সম্পাদকের কলমে
লেখা পাঠানোর জন্য
Total Pageviews
প্রাকসভ্যতারগল্প
প্রদীপ ঘটক
তিন দিন বৃষ্টি চলছে। কখনও অঝোরে কখনও টিপটিপ। রাতে একবার থেমেছিল। ভোরে আবার নেমেছে। এখন একটু কমেছে।
ছাতা মাথায় ছোট কত্তা এসেছে জমি দেখতে। আল ছাপিয়ে বৃষ্টির জল নদীর দিকে। অনেক জায়গায় আল ভেঙেছে। নতুন বাড় নেওয়া আলও ভেঙে চৌচির।
তালগাছের নীচে বসে বায়েন মাঝি। মাথায় পেকে। নৌকা ঘাটে বাঁধা। সকাল থেকে একটাও লোক আসে নি।
ছোট কত্তা হাঁক মারে "বায়েন না কে রে?"
জলের শব্দ তালগাছে আওয়াজ তুলছে জোরে। জমিতে টপ টপ আওয়াজ। বায়েন শুনতে পায় না।
ছোট কত্তা কাঁধে ছাতা ধরে লুঙিটা দু'মুচো করে বাঁধতে বাঁধতে বায়েনের কাছে আসে।
"সকাল থেকে লোক আসেনি বলে কি মন খারাপ না কি রে?"
"না গো ছোট কত্তা। বস্সাকালে তো পেত্যেক বছ্ছরই এমন হয়।"
"তবে?"
"মিত্যুবাণ ছোট কত্তা, মিত্যুবাণ হাজির।"
"মানে?" ছোট কত্তা বুঝতে পারে না।
বায়েন টিনের কোটো থেকে বিড়ি বার করে, ছোট কত্তাকে একটা দেয়, নিজে একটা ধরায়। লম্বা একটা টান মেরে বায়েন বলে "পাপ আমারই কত্তা!"
"কি পাপ?" বিড়ি হাতে নিয়ে দু'আঙুলে রগড়াতে রগড়াতে আগ্রহ ভরে থাকিয়ে থাকে বায়েনের দিকে।
ঘাটের দিকে তাকায় বায়েন। স্রোতস্বিনীর প্রবল স্রোত ধাক্কা মারছে বাঁধা নৌকায়।
"সেইদিন এক মেয়েছেলে খুচরো টাকা দিতে পারে নাই। বলেচিল ফেরার পতে দেবে। কি হল কি জানে, মুক থেকে ফস্ করে বেরিয়ে গেল, পরনের কাপড়টা বাঁদা দিয়ে যাও। তাপ্পর সেই মেয়েছেলেটা ঘুরে তাকাল। বিশ্বেস কর ছোট কত্তা, ও রুপ আমি কুনো মেয়েমানুষের দেকিনি। নক্ষী সেদিনই আমাকে ছেড়ে গেল।"
"ভুল করেছিস্, মেয়েছেলেকে এমন কেউ বলে?"
"ক্ষেমা করে দাও কত্তা।"
"আর তোর টাকা ওড়ার গল্পটা? ওটা সত্যি?"
"হাঁ, ভিজে কাগজের নোটগুনো উটোনে শুকুতে দিয়েছিলাম। সুবল বলল, ও কাকা, তোমার টাকা উড়ে যাচ্চে গো। মুড়ি খাচ্চিলাম কত্তা, বলে ফেল্লাম, ক'টা আর যাবে? এগুনো নক্ষী মা সহ্য করেনি গো।"
বায়েনের চোখে অনুতাপের জল। কাঁচা পাকা চুলের হেঁট মাথা থেকে চোখের জল মিশছে আলের ঘাসের জলে।। জোরে হাওয়া এল। ছাটের জল বায়েনের পেশিবহুল পিঠ, বাহু গড়িয়ে পড়ছে। কোমরের ভিজে গামছাটার ফুঁপিতে চোখ মোছে বায়েন। ছোট কত্তা চুপচাপ বিড়ি টানছে।
"তাই আমার মিত্যুবাণ হাজির ওই দেকো" বাঁ হাতের তর্জনী তুলে বায়েন দূরের নদীর পাড় দেখায়।
পাথর নেমেছে, ঝামা ইঁট নেমেছে। বর্ষার পরেই খড়ি নদীতে ব্রিজ তৈরি হবে।
0 comments:
Post a Comment