সম্পাদকের কলমে

নারায়ণ দেবনাথ- সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম । ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম । নমস্কার সহ অঙ্কুর রায় সংখ্যার সম্পাদক অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী প্রধান সম্পাদক

লেখা পাঠানোর জন্য

আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com

Total Pageviews

By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.

  গ্রাস 

 শংখ ভট্টাচার্য


-- না না, জমিটা আমি ছাড়তে পারব না। বেশ ঝাঁঝালো সুরেই কথাগুলো বলে সজল। 
    মাত্র তো তিনকাঠা জমি। দেড় কাঠার ওপর পৈত্রিক দোতলা বাড়ি। বাকী দেড় কাঠায় সজলের সখের বাগান। সামনে ফুলের বাগান আর পিছনে সব্জির। কেউ ফুল ছিঁড়লে তুলকালাম করে সজল। কিন্তু সব্জির ক্ষেত্রে ও উদার। প্রতিবেশীরা শিম, টমেটো, লংকা, পুঁইশাক নিয়ে যায়। লাউ, কুমড়ো হলে প্রতিবেশীদের পাঠায় সজলের বউ কেয়া। প্রতিবেশীদের সঙ্গে সদ্ভাব রেখেই চলে সজল। ওর বাবা সুবল রায় পাড়ার পুজো থেকে নানা সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে জরিয়ে ছিল। সজল চিরদিনই সে সবের থেকে নিজেকে দূরে রেখেছে।
-- সজলদা, একবার ভেবে দেখতে পারতে। তুমি তো ফ্ল্যাট পাবেই, তাছাড়া কিছু ব্যাঙ্ক ব্যালেন্সও হয়ে যাবে। তোমার তো একটাই ছেলে। প্রস্তাবটা খারাপ দিচ্ছি না। তাছাড়া তোমার ডান পাশের দাস ও বাঁ পাশের বোসরাও তো দিচ্ছে।তাই তোমারটা পেলে একলপ্তে বড়ো করে ফ্ল্যাট'টা করা যায়।
-- তুমি বুঝতে পারছ না কমল, মাথা গোঁজার ঠাঁই তো হবে কিন্তু বাগান তো হবে না।
-- তা হবে না ঠিকই, কিন্তু তোমার লোকসান হবে না। ঠিক আছে, সময় নাও, একটু ভেবে দেখ।
       ঘরের দেওয়ালে টিকটিকি'টা অনেকক্ষণ ধরে ওৎ পেতে বসে আছে। আরশোলা'টা উড়ে এসে বসেছে একটু দূরে। ধীরে ধীরে অতি সন্তর্পনে এক পা, এক পা করে আরশোলা'টার দিকে এগোচ্ছে টিকটিকি'টা।
-- কি হল কমল'দা, সজল'টা তো বড়ো ন্যাকড়াবাজি শুরু করেছে। দু'দিন টরচার করলে বাপ বাপ বলে পালাবে। দেবো নাকি ছেলেদের লেলিয়ে?
-- না শ্যামা, একদম নয়। 
-- এতোবড়ো প্রজেক্টটা কি ছেড়ে দেবে নাকি দাদা?
-- না, না, সে প্রশ্নই নেই। অপেক্ষা কর, সবুরে .....
            *         *         *        *          *
-- হ্যালো, সজল রায় বলছেন? 
-- হ্যাঁ, বলছি।
-- মুচিপাড়া থানা থেকে বলছি। আপনার ছেলে অলোক আর.জি.কর হাসপাতালে ভর্তি আছে। একটা দুর্ঘটনায় আহত। আপনি এখনই চলে আসুন, আমরা আছি।
-- হ্যাঁ, হ্যাঁ, যাচ্ছি, যাচ্ছি.....
      সজল হন্তদন্ত হ'য়ে বাড়ি থেকে বের হচ্ছিল। গেটের সামনে কমলের সঙ্গে দেখা।
-- কোথায় চললে গো সজল'দা? বৌদি'ও আছে।
মার্কেটিং ?
-- কমল, আমার ছেলে.....কান্নায় গলা বুজে আসে সজলের।
-- কী হয়েছে অলোকের?
-- অ্যাকসিডেন্ট ! আর.জি.করে ভর্তি।মুচিপাড়া থানা  থেকে ফোন করে বলল।যাচ্ছি ... কী হবে কমল?
-- তুমি বৌদি'কে নিয়ে যাও, আমি আর শ্যামল বাইকে যাচ্ছি।
          *           *          *          *             *
-- রক্ত দিতে হবে। কী হবে কমল?
-- চিন্তা কোরো না, আমরা তো আছি। তুমি বসো, আমি দেখছি। শ্যামল, ক্লাবে নান্টুকে ফোন কর তো। রক্তদাতাদের কার্ডগুলো তুলে নিয়ে কুড়ি মিনিটের মধ্যে বাইকে আসতে বল্। ভোলাকে নিয়ে আসতে বলবি। যদি রাতে থাকতে হয় ....
          দুশ্চিন্তায় শরীরের সমস্ত শক্তি হারিয়ে ফেলেছে সজল। কেয়া মুখ ঢেকে একনাগারে কেঁদে চলেছে। 
          *          *          *          *         *
রাত শেষ হতে চলল। অলোক'কে বেডে দিয়েছে। ডাক্তারবাবু জানালো, বিপদ কেটে গিয়েছে। রক্তের ব্যাবস্থা তাড়াতাড়ি হওয়াতেই উদ্ধার পাওয়া গিয়েছে। 
         দেওয়ালে টিকটিকি'টা আরশোলার খুব কাছে চলে এসেছে।শুধু একটা ছোট্টো লাফ....
-- সজল'দা বৌদিকে নিয়ে বাড়ি যাও। শ্যামা আর ভোলা তো থাকছে। নিশ্চিন্তে যাও। সব ঠিক হ'য়ে যাবে। বৌদি, আর চোখের জল নয়। নিশাচিন্তে বাড়ি যান। কাল, মানে ভোর তো হয়েই গেল, কয়েক ঘন্টা পর এসে দেখবেন অলোক একদম ফিট। 
-- কমল, রবিবারে কাগজপত্র নিয়ে এসো। কোথায় সই করতে হবে, করে দেব।
-- ও সব হবে খন, তুমি বাড়ি যাও, নিশ্চিন্তে ঘুমাও। 
-- চল্ রে শ্যামল। 
-- তুমি জিনিয়াস দাদা ......
           টিকটিকি'টা মুখের মধ্যে ধরে ফেলেছে আরশোলা'টাকে। ধরা পরেও আরশোলা'টার ছট্ ফট্ করার উপায় নেই।

0 comments: