সম্পাদকের কলমে

নারায়ণ দেবনাথ- সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম । ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম । নমস্কার সহ অঙ্কুর রায় সংখ্যার সম্পাদক অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী প্রধান সম্পাদক

লেখা পাঠানোর জন্য

আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com

Total Pageviews

By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.

 বড়দিন

                     কৃপাণ মৈত্র


শ্মশান ধারের মাঠে মেলা লোক জমেছে। হাসি ঠাট্টা মজামস্তির ফোয়ারা উড়ছে। বুড়ি আজ গ্ৰামের ভিক্ষা ছেড়ে হাজির হয়েছে রঙ্গালয়ে ।বুড়ি কানে কম শোনে।চোখেও ভালো দেখে না  ।বুুড়ি বুঝতে পারছে না  কেন এত মানুষ শ্মশানেধারে  জমায়েত হয়েছে।  কেনই বা শ্মশানের নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করে  গান-বাজনা হাসিঠাট্টার আনন্দে সকলে মেতে উঠেছে  ।বুুড়ির   আবছা চোখে কত রঙিন মানুষ।  কত কত আয়োজন দিনটিকে  উপভোগ করার  জন্য।শ্মশানের আত্মারা  শান্তি ভঙ্গের  বিচার চাইবে না তো জীবমৃতদের কাছে।
     একটা গাছ ঠাওরে  তার তলায় বসেছে  বুড়ি।ফিনফিনে ঠান্ডা বাতাস বইছে।  শীতে গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।  পরনের দীন পোশাকের সাধ‍্য কি উত্তরের বাতাসের অহংকে ঠেকায়। তুবুও বুড়ি
 নড়ে না। কীভাবে যেন বুড়ির বিশ্বাস জন্মেছে উদ্বৃত্তের আস্তাকুড় খুঁজে  ওরা নিশ্চয়ই  নাম কামাবার সুযোগ ছাড়বে না। বুড়ি মনটাকে স্থির করলো।  ভাবলো এত মানুষ, এত আগুন যখন  তখন ঠান্ডা যবর লাগার কথা নয়। বুড়ি যেখানে যায় সেখানে তো উষ্ণতার আদর জোটে না। বরং মানুষের মনুষ্যত্বকে অবমাননার সদর দরজা  দেখিয়ে দিয়ে তার পরমাত্মাকে  অবমাননা করে।
হট্টগোল ক্রমশ বাড়ছে। বুড়ির অশক্ত শ্রাবনকেও পীড়া দিচ্ছে।বুড়ি স্মৃতি হলটেও তো তার মেয়ে বেলার এমন বাঁধনছাড়া মজা মস্তির খবর পায় না।
   একজন এসে বলল ও ঠাকমা চলে যেও না যেন। কিছু না কিছু তো অবশ্যই বেশি হবে।
     বুড়ি বলে , হ্যাঁ বাবা , কুকুরগুলোর  সঙ্গে  আমাকেও ভাগ করে দিস ।তা বাবা  আজ কিসের উৎসব?
     ছেলেটি বলে, বড়দিন।
     বুড়ি অবাক হয়ে বলে।  বড়দিন! কই মালুম হচ্ছে না তো । এই তো সুজ্জি  উঠলো আর একটু বাদে যে  চোখের কোল জুড়ে আঁধার নেমে আসবে ।
   ছেলেটি বলে,  না না এ সে বড়দিন নয়।যিশুখ্রিষ্টৈর জন্মদিন।
   বুড়ি চালশে পড়া চোখে ফ্যালফ্যাল করে ছেলেটির দিকে তাকালে ছেলেটি বলে, সাহেবের জন্মদিন।
   বুড়ির দৃষ্টিতে কৌতূহল।  বুড়ি বলে ওরা না আমাদের গোলাম করে রেখেছিল। তবে বাবা সে ভালো ছিল ।পরের লাথি সওয়া যায় , নিজেরটা যে বড্ড বাজে ।
   ছেলেটি বলে, না না এ সে সাহেব নয়।
  বুড়ি বলে, তা বাবা ,রাম ঠাকুরের জন্মদিন ত কই এমন বড় দিন হল না ।অথচ ওই লোকটা অবহেলায় দিনটাকে বড় করে নিশ্চিন্তে বিছানায় পাঠাতে পারতেন।
    ছেলেটি বলে, রাম ঠাকুর!সে আবার কে !    
      বুড়ি মুখে হাসি ফুটে উঠল।বুড়ি কপালে জড়োহাত ঠেকিয়ে  বলে,  রামকেষ্ট ঠাকুর।  সারা জীবনের একটা ঘটনা ঘটবে না যেখানে না তার বাণী  তোমাকে পথ দেখাবে।
     ছেলেটি বলে, কে জানে হবে হয়তো। 
    বুড়ি উঠে পড়ে। ছেলেটি বলে, ও ঠাকমা যেও না ।একটু রুখে যাও। মাছ,মাংস, মিষ্টি আরো কত কি। আমি না হয় তোমার জন্য সকলের আগে খাবারটা নিয়ে আসব।
   বুড়ি হনহনিয়ে হাঁটতে শুরুু করলে ছেলেটি বলে, কী হলো ঠাকমা চলে যাচ্ছ যে বড়।
   বুড়ি দাঁড়িয়ে গিয়ে বলে, শ্মশান জাগিয়ে শব্দের এত বেলাল্লাপনা  যদি তোদের বড়দিন হয়, তাহলে রাম ঠাকুরের জন্মদিনকে  তোরা বড়দিন করিস না।
   বুড়ি অস্তায়মান সূর্যকে প্রণাম করে বলে, রাম ঠাকুর, এদের ক্ষমা করো।এরা জানে না এরা কী করছে।

0 comments: