সম্পাদকের কলমে
নারায়ণ দেবনাথ-
সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম ।
ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম ।
নমস্কার সহ
অঙ্কুর রায়
সংখ্যার সম্পাদক
অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী
প্রধান সম্পাদক
লেখা পাঠানোর জন্য
আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com
Total Pageviews
By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.
মৃত্যু দন্ড
জিনিয়া কর কর
সিস্টার শীতলের সাথে আমার আলাপ পরিচয়টা আকস্মিকভাবে ই। একবার ট্রেনে আসছিলাম দুজনে এক কুপে।বার ঘন্টার জার্নি তে একটিও কথা বলেননি তিনি। "The interpreta
tion of dreams" পড়ছিলেন । আমিও দারুন অস্বস্তিতে আলাপ জমাতে পারি নি ওনার সাথে। রাত অনেক তখন হটাৎ একটা গোঙানি র আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেল।লাইট জ্বালিয়েওনার দিকে তাকিয়ে দেখি আমাকে কিছু বলার চেষ্টা করছেন। কাছে গিয়ে দেখিএসি চলা সত্ত্বেও উনি পুরো ঘেমে গেছেন। ইশারায় কিছু বোঝাবার চেষ্টা করছেন।আমি তারাতারি ওনার গায়ের কম্বলটা সরিয়ে ফ্যান চালিয়ে দিলাম । বোতল থেকে জল নিয়ে একটু গলায় ঢেলে দিলাম।উনি একটু বোধহয় সুস্থ বোধ করলেন। ইশারায় ওনার হাতব্যাগ থেকে একটা ওষুধ দিতে বললেন।ওষুধ দিলাম। ওষুধের গুণে বোধহয় উনি ধীরে ধীরে ঘুমিয়ে পড়লেন। সকালে ওনার ঘুম ভাঙ্গলো একটু দেরিতে। হাওড়া র কাছাকাছি এসে পড়েছি প্রায়, পরিষ্কার ইংরেজিতে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন আমি কোথায় যাব ? আমি জামশেদপুর যাব শুনে, উনি জানালেন যে ওনার গন্তব্য, চাইবাসা।ওখানকার স্থানীয় সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল এর প্রিন্সিপাল হয়ে প্রথম বার যাচ্ছেন। জামশেদপুর পর্যন্ত জনশতাব্দী ট্রেনে মুখোমুখি বসে এলাম।রাতের ঘটনার কথা বললে উনি লজ্জিত ভাবে জানালেন ওনার suger fall করেছিলো। ওষুধ খেতে ভুলে গেছিলেন। মৃদুভাষী অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী অথচ মাতৃসুলভ ব্যবহার আমাকে আকর্ষণ করলো।
তারপর থেকে আমার সাথে ওনার যোগাযোগটা স্থায়ী হয়ে গেল । আমি কারণে-অকারণে সময় পেলেই ওনার সাথে দেখা করতে যেতাম । উনিও আমাকে যথেষ্ট স্নেহ করতেন । একদিন সেইরকমই দেখা করতে গেছি। উনি চার্চ থেকে বেরচ্ছিলেন। উনি আমাকে দেখে welcome লিপি বলে সানন্দে স্বাগত করলেন । আমি বরাবরই ওনার পা স্পর্শ করতাম । আজও করলাম। উনি মাথায় হাত দিয়ে blessing করলেন । আমরা চার্চের বেঞ্চিতে বসলাম। সন্ধ্যা প্রায় হয়ে আসছিল। শিক্ষা ক্যারিয়ার এসব কথা বলতে বলতে একসময় জিজ্ঞাসা করলাম আপনি তো বহু বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন আপনার হাত দিয়ে কত ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার সমাজসেবী আইএএস অফিসার বেরিয়েছে তাইনা? আপনার এদের জন্য গর্ব হয় না? উনি হেসে বললেন আমার স্কুলে বাচ্চারা standard XIIপর্যন্ত পড়ে । তারপর সবই ওদের পরিশ্রম আর ভাগ্য এতে আর আমার কি কৃতিত্ব ? তবে অনেকেই জীবনে successহয়ে thanks জানাতে আসে । ভাল লাগে। তবে কাউকেই মনে রাখতে পারি না। শুধু তুষার কে ছাড়া ওকে আমি কুড়ি বছর পরেও ভুলতে পারিনি ।
আমি আগ্রহী হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম কে তুষার? সিস্টারের চোখদুটো জলে চিক্ চিক্ করে উঠলো উনি উদাস দৃষ্টি তে আবছা অন্ধকারের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন।তারপর ধীরে ধীরে বলতে শুরু করলেন।
আমি তখন দ্বিতীয়বার পোষ্টিং হয়ে কানপুরের একটা স্কুলের প্রিন্সিপাল হয়ে গেছি। অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ইত্যাদি নিয়ে মাস তিনেক ব্যস্ত ছিলাম। তারপর স্কুলের ক্লাসরুম টিচার স্টুডেন্ট এসব ব্যাপার গুলোর প্রতি মনোযোগ দিলাম। আমি প্রতিদিন থার্ড পিরিয়ডের পর স্কুলে রাউন্ড দিতাম। কিছুদিন পর লক্ষ্য করলাম স্ট্যান্ডার্ড ফাইভের এর একটা ছেলে প্রায় প্রতিদিনই ক্লাসের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে। সাদামাটা চেহারা কিন্তু চোখ দুটোতে অদ্ভুত একটা দীপ্তি, করুন অসহায় মুখটা দেখে ভারি মায়া লাগতো।সপ্তাহ খানেক watch করার পর আমি ওর ক্লাস টিচার কে ডেকে ওই ছেলেটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম ক্লাসটিচার অত্যন্ত ঘৃণাভরে বললো- "সিস্টার ও তুষার"most bad boy of the class !!!!
আমি বললাম কিভাবে ?
সিস্টার ; ও বই খুলতে বললে খোলে না.......,হোমওয়ার্ক করে আনে, কিন্তু অত্যন্ত বাজে হাতের লেখা । ক্লাস ওয়ার্ক কোনদিন ও করে না
তাই প্রতিদিন শাস্তি পায়।
জিজ্ঞাসা করে জানলাম প্রায় দশ বার বছরের বাচ্চাটা একটু অস্বাভাবিক।এখনও বোর্ড থেকে দেখে দেখে ঠিক করে লিখতে পারে না reading পড়তে পারে না শত শাস্তি দিলেও কেন যে এরকম করে , কি অসুবিধা, কিছুতেই মুখ খোলে না।
কিছুদিন পর দেখি একটা স্কুলসার্ভেন্ট গার্ল, তুষার ও আরো পাঁচটা ছেলেকে আমার কাছে ধরে নিয়ে এসেছে ! তুষারের নাক ফেটে গেছে নাকে পট্টি বাধাঁ। অভিযোগ তুষার সবাইকে মেরেছে । আর এইসব হুরাহুরিতে তুষার সিঁড়ি দিয়ে পড়ে নাকে চোট পেয়েছে । অন্যদের আঘাত তেমন গুরুতর নয়। ব্যাথা পওয়ার ধরন দেখে আমার সন্দেহ হল, আসল ঘটনা টা হতে পারে অন্যরকম।সবাইকে ক্লাসে পাঠিয়ে খুব স্নেহ করে ঘটনাটা কি ঘটেছে জিজ্ঞেস করাতে,ও যা উত্তর দিল তা সম্পূর্ণ অসংলগ্ন ।দশ এগারো বছর বয়সী ছেলে ,একটা সামান্য ঘটনা গুছিয়ে বলতে পারেনা দেখে আমার অবাক লাগলো। বললাম তোমার বাবা মাকে ডেকে নিয়ে আসবে। পরের দিন নির্দিষ্ট সময় তুষারের বাবা মা এলেন। কথা বলে বুঝতে পারলাম তুষারের মা-বাবা একমাত্র ছেলের পড়াশুনা নিয়ে যথেষ্ট conscious আর ambitious ও। ওনাদের ধারনা ছেলেকে ধরে বেঁধে পড়ালে ই ছেলে স্কলার তৈরী হবে। কোন ভাবেই বাচ্চাটার যে কোনও সমস্যা আছে,সে ব্যাপারটা মানতে চাইলেন না।আমার কিছু বলার বা বোঝাবার ক্ষমতা ছিল না ।
এর পর পর ছেলেটার সাথে কথা বলা আরম্ভ করলাম । ওই ধরনের ছেলেদের ব্যাপারে পড়াশোনা শুরু করলাম । তুষার ফিফ্থ স্ট্যান্ডার্ড থেকে সিক্সথ স্ট্যান্ডার্ডেএবং সিক্সথ থেকে সেভেনে উঠে এলো। কিন্তু ওর সমস্যা গুলো বাড়লো ; কমলো না ।ছেলেটা ক্লাসের অন্যান্য ছেলেদের দ্বারা বিভিন্ন ভাবে প্রতারিত হতে লাগলো । এখনো কোনো কথা গুছিয়ে বলতে পারেনা বলে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে পারে না। গুছিয়ে লিখে দিতে বললে সেটাও লিখতে পারেনা ! কিছু টিচাররা তুষারকে খরচের খাতায় ফেলে দিয়েছিল। তাঁরাও কিছুটা পক্ষপাতিত্ব করতো।আমি জিজ্ঞাসা করলাম আপনি সব বুঝেও চুপ করে রইলেন ? না লিপি আমি প্রিন্সিপাল হতে পারি কিন্তু আমিও টিচারদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে পারিনা । লোক্যাল টিচারদের নিয়ে স্কুল চলে।
ঠিক কিছুদিন পরেই একটা অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটলো । ন্যাশনাল সাইন্স প্রতিযোগিতা আয়োজিত হল আমাদের স্কুলে।ক্লাস টিচারররা নিজের নিজের ক্লাস থেকে স্টুডেন্টদের লিষ্ট জমা করে দিলো স্বাভাবিকভাবেই তুষারের নাম তাদের মধ্যে নেই । সবাই নিজের নিজের মডেল নিয়ে ব্যস্ত । আমিও সময়-সুযোগমতো এক্সিবিশন রুমে গিয়ে বসি । তুষার ও লুকিয়ে লুকিয়ে আসে । সব কিছুর প্রতি উদাসীন তুষারেরএক্সিবিশনের প্রতি আগ্রহ দেখে ওকে follow করতে আরম্ভ করলাম। তুষার নিজের ক্লাসের বাছা-বাছা ভাল ভাল নংম্বর পাওয়া ছেলেদের মধ্যে পাত্তা না পেয়ে অন্যান্য ক্লাসের ছেলেদের সাথে মডেল সম্বন্ধে আলোচনা করত। দেখলাম উঁচু ক্লাসের স্টুডেন্ট রা,ওকে ঘৃণা করতনা মন দিয়ে ওর কথা শুনে, ওর বলা advice গুলো noticeকরে analysisকরেই ওদের মডেল গুলো বানাতে লাগলো। একদিন তুষার কে ডেকে বললাম তুমি কম্পিটিশনে নিজের মডেল দিতে চাও? ও উত্তর দিল ! কিন্তু আ আ আমার তো গ্রুপ নেই ?
আমি বললাম তাতে প্রবলেম নেই তুমি solo পারফরম্যান্স করো। তোমাকে একাই মডেল বানাতে হবে পিকচার আঁকতে হবে ভিজিটর এটেন্ড করতে হবে ! পারবে তো? তোমার হাতে তিন দিন সময় আছে ।তুষার জবাব দিল I willl try my best সিস্টার ! !!
তিনদিন পরে তুষারের কমপ্লিট মডেল এলো টেবিলে ( HUMAN CIRCULATORY SYSTEM) সবার থেকে আলাদা চিন্তাভাবনা। wooden board এর উপর সুনিপুন, হাতে আঁকা সার্কুলাটরি সিস্টেম তার ওপরে vains আর artery বোঝাবার জন্য লাল এবং নীল এর পাইপ ব্যবহার করা হয়েছে মোটরের সাহায্যে হার্টের সিস্টেম তৈরি করে; অসাধারণ একটা মডেল তৈরি করেছে। তুষার। টেবিলে এসেই একমনে ছবিগুলো পরিপাটি করে সাজিয়ে নিল। তারপর মডেল টা কে গুছিয়ে সেট করে নিল । ও একা যেভাবে কাজ করছিল; চারজনের গ্রুপে ওর বয়সি বাচ্চাগুলো কেবলি বিশৃঙ্খলা আর হট্টগোল করছিল। যাহোক কিছুক্ষণের মধ্যেই visitor ,judges অন্যান্য স্কুলের স্টুডেন্ট রাআসতে আরম্ভ করলো। যে তুষার একটা সাধারন ঘটনাকে গুছিয়ে বলতে পারত না; সে নিজের মডেলের উপরে এত সুন্দর lecture দিতে লাগলো আমি আর ওর পরিচিত সবাই অবাক হয়ে গেলাম । ওর মডেল, পেইন্টিং ওর এক্সপ্লানেশন করবার আশ্চর্য ক্ষমতা ভিজিটর দের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় মনে হল । সবকিছুর শেষে তুষার ফাস্ট প্রাইজ এনাউন্সড হলো। যদিও আমাদের স্কুল জিততে পারেনি বলে তুষারের অগ্রগতি বন্ধ হয়ে গেল। এবার তুষারকে যারা অপছন্দ করত তারা হিংসায় আরো অপছন্দ করতে শুরু করল। সবচেয়ে আশ্চর্য ব্যাপার কি জান? এই তালিকায় কিছু শিক্ষক ও ছিল।একটা শিশুর মনে এই ধরনের ব্যবহার ওর কতটা ক্ষতি করতে পারে সে তুমি ধারণা করতে পারবে না। কেউ ওর ব্রেনের উইক দিক আর স্ট্রং দিক টার মধ্যে পার্থক্য করতে পারত না। যে মানুষের দৃষ্টিশক্তি ক্ষীন তার শ্রবণ ক্ষমতা বেড়ে যায়। ঠিক সেইরকম তুষারের লেখা জিনিস পড়া বা কোথাও থেকে দেখে লেখার ক্ষমতা টা কম ছিল। আর ছোট থেকে বকা খেতে খেতে খেতে ওর মানসিক অবস্থাটা এতই দুর্বল হয়ে পড়ে যে ওর আত্মবিশ্বাস তলানিতে এসে ঠেকে।তাই ও কোন কথা গুছিয়ে বলতে পারতো না। ওর কল্পনাশক্তি আর সৃষ্টিশীলতা ছিল প্রবল । কিন্তু আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা মানুষের ভেতরের গুন কে প্রসারিত না করে কতগুলো পুতুল বানিয়ে দিতে চায় । হাতের লেখা, শুদ্ধ বানান আরো কত perfection চায় । শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য কি জানো একটা শিশুর মানসিকতাটা কে বিকাশ করা । সে যা আছে ; তার মধ্যে যে গুণ গুলো আছে , সে গুলোকে তুলে ধরা। তুষার অনেক কিছু করতে পারত না যেগুলো সবাই পারতো। কিন্তু ও যেটা পারত সেটাও অনেকে ই পারত না। ঈশ্বর কিছু এমন সন্তান আমাদের মধ্যে পাঠান যারা দুনিয়াতে এসে নতুন রাস্তা তৈরি করে । জগতে তারা ইউনিক।
ক্লাসের অ্যানুয়াল এক্সাম চলে এলো। রেজাল্ট বেরোবার ও সময় হয়ে গেল । রেজাল্ট ডিক্লেয়ার হওয়ার আগের দিন ক্লাস সেভেনের মার্কশিট রেকর্ডটা দেখতে দেখতে মনে হল প্রমোশন লিস্টে তুষারের নাম দেখলাম না । বারবার চোখ বুলিয়ে কনফার্ম হয়ে গেলাম কি ! তুষারের প্রমোশন হয়নি । আমি তুষার কে প্রমোট করে দেওয়ার অনেক চেষ্টা করলাম টিচারদের সাথে কথা বললাম । আমার মনে হয়েছিল ছেলেটাকে শুধুমাত্র শিক্ষা ব্যবস্থাই শেষ করে দিচ্ছে তা নয় ,আমাদের সমাজ ব্যবস্থাও এর জন্য দায়ী । ওর দুর্বলতা নিয়ে না না রকম কটুক্তি, বাক্যবাণ, অবহেলা ছেলেটার আত্মবিশ্বাস টাকে দুমড়ে-মুচড়ে রেখে দিয়েছে। একটু স্নেহের পরশ একটু যত্ন সম্পূর্ণ ব্যাপারটাকে বদলে দিতে পারে । ওকে পাশ করিয়ে দিয়ে ওর আত্মবিশ্বাস টাকে নষ্ট না করেও সাথে স্নেহ পূর্ণ আচরণ করে একবার চেষ্টা করার কথাতে কাউকে রাজী করাতে পারলাম না...........
লিপি আমি হেরে গেলাম। চার বিষয়ে below 30পাওয়া একটা বাচ্চা কে শহরের নামী স্কুল কি করে প্রমোট করে দেয়?
সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনাটা ঘটালেন তুষারের বাবা। আই. টি সেক্টরে চাকরি করা, ইঞ্জিনিয়ার পোস্টে থাকা প্রতিষ্ঠিত তুষারের এর বাবা থমথমে মুখে রেজাল্ট নিয়ে চলে গেলেন। তারপর নতুন সেশানে তুষার আর এলো না। কোনরকম ট্রান্সফার সার্টিফিকেট ও বার করা হলো না । তিন মাস অত্যন্ত উদ্বিগ্ন তার সাথে কাটানোর পর এক দিন স্কুলের রেজিস্টার খুঁজে ফোন নাম্বার নিয়ে ফোন করলাম। ফোন ধরলেন তুষারের মা। তুষারের কথা জিজ্ঞেস করাতে কান্নায় ভেঙে পড়লেন। আমি যা কল্পনা করিনি ঠিক তাই হল --লিপি ; ছেলেটা আত্মহত্যা করেছিল। বাথরুমের অ্যাসিড খেয়ে। কিছুদিন পুলিশের ঝামেলা চলে তারপর সব নিজের নিয়মে স্বাভাবিক হয়ে যায়। একদিন তুষারের মা নিজে দেখা করতে এলেন। আমার হাতে একটা ছোটো চকের টুকরো র ক্রস দিলেন। তুমি ভাবতে পারবেনা লিপি কি অসাধারণ কাজ ওইটুকু চকের মধ্যে।পেছনে লেখা FOR MY LOVING SISTER
তুষারের মা বললেন এটাই তুষারের শেষ ও একমাত্র সৃষ্টি রয়েছে আমার কাছে। আমি অবাক চোখে তুষারের মায়ের দিকে তাকালাম। তুষারের মা বলতে শুরু করলেন.......
তুষারের বাবা সেদিন রেজাল্ট নিয়ে ফেরার পর তুষারকে প্রচন্ড মারেন উনি জানতেন না যে তুষার পড়ার ফাকে ফাকে এসব করে। ও রেজাল্ট ভাল করতে পারত না বলে সবসময় সবাই বকাবকি করত। বন্ধুও ছিল না খেলতে ও যেত না। আপন মনে এইসব করে নিজের মনে আনন্দ পেত। ওর জীবনের ওইটুকু সুখ আমি কেড়ে নিতে চাই নি। কিন্তু সেদিন রাগে মাথা ঠিক রাখতে পারলাম না। বলে ফেললাম দিনরাত চক আার চকের কাটিং নিয়েই ব্যস্ত..
পড়াশোনা আর হবে কি? সে কথা শুনে ওর বাবা সারা ঘর ঘেটে ওর তৈরী সমস্ত শিল্পকর্ম খুজে বার করে, পা দিয়ে পিষে গুড়া গুড়া করে দিলেন। যে ছেলে এত মারের পর ও চুপ করে ছিল সে একবার বাবাআআআ বলে চিৎকার করে উঠে দেওয়ালে ঠেস দিয়ে বসে পড়ল। দুচোখ দিয়ে বড় বড় জলের ফোঁটা গাল বেয়ে নেমে এল। আমি মাঁ হয়ে ছেলেটার যন্ত্রনা টা সেদিন বুঝতে পারলাম না। সেদিন আমাদের মান সম্মান প্রতিষ্ঠা র সামনে ওর কষ্ট টা ছোট হয়ে গেলো। পরদিন সকালে তুষার এসিড খায়। তিনদিন যমে মানুষে টানাটানি তারপর সব শেষ। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বানাচ্ছিলো এটা। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়ে ও ওর হাতে জামায় চকের গুড়ো লেগে ছিল। তুষারের মা আঁচলে চোখের জল মুছে বললেন এটা ও আপনার জন্য বানিয়েছে। তাই আপনাকে দিয়ে গেলাম।
আমি চলি। বলে উঠে চলে গেলেন। আমি speachless ফ্যালফ্যাল করে ওনার চলে যাওয়া দেখতেই রয়ে গেলাম।
একটা 14 - 15 বছরের ছেলে কতখানি মানসিক যন্ত্রণা পেলে ওভাবে এসিড খেয়ে নিজের জীবনটা শেষ করে ফেলে ভাবতে পার লিপি? এই পৃথিবীতে কত অপরাধীর অপরাধ মাফ হয় বড় বড় অপরাধী কে দ্বিতীয় চান্স দেওয়া হয়। কিন্তু ওই বালকটির স্ট্যান্ডার্ড সেভেনের ফেল করার অপরাধ কি এতই বড় অপরাধ হলো যে ওর মৃত্যুদন্ড হয়ে গেল? লিপি আমার স্কুলে প্রতিবছর কতছাত্র ছাত্রী 99 পার্সেন্ট মার্কস নিয়ে দেশের বড় বড় পোস্টে চাকরি করছে। তাদের কাউকে মনে রাখতে পারিনা। কিন্তু তুষারকে আজ কুড়ি বছর পরও ভুলতে পারিনি। হয়তো কোনদিন পারবো না।
Subscribe to:
Posts (Atom)
1 comments:
সবার জীবনে তো আর রামশংকর নিকুম্ভ মেলে না। অন্তরস্পর্শী লেখা।মনটা বড়ো ভারী হয়ে গেল।
Post a Comment