সম্পাদকের কলমে
নারায়ণ দেবনাথ-
সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম ।
ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম ।
নমস্কার সহ
অঙ্কুর রায়
সংখ্যার সম্পাদক
অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী
প্রধান সম্পাদক
লেখা পাঠানোর জন্য
আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com
Total Pageviews
By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.
নাসরিনের গল্প
মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় দাস
প্ল্যাটফর্মে একা পায়চারি করছিল নাসরিন৷ পুবের আকাশে রঙ ধরতে এখনও অনেক বাকি৷ আজ ট্রেনটাও বেশ লেট৷ না হলে সকাল হতে না হতেই সে কলকাতা পৌঁছে যায়৷ গ্রাম থেকে অনেকটা সাইকেল চালিয়ে শহরের স্টেশনে এসেছে সে৷ শীতের দিন না হলে এত রাতেও কেউ না কেউ ট্রেনের প্রতীক্ষায় থাকত৷
ঘুম ধরে যাবার ভয়ে পায়চারি করতে করতেই হঠাৎ শোনে স্টেশন মাষ্টারের ঘর পেরিয়ে ওয়েটিং রুমের পেছনে যেখানটা বেশ অন্ধকার, সেখান থেকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদার আওয়াজ আসছে যেন৷ নাসরিনের ভয় ডর কম৷ মোবাইলের টর্চ জ্বেলে জমাট অন্ধকার খন্ডে আলো ফেলে ফেলে এগিয়ে চলে৷ আলো পড়তেই এক খন্ড সশব্দ অন্ধকার যেন চমকে ওঠে৷
একটা বাচ্চা ছেলে, বছর এগারো বারো, মাটিতে পা ছড়িয়ে বসে ছিল৷ হুটোপাটি করে দু'হাতে গাল আর চোখ মুছতে থাকে৷
নাসরিনের ব্যাপারটা সন্দেহজনক মনে হয়৷
বলে, কে রে তুই? কাঁদছিস কেন?
ছেলেটা বলে, কাঁদছি না তো!
মিথ্যে কথা৷ বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছিস?
ছেলেটা ততক্ষণে উঠে দাঁড়িয়ে চলে যাবার জন্য পা বাড়ায়৷ নাসরিন হাত দুটো ধরে ফেলে আলোর দিকে টেনে আনে৷ প্ল্যাটফর্মের চেয়ারে বসিয়ে দেয়৷
বলতো, বাড়িতে কী হয়েছে?
কিছু না গো৷ আমি এখানেই থাকি৷
উহু, আমি এই স্টেশনটা হাতের তালুর মতো চিনি৷ তোকে আগে কখনও দেখিনি৷ কেউ ধরে এনেছে?
না, না, তা নয় গো৷
তাহলে পুলিশ ডাকি? না হলে সত্যি কথা বল৷
পুলিশের কথায় একটু ভয় পেয়ে যায় ছেলেটা৷ বলে, আমি ছোটন৷ পাতিলপাড়ায় থাকি৷
পাতিলপাড়া তো এখান থেকে খুব দূরে নয়! তা, তুই বাড়ি ছেড়ে মাঝরাতে এখানে কেন এসেছিস?
আমি বাড়িতে থাকব না৷ মা আমার কোনো কথা শোনে না৷
আচ্ছা, এই ব্যাপার৷ তা, বাবাকে বললেই পারিস৷
বাবা তো আরই শোনে না৷ কবে থেকে ওদের বলছি একটা মোবাইল কিনে দিতে৷ দিচ্ছেই না৷
এতটুকু ছেলে মোবাইল নিয়ে কী দরকার? স্কুলে পড়িস না?
পড়ি তো, সিক্স৷ আর্লি বার্ড স্কুল৷
বাবা! আর্লি বার্ড তো নামকরা প্রাইভেট স্কুল৷ তোর বাবা মা কী করেন?
বাবার একটা মুদির দোকান আছে৷ আর মা আগে বাড়িতেই থাকত৷ এখন কয়েকটা বাড়ি রান্না করে৷
হুম, বুঝলাম, কষ্ট করেই পড়ান৷ ইচ্ছে করলেই মোবাইল কিনতে পারবেন না৷ এখনই মোবাইল তোর কেন দরকার?
আমার বন্ধুরা, রিজান সৌম্য শাম্ব সবাই ফ্রি ফায়ার আর অন্য গেম খেলে৷ তাছাড়া অনেক কিছু সুবিধা পাওয়া যায়৷ কামাই করলে পড়া জানা যায়৷ ক'দিন থেকেই বলে যাচ্ছি৷ মা প্রথমে উত্তরই দিচ্ছিল না৷ এখন বলছে, পারব না৷ আর দেখ, কাল আমি খেতে চাইছিলাম না বলে মেরেছে৷ খুব রাগ হয়ে গেল৷ তাই চুপি চুপি চলে এসেছি৷ দেখুক, কেমন লাগে৷
নাসরিন নিজের মোবাইলটা দেখে৷ অ্যাপে দেখাচ্ছে ট্রেন আসতে বহু দেরি৷ কিছু একটা গন্ডোগোল তো হয়েইছে লাইনে৷ উল্টো দিকের ট্রেনটা অবশ্য এক্ষুণি চলে গেল৷
ছোটনের দিকে ফিরে পা গুটিয়ে বসল চেয়ারে৷
শোন, তোরও যখন বাড়ি ফেরার কোনো ইচ্ছা নেই, আর আমারও ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া গতি নেই, একটা গল্প বলি তাহলে৷
গল্পের গন্ধে ছোটনও বেশ গুছিয়ে বসে৷
মঙ্গলপুর গ্রামে একটা মেয়ে ছিল৷ ধরে নে, মেয়েটার নাম নাসু৷ নাসুর তো তার বাবার কথা মনেই পড়ে না৷ অল্প বয়সে স্বামীহারা নাসরিনের আম্মা ওদের পৈত্রিক বাড়িতেই নাসুকে নিয়ে থাকতো৷ তবে বাকিরা ওদের জন্য খুব একটা ভাবত না৷ আম্মা নীহারবানু বিড়ি বেঁধে বা অল্প স্বল্প সেলাইএর কাজ করে অভাবের সংসার ঠেলত৷ নাসুকে প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি করালো৷
একবার ওদের গ্রামের শেষে বড়ো মাঠটায় সার্কাসের তাঁবু পড়ল৷ স্কুলের সকলের সাথে নাসুও সেই সার্কাস দেখতে গেল৷ সব খেলার মধ্যে নানা রকম জিমন্যাস্টিকের কসরত তার দারুণ লেগে গেল৷ সে অবশ্য জানতো না জিমন্যাস্টিক কাকে বলে৷ কিন্তু তারপর যখন তখন সেই দেখে আসা কসরতগুলো করার চেষ্টা শুরু করলো৷
বাড়িতে মা এক দু'বার বকা দিলেন, মেয়েদের এই সব খেলা বাড়িতে কেউ পছন্দ করে না বলে৷ কিন্তু স্কুলের স্যার ম্যাডামরা এ সব দেখে বেশ আনন্দ পেলেন৷ এমনিতেই স্কুলের তরুণ স্যার নানান ব্যায়াম শেখাতেন৷ সেগুলো নাসু ভালই পারতো৷ স্কুলে স্পোর্টসের মাঠে আলাদা ভাবে সেগুলো পারফর্ম করতে বললেন স্যার৷
সেদিন মাঠে আমন্ত্রিত হয়ে ছিলেন বিডিও সাহেব৷ উনি এসব দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলেন৷ উনি এসব নিজে পছন্দও করতেন৷ স্যার ম্যাডামদের বললেন, মেয়েটার যত্ন নিন৷ অনেক দূর যাবার সম্ভবনা আছে৷
তরুণ স্যার খুব হেসে বললেন, স্যার, গ্রামের গরীব ঘরের মেয়ে৷ কটা ক্লাস পড়বে তারই ঠিক নেই৷ জিমন্যাস্টিক চর্চা অনেক বড় বিষয়৷
বিডিও মাথা নাড়লেন৷ তারপর নাসুকে বিশৈষ পুরস্কার দেবার সময় বললেন, বাবাকে বলো আমার সাথে একবার দেখা করতে৷
নাসু জানালো তার আব্বা বেঁচে নেই৷
খোঁজ পড়ল মায়ের৷ তরুণ স্যারই একদিন শেষে মাকে নিয়ে বি ডি অফিসে গেলেন স্যারের দপ্তরে৷
উনি পরামর্শ দিলেন মেয়েকে যথাযোগ্য ট্রেনিং দিতে হবে৷ মায়ের তো মাথায় হাত৷ কিন্তু কেমন যেন তার মনে এই নিশ্চয়তা তৈরি হল, এতেই মেয়ের জীবনে ভাল কিছু হবে৷
এর পরের বছরগুলো কিন্তু ইতিহাস৷ ইতিহাস মানে শুধু সাম্রাজ্য বদল নয়৷ প্রতিটা মানুষেরও একটা ভাঙাগড়ার ইতিহাস থাকে, বুঝলি? বলেই ছিলাম যে নাসুর মায়ের আয় খুবই সামান্য ছিল৷ আর প্রথাগত শিক্ষা কিছুই তেমন ছিল না৷ তাছাড়া, এত কাল ঘরের মাঝে মোটামুটি নিস্তরঙ্গ জীবন ছিল তার৷ কিন্তু মেয়েকে ভালভাবে ট্রেনিং দিতে গেলে অন্তত সত্তর কিমি দূরে দক্ষ ট্রেনারের কাছে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন৷ বিডিও আর তরুণ স্যার কথাবার্তা বলে যোগাযোগ করে দিলেন ট্রেনার বিকাশ বাবুর সাথে৷ ঠিক হল সপ্তাহে দু'দিন বা প্রয়োজনে তিনদিনও যেতে হবে৷
এ কথা শুনে ভীষণ আপত্তি জানালো নাসুর বাড়ির লোকজন৷ রক্ষণশীল পরিবার৷ বউ মেয়ের খেলাধুলোর জন্য বাইরে ঘুরবে তা সহ্য করতে পারবে না৷
নীহারবানু আতান্তরে পড়লেন৷ মেয়েকে বললেন, সত্যিই তুই এসব শিখতে চাস?
মেয়ে তো খুবই ইচ্ছুক৷ স্কুলের স্যার ম্যাডামরা তাকে বুঝিয়েছে তার মধ্যে বন্ধুদের চেয়ে অন্য রকম কোনো ক্ষমতা আছে৷ কিন্তু অনেক মেহনত দরকার৷ তবেই সে অনেক বড়ো জায়গায় পৌঁছাতে পারবে৷ সবাই তাকে ভালোবাসবে৷
মেয়ের মনের কথা জেনে নিয়ে নীহারবানু শুধু আল্লাকে ডাকলেন তাকে শক্তি দেবার জন্য৷ তারপর নিজের কর্তব্য ঠিক করে নিলেন৷
দূরের রাস্তায় যাতায়াত করেনি কখনও৷ ভোর রাতে উঠে রান্না করে খাবার ব্যাগে ভরে মেয়ে নিয়ে বেড়িয়ে পড়তেন৷ প্রথম প্রথম গাড়ি ভুল হয়েছে৷ সময়ে পৌঁছানো যায় নি৷ বার বার সমস্যা এসেছে হাজার রকম৷ একে ওকে জিজ্ঞেস করে করে এগিয়ে গেছেন৷ ট্রেন না পেয়ে সারা রাত ঘুমন্ত মেয়েকে নিয়ে রাত কাটিয়েছেন স্টেশনে বসে৷ নানান বিপদের আশঙ্কায় নিজের চোখের পা
তা এক করতে পারেন নি৷ বরঞ্চ সময় হাতে পেয়ে ব্যাগ থেকে বার করে কোনো ব্লাউজের হুক বসিয়েছেন৷ কোনো কুর্তিতে বখেয়া দিয়েছেন৷
পরের দিন সকালে ফিরে মেয়েকে স্কুলে পাঠিয়ে দিয়েছেন৷ কতদিন ঝড় বৃষ্টি, লোড শেডিংএ বিপদে পড়েছেন৷ ছোট নাসু কত দিন অবুঝের মতো কান্নাকাটি করেছে৷ তখন আম্মাই তাকে বুঝিয়েছে কষ্ট না করলে তার স্বপ্ন পূরণ হবে না৷
প্রাইমারী ছেড়ে নাসু হাইস্কুলে গেছে৷ সেও এখন বুঝদার৷ আস্তে আস্তে ভাবতে শিখেছে৷
ইতিমধ্যে বিকাশবাবুর ভালোবাসা আর স্নেহে অনেক পাকাপোক্ত হয়ে উঠেছে নাসু৷ সাফল্যও পাচ্ছে৷ হঠাৎই খবর এল একটি নামী কোম্পানী হংকংএ একটা প্রতিযোগিতা আয়োজন করছে৷ বিশ্বস্তরের এই প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করতে হলে চটপট পাসপোর্টের ব্যবস্হা করতে হবে৷ আর সবচেয়ে বড় কথা, দরকার অনেক টাকার৷ তবে প্রাইজমানি খুব ভাল৷
সব শুনে নাসু বলল, অসম্ভবের পেছনে ছুটে লাভ নেই৷ ভেতরে ভেতরে খুবই ভেঙে পড়ল সে৷ তাহলে কী হবে এত পরিশ্রম করে৷ বিশ্বমানের প্রতিযোগীদের কাছ থেকে দেখতে পেলে বড় ভাল হত৷ বিকাশবাবু কিছু টাকার ব্যবস্হা করতে পারবেন বললেন৷ কিন্তু বাকিটা?
নাসু দেখল মায়ের মুখ থমথমে৷ কিন্তু মুখে বলল, তোকে যেতেই হবে৷
একা হাতে কী ভাবে সব সামলালো মা নাসু তা জানে না৷ শুধু মায়ের কথা মতো অনুশীলনটাতে কোনো ফাঁকি রাখল না৷
এতক্ষণ গল্প শোনার পর যেন আর ধৈর্য্য ধরে রাখতে পারছিল না ছোটন৷ প্রশ্ন করে, তারপর সে বিদেশে গেল? ভাল পারফর্ম করল?
নাসু হেসে বলল, হ্যাঁ রে, সত্যিই মেয়েটার স্বপ্ন সত্যি হয়ে গেল৷ প্রথমবার মাকে ছেড়ে একা একা বিদেশে পাড়ি দিতে তার খুব ভয় করছিল৷ মা ছাড়া তো কোনো বন্ধু ছিল না তার৷ কিন্তু মেয়েটা চ্যাম্পিয়ন না হয়ে হল রানার্স আপ৷
ছোটন বলল, তাই বা কম কি!
হ্যাঁ রে! মেয়েটা অনেক সম্মান পেল, সবার ভালবাসাও পেল, কাগজে টিভিতে ছবি দেখতে পেল৷ আত্মীয়রাও খোঁজ খবর নিতে লাগল৷ কিন্তু দুঃখের কথা কি জানিস, যে বাড়ি থেকে সে বিদেশের পথে পা বাড়িয়েছিল সে বাড়িতে তাদের অংশটা আর নেই বলে জানতে পারল৷ মা ওর খরচ জোগাড়ের জন্য নিজের অংশটুকু বেচে দিয়েছিল৷ যে বাড়ি ছিল মায়ের হাতের পাঁচ, অনেক শারীরিক ক্লেশেও যে বাড়িটুকু আঁকড়ে ধরে থাকতো তা অনায়াসে মেয়ের জন্য বেচে দিয়েছিল৷ ভাড়া ঘরে থাকা শুরু হল৷
পরে অবশ্য নাসু খেলার জগতে নাম করেছে আরও৷ পড়াটাও মোটামুটি চালিয়ে গেছে৷ একটা চাকরীও পেয়েছে খেলার সুবাদে৷ আপাততঃ ঠিক করেছে মাকে নিয়ে পাকাপাকি ভাবে কোলকাতায় ভালো একটা ঘর কিনে চলে যাবে৷ মাকে সে আর কোনো কষ্ট দিতে চায় না৷
ছোটন বলল, বা! খুব ভাল মা তো! তাই মেয়েও তাকে খুব ভালোবাসে৷
নাসরিন বলল, সব মাই চায় ছেলেমেয়েদের জন্য সবটুকু দিতে৷ মায়ের চেয়ে প্রিয় বন্ধু আর হয় না৷ খুব কাছের বন্ধুও চাইবে না, তুমি তার থেকে বেশি নম্বর পাও, বা তুমি তার থেকে অনেক এগিয়ে যাও৷ কিন্তু মা এমন বন্ধু যে তোমার দুঃখ ভোলাতে জীবন দিয়ে দিতে পারে৷
এই বয়সে মোবাইল তোমার কোনো কাজে আসবে কি না তা তর্কের বিষয়৷ কিন্তু ভেবে দেখো, তোমার বাবা মা এই সাধ্যাতীত চাহিদা পূরণ করতে না পারায় কত কষ্ট পাচ্ছেন৷
ছোটনের চোখ জলে ভরে আসে৷ বলে, আমি বুঝতে পেরেছি দিদি৷
ইতিমধ্যে ট্রেনের ঘোষণা হতে থাকে৷ পূব আকাশ বেশ লাল হয়ে আসছে৷
একজন সিভিক পুলিশ হঠাৎ এগিয়ে আসে কাছে৷ বলে, আরে নাসরিনদি, আপনি এখনও সেই সাইকেল চালিয়ে মাঝরাতে গ্রাম থেকে এসে ট্রেন ধরা বন্ধ করেন নি?
না ভাই, এখন ট্রেনিং আর অফিস করে প্রতি সপ্তাহে আসতে পারি না৷ মায়ের শরীরটা ভালো নেই৷ কয়েকদিন ছিলাম৷ আজ ফিরতে হবেই৷ পরশু থেকে ন্যাশেনাল ক্যাম্প আছে৷ ভাবছি মাকে তারপর নিয়েই যাব পাকাপাকি৷
ছোটন অবাক চোখে সেই কথোপকথন শোনে৷ বিস্ময়ে তার কথা বার হচ্ছে না৷ নাসরিন ট্রেনে উঠে পড়ে৷ ধীরে ধীরে ট্রেন ছেড়ে যাচ্ছে স্টেশন৷ জানালা দিয়ে হঠাৎ চোখে পড়ল একজন উস্কোখুস্কো মলিন শাড়িপরা মহিলাকে জড়িয়ে আছে ছোটন৷ সেই মহিলা চুমু দিচ্ছেন ছোটনের কপালে৷ সম্ভবত খুঁজতে খুঁজতে হারানিধিকে পেয়েছে ছোটনের মা৷ মনটা ভাল হয়ে গেল নাসু ওরফে নাসরিনের৷
Subscribe to:
Posts (Atom)
0 comments:
Post a Comment