সম্পাদকের কলমে

নারায়ণ দেবনাথ- সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম । ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম । নমস্কার সহ অঙ্কুর রায় সংখ্যার সম্পাদক অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী প্রধান সম্পাদক

লেখা পাঠানোর জন্য

আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com

Total Pageviews

By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.

 বৃষ্টি মেখলা

মিত্রা হাজরা 



নৌকো! --না কোথায় নৌকো! কি যেন ভেসে যাচ্ছে জলের ছলাৎ ছলাৎ শব্দের সাথে। ভাঙা ঘাটের সোপান ছুঁয়ে ঐ তো ভেসে যাচ্ছে--একটু ঝুঁকে দেখতে লাগল সায়ক। --কিছু ফুল পাতা ডাল সমেত, বোধহয় --পাড় ধসেছে নদীর !এখন তো বর্ষার শুরু মাধবী, জুঁই, বেলি,কামিনী বেশ গন্ধ ছড়ায়। কামিনী ফুলের গন্ধ ভেসে এলো নাকে--অস্ফুটে সায়ক বলল--- মেখলা! এই গন্ধটার সাথে মেখলার যোগ আছে ।এই বর্ষায় মুঠোয় ভরে ঘরে এনে রাখতো ।মুঠোটা সায়কের নাকের সামনে এনে বলতো দেখোতো কী মিষ্টি গন্ধ!কে ওখানে, মেখলা!  কি করছো ওখানে? কাছে এসো, তোমাকে দেখতে পাচ্ছি না কেন? গন্ধ পাচ্ছি ফুলের, ফুলের মত তুমি সুন্দর। নাহ্ ---আমাদের ফুল আরো সুন্দর, ঠিক বলেছি কি না! তুমি সব সময় ঠিক ই বলো।

ফুল যে তোমার মেয়ে---তাই এত সুন্দর! ওর গলাটা মৌটুসি পাখির মত মিষ্টি। ফুল আমাদের দুজনের ।  জানি তো---তবে এখন তো শুধুই তোমার ছবি, তোমার কথা মনে পড়ায়। আবার শাসন ও করে আমাকে ---বাবা ,তুমি কিন্তু কথা শুনছো না আমার! একগাল দাড়ি---দাড়িটা কেটে চান করো বাবা। কাটবো কাটবো---দাঁড়া রে ! না--- তুমি আজকাল কেমন যেন থাকো। এখনি দাড়ি কাটো, বুবি পিসি আজ দেরি করছে, অবশ্য একটু পরেই এসে যাবে--চা করে দেবে---- আমি একটু চা করে দেবো বাবা। না--- তুমি আগুনের সামনে যাবে-না- । মানা করেছি তো একদিন! আমি বড় হয়ে গেছি বাবা।


পায়ের আওয়াজ আসছে--ঝুন ঝুন নূপুর এর আওয়াজ, মেঘডম্বরু শাড়ি পরে সদ্যস্নাতা বধূ যেন জল থেকে উঠে আসছে। মেঘের ফাঁকে শুক্লা তৃতীয়া চাঁদ ঠিক তার ঘোমটা ঢাকা মুখে আলোছায়া জোছনা বিলাচ্ছে। নিঝুম চারপাশ, ঘাইমারা মাছ ছলবল করে ভেসে জল ছিটিয়ে আবার ডুবে গেল। কে যেন কাঁদছে! লজ্জারুণা বধূটি কি? অন্ধকার রাতে পদ্মকলির মত দেহখানি জল থেকে তুলে কাঁদতে এসেছো কন্যা? আমার মেখলাকে দেখেছো? আকাশের কোণে অগণন তারকারাজি টিমটিমাচ্ছে। সপ্তর্ষি মন্ডল---মধ্য আকাশে। ভোর মনে করে কোন পাখি ডেকে উঠলো টিউ টিউ করে। আবার গন্ধটা পাচ্ছে--নাক টেনে সে শ্বাস নিল এরকম নিবিড় বাতাস সে কতোদিন পায় নি। অতীতের কিছু  স্বপ্ন ছলকে উঠলো সামনে---ছুঁয়ে যাচ্ছে তার কপাল, চিবুক, পাঁজরে । গাছের মত স্থির হয়ে সে অনুভব করতে লাগল কতক্ষণ! চোখ জড়িয়ে আসছে---বৃষ্টি ফোঁটা ঝরা শুরু হলো। মেখলা বৃষ্টি বড় ভালোবাসতো, সায়ক কেও টেনে জলে ভেজাতো, আর হি হি করে হাসতো। একবার উঠোনে কাদায় বৃষ্টির জলে ধপাস্! সায়ক সেই কাদামাখা মেখলাকে দেখতে পেল---হাত বাড়িয়ে তুলতে বলছে কি? তবে ছুঁতে পারছে না কেন! যত ই ছুঁতে চায়--দূরে চলে যায় মেখলা  । আর মুখ টিপে হাসে।


---খই উড়ছেই ,হৃদি থই থই , কাঁদে চরাচর ভেজা মেখলায়

বাতায়নে একমনে ,কানু বাঁশিছাড়া--একা দিন যায়!


বাবা বা--বা, সায়ক দা --কে যেন ডাকছে! ছোট্ট মেয়ে ফুল বাবাকে পাশে না পেয়ে খুঁজতে এসেছে ভোরে---পথে কানুকে দেখে, কানুকাকা আমার বাবাকে দেখেছো? ঘরে নেই! এতো ভোরে চল তো দেখি! ঠিক নদীর ঘাটে হবে--- বৌদি চলে যাবার পরে--বিড়বিড়ায় কানু। ঐ দেখ-- মাটিতে পড়ে আছে--সায়ক দা! বাবা বা-বা , আবার বৃষ্টি শুরু হলো, ভিজছে ফুল--ভিজছে সায়ক-- ঝির ঝির বৃষ্টি ফোঁটা ওর চোখ মুখ চিবুক ছুঁয়ে গড়িয়ে পড়ে আহ্লাদ করছে যেন! তন্দ্রা ভেঙে অবাক চোখে ফুল কে দেখতে থাকে সায়ক। হাত বাড়িয়ে গভীর মমতায় তাকে জড়িয়ে ধরে মেয়ে ঘরের পথ ধরে। আরো একটা বৃষ্টি দিন শুরু হয়ে গেল। জীবনের সিঁড়ি বেয়ে ওঠা আর নামা--এর ই নাম  কী জীবন !

0 comments: