো একদম ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে দাঁড় করে দিলি। চল কোথাও বসে দুজনে চা খাব। তখন সব কথা শুনব ও শোনাব।

      ফুডকোর্টে গিয়ে বসে ওরা। ওদের কথায় ঋত্বিকা বুঝতে পারে ওরা স্কুল থেকে কলেজ পর্যন্ত সহপাঠী ছিল। বিয়ের পর ছাড়াছাড়ি। দীর্ঘ কুড়ি বছর পর দেখা। দুজনে তখন অতীতে হারিয়ে গেছে। ঋতু জানতে চায় – তোর দিদি দেবিকাদি এখন কোথায়? শুনেছিলাম জামাইবাবু কোথায় যেন বিডিও ছিলেন। ওরা ভালো আছেন?

      প্রশ্ন শুনে জয়ন্তীর মুখ কালো হয়ে যায় – তাদের একমাত্র ছেলে দ্বিদল তখন এমবিএ করছে। দুজনে পুনা গিয়েছিল ছেলের সাথে দেখা করতে। ফেরার পথে ট্রেন অ্যাক্সিডেন্টে দুজনে না ফেরার দেশে চলে গেছে।

      কিছুক্ষণ দুজনে চুপচাপ। জয়ন্তী ঋতুর হাতে হাত রাখে – ছেলেটা একদম একা। এতদিন তবু হোস্টেলে ছিল। পাশ করে ব্যঙ্কে চাকরি করছে। জামাইবাবু বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান ছিলেন। ওর কোন আত্মীয়ের সন্ধান পাইনি। এখন আমার হয়েছে যত জ্বালা।

      কেন তোর আবার জ্বালা কিসের? দ্বিদল কোথায় থাকে? বিয়ে দিয়ে দে।

      দীর্ঘশ্বাস ফেলে জয়ন্তী – দশদিনের জন্য এসেছি। দ্বিদলও এসেছে। দেখি কী করা যায়।  দুই বন্ধু গল্পতে এত মশগুল ছিল যে,ঋত্বিকার উপস্থিতি কারো মনে ছিল না। জয়ন্তী ওর দিকে তাকিয়ে বলে --  তো সঙ্গে এই মেয়েটি কে?

      ঋতুর সম্বিত ফেরে – আমার মেয়ে ঋত্বিকা।  

 ঋত্বিকার দিকে তাকিয়ে বলে – তোর মাসি হয়। প্রণাম কর।

 ঋত্বিকা প্রণাম করে। জয়ন্তী জড়িয়ে ধরে – কত  বড় হয়েছে? কী করে?

      এডুকেশন নিয়ে মাস্টারস করেছে। ও চাকরির পরীক্ষা দিচ্ছে। আর আমরা ছেলে খুঁজছি।

      জয়ন্তী ঋত্বিকার দিকে তাকায় – কী রে  একটা প্রেম করতে পারলি না?

ঋতু হেসে ওঠে – আর বলিস না! কতবার জানতে চেয়েছি। বলে, প্রেম করার সময় তোমাদের বেড়া ডিঙাতে পারিনি। এখন তোমাদের দায়।

      দুজনে হাসতে থাকে। ঘড়ি দেখে জয়ন্তী – না রে উঠতে হবে? একটা কাজ আছে। তা তোর ঠিকানা ও ফোন নম্বর দে। যাওয়ার আগে ঠিক তোর বাড়ি হাজির হব।

      দুজন ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর আদানপ্রদান করে। ওঠার সময় তিনজনের সেলফি তোলে জয়ন্তী। জয়ন্তী চলে যায়।

                        ২

 

রবিবার বসার ঘরে বসে ঋত্বিকা ও তার বাবা উত্তিয়। দুজনের হাতে চা। ডোর বেল বাজে। উত্তিয় উঠে যায়। দরজা খোলে, দেখে এক মহিলা ও তার সাথে একজন যুবক দাঁড়িয়ে। মহিলা হাত তুলে নমস্কার করে – আমি জয়ন্তী। এ আমার বোনপো দ্বিদল। আমি ঋতুর বাল্য বান্ধ্যবী। ঋতু আছে?

      কথাগুলো ঋত্বিকা শুনতে পায়। তাড়াতাড়ি উঠে আসে দরজায়। উত্তিয়কে ওদের পরিচয় দিয়ে সসম্মানে ভিতরে নিয়ে আসে। রান্নাঘর থেকে ঋতু চলে আসে। হৈহৈ করে ওঠে দুজনে। সবাই বসে আড্ডায় জমে যায়। কথার মাঝে জয়ন্তী বলে – আমি কিন্তু একটা বিশেষ কাজে এসেছি। উত্তিয়, বলতে পারি!

      উত্তিয় বলে – নিশ্চয়ই বলতে পার। বলেই ফেল।

      জয়ন্তী বলে – তোমার মেয়েকে আমার পছন্দ। তোমাদের অনুমতি পেলে দ্বিদলের বউ করে ঘরে তুলতে পারি।

      সহসা এরকম একটা প্রস্তাবে সবাই হতবাক হয়ে যায়। বিস্মিত উত্তিয় ও ঋতু। ঋতু জয়ন্তীকে জড়িয়ে ধরে। জয়ন্তী ঋত্বিকার দিকে তাকায় – এই মেয়ে তোমার মত আছে তো? দ্বিদল তোমার ছবি দেখে পছন্দ করেছে। তুমি ওকে দেখে নও। তোমার মতটা কী শুনি?

      ঋত্বিকা একবার দ্বিদলের দিকে তাকায়। পরক্ষণে জয়ন্তীর দিকে তাকায় – আমি কী জানি! বাপি-মামনি বলুক।

      লজ্জায় ঋত্বিকা সেখান থেকে চলে যায়। তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে জয়ন্তী হেসে ওঠে – উত্তিয়, হাতে সময় নেই। পরশু বিয়ে দিতে চাই। আমাদের ছুটি শেষ। বিয়ের পরেরদিন কালরাত্রি কাটিয়ে ওরা দুজনে চলে যাবে। আমিও দুবাই ফিরে যাব।

      কথাটা শুনে উত্তিয় ও ঋতু পরস্পরের দিকে তাকায়। ঋতু বলে – এত তাড়াতাড়ি? মেয়ের বিয়ে বলে কথা। কেনাকাটা, নিমন্ত্রণ করা আছে। কত কাজ!

      জয়ন্তী বলে – আমাদের কোন ডিমাণ্ড নেই। জামাই তো পালিয়ে যাবে না। মার্চ এর ইয়ার এন্ডিং শেষে ফিরবে। তখন তো সময় পাবি। তখন একটা বড় অনুষ্ঠান করিস।

      উত্তিয় বলে – তাড়াহুড়ো কিসের। এখন তো ফাল্গুন মাস। সামনের বৈশাখে বিয়ে হলে সময় পাওয়া যেত।

      জয়ন্তী হেসে ওঠে – এবার বৈশাখ মাস মল মাস। জৈষ্ঠ মাস দ্বিদলের জন্ম মাস। আষাঢ়ে আমি স্টেটসে যাব। সেমিনার আছে। দেরি হয়ে যাবে।

      ঋতু ও উত্তিয় চিন্তায় পড়ে। দ্বিদলের মোটা অংকের বেতনের চকরি। ওরা ভাবে পাত্র হাতছাড়া করা ঠিক হবে না। তাই জয়ন্তীর কথা মত বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের তিনদিনের মাথায় ওরা এখানে চলে আসে। এমন কি ফুলশয্যাও হয়নি। জয়ন্তীর কথায়, ‘ধুবড়ি’-তে ফুলশয্যা ও মধুচন্দ্রিমা করে নিস। বিয়ের খবর পেয়ে ঋত্বিকার প্রিয় বান্ধবী মুনমুন বিয়ের দিন দুপুরে আসে – যাই বল ভাই, কাকু-কাকিমার একটু ভালো করে খোঁজ নেওয়া উচিত ছিল। ওই মহিলা মানে তোর মাসি শাশূড়ি দুবাইতে থাকে। অধ্যাপিকা না মেয়ে পাচারকারি কে বলতে পারে। আজকাল যা ঘটছে।

      ঋত্বিকা বলে— নারে মা-এর খুব ভালো বন্ধু। অনেকদিনের পরিচয়?

      তো! কুড়ি বছর কোন যোগাযোগ ছিল না। মানুষ দুদিনে আমুল পালটে যায়। এতো কুড়ি বছর! ছেলে যে আদৌ ব্যঙ্কে চাকরি করে তা কী খোঁজ নিয়েছিস?

অবাক হয় ঋত্বিকা – দুদিনে কী করে খোঁজ পাওয়া যাবে?

রেগে ওঠে মুনমুন – কেন? ওই ব্যাঙ্কের এখানকার অফিসে গেলে সব জানা যেত। এটা নেটের যুগ বুঝলি।

হতাশ হয় ঋত্বিকা – এখন তাহলে কী করা উচিত?

কয়েক ঘন্টা পর বিয়ে। এখন আর কী করব!যাক চোখ কান খোলা রাখিস। বুঝলি।

ঋত্বিকা তার মাকে মুনমুনের সন্দেহের কথা জানায়। শুনে ঋতু বলে – অত যদি বুদ্ধি তার, তাহলে প্রেমে চোট খেল কেন? জয়ন্তী ইউনিভারসিটির টপার ছিল। ওর বর IIT থেকে পাস করা। ওদের একমাত্র ছেলে ডাক্তার।কাল তো ভিডিও কলে আমার সাথে কথা বলেছে। ও যাবে মেয়ে পাচার করতে! তোকে এসব চিন্তা করতে হবে না।

      শুধু তাই নয় বিয়ের রাতে দ্বিদলকে মুনমুন নানা প্রশ্নে নাজেহাল করেছিল। যাওয়ার সময় ঋত্বিকাকে কানে কানে বলেছিল – মাল কিন্তু ঘোড়েল। সাবধানে থাকিস। দরকারে ফোন করিস। আমার পুলিশে জানাশোনা আছে।

      একা একা এই সব ভাবতে ভাবতে ঋত্বিকা খেয়াল করে প্রায় এক ঘন্টা কেটে গেছে। কিন্তু দ্বিদলের কোন পাত্তা নেই। সন্ধ্যা হয় হয়। নানা কুচিন্তা ঘুরপাক খেতে থাকে। তার নজরে আসে দুজন বেশ গাট্টাগোট্টা লোক তার দিকে তাকিয়ে কথা বলছে। ওদের কথার ধরন দেখে মনে হল ওকে নিয়েই কথা বলছে। দেখতে অ্যান্টিসোশাল মনে হচ্ছে। তার মনে পড়ে ওদের একজনের সাথে দ্বিদল যাওয়ার সময় কথাও বলছিল। চারিদিক তাকিয়ে দেখে ঋত্বিকা। স্টেশ্ন বেশ নির্জন। তবে কী মুনমুন ঠিক অনুমান করেছিল? ভাবে পালাতে হবে।  কি ভাবে পালাবে তাই ভাবতে থাকে। স্টেশনমাষ্টারের সাহায্য নিতেই পারে। কিন্তু লোক দুটো তো ওখানেই দাঁড়িয়ে। লক্ষ করে স্টেশন থেকে একটা রাস্তা জঙ্গলের দিকে গেছে। ঋত্বিকা ভাবে, স্কুলে প্রতিবছর ১৫০০ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতায় প্রথম হত। প্রয়োজনে ওই রাস্তা ধরে দৌড়াবে। কোনো না কোন ঘর পেয়ে যাবে। তাদের সাহায্য চাইতেই পারে।

      ম্যাডাম চা। দাদাবাবু বলেছিলেন আসতে দেরি হলে আপনাকে চা দিতে।

      ঋত্বিকা তাকিয়ে দেখে সেই লোক দুটোর একজন। মুখের হাসি কেমন রহস্যময়। মুনমুন বলেছিল, পাচারকারিরা নাকি চায়ের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে বেহুশ করে। রাস্তায় কেউ চা দিলে খাবি না। তবে কী তাকেও বেহুঁশ করার মতলব! ঋত্বিকা তাড়াতাড়ি বলে – না না, আমি চা খাই না।

      মুখ ভার করে লোকটা চলে যায়। ভাবে, মোবাইলে বাড়িতে জানাবে। ব্যাগ খুলে মোবাইল বের করতে গিয়ে মনে পড়ে, এখানে নামার কিছু আগে দ্বিদল তার মোবাইলটা চেয়ে নেয়। তার মোবাইলের নাকি চার্জ নেই। কাউকে ফোনও করেছিল। কিন্তু তারপর তো ফেরত দেয়নি! মুনমুন বারবার ফোন হাতছাড়া করতে নিষেধ করেছিল। হতাশ হয় সে নিজের বোকামির জন্য। এখন কী করবে? লক্ষ করে স্টেশনমাষ্টারের অফিসের সামনে ওরা নেই। ভাবে এই সুযোগে স্টেশনমাষ্টারকে গিয়ে সব জানাবে। তখুনি দেখে লোক দুটির সাথে কথা বলতে আরো কয়েকজন আসে। সকলে একে একে ঘাড় ঘুরিয়ে ঋত্বিকাকে দেখে। ঋত্বিকা ভাবে ওরা দলে ভারি হচ্ছে। বেহুঁশ করতে পারেনি, তাই দলবল নিয়ে জোর করে তুলে নিয়ে যাবে। সে ভাবে, না! রাস্তা ধরেই দৌড়ানো ছাড়া কোন উপায় নেই। উঠে দাঁড়ায়। কোমরে আঁচল বাঁধে। কয়েক পা এগোয়। পিছন থেকে মহিলা কন্ঠস্বর – দিদিমণি, বাথরুমে যাবেন? ওয়েটিং হলে চলুন। আমি নিয়ে যাচ্ছি।

      পিছন ফিরে দেখে, দুজন মহিলা একটু দূরে বসে আছে। তাদেরই একজনের প্রশ্ন। কোন কথা না বলে হতাশ হয়ে ঋত্বিকা বসে পড়ে। বুঝতে পারে সে নজরবন্দী। বাঁচার আর কোন রাস্তা নেই। ভয়ে তার শরীর কাঁপতে থাকে। ঘামতে শুরু করে। ভবিষ্যত ভেবে আতঙ্কে মুখে দুহাত ঢেকে কাঁদতে থাকে। এমন সময় মাথায় হাতের স্পর্শে তাকিয়ে দেখে দ্বিদল তার সামনে দাঁড়িয়ে – কী হল! কাঁদছো কেন? বাবা-মায়ের কথা ভাবছো?

      রেগে কিছু বলতে গিয়ে দেখে, কিছু লোক ও মহিলা তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে। দ্বিদল তার হাতে কয়েকটি প্যাকেট দেয় – এগুলো কিনতে গিয়ে দেরি হয়ে গেল। এই মহিলাদের সাথে ওয়েটিং হলে গিয়ে চেঞ্জ করে নাও।

      বিস্মিতকন্ঠ ঋত্বিকার – চেঞ্জ করব কেন? এটা তো ভালো। বাসায় গিয়ে যা করার করব। তোমার গাড়ি কই?

      সেই লোকটা বলে – ম্যাডাম, আপনাকে তো আজ একটু সাজতেই হবে।

কেন আমি সাজব কেন!

লোকটি হাত জোড় করে বলে – আমরা বড়ই গরীব। দুবেলা দু মুঠো অন্ন যোগাতে হিমসিম খেতাম। দাদাবাবু আমাদের ভগবান। এখানে এসে আমাদের সরকারি ঋণের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আমাদের পরামর্শও দিয়েছেন। আজ আমরা ব্যবসা করে বা চাষ করে সুখের মুখ দেখতে পেয়েছি। তাই আমাদের…

      একজন মহিলা বলে – আপনি ম্যনেজারবাবুর নতুন বউ। আপনি আমাদের কাছে মালক্ষ্মী। প্রথমবার গ্রামে এলেন। আপনাকে সাজিয়ে না নিয়ে গেলে গ্রামের মান থাকবে?

      কোন কিছু বুঝতে না পেরে ঋত্বিকা দ্বিদলের দিকে তাকায়। দ্বিদল হাসতে হাসতে বলে – আর বলো না এদের পাগলামি। তোমাকে ও আমাকে বিয়ের সাজে সাজাতে চায়। খোলা গাড়িতে করে ব্যান্ড বাজিয়ে গ্রামে নিয়ে যাবে। আর সব কিছুর পান্ডা এই নিতাই। আমি না বলতে পারলাম না।

      সেই লোকটা অর্থাৎ  নিতাই বিনীতভাবে হাতজোড় করে  – আজ আমাদের বড়ই আনন্দের দিন। ধুমধাম করে আমাদের মালক্ষ্মীকে বরণ করতে চাই, দয়া করে নিরাশ করবেন না। গাড়ি সাজিয়ে রেডি করা হয়েছে। আপনি তৈরি হলেই রওনা দেব।

      ঋত্বিকার মুখে যুগপ বিস্ময় ও লজ্জা ফুটে ওঠে।  

0 comments: