সম্পাদকের কলমে
নারায়ণ দেবনাথ-
সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম ।
ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম ।
নমস্কার সহ
অঙ্কুর রায়
সংখ্যার সম্পাদক
অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী
প্রধান সম্পাদক
লেখা পাঠানোর জন্য
আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com
Total Pageviews
By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.

লেসবিয়ান
এক
আমি বৃষ্টি।সুন্দরী সেক্সি মেয়ে। আমি লেসবিয়ান। ছেলেদের সঙ্গ ভাল লাগে না।
মেয়ে পছন্দ করি। আমার সেক্স পার্টনার রুমকি। একই কলেজে পড়ি। আমি নিজেকে আড়াল করতে
দুটো বয় ফ্রেন্ডের সঙ্গে ঘুরি। আবির আর অনুপ। পৃথিবী খুঁজে বের করলে অনেক লেসবিয়ান,
গে পাওয়া যাবে।কিছু ঘরে আছে লুকিয়ে । লজ্জা শরমে তারা আড়ালে থাকে। আরও
আশ্চর্যের কথা আবির আর অনুপ গে পার্টনার। একদিন আবিরের বাড়ি গিয়ে দেখি দুজনে
যৌনচর্চায় মগ্ন। আর বাড়িতে কেউ নেই। আমি বললাম, কি রে তোরা মেয়ে পছন্দ করিস না।
তারা বলল,কথাটা গোপন রাখিস। আবির বলল,আমি অনুপকে বিয়ে করব।
আমি সোজাসাপ্টা কথা বলতে ভালবাসি। বললাম, আমার সেক্স পার্টনার রুমকি। তাহলে
আমরা চারজন ঝাপুস মাল। কাজে লাগব আমরা পরস্পরের। বিয়ে লোকদেখানো তোদের করব।
একসঙ্গে থাকব। আর ঘরের ভেতরে অন্য কেস থাকবে, বস্।
কলেজে যাওয়া আসার পথে বৃষ্টি, রুমকি, আবির, অনুপ একসঙ্গে থাকে। পড়াশোনা
করে খুব মন দিয়ে। আবির বলে, কি আশ্চর্য দেখ, ঈশ্বর আমাদের এক কলেজে রেখেছেন।
আমাদের পরিচয় হয়েছে কাকতালীয় ভাবে। কেউ কাউকে চিনতাম না।
বৃষ্টির বাড়িতে বাবা আর মা। তারা বলেন, গ্রাজুয়েট হওয়ার পরে বিয়ে করে নিবি।
আমরা যোগাযোগ করছি । ভাল ছেলে দেখে বিয়ে দেব। আমদের সব কিছু তো তোদের
হবে।
বৃষ্টি বলেই ফেলল, মা আমি একজনকে ভালবাসি। তাকেই বিয়ে করব।
মা বললে, ঠিক আছে। তোর বাবাকে বলব। বৃষ্টি অনেকটা হাল্কা হল। যাক কথাটা
প্রাথমিকভাবে বলা হয়ে গেছে। এবার প্রয়োজন হলে আবিরকে এনে পরিচয় করিয়ে দেব।
এদিকে অনুপ ভাড়া বাড়িতে থাকে। তার বাবা, মা কেউ নেই। রুমকি খুব বড়লোকের মেয়ে।
একমাত্র মেয়ে। তার বাবা মা জানে না, মেয়ে সমকামী। জানলে দুঃখ পাবেন। তাই একদিন
বাড়ি থেকে পালিয়ে অনুপকে নিয়ে সিঁদুর পরে এল। শাঁখা পলা পরল। তারপর দুদিন পরে বাবা,
মার কাছে গিয়ে বলল, আমি বিয়ে করেছি। অনুপকে ভালবাসি আমি। অন্য কোথাও বিয়ে আমি করতে
পারব না। রুমকীর বাবা, মা বললেন, বাড়িঘর তোমাদের থাকল। আমরা টরেন্টোর
বাড়িতে থাকব। রুমকি বুঝল, তার বাবা মার চরম রাগ হয়েছে অমতে বিয়ে করার জন্য।
তাই তারা টাকা পয়সা মেয়েকে বুঝিয়ে দিয়ে চলে যাচ্ছেন।
এখন অনুপ ব্যবসা করে রুমকির সাহায্য নিয়ে। আর তাকে ভাড়া বাড়িতে থাকতে হয় না।
কিন্তু তাকে নকল স্বামী সেজে অভিনয় করতে হয়। রুমকি কলকাতার এক বিখ্যাত জায়গায়
থাকে। তার ইচ্ছে ভবিষ্যতে ওরা চারজন স্বামী স্ত্রী সেজে থাকবে। সুপ্রিম কোর্টের সমকামীতা
নিয়ে সম্মতিসূচক মন্তব্য থাকলেও ভারতের সমাজে এখনও তা মান্যতা পেতে দেরী আছে।
বিদেশে অবশ্য এটা কোন বিষয় নয়। তারা একসাথেই থাকে। লুকোচুরি খেলতে হয় না
সমাজপতিদের সঙ্গে।
চারজনই বি,এ পাশ করল। আবির চাকরির সন্ধান করতে লাগল। বৃষ্টিও নিজের পায়ে
দাঁড়াতে চেষ্টা করল। সে জানে নিজের পায়ে দাঁড়াতে না পারলে জীবনে স্বাধীনতা থাকে
না।
অনুপ খুব কল্পনাপ্রবণ। সে সময় পেলেই রুমকিকে তার গ্রামের গল্প বলে। খুব
ছোটবেলায় বাবা, মা কে হারিয়ে কাকার কাছে ছিল পনের বছর বয়স অবধি। শত অত্যাচার সহ্য
করেও সে গ্রামকে ভালবেসেছিল। সেই কথা সে বলে রুমকিকে। রুমকি তার ভাল বন্ধু। অনুপ
বলত,
আমার স্বপ্নের
সুন্দর গ্রামের রাস্তা বাস থেকে নেমেই লাল মোড়াম দিয়ে শুরু ।দুদিকে বড় বড়
ইউক্যালিপ্টাস রাস্তায় পরম আদরে ছায়া দিয়ে ঘিরে রেখেছে । কত রকমের পাখি স্বাগত
জানাচ্ছে পথিককে । রাস্তা পারাপারে ব্যস্ত বেজি , শেয়াল আরও অনেক রকমের
জীবজন্তু।.চেনা আত্মীয় র মতো অতিথির কাছাকাছি তাদের আনাগোনা । হাঁটতে হাঁটতে এসে
যাবে কদতলার মাঠ। তারপর গোকুল পুকুরের জমি, চাঁপপুকুর, সর্দার পাড়া,বেনেপুকুর ।
ক্রমশ চলে আসবে নতুন পুকুর, ডেঙাপাড়া ,পুজোবাড়ি, দরজা ঘাট, কালী তলা । এখানেই
আমার চোদ্দপুরুষের ভিটে । তারপর ষষ্টিতলা ,মঙ্গল চন্ডীর উঠোন , দুর্গা তলার
নাটমন্দির । এদিকে গোপালের মন্দির, মহেন্দ্র বিদ্যাপীঠ, তামালের দোকান, সুব্রতর
দোকান পেরিয়ে ষষ্ঠী গোরে, রাধা মাধবতলা । গোস্বামী বাড়ি পেরিয়ে মন্ডপতলা । এই
মন্ডপতলায় ছোটোবেলায় গাজনের সময় রাক্ষস দেখে ভয় পেয়েছিলাম । সেইসব হারিয়ে যাওয়া
রাক্ষস আর ফিরে আসবে না ।কেঁয়াপুকুর,কেষ্টপুকুরের পাড় । তারপর বাজারে পাড়া ,শিব
তলা,পেরিয়ে নাপিত পাড়া । এখন নাপিত পাড়াগুলো সেলুনে চলে গেছে । সাতন জেঠু
দুপায়ের ফাঁকে হাঁটু দিয়ে চেপে ধরতেন মাথা ,তারপর চুল বাটি ছাঁটে ফাঁকা । কত আদর
আর আব্দারে ভরা থাকতো চুল কাটার বেলা ।এখন সব কিছুই যান্ত্রিক । মাঝে মাঝে কিছু
কমবয়সী ছেলেমেয়েকে রোবোট মনে হয় । মুখে হাসি নেই । বেশ জেঠু জেঠু ভাব ।সর্বশেষে
বড়পুকুর পেরিয়ে পাকা রাস্তা ধরে ভুলকুড়ি । আর মন্ডপতলার পর রাস্তা চলে গেছে খাঁ
পাড়া , কাঁদরের ধার ধরে রায়পাড়া । সেখানেও আছে চন্ডীমন্ডপতলা , কলা বা গান,
দুর্গা তলার নাটমন্দির সব কিছুই । পুজোবাড়িতে গোলা পায়রা দেখতে গেলে হাততালি দিই
।শয়ে শয়ে দেশি পায়রার দল উড়ে এসে উৎসব লাগিয়ে দেয়। পুরোনো দিনের বাড়িগুলি এই
গ্রামের প্রাণ ।অনুপের গল্প শুনতে রুমকির ভাল লাগে। অনুপ বলে চলে,এই গ্রামে ই আমার
সবকিছু , আমার ভালোবাসা, আমার গান ।ছোটোবেলার সরস্বতী পুজো বেশ ঘটা করেই ঘটতো ।
পুজোর দুদিন আগে থেকেই প্রতিমার বায়নাস্বরূপ কিছু টাকা দিয়ে আসা হত শিল্পী কে
।তারপর প্যান্ডেলের জোগাড় । বন্ধুদের সকলের বাড়ি থেকে মা ও দিদিদের কাপড় জোগাড়
করে বানানো হত স্বপ্নের সুন্দর প্যান্ডেল । তার একপাশে
বানানো হত আমাদের বসার ঘর । পুজোর আগের রাত আমরা জেগেই কাটাতাম কয়েকজন বন্ধু
মিলে । কোনো কাজ বাকি নেই তবু সবাই খুব ব্যস্ত । একটা ভীষণ সিরিয়াস মনোভাব ।
তারপর সেই ছোট্ট কাপড়ের পাখির নিড়ে কে কখন যে ঘুমিয়ে পড়তাম তা কেউ জানতে পারতাম
না । মশার কামড়ও সেই নিশ্চিন্ত নিদ্রা ভাঙাতে পাড়তো না ।তবু সকালে উঠেই মচকানো
বাঁশের মত ব্যস্ততার আনন্দ । মা বাবার সাবধান বাণী ,ডেঙ্গু জ্বরের ভয় কোনো কিছুই
আমাদের আনন্দের বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে নি । হড়কা বানে যেমন সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে
সমুদ্রে ফেলে , আমাদের আনন্দ ঠিক আমাদের ভাসিয়ে নিয়ে যেত মহানন্দের জগতে । এরপরে
সকাল সকাল স্নান সেরে ফলমূল কাটতে বসে পড়তাম বাড়ি থেকে নিরামিষ বঁটি এনে ।
পুরোহিত এসে পড়তেন ইতিমধ্যে । মন্ত্র তন্ত্র কিছুই বুঝতাম না । শুধুমাত্র বুঝতাম
মায়ের কাছে চাইলে মা না করতে পারেন না । পুষ্পাঞ্জলি দিতাম একসঙ্গে সবাই । জোরে
জোরে পুরোহিত মন্ত্র বলতেন । মন্ত্র বলা ফাঁকি দিয়ে ফুল দিতাম মায়ের চরণে ভক্তিভরে
। তারপরে প্রসাদ বিতরণের চরম পুলকে আমরা বন্ধুরা সকলেই পুলকিত হতাম । প্রসাদ খেতাম
সকলকে বিতরণ করার পরে ।আমাদের সবার প্রসাদে ভক্তি বেশি হয়ে যেত ,ফলে
দুপুরে বাড়িতে ভাত খেতাম কম । সন্ধ্যা বেলায় প্রদীপ ,ধূপ জ্বেলে প্যান্ডেলের ঘরে
সময় কাটাতাম । পরের দিন দধিকর্মা । খই আর দই । পুজো হওয়ার অপেক্ষায় জিভে জল ।
তারপর প্রসাদ বিতরণ করে নিজেদের পেটপুজো সাঙ্গ হত সাড়ম্বরে ।এরপরের দৃশ্য প্রতিমা বিসর্জন । কাছেই একটা পুকুর । রাত হলে সিদ্ধিলাভে(দামীটা না) আনন্দিত হয়ে নাচ তে নাচতে অবশেষে শেষের বাজনা বেজে উঠতো । মা তুই থাকবি কতক্ষণ, তুই যাবি বিসর্জন ।
তার সাথে আমাদের মনটাও বিসর্জনের বাজনা শুনতো পড়ার ঘরে বেশ কিছুদিন ধরে...।রুমকি অনুপকে জড়িয়ে ধরে আবেগে। বলে, খুব সুন্দর কথা বল তুমি।
দুই
আবির আর
অনুপ বড় হয়েছে বন জঙ্গলের আদর পেয়ে ।তার এক বন্ধু ছিল সুনীল। আবির বৃষ্টিকে বলে
চলেছে তার গল্প। শরীরের ব্যাপারে অনুপের সঙ্গ ভাল লাগত। তবে ছোটবেলার পুজোর
কথা মনে আছে। আবির, অনুপ আর সুনীল এ পাড়ার, ওপাড়ার ছেলে।কাছাকাছি বাড়ি ।
আবির জানত,সুনীল ছোটো থেকেই মায়ের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে থেকেছে। বাবা
থাকলেও তার সঙ্গে ভাব ছিলো না সুনীলের। তাকে এড়িয়ে চলতো সুনীল।তার কারণ বাবা খুব
রাগী লোক। সবসময় মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে। মাকে গালাগালি দেয়। মনের মধ্যে সুনীলের
বাবার প্রতি শ্রদ্ধা নেই শৈশব থেকেই। সে তার মায়ের কাছে থাকে। পাড়ার দাদুর কাছে
পড়াশোনার শেষে গল্প শুনতে যায়। মা বিভিন্ন সময়ে রকমারি পুজো করেন। ব্রত পালন করেন।
নিজেকে এইসবের মধ্যে ব্যস্ত রাখেন তিনি। মা পৌষ মাসের ব্রত পালন করেন। মা ব্রতকথা
শোনানোর জন্য সুনীলকে, পাড়ার মাসিকে ডেকে আনতে বললেন। মাসি এলো, কাকিমা এলো।
মাসি বলেন, পৌষ মাসে যে মহিলারা এই ব্রত পালন করেন, কথিত
আছে, তাঁর পিতৃকুল ও শ্বশুরকুলের কল্যাণ সাধিত হয়।মা বলেন, ঠিক বলেছেন আপনি।কাকিমা
বললেন, এবার আপনি বলুন। আমরা শুনি।সুনীলের মা বলতে শুরু করলেন গল্পের মত
সুনীলকে আর সবাইকে। তার মা বলেন, জেনে রাখা ভাল। আবির আর অনুপ মন দিয়ে শুনত
সুনীলের মায়ের কথা। সুনীলের মা ব্রতকথা বলার মত বলছেন সকলকে,
নতুন ধানের তুঁষ আর গোবর দিয়ে অগ্রহায়ণ মাসের সংক্রান্তিতে বড় বড় চারটে নাড়ু
পাকানো হয়। সর্ষে ফুল আর নাড়ু ধরে পুজো করা হয়।১লা পৌষ থেকে প্রতিদিন ছোটো নাড়ু চারটে করে সংক্রান্তির আগের দিন অবধি পূজা করা হয়।সুনীল প্রশ্ন করে মা ক্ষীরের নাড়ু খাবো আমি। মা বলেন, নিশ্চয় খাবি। তবে পাশের বাড়ির কাকিমা, মাসিমাকে ব্রতকথা শোনাই দাঁড়া। কাকিমা বললো,আমাকে ভালো করে শিখিয়ে দাও দিদি। আমার খুব ভালো লাগে এসব।
পাশের বাড়ির কাকিমা এ সব একদম কিছু জানে না। মা তাকে শিখিয়ে দেয় নিয়মাবলী। মা বলেন, শোনো, নিয়ম তো অনেক আছে। তবে যতটা পারা যায় সংক্ষেপে বলি।
মকর সংক্রান্তির দিন ছ' কুড়ি ছ'গন্ডা অর্থাৎ ১৪৪টি ক্ষীরের নাড়ু আর পরমান্ন তৈরি করে খেত সবাই। খাবার সময় সেঁজুতির দূর্বা ও তুঁষ তুঁষলীর নাড়ুগুলি একটি মালসা বা হাঁড়ির ভিতর রেখে তাতে আগুন দিতে হয়। পিছন দিকে রেখে খাওয়া শেষ হলে ভাসান মন্ত্র পড়ে জলে ভাসিয়ে দিত সুনীলের মা। তারপর আঁচিয়ে ঘরে ঢুকলো। সুনীলের মায়ের বাড়িতে আবির আর অনুপের মা আসত। সে অনেকদিনের কথা।তারপর অনুপ আর আবির দুজনেই মা বাবার সঙ্গে চলে গেল। মাঝে মাঝে গ্রামে আসত। কিন্তু তাদের বাবার চাকরি শহরের দিকে হওয়ায় গ্রামে আসা হত না। স্মৃতিগুলো ঘুরে ঘুরে বেড়াত মনের অলিগলিতে। আবির আর অনুপ সমকামী। তার ছোট থেকেই সে কথা জানত। কিন্তু মানুষ জানে তার ভবিষ্যত জীবন। কোনো এক অদৃশ্য সুতোর টানে আমরা পুতুলনাচের খেলা খেলতে পৃথিবীতে আসি। কে কখন সেই সুতোর টানে চলে যাব মায়া ছেড়ে কেউ জানি না।
এইভাবে চার বছর পালন করার পর ব্রত উদ্ যাপন করত নারীরা । সরষে ফুল ওমূলা ফুল দিয়ে মন্ত্র বলত সুনীলের মা, তুঁষ তুঁষুলী কাঁধে ছাতি, বাপ মার ধন যাচাযাচি, স্বামীর ধন নিজ পতি, পুত্রের ধনে বাঁধা হাতি, ঘর কোরবো নগরে, মরবো গিয়ে সাগরে, জন্মাব উত্তম কুলীন বামুনের ঘরে।
পৌষ মাসভর পূজা করে মা। সুনীল বলে আবিরকে, সংক্রান্তির দিন যে চারটি নাড়ু বেশি থাকবে তা নিয়ে ফুল দূর্বাসহ পুজো করে লক্ষীর হাঁড়িতে তুলে রাখা হয়।
ক্ষীরের নাড়ু খেতে খেতে মন্ত্র পড়া হয়। সুনীলের স্বভাব মেয়েদের মত। সে এইসব লক্ষ্য রাখত খুব। সুনীল ছড়ার মত বলত, তুঁষ তুঁষুল সুখে ভাসালি আখা জ্বলন্তি পাখা চলন্তি
চন্দন কাঠে রন্ধন করে খাবার আগে তুঁষ পোড়ে
খরকের আগে ভোজন করে
প্রাণ সুখেতে নতুন বসতে
কাল কাটাব আমি জন্ম এয়োতে।
চার বছর পর ব্রত উদ্ যাপন করতে হয়।কাকিমা বলে, কি হবে এসব করে? মা হাসতে হাসতে বলেন, বিশ্বাস থেকেই ভক্তি।
পৌষমাসের শুক্লাপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে এই ব্রত পালন করা হয়। এর ফলে পুত্র কন্যার অকাল মৃত্যু রোধ হয় বলে বিশ্বাস নারীমহলে। শোনো গল্প তাহলে,
নন্দী গ্রামে এক নারীর বৌমা ও ছেলে ছিলো। তার নাতিপুতি ছিলো না।
বৌমা খুব পেটুক। সে ঠাকুরের নৈবেদ্যের থালা থেকে কলাটা,সন্দেশটা নিয়ে খেয়ে নিত।
ফলে তার কোনো ছেলেপিলে হতো না।
মহিলা এক সাধুর পরামর্শে পাটাই ষষ্ঠীর ব্রত পালন করতে লাগলেন।
বাড়ির উঠোনে পুকুর কেটে বেণা ডালের পাটাই পুঁতে নৈবেদ্যের রেকাবি সাজিয়ে পুরুতকে দিয়ে পুজো করালেন।
বউএর নৈবেদ্য দেখে জিভে জল এলো।মহিলার শঙ্খধ্বনিতে তার চেতনা ফিরলো।
মহিলা বৌমাকে বললেন, পাটাই দেবীর কাছে ক্ষমা চেয়ে বর প্রার্থনা করো।
বৌমা তাই করলেন। এক বছর পরে তিনি গর্ভবতী হলেন। সংসারে ঘর আলো করে নাতনি এলো। মহিলা সুখে সংসার করতে লাগলেন।
চলিত আছে যে এই ব্রত করলে মৃতবৎসা
প্রসূতির সন্তান হয় ও জীবিত থাকে।
কুমারী,
সধবা,পুত্রবতী ও বিধবা সকলেই এই ব্রত পালন করতে পারেন।অষ্টচাল,অষ্টদূর্বা
কলসপাত্রে ধুয়ে, শোন সবে ইতুর কথা ভক্তিযুক্ত হয়ে।
এই ব্রত কার্তিক
মাসের সংক্রান্তিতে আরম্ভ করতে হয় এবং অগ্রহায়ণ মাসের সংক্রান্তির দিন পুজো শেষ
করে সেইদিন ইতুরসাধ দিয়ে সকলে প্রসাদ পায়।সন্দে, মন্ডা,মিঠাই ও সাধ্যমত ফলমূল দিয়ে
নৈবেদ্যের রেকাবি সাজাতে হয়। পুজো হওয়ার পরে সকলে প্রসাদ পায়।
মা গোঠষষ্ঠী ব্রত
ও অগ্রহায়ণ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠীতে করতে হয়। ঘটে বটের ডাল,দধি,তৈল,হলুদবাটা,
ফল,ফুল সবই দিতে হয়।পিঠুলির গোঠ গঠন করে দিয়ে বাঁশের পাতায় বারো মাসে তেরো
ষাট দিতে হয়। রালদুর্গা ব্রত যে নারী করেন তার সকল দুঃখের শেষ হয়ে সুখের উদয়
হয়।
কুলুই মঙ্গলবার
ব্রত এই মাসে পালন করতে হয়। কুলের ডাল পুঁতে ঘটস্থাপন করতে হয়। একটি বড় কুলোতে
পিঁটুলির আলপনায় ১৭টি ডিঙি অঙ্কিত করে ১৭টি কুল, ১৭টি কুলপাতা, জোড়া
মূলা,জোড়া কড়াইশুঁটি , ১৭ভাগ নতুন চিঁড়ে,নতুন খইয়ের মুড়কি দিয়ে কুলোয় সাজাতে হয়।
আতপ চালের নৈবেদ্য সাজাতে হয় রেকাবিতে ।
এছাড়া
ক্ষেত্রব্রত, সেঁজুতিব্রত, নাটাইচন্ডী ব্রত, মুলোষষ্ঠীর ব্রত প্রভৃতি ব্রত আছে
যেগুলি এই মাসেই পালন করতে হয়।
নাটাইচন্ডীর ব্রতে
রবিবারে মায়ের কাছে বর চাওয়া হয়। ধন সম্পত্তি হারায় না কোনোদিন এই ব্রত পালন
করলে। নাটাই চন্ডীর কাছে প্রার্থনা করতে হয়,মা নাটাই চন্ডী, আমরা যেনো হারানো ধন
খুঁজে পাই।
নানা উপাচারে পূজা
করা হয় নাটাই চন্ডীর।
কাকিমা মায়ের কাছে
ব্রতকথা শোনার পরে প্রণাম করেন। মাকেও একটা প্রণাম ঠুকে দেন। মা বলেন, করো কি বোন।
কাকিমা বলেন, আপনার কাছে অনেক কিছু শিখলাম। মা বলেন, তোমাকে একদিন জয় মঙ্গলবারের
ব্রতকথাও শোনাবো। দেখবে ভালো লাগবে।
আবির সুনীলের বাড়ি
গিয়ে পুজো দেখতে ভালবাসত। পুজো শেষে, সুনীল দেখলো মা
লাল পাড় সাদা শাড়ি পরে ঠাকুর ঘরে ঢুকলেন। মাকে এখন সারদা মায়ের মত লাগছে।
এবার বাবা অফিসে
যাবে। বন্ধুর বাড়ি যান সকালে উঠে। গল্পগুজব করে দশটায় বেড়িয়ে পরেন কাজে। বাবা
বললো,সুনীল, তোর মাকে বল,পিন্ডি বেড়ে দিতে। এখনি যাবো। সতীগিরি দেখাতে মানা
কর। আমি সব জানি। শালা জালি মালটা আমার কপালেই জুটলো। আবির, সুনীল আর অনুপ সব শুনত
কিন্তু কিছু বলতে পারত না ভয়ে। এখন হলে দেখিয়ে দিতাম, আবির বলে অনুপকে।
মা সুনীলকে পাঠিয়ে
দেন গল্পদাদুর কাছে। সুনীল আবিরকে বলে, বাবা কেন মা কে জ্বালায়।মা তো খুব ভালো।
ঠাকুর বাবাটা এরকম কেন? আমার বাবার উপর কি ভূত বা পেত্নী ভর করেছে।
দাদু এরকম একটা গল্প বলেছিলেন। আবির বলে, আমাদের মা মাসিরা চুপ করে অত্যাচার
সহ্য করে। সহ্য না করে, প্রতিবাদ করা উচিত।
তিন
তারপর দিন যায়,
মাস যায়, বছর যায়। সব ওলট পালট হয়ে যায়। কি এক কঠিন রোগে ভুগে সুনীল মরে যায়।
আবির, অনুপ তাদের বাবার চাকরি সূত্রে গ্রাম ছেড়ে চলে আসে শহরে। এখানে এসে তারা
বাড়ি করেছে। পড়াশোনা, করে বড় হয়ে গেছে এই শহরে। স্মৃতি ক্ষীণ হয়ে গেছে মনের
মণিকোঠায়। এখানে এসে আবির আর অনুপের পরিচয় হয়েছে বৃষ্টি আর রুমকির সঙ্গে। তারাও
সমকামী। ছেলেদের পছন্দ করে না। সে স্বাধীনভাবে নির্বাচিন করে নিয়েছে তার জীবনসাথী।
বৃষ্টি বলে, সুপ্রিম কোর্ট ৩৭৭ ধারায় জীবনসঙ্গী খুঁজে নেওয়ার অধিকার ঘোষণা করেছেন।
রুমকি বলে, তবু সমাজে এখনও তা মানতে পারে না। ভারতবর্ষে এখনও এই সম্পর্ক স্বাভাবিক
হতে দেরী আছে।
বৃষ্টি বাবা মা কে বলে আবিরকে বিয়ে করল। আবির বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। তার
বাবা মা বাড়ি বিক্রি করে গ্রামের বাড়ি চলে গেলেন। তারা এই
বিয়েতে তারা রাজি ছিলেন না। আবিরকে তার পাওনা গন্ডা বুঝিয়ে দিয়ে বললেন, তোমরা সুখে
থাক।
বৃষ্টি আত্নহত্যার ভয় দেখানোই তার বাবা মা আর জোর করেন নি। বেকার ছেলে আবির
বিয়ে করে বৃষ্টিকে কলকাতার রুমকীদের বাড়িতে তুলল। বিয়ে বাড়ির মত কোনো
ধূমধাম হল না। পাড়ার লোক বলল, ভালবাসার বিয়ে এইরকমই হয়। ভূত ভোজন করিয়ে লাভ নেই।
ভাল খাওয়ালেও বলবে, রসগোল্লা গোল ছিল না।
রুমকি বলল, না না, জনতা হল জনার্দন। প্রণম্য। আমদের খাওয়াবার ক্ষমতা নেই। আবির
বেকার ছেলে তাই... । সকলে বলল, না না ঠিক আছে। তোমরা সুখে থাক। খাওয়াবে নিশ্চয়ই।
তবে চাকরি বাকরি হলে তবে। সমাজে এখনও অনেক ভালমলোক আছেন বলেই পৃথিবী এত সুন্দর।
আবির বলল।এ পাড়ার লোকজন খুব ভাল। এখানে আমাদের কোন অসুবিধা হবে না আশা করি। তারপর
সারাদিন কাটল, ঘর বাড়ি গোছাতে। রাতের খাবার সবাই মিলিতভাবে করে নিল। পাড়ার দশজনকে
নিয়ে খাওয়া দাওয়া সারা হতে প্রায় এগারোটা বেজে গেল।
তারপর রাত হল। ফুলশয্যার খাটে বৃষ্টি, রুমকির সঙ্গে আর আবির, অনুপের সঙ্গে
কামনার আগুনে শুদ্ধ হলো। অনেক বাধা পেরিয়ে আজ তারা মিলিত হল সুখে। আর সমাজের লোক
জানল, দুটো ছেলে দুটো মেয়েকে বিয়ে করেছে। তারা ভাল বন্ধু। একসঙ্গে থাকে। সমকামীতার
কথা কেউ জানল না। শুধু জানল ওরা চারজন। ওদের আলাদা ঘর, আলাদা খাট, বিছানা সবই।
বৃষ্টি আর আবির সকালে চা আর জলখাবার বানাল। তারা দুদিন খুব আনন্দে কাটাল।
রুমকি আর অনুপ পরিবেশন করল। তারপর অনুপ বলল, সমাজ এখনও মানতে চায় না
এই সম্পর্ক। সুপ্রিম কোর্ট নিজের পছন্দ মত সঙ্গি বেছে নেবার পারমিশন দিয়েছে। তবু
সমাজ এই সমকামি ভালবাসা মানতে চায় না।
কি করবে, তারা লুকিয়ে মিথ্যা কথা বলে সমাজের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে চাইল।
বৃষ্টি আর রুমকি বাচ্চা নিতে চাইল না। ইচ্ছে করলে তারা তাদের ছেলে বন্ধুদের কাজে
লাগিয়ে নিজের বাচ্চা নিতে পারত। কিন্তু রুমকি আর বৃষ্টির ভালবাসার অপমান হত বলে
তারা মনে করে। আর আবির আর অনুপও রাজি হল না। তারা বলল, দত্তক নেওয়ায় ভাল। তাতে
সবদিক বজায় থাকবে। তারা ভদ্র সভ্য সমাজে মানুষ হয়েছে। তাই তাদের কাছে নিজের সম্মান
অনেক বড়। তারা একসাথে থাকে। সমাজে সকলেই তাদের সম্মান দেয়। তাদের
প্রত্যেকের চরিত্র খুব ভাল। আশেপাশের বাড়ি থেকে ছুটির দিনে অনেকে পড়তে আসত। সমাজের
সঙ্গে সুন্দরভাবে মিশে গিয়েছিল তারা।
অনাথ আশ্রম থেকে দুবছর পরে দুটি বাচ্চা দত্তক নিল।
তাদের টাকা পয়সার অভাব নেই। চারজনই রোজগার করে। তারপর পৈতৃক সম্পত্তি
আছে।
দুজন কাজের মাসি আছে। তারাই সব কাজ দেখাশোনা করেন। তারা কাছাকাছি বস্তির লোক।
তাই বাচ্চা দেখাশোনা, রান্নাবান্না সবকিছু কাজ তারা ভালভাবে করতে পারে।
ছোটবেলা সব শিশুর যেমন কাটে তাদেরও একইরকমভাবে কেটেছিল। তাই তারা স্মৃতি
রোমন্থন করে বারবার। আবিরের বাড়ি আর অনুপের বাড়ি এপাড়া, ওপাড়া, কাছাকাছি। তাই
লক্ষীপুজোয়, সরস্বতী পুজোয়, নাটাই ষষ্ঠীর ব্রত হলেই দুজনে দুজনের কাছাকাছি
হত। কত কথা হত। তাদের মা, বাবা কেমন কষ্ট করে ধনী হয়েছে এইসব কথা একে অপরকে শেয়ার
করত। এছাড়া তাদের আরও বন্ধু ছিল। সুনীল বলে একটা ছেলে তাদের কাছে আসত গল্প শুনতে।
তার বাবা মা কে সন্দেহ করত, অত্যাচার করত। এসব কথা তারা বলাবলি করত। আর পাঁচটা
ছেলের মতই তারা আদরে মানুষ হয়েছে।
তারপর হঠাৎ এক দুর্ঘটনায় আবির আর অনুপ মরে গেল। মৃত্যু তো হঠাৎকরেই এসে যায়।
সেদিন ছিল রবিবার। ছুটির দিন। বেড়াতে গেল দুজনে ট্যাক্সি ভাড়া করে দীঘা।
সেখানে একটা লজে রাত্রি বাস করল। তারা নেশা করল। তারপর যৌনখেলায় মাতল। তাদের জীবন
বেশ সুখেই কাটছিল। এক সপ্তাহ আবির আর অনুপ বেড়াতে আসে তো পরের সপ্তাহে বৃষ্টি আর
রুমকি। তাদের আ্যডজাষ্টমেন্ট খুব সুন্দর ছিল। কোনোদিন তাদের নিজেদের মধ্যে বড় কোনো
ঝামেলা হয় নি। সংসার করতে গেলে ছোটখাটো ঝামেলা হয়েই থাকে।
দীঘা থেকে ফেরার সময় একটা খাদে পড়ে ট্যাক্সিটা উল্টে গেল। তারপর ড্রাইভার সহ
ওরা তিনজনেই গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হল। এক সপ্তাহের মধ্যে তিনজনেই মরে
গেল। সে এক গভীর শোক ঢেকে দিল বৃষ্টি আর রুমকির সংসারে। প্রায় একবছর লেগেছিল ওদের
স্বাভাবিক হতে। জীবনের যত কঠিন লড়াই ওরা চারজনে লড়েছে। আজ ওরা দুজন হয়ে গেল। আর
ছেলেদের ওরা সংসারের বিষয়ে কিছু বলে না। ওরা পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত থাকে।
ছেলেরা পড়াশোনা করে আর পাড়ায় নানা অনুষ্ঠানে ব্যস্ত থাকে।
এখন বৃষ্টি আর রুমকি একা হয়ে পড়েছে। বয়স বাড়ছে। ছেলেরা বড় হচ্ছে। ছেলেরা কলেজ
পার করে কাজে ঢুকে গেল। প্রাইভেট ফার্মের চাকরি হলেও কাজ তো বটে। তারা আলোচনা করে,
এখন সরকারি চাকরি পাওয়া খুব কঠিন। তবে প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করাও কঠিন। মালিকের
অপছন্দ হলেই তার সম্মান থাকে না। তারা সারদিন কাজ করে সন্ধ্যার সময় বাড়ি ফেরে।
একদিন একটু ফিরতে দেরি হল। বাড়ি ঢোকার মুখে তারা দেখল মেইন গেটে পাপোষটা আটকে
গেছে। তাই বন্ধ হয় নি,গেট। ওরা ধীরে ধীরে ঢুকল ঘরে। বাইরের কোন চোর ঢোকে নি
ত। না, ওরা ভেতরের ঘরে গেল। বিছানায় ওরা দেখল বৃষ্টি আর রুমকি দুজনেই উলঙ্গ। গোপন
কামুক দৃশ্য দেখে ওদের মাথা গরম হয়ে গেল। ওরা স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল
এক অস্বাভাবিক দৃশ্য দেখে। লজ্জায় ওরা বোবা হয়ে গেল। প্রায় একঘন্টা পরে ওরা বৃষ্টি
আর রুমকির কাছে এল।
তারা বৃষ্টি আর রুমকির বিছানায় গোপন কর্ম দেখে ফেলেছে। তারা তাদের বলল,
তোমরা আমাদের ঠকিয়েছ। আমরা তোমাদের সন্তান কি না সন্দেহ আছে। সত্যি করে বল আমাদের।
আমাদের বাবা, মা কোথায়?
বৃষ্টি বলল, অনাথ আশ্রম থেকে তোদের নিয়ে এসেছি। আমরাই তোদের মা।
তোদের আমরা নিজের ছেলের মতই মনে করি। আমরা সমকামী হলেও তোদের মা। এই
সম্পর্ক এখন স্বাভাবিক। তোরা তো শিক্ষিত
ছেলে। তোরা নিশ্চয়ই বুঝবি আমাদের কষ্ট।
ছেলেরা মানতে পারল না।তারা বলল, আমাদের ক্ষমা করো। আমরা কাউকে এসব বলব না।
তোমরা সুখে থাক। আমরা আলাদা থাকব। বৃষ্টি আর রুমকি দুজনেই কান্নাকাটি করল। কিন্তু
ছেলেরা কোন কথাই শুনল না। তারা বলল, কিছু নগদ টাকা পয়সা আমাদের চাই। পরে
আমরা শোধ করে দেব।
বৃষ্টি বলল, মায়ের ঋণ শোধ করা যায় না পাগল। এ টাকা তোদের। তোরা নিয়ে
যা। তোরা সুখে থাকলেই আমরা সুখী। ছেলেরা বলল,তোমাদের আমরা শ্রদ্ধার চোখে দেখি।
এরপরে যদি আর শ্রদ্ধা জানাতে না পারি। তাই আমাদের ভয় হচ্ছে। বৃষ্টি আর রুমকি বুঝল
ব্যাপারটা ওরা সহজভাবে মেনে নিতে পারবে না কোনোদিন। যাক তার থেকে ওরা চলেই যাক।
কেউ জিজ্ঞেস করলে বলব, ওরা দুজনেই চাকরি পেয়ে গেছে অনেক দূরে। প্রতিবেশিরা হয়ত
অনেকদিন পরে আবার সন্দেহ করতে পারে। তারা বলতেও পারে, তারা আসে না কেন? বড়
ছেলে বলল, সেরকম অসুবিধা হলে বলবে, একবার এসে দেখা করে যাব।
তারপর সময় ছুটতে থাকে। কাছাকাছি যার থাকত তাদের অনেকের বয়সের ভারে মৃত্যু হল।
অনেকে বাড়ি বিক্রি করে চলে গেল। অনেকে চাকরি পেল দূরে। ফলে কে কার খোঁজ নেবে?
কেউ তো এক জায়গায় স্থির হয়ে থাকে না। জীবন, যৌবন সব অস্থির।
ছেলেরা টাকা পয়সা নিয়ে চলে গেল রাগে আলাদা বাসায়। প্রায় দুবছরের
পর সেখানেই তারা বিয়ে করল। সংসার জগতে ঢুকে তারা আগের জীবন ভুলে
গেল।
এদিকে বৃষ্টি আর রুমকি ওদের অপেক্ষায় দিন গোনে। একদিন নিশ্চয় ওরা ফিরে আসবে।
যদি না আসে তাহলে কি হবে বৃষ্টি আর রুমকির। সেই চিন্তায় ওদের দিন বয়ে
যায়,অপেক্ষায়...
Subscribe to:
Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment