সম্পাদকের কলমে
নারায়ণ দেবনাথ-
সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম ।
ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম ।
নমস্কার সহ
অঙ্কুর রায়
সংখ্যার সম্পাদক
অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী
প্রধান সম্পাদক
লেখা পাঠানোর জন্য
আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com
Total Pageviews
By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.
মন চল নিজ নিকেতনে
কৃপাণ মৈত্র
১৯ এর বইমেলাটা অন্যরকমভাবে স্মরণ না করলে নয়।হলদিয়া থেকে কলকাতা রাস্তা কম নয়।মেলার মজা লুটে ফিরে আসতে হবে ।বইপ্রীতি যতই হোক না কেন কলকাতায় রাত্রি বাসের রসদের অভাব গনগনে।একা হলে হাত পা ছাড়া। ছুটে গাড়ি ধরা বা ভীড় ঠেলে এগিয়ে গিয়ে বাসের কান ধরে ঝুলে থাকাটা কোন ব্যাপার নয়। কিন্তু বান্ধবী ধরে বসলো, তাকে সঙ্গে নিতে হবে।গেরোর বাঁধন এড়ানো সহজ ব্যাপার নয়। না বললে গুন গুণিতক প্রায় জনাপঁচিশেক লাইক থেকে বঞ্চিত হতে হবে। সাপ ব্যাঙ যা লিখি, আর কিছু না হোক ফেসবুকে পঁচিশটা লাইক তো পড়বেই। এমনকি কেউ বিরূপ মন্তব্য করলে ওরাই তার প্রজ্ঞাকে সাবাড় করে দেয়।
সুনেত্রা বলল, তাহলে কাল সকালের হলদিয়া কলকাতা বাসটায় উঠলেই হবে। তোমার তো আবার নেইএর চাষ।তুমি কিছু চিন্তা করো না।আর হ্যাঁ চালভজা আর বাদাম ভাজা সঙ্গে নিয়ে নেব। আহা জলের বোতলটাও নিয়ে নেবখন। তোমাকে কিছু বইতে হবে না।
মনে মনে বললাম ওই ওজীবগুলোর থেকে সজীব কমলে ভারটা সহজ হত ।
শেষ পর্যন্ত মনকে শাসন করে বাসস্ট্যান্ডে নিজেকে থিতু করলাম। পাঁচ মিনিট পর বাস। কিন্তু সুনেত্রার দেখা নেই। ফোনটা বের করে ফোন করতে গিয়েও থমকে থামলাম। দরকার কি ।দেখি আরেকটু। তেমন হলে নদীপথ সম্বল।রায়চক হয়ে কলকাতা। নদীপথ খুবই মনোরম ।কি সুন্দর জল পৃথিবীর সূর্যকে ডিঙিয়ে লঞ্চের পথ করে নেওয়া। সমস্যা একটাই ওই পথে জ্যাম প্রচুর ।দু'একটা বই কমিয়ে দিলে রাহা খরচ হয়ে যাবে।
বাস এলো কিন্তু সুনেত্রার দেখা নেই । গাড়িটা বেশ ফাঁকা ফাঁকা। অবশ্য দুটো স্টপেজ পর ভরাট হয়ে যায়। গাড়িটা ছেড়ে দিল। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম ।এমন সময় 'তনুদা তনুদা'চিৎকার। সুনেত্রা রাস্তার মাঝখানে বাসটাকে আটকে চিৎকার করছে। দিলাম ছুট। পুরনো চপ্পল ।সঙ্গত করতে চায় না।ড্রাইভার জানালা ফুঁড়ে মাথা গলিয়ে দেখছে। কিন্তু বাসের কি সাধ্য সুনেত্রাকে মাড়িয়ে যায় ।কন্ডাক্টরের মুখের একরাশ বিরক্তি উপেক্ষা করে সবে বাসের পাদানিতে পা রেখেছি একটা জুতো খুলে রাস্তায় পড়ল। সুনেত্রা হাঁক পাড়ল,এই রোক রোক।কয়েক মিটার এগিয়ে বাসটা দাঁড়িয়ে পড়ল।একটা জুতো হাতে করে ছুটলাম তার দোসরকে আনতে ।দুহাতে দুটো জুতো নিয়ে ফিরে এলে কন্ডাক্টর ব্যাজার মুখে বলল, এমন করলে হয় ।
পাশাপাশি বসেছি আমরা দুজন। সুনেত্রা বলে, ভালো জুতোও কি নেই! শহরে কী করবে শুনি।
বোতলের জলে হাত ধুতে ধুতে বললাম ,খালি পায়ে অসুবিধে হয় না ।অভ্যেস আছে।কথাটা শুনে সুনেত্রা গুম হয়ে গেল। চালভাজার পুঁটলিটা এগিয়ে দিয়ে সুনেত্রা বললো, খাও ।
পথে আর কোন ঝামেলা হয়নি ।গেট পেরিয়ে মেলায় ঢুকে বড় বড় প্রকাশনার স্টল খুঁজছি।গজেন মিত্র,শঙ্খ ঘোষ নীরেন চক্রবর্তীদের বড় স্টলে ছাড়া খুব একটা পাওয়া যায় না ।সুনেত্রা কখন সঙ্গ ছাড়া হয়ে মাথা গুলিয়ে দিল। মহিলা বলে কথা। তার সুরক্ষা আগে দরকার ।অনেক খুঁজে তাকে আবিষ্কার করা গেল ।দু' হাতে বইয়ের পাহাড়। সেখানে উঁকি মারছে রান্নার বই, স্বাস্থ্য টিপস, ঘর সাজানোর হরেক রকম ...।,বইয়ের পাহাড় আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে সুনেত্রা বলল,খুব একটা বেগ পেতে হয় নি। ভালো করে প্যাকেট করে ফেল ।তোমার হাতের ওই ব্যাগটায় ভরে ফেল দিকিনি।
বান্ধবী কি বুঝবে কত সাধ করে ঐ ব্যাগটা এনেছিলাম বড় লেখকদেরকে কব্জা করব বলে।রান্নার বই বা স্বাস্থ্য টিপস থেকে তো টুকলি করা যায় না। লেখকদের দায় বইবার আশায় যে ব্যাগটা সযত্নে পাট হয়ে সম্ভাব্য সুখ লালন করছিল তার এখন গার্হস্থ্য সুখ না বইলে নয়। সুনেত্রার সব বই জায়গা করে নেওয়ার পর সেখানে তিল ধারণের ঠাঁই নেই যেখানে গজেন্দ্র মিত্র ,শঙ্খ ঘোষ ,নীরেন চক্রবর্তী, সঞ্জীব স্থান পায়, আমার মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেল।
সুনেত্রা ঘড়ি দেখে বলল, দেরি হয়ে গেছে। বাসে খুব ভিড় হবে ।এইবেলা না বেরোলে কিন্তু বাড়ি ফিরতে পারবে না। পশ্চিমের নরম সূর্য যেন আশ্বাস দিয়ে বইছে আজ না হয় কাল হবে। কিন্তু ভালই জানি পকট এবং পয়সা কোনটাই পারমিট করবে না। পৃথিবীর একবার সূর্য পরিক্রমনের অপেক্ষা ছাড়া গত্যন্তর নেই।অতএব মন চল নিজ নিকেতনে।
Subscribe to:
Posts (Atom)
0 comments:
Post a Comment