সম্পাদকের কলমে

নারায়ণ দেবনাথ- সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম । ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম । নমস্কার সহ অঙ্কুর রায় সংখ্যার সম্পাদক অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী প্রধান সম্পাদক

লেখা পাঠানোর জন্য

আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com

Total Pageviews

By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.

 হাতেখড়ি

 ডঃ রমলা মুখার্জী



ইংলিশ মিডিয়ামের স্কুলে পড়ুয়া দশ বছরের মৌ তার মাকে প্রশ্ন করে, "কি বই কিনলে মাম্মী?"

সুজাতা বলে, "কিনিনি রে, আজ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের  দ্বিশতবর্ষের বার্থ ডে অনুষ্ঠানে দিয়েছে। এটা বর্ণপরিচয়ের প্রথম ভাগ। ঠিক দুশো বছর আগে এই মহামানব বিদ্যাসাগর বাংলাভাষা, বাঙালির পড়াশোনা, মেয়েদের  উন্নতি, বিধবাদের বিয়ে, বাল্য-বিবাহ রোধ এসবের জন্য জীবন-পণ করে লড়েছিলেন। বেমালুম ভুলেই গিয়েছিলাম যে এই বইতেই আমার প্রথম বাংলা অক্ষর পরিচয়, বাংলাকে প্রথম চেনাশোনা হয়েছিল। তুই তো বাঙালি হয়ে একবর্ণও বাংলা লিখতে দূরে থাক, পড়তেও পারিস না।"

-সেটা কি আমার দোষ? তুমিই তো দায়ী, ইংলিশ মিডিয়ামে ভর্তি তো করালেই, আবার সেকেন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ হিন্দি রাখলে। ড্যাড তো বাংলা মিডিয়ামেরই পক্ষপাতি ছিল।"

-ঠিক আছে তোকে রোজ একটু সময় করে প্রথমে "প্রথম ভাগ", তারপর "দ্বিতীয় ভাগ", "কথামালা" এসব পড়াবো।

- আর ঐ উইডো ম্যারেজ, আর্লি ম্যারেজ ঐ গল্পগুলো বলবে না। বাবা বলছিলো উনি নাকি থার্টি ফাইফ গার্লস স্কুল করেছেন বেঙ্গলে, আরও অনেক কিছু করেছেন, সব গল্প কিন্তু বলা চাই। এত বড় গ্রেট ম্যান, কিন্তু কিছুই জানি না। এখন তো এনাফ টাইম, তোমার আমার দুজনেরই তো স্কুল নেই। 

-বলবো তো নিশ্চয়ই, তবে তুই বাংলা ভালো করে শিখে নে, বড় হলে ওনার "শকুন্তলা", "ভ্রান্তিবিলাস" এইসব অনুবাদ সাহিত্যগুলোও পড়তে পারবি। কি সুন্দর সব অনুবাদ, ঠিক মনে হবে যেন মৌলিক রচনা!

-হিন্দি "বেতালপচ্চিশি"র কনসেপ্ট নিয়ে কি যেন বই লিখেছিলেন ড্যাড বলছিলো?

-হ্যাঁ, "বেতাল পঞ্চবিংশতি"। তোকে বিদ্যাসাগরেরই শুধু নয়, আরও সব বাঙালি লেখকের অনেক বই কিনে দেবো। নে এখন তো তোর হাতেখড়িটা সেরে ফেলি।"

-সেটা কি গো মা? 

 -আমার ব্যাগে দেখ একটা প্যাকেট আছে, নিয়ে আয়।

-এগুলো কি গো মা? 

-এই দেখ না, এটা হল স্লেট আর এই হল স্লেট পেন্সিল।

-কি হবে মা এসব দিয়ে? ঐ যে হাতেখড়ি না কি যেন বললে তাই হবে?

- হ্যাঁ, আমি এই স্লেটে "অ" লিখে দেবো, তারপর তোর হাত ধরে বোলানো করাবো, তাকেই বলে হাতেখড়ি।

মৌকে বিদ্যাসাগরের দ্বিশতবর্ষ জন্ম-জয়ন্তীর শুভক্ষণে বাংলা বর্ণে হাতেখড়ি দিল সুজাতা। মৌয়ের ড্যাড সব দেখেশুনে ভাবে, "যাক দেরিতে হলেও চৈতন্যের উদয় হয়েছে সুজাতার। কিন্তু এভাবে আর কদিনই বা বাংলাকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে? বাংলাভাষা কি তবে হারিয়ে যাবে?"

0 comments: