সম্পাদকের কলমে

নারায়ণ দেবনাথ- সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম । ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম । নমস্কার সহ অঙ্কুর রায় সংখ্যার সম্পাদক অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী প্রধান সম্পাদক

লেখা পাঠানোর জন্য

আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com

Total Pageviews

By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.

 সুরা অভিযান

দীপংকর চক্রবর্তী


এক অমাবস্যার কুটিল রাতের কথা। পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক সেই রাতে আমায় নিব,  ফুলএর সাথে আম-দুধকেও সঙ্গে নিয়ে, সুরা অভিযানে যেতেই হবে। প্রথমে যেতে হবে হাক্কার পাড় । এরপর গন্তব্যে। 


বাড়ির তিন ভিটেতে তিনটে ঘর। একটাতে ভাই, একটায় মা-বাবা-ছোটোবোন, আরেকটায় আমি থাকি। দখিন দিকটা খোলা ছিল তখন। নিচে পাশের বাড়ির বড়-বড় দু-তিনটে পুকুর । এরপর শুধু জমি আর জমি। তাতে, হুহু করে বাতাস আসে বাড়িতে দিনরাত। 


কথা হল, কি করে বেরই ! বাড়ির গেইটের দু'পাশের ঘর দুটোতে ভাই আর বাবাওরা থাকেন। শীত বিদায় নিলেও লেপ নেয়নি তখনও। মাথায় একটা কমন কুবুদ্ধি এল। লেপটাকে বালিশের সাথে লম্বালম্বি করে,  তাতে চাদর জড়িয়ে চুপিসারে দরজাটা বন্ধ করে দিই। উঠোনে দাঁড়াতেই ফাগুনের পাগলা হাওয়ায় প্রাণ আরও চঞ্চল হয়ে উঠল.....! 


দমকা হাওয়া বইতে লাগল। হঠাৎ কারেন্ট চলে যায়। ঘোর অন্ধকারে হাতরে বাড়ির টিনের গেইট টপকে বেড়িয়ে গেলাম। একাই। যেতে হবে অনেকটা পথ। গলি থেকে বেড়িয়ে মূল সড়কে যেতেই আবার কারেন্ট চলে এল। আমি হাঁটতে লাগলাম। এমনিতেই গ্রামের পথ-ঘাট রাত নটার পরই শ্মশানপুরী  হয়ে ওঠে। সেই রাতে নির্জন এই পথে চলতে গিয়ে একমাত্র ঝিঁঝিঁ পোকার একসুরো ঝিঁ - ঝিঁ ধুন ছাড়া আর কিছুই কানে আসছিলনা। যাদের বাড়িতে কুকুর ছিল, সেগুলো পর্যন্ত একাকী নিশাচর মানবকে তাড়া করার সাহস পাচ্ছিল না। কিছু শব্দ পেলেও, বাড়ির ভিতর থেকেই ভো-ভো করাকে নিরাপদ বলে মনে করছিল। রাস্তার পাশে কোনো বাড়িঘর নেই। সবগুলোই একটু ভিতরে। একটা বাড়ির বারান্দায় মিনমিন বাতি জ্বলছে। ল্যাম্পপোস্টের আলোগুলো পুজোর কদিনই থাকে। এরপরই যেই কি সেই। তাই কারেন্ট কোনো কাজে এলনা। কিন্তু আমার যেতে হবে। থামলে চলবে না। হাঁটতে-হাঁটতে অন্ধকার এক গলির মুখে আগুন দেখে বুঝলাম, নিব, ফুল এসে গেছে। কাছে গিয়ে ইশারা দিতেই কানে এল, 


- 'কুইট্টানিরে ?'

- 'হ ভাই, আইছি। কইছ না আর, যেই অন্ধকার রে ভাই, চোখ থাকতেও নিজেরে কানা মনে হয়।'

- 'চল চল তাড়াতাড়ি চল, অনেকখানি যাইতে হইব।'


সুরা'র নেশায় মত্ত নিধু বণিক ও ফুলদল লষ্করকে নিয়ে এগোতে থাকি। ওখানে বস্তা সহ থাকবে আম আর দুধ। একটা বট গাছের নিচে বসে থাকার কথা ছিল ওদের। কাছকাছি পৌঁছে খুক-খুক কাশি দিতেই বেড়িয়ে এল আকাশ মজুমদার আর দুলাল ধর। নিব ছিল অসম্ভব বিড়ি খোর। নিবকে তাই বারণ করা হল, সুরা অভিযানে বিড়ি ফুঁকতে। বলল ঠিক আছে। 


বটগাছের পাশের রাস্তাটি ছিল একটা লাল কাঁচা রাস্তা। সেটা ধরে এগিয়ে গেলেই রাণীর চর। এরপরই সুরেশ রাহা'র তরমুজের খেত। এটাই ছিল আমাদের স্ট্রিং-অপারেশন এর স্থান। নিব, ফুল, আম আর দুধকে নিয়ে আমরা ঢুকে পড়ি সেই খেতে। একটা - দুটো - তিনটে করে করে বেশ কয়েকটা যে যার মত পারছি আর বস্তায় পুড়ছি....


নিবের কি হল কে জানে ? কথা রাখল না সে ! দুম করেই দেশলাইটা জ্বালিয়ে বিড়ি ধরিয়ে বেদম টানতে লাগল। হঠাৎ একটা পাঁচ ব্যাটারি টর্চের আলো আমাদের চোখে মুখে এসে ঠেকল। কী করবো তখন ! চোর চোর বলে চিৎকার, চেঁচামেচিতে যে যার মত পালাবার আগেই এলাকার কিছু লোকজন হাতে দা, শাবল, বর্শা নিয়ে আমাদের ঘিরে  ধরলো। কাছে আসতেই ওদের চোখে মুখে বালি ছিটিয়ে দিয়ে আবার দৌড়োতে থাকি। পেছন-পেছন ওরাও। অবস্থা ভয়ানক দেখে নিব আর আমি পাশের এক ধান খেতে গিয়ে শুয়ে পড়ি। শ্বাসের গতিবেগ বেড়ে গেল। আমাদের ধরতে ওরাও পাশ দিয়েই দৌড়োচ্ছিল। ধরা পড়ার আতঙ্কে শ্বাস প্রশ্বাস তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠছিল। 


নিবের 'খুল্লুর-খুল্লুর' কাশির সমস্যা ছিল। একহাতে আমার, অন্য হাতে নিবের মুখ চেপে ধরে রাখি তাই। অনেক খোঁজাখুঁজির পর ওরা চলে যেতেই নিব ওঠে দাঁড়াতেই একটানে ওকে বসিয়ে দিই। এই ভুল করিস না। এরপর দুজনে মিলে হামাগুড়ি দিয়ে খেতের শেষ সীমানা অতিক্রম করে একগাদা কাদামাটি জড়িয়ে রাস্তায় গিয়ে ওঠি। 


রাস্তায় ওঠেই একে অপরকে বলছি, বাপরে,  বাঁচা গেলো ! শার্টটা খুলে সেগুলো মুছতে মুছতে ফুল আম আর দুধের কথা মাথায় আসতেই ওদের জন্য মনটা ব্যাকুল হয়ে ওঠে। নানান অশুভ চিন্তায় হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়ে উঠছিল। ওরা কী তবে ধরা পড়ে গেলো ? নিব বলল, দুধকে নিয়ে চিন্তা নেই। ও ঠিক পালিয়ে আসতে পারবে। চিন্তা হচ্ছে, বাকি দুজনকে নিয়েই। চল যেখান থেকে অভিযান শুরু করেছিলাম, আগে সেখানেই যাই। হাক্কার পাড়ে গিয়ে দুজনকে পেলেও, দুধকে না পেয়ে বিচলিত হয়ে পড়ি সবাই। যাকে নিয়ে কোনো চিন্তাই ছিলনা, শেষমেষ সেই কিনা.....! তবে কী সুরা'র কাছে দুধ ধরা পড়ে গেল ! 


চল, দুধের বাড়ি চল। বাড়ির পাশে যেতেই দুধ টের পেয়ে ওদের একটা গরু ঘর থেকে বেড়িয়ে আমাদের সামনে এসে হাজির হল। ভাই তোর জন্য খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম। কি করব ভেবে না পেয়ে বাড়ি চলে এলাম।  তোকে দেখে আত্মায় জল এল ভাই। দুধ,  নিবকে ধমক দিয়ে বলল, তোকে বারণ করার পরও কেন বিড়িটা জ্বালাতে গেলি। ভাগ্য ভালো বলে আজ কেউ ধরা পড়িনি। একবার ধরা পড়লে আজ আর রক্ষা ছিল না। নিব 'খেক-খেক' করে হাসতে-হাসতে আবার একটা বিড়ি ধরালো। এরপর একে একে সবাই মিলে লম্বা লম্বা টানে ফুঁকতে থাকি। নিমিষেই সব হাওয়া। ধোঁয়ার সাথে রাতের সব ঘটনাই অন্ধকারে কোথায় যেন মিলিয়ে গেল....! 


0 comments: