সম্পাদকের কলমে

নারায়ণ দেবনাথ- সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম । ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম । নমস্কার সহ অঙ্কুর রায় সংখ্যার সম্পাদক অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী প্রধান সম্পাদক

লেখা পাঠানোর জন্য

আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com

Total Pageviews

By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.

 লিভ-টুগেদার

মুক্তি দাশ

আজ উৎপলদের গৃহপ্রবেশ। অবশ্য বিশাল মাল্টি-কমপ্লেক্সের তিনতলার উত্তর-পূর্ব কোনে টু-বিএইচকে ওয়ালা সাড়ে-আটশ স্কোয়ারফিটের ফ্ল্যাটকে যদি গৃহ বলা যায়! উৎপল আমার ছোটবেলার বন্ধু।

দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়ায় একটা রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কের কমচারি। বছর সাতেক হলো বিয়ে করেছে। বউ শর্মিলা একটা বাচ্চাদের আধা-ইংরেজি স্কুলে পড়ায়।  ফাইভ-প্লাস ভীষণ জলি একটা মেয়েও আছে। নাম স্নেহা। আমার মেয়ে ঝিলিকরেই বয়সী। শুধু মাথা গোঁজার মতো নিজস্ব একটা ঠাঁই ছিল না। এবার তাও হয়ে গেল।

নরেন্দ্রপুরের সুগমপার্কে ছিমছাম ফ্ল্যাট। ওদের নতুন ফ্ল্যাটের গৃহপ্রবেশ অনুষ্ঠানে আমরাও নিমন্ত্রিত। তবে আয়োজন খুবই সীমিত। অল্প কয়েকজনকে ডাকা হয়েছে। উৎপলের কিছু কলিগ, দুচারজন নিকট-আত্মীয় আর বন্ধুদের মধ্যে আমরা আড়াইজন। মানে আমি, তৃণা এবং আমাদের একমাত্র মেয়ে ঝিলিক।

সকাল দশটার মধ্যেই আমরা সপরিবারে উৎপলদের ফ্ল্যাটে হাজির। আমাদের দেখে উৎপল-শর্মিলা হইহই করে উঠল। তৃণার হাত ধরে শর্মিলা নিয়ে গেল ভেতরের ঘরে। আমরা ড্রইংরুমে সোফায় গা এলিয়ে দিলাম। উৎপলের মেয়ে স্নেহা এসে টানতে টানতে নিয়ে গেল ঝিলিককে। ওরা পূর্ব-পরিচিত। এবং বন্ধুও।

সারাদুপুর পুজো-আচ্চা, গল্প-আড্ডা, খাওয়া-দাওয়া সারতে সারতে ঘড়ির কাঁটা একসময় যখন চারের ঘর ছুঁইছুঁই করছে, আমরা উঠে পড়লাম। অতিথি-অভ্যাগতরা ইতিমধ্যে অনেকেই বিদায় নিয়েছেন। এবার তো আমাদেরও উঠতেই হয়। কিন্তু ঝিলিক কোথায় গেল? গলা চড়িয়ে দুবার ঝিলিক ঝিলিক ডাকতেই শর্মিলা মুচকি হেসে ফোড়ন কাটল, বাব্বা, আপনার তো দেখছি মেয়ে অন্ত প্রাণ! দেখনু না, ওরা দুটিতে হয়তো ব্যালকনিতে বসে খেলছে। আহা! কতদিন পর দুইবন্ধুতে দেখা হল বলুন তো!

সবাই মিলে ব্যালকনিতে গেলাম। সত্যিই ওরা খেলছে। দুটি শিশু মনযোগ দিয়ে আপনমনে খেলছে। পুতুল নিয়ে খেলছে। একটা পুতুলকে রঙিন-রুমালের শাড়ি পরানো হয়েছে। আর একটা পুতুলের গায়ে ছেলেদের

পোশাক। নিশ্চয়ই ওরা বিয়ে-বিয়ে খেলছে। দৃশ্যটি মুহূর্তে ওদের, বিশেষ করে তৃণাকে, খুব নস্ট্যালজিক করে তুলল। ছোটবেলায় ওরাও তো এরকমই পুতুল নিয়ে বিয়ে-বিয়ে খেলত।

আমি এবার গলা খাঁকারি দিয়ে এগিয়ে গেলাম। বললাম, কিগো, তোমরা দুই বন্ধুতে কী করছ? বিয়ে বিয়ে খেলছ বুঝি? বাঃ! খুব ভাল, খুব ভাল!

পাশ থেকে মুখ বাড়িয়ে খুশির গলায় তৃণা বলল, জানিস, আমরাও না ছোটবেলায়…’

ওকে থামিয়ে দিয়ে ঝিলিক গম্ভীরভাবে কেটে কেটে বলল, আমরা মোটেই বিয়ে-বিয়ে খেলছি না, মাম্মি!

তৃণা উৎসুক হল। বলল, তবে কী খেলছিস?

এবার ফিক করে হেসে দিয়ে স্নেহা বলল, আমরা লিভ-টুগেদার লিভ-টুগেদার খেলছি, আন্টি!’

 

 

0 comments: