সম্পাদকের কলমে

নারায়ণ দেবনাথ- সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম । ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম । নমস্কার সহ অঙ্কুর রায় সংখ্যার সম্পাদক অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী প্রধান সম্পাদক

লেখা পাঠানোর জন্য

আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com

Total Pageviews

By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.



নষ্টামি 

 উত্তম চক্রবর্তী


না , আজ আর মাথা ঠিক রাখতে পারলেন না জননেতা মহেশ বিশ্বাস। গত কয়েকদিন যাবতই স্ত্রী গৌরির মুখে অভিযোগ শুনছিলেন যে তার একমাত্র ছেলে শৈবাল নাকি বাড়ির ঝিয়ের মেয়ে ললিতার সাথে খুব ঢলাঢলি করছে। গৌরিও নাকি একদিন শৈবালকে সিঁড়ির নিচে ললিতাকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে  দেখেছে। মহেশ বিশ্বাস ভেবেছিলেন এখন ওর বয়স মাত্র আটাশ বছর , রক্তে যৌবনের স্বাভাবিক চাহিদা। তা একটু আধটু মেয়েদের সাথে নষ্টামি করলে এমন কি আর ক্ষতি ? একদিন মহেশ নিজেও তো  কতজনকেই না চটকেছে। করুক ওর যা খুশি করুক, তবে সাবধানে করে যেন।


কিন্তু সন্ধ্যায় একটা মহিলা সমাজ সেবী সংগঠনের বার্ষিক সভায় প্রধান অতিথির লম্বা একটা শ্রুতি মধুর ভাষণ দিয়ে ফুরফুরে মনে বাড়িতে ফিরেই স্ত্রীর মুখে যখন শুনলেন যে শৈবাল আজ অফিসে না গিয়ে দুপুরে ললিতার হাত ধরে তার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলেছে যে ও ললিতাকে বিয়ে করতে চায়, তখন মহেশ বিশ্বাস রেগে লাল হয়ে গেলেন। একজন এম এল এর ছেলে হয়ে একটা ঝিয়ের মেয়েকে বিয়ে করবে মানে ? দুনিয়ায় আর কোন মেয়ে পেল না অপদার্থটা ! চিৎকার করে স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন, ’কোথায় সেই আহাম্মকটা। ডাক ওকে এখুনি। অপদার্থ ছেলে। আর কাউকে পেল না শেষে একটা ঝিয়ের মেয়েকে বিয়ে করবার ডিসিশন নিলো ? এই পরিবারের সম্মানের কথা একবার ভেবে দেখল না শৈবাল ? পার্টিতে মুখ দেখাব কী করে ?  ডাক ওকে।‘


গৌরি দেবী ছেলেকে ডাকবার আগেই দোতলা থেকে সিঁড়ি দিয়ে নেবে এলো শৈবাল। ওর বয়স এখন উনত্রিশ চলছে। একটা বেসরকারি ব্যাঙ্কের অফিসারের পোষ্টে আছে। বিয়ের জন্য একদম উপযুক্ত পাত্র বলতে যা বোঝায়। ওর মা ছেলের জন্য সম্বন্ধ দেখাও শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু ছেলে যে এভাবে একটা কাণ্ড করবে সেটা ভাবতেই পারেন নি। মহেশ বিশ্বাস তখন বসবার ঘরে সোফায় বসে রাগে টগবগ করে কেটলির ফুটন্ত জলের মত ফুঁসছেন। শৈবাল সোজা এসে বাবার সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাস করল, ’কী হয়েছে বাবা। এতো চেঁচাচ্ছ কেন ? আমি ওপরে বসে ফোনে আমাদের ব্যাঙ্কের একজন বড় কাস্টমারের সাথে জরুরী কথা বলছিলাম। তোমার চেঁচানি শুনে তাড়াতাড়ি কথা শেষ করে নেমে আসতে হল ! কী হয়েছেটা কী ? চেঁচাচ্ছ কেন ?’


মহেশ বিশ্বাস আরও রেগে গিয়ে বললেন,’কী হয়েছে মানে ? শুনলাম তুই নাকি ঐ ঝিয়ের মেয়ে ললিতাকে বিয়ে করবি ঠিক করেছিস ? তুই এটা ভাবলি কি করে শৈবাল ? পড়াশুনা করিয়ে মানুষ করে তুললাম কি এইসব দেখবার জন্য ? এ বাড়ির কোন সম্মান নেই নাকি অ্যাঁ ?’শৈবাল বলে ওঠে, ‘কেন বাবা, আমি তো কোন অসম্মানের কাজ করিনি ? তুমিই তো মানুষকে তার যথাযোগ্য সম্মান দেবার কথা বল। বড় বড় সভায় গিয়ে মনুষ্যত্বের কথা বক্তৃতা দিয়ে বলে বেড়াও। গরীব মানুষদের পাশে দাঁড়াবার, তাদের সাহায্য করবার কথা বল সবাইকে। তোমার লেখা এই সমস্ত আদর্শ বাদের কথা বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় বের হয়, কত প্রশংসা পায় তোমার লেখা। আর তুমি এই কথা বলছ ? ঝিয়ের মেয়ে বলে কি ললিতা একটা মানুষ না ? ওর বিধবা মা অনেক কষ্টে ওকে পড়িয়ে বি এ পাশ করিয়েছেন। এখন ও চাকরির চেষ্টা করছে। তা ওকে বিয়ে করে বৌ করলে অন্তত তুমি কোন আপত্তি করবে না সেটাই তো আমি জানতাম। তাহলে তুমি এই কথা বলছ কেন আজ ?’


মহেশ বিশ্বাসের চোয়ালটা ঝুলে পড়ল, হাঁ করে ছেলের মুখে দিকে তাকিয়ে রইলেন। ওঁর এম বি এ করা শিক্ষিত এবং ব্যাঙ্ক অফিসার ছেলেকে এখন উনি কী উত্তর দেবেন ? নারী শিক্ষা, মেয়েদের সম্মান, মেয়েদের আত্মনির্ভরতা এইসব নিয়ে লিখে এবং বক্তৃতা দিয়ে মহেশ বিশ্বাস শাসক দলের নজরে পড়েছিলেন পাঁচ বছর আগে আর এখন এই এলাকার এম এল এ। এখন ওঁর সামনে ছেলের এই কেলেঙ্কারি একটা বিরাট সমস্যা হয়ে দাঁড়াল। একদিকে লোকের কাছে মুখ দেখানোর মত সমস্যা আরেকদিকে নিজের পরিবারের কাছে নিজের ভণ্ডামি ধরা পড়ে গেলে চিরকালের মত ছোট হয়ে যাবার মত সমস্যা। এদিকে সামনের বছর বিধান সভার  ইলেকশন আসছে। এই কথা জানাজানি হলে কাগজওয়ালারা আর টি ভি চ্যানেলের লোকরা হামলে পড়বে।


মহেশ বাবু একটু চুপ করে গভীর ভাবে চিন্তা করে ভাবলেন আচ্ছা, এটাকেই তো সামনের ইলেকশনে একটা বড় দৃষ্টান্ত দেখিয়ে আরও বেশি ভোট আদায় করা যায়। বিশেষ করে ঐ বস্তির ভোট ব্যাংকটা তো একদম একশ ভাগ ওঁর দিকেই পড়বে। ছেলেকে বস্তির মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়েছেন শুনলে জনতার সেন্টিমেণ্ট পুরোটাই মহেশ বাবুর দিকে ঝুঁকবে একেবারে একশ ভাগ নিশ্চিত। আর মেয়েটাও তো দেখতে মন্দ নয়, তার উপর শৈবাল বলল ও নাকি বি এ পাশ করেছে। ঠিক আছে, ওরা যখন দুজন দুজনকে ভালোবাসে তাহলে করুক বিয়ে, আমি আর কেন আপত্তি করব। তবে হ্যাঁ, ঐ বস্তির একশ ভাগ ভোট কিন্তু আমার চাই। সামনে দাঁড়ানো স্ত্রীর মুখের দিকে একবার তাকিয়ে মুচকি হাসি হেসে বললেন,”ঠিক আছে। তুই যখন ওকে পছন্দ করিস তাহলে বিয়ে কর, আমার আর কিছু বলার নেই। তবে বৌমা বৌভাতে যেন বস্তির মাথাদেরও নিমন্ত্রণ করে আসতে বলে দেয়। ওদের সাথেও তো আমার পরিচয় হওয়া দরকার , তাই না ?”


বুদ্ধিমান শৈবাল বাবার কথার গূঢ় অর্থ বুঝতে পেরে একটু হাসল শুধু। 

0 comments: