সম্পাদকের কলমে

নারায়ণ দেবনাথ- সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম । ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম । নমস্কার সহ অঙ্কুর রায় সংখ্যার সম্পাদক অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী প্রধান সম্পাদক

লেখা পাঠানোর জন্য

আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com

Total Pageviews

By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.

                                           

বোকামো 

                                 

অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী 

                                            

   দৃশ্য – ১

                                 

 

[পর্দা খুলল। মঞ্চ দুটি জোনে বিভক্ত। বাম জোনে আলো জ্বলছে। রতনের ঘর। সামনে টেবিল চেয়ার এ বসে ডায়েরি তে কি লেখে]

 

রতন -   সবাই আমায় বোকা বলে। বোকার হদ্দ । কেন সবাই আমায় ঠকায়? সবাই বলে,আমি নাকি ঠকতে ভাল পারি।কিন্তু আমি’ত ঠকতে চাই না, তবু আমি ঠকে যাই। আমার সোনা-প্রিয়াঙ্কা ও বলে,আমি নাকি খুব বোকা।

                            [জানলা দিয়ে একজন মুখ বাড়ায়।]

হকার-  বাবু ,আসল মুক্তোর মালা নেবেন?

রতন - ধুস ,আসল মুক্ত না ছাই ?আমি বোকা নই যে তুমি আমাকে আবার বোকা বানাবে।

হকার-আবার?

রতন -আমি বোকা নই।

হকার- না আর নয়। আমি জানি আপনি বোকা নন, তাইতো আপনাকেই এই মুক্তোর মালা দিলাম।আপনি চালাক বলেই ত এই মুক্তোর মালা টা আপনার।

রতন - চালাক? (ভাবে আর নিজের দিকে দ্যাখে)

হকার- অবশ্যই। তাইতো আপনাকে খুঁজে বার করেছি।

রতন - (আনন্দে) দাও- দাও- কত দাম...।[জানালা দিয়ে হাত পেতে নেয়]

                                                            {লাইট কাট}

        দৃশ্য- ২


[ডান জোনের আলো জ্বলে । প্রিয়াঙ্কার ঘর]

প্রিয়াঙ্কা- বোকার হদ্দ।

রতন- অ্যা?

প্রিয়াঙ্কা-বোকা- বোকা- বোকা ,কানে শুনতে পাওনা?

রতন- কেন?

প্রিয়াঙ্কা- ঝুটা কে যে সত্যি বলে সেতো বোকা।

রতন- ঝুটা ! কিন্তু সে যে বলল সত্যি ...

প্রিয়াঙ্কা- সত্যি তোমার মুণ্ডু ।বোকার হদ্দ । কি বুদ্ধু ?প্রেমিকাকে ঝুটা মুক্ত দিচ্ছ? ইডিয়ট।

রতন- না প্রিয়াঙ্কা, আমার মন ...

প্রিয়াঙ্কা- বস্তা পচা আলু...,আর বাকিটা বললাম না।

 

                                      {লাইট কাট}

  দৃশ্য – ৩

                              

            [বাম জোনের আলো জ্বলে । রতন এখন রাস্তাতে]

রতন- (স্বগত) আবার বোকা! আবার বোকা হয়ে গেলাম।শেষে প্রেম নিবেদন করলাম ঝুটা দিয়ে!

জনৈক মানুষ- বাবু, বাবু দারুন সস্তা চলছে।দারুন সস্তা । একদম আসল।

রতন- ধুস ,ধুস সব ঝুটা । আমি বোকা।

জনৈক মানুষ- না বাবু, আমার জিনিস একদম আসল।

রতন- আমি জানি আমি বোকা ,আমি নেবনা ।

জনৈক মানুষ- বোকা দের জন্যই এটা।

রতন- কি?

জনৈক মানুষ-কৌশল।

রতন- কিসের?

জনৈক মানুষ-চালাক হওয়ার।

রতন- তাহলে প্রিয়াঙ্কা ...

জনৈক মানুষ- বলবে চালাক।

রতন- তাহলে?

জনৈক মানুষ- আসুন আমার সাথে।

রতন- কোথায়?

জনৈক মানুষ- চালাক হবার জগতে ।

                                                           {লাইট কাট}


          দৃশ্য - ৪

                        

[ডান জোনের আলো জ্বলে। রতন অফিসের ভেতরে ।সামনে টেবিল আর চেয়ার। টেবিলে টেলিফোন।]

বস- এই যে ফোন,       

       যদি কেউ বলে –না

        তুমি বলবে –হ্যাঁ,

 রতন- আমার মুখের সাথে কথার সামঞ্জস্য থাকবে, না থাকবে না?

বস- যেমন তুমি রাখবে তেমনি সে থাকবে।আমার শুধু বিক্রি নিয়ে কথা।

রতন- আর আমার আছে চালাক হবার স্বপ্ন আর বোকার হবার ব্যাথা।

বস- এখানে তো সেই স্বপ্ন-ই দেখাতে হবে।বানাতে হবে ছক।

রতন- আমায় তো হতে হবে না রাজহংস কিম্বা বক!

বস- না ,না এ এমন কল,  টাকা আসবে যেন জল।

রতন- আর আমি পাব তো তার কিছু তলাতল?

বস- নিশ্চয় ।তাই তো তুমি চালাক।

রতন- যারা বলত আমায় বোকা তারা সবাই ভাগ।

 

                                  {লাইট কাট}

                             

 দৃশ্য- ৫

                [বাম জোনের আলো জ্বলে।প্রিয়াঙ্কার ঘর]

রতন- প্রিয়াঙ্কা ,দেখ সাত্যিকারের মুক্তো। আমি এনেছি শুধু তোমার জন্য।

প্রিয়াঙ্কা- তাই?(আনন্দে) কোথা থেকে কিনলে?

রতন- কেন ? তুমি জেনে খুশী হবে আমি চালাক হয়ে গেছি। তাই কলকাতার সব থেকে দামি দোকান থেকে আমি এটা তোমার জন্য এনেছি।

প্রিয়াঙ্কা- (হার টা গলায় পরে) আমায় দারুন লাগছে , না?

রতন- দারুন।

                                                     [লাইট কাট]

                               

 দৃশ্য- ৫

[ডান জোনের আলো জ্বলে আর বাম জোনের আলো নিভে যায়।ডান জোন এ অফিস এর ছবি  দেখা যায়]

জনৈক মানুষ- {কাকুতি} আমার টাকা চাই। আমাকে প্লিস টাকাটা দিন। আমার চাই।

রতন- টাকা তো পাবেন। বস বলেছেন ,টাকা সবাই পাবে।

জনৈক মানুষ- কি বলেছেন আমি শুনতে চাই না।আমার ছেলের অপারেশান কাল ,আমার টাকা আজ চাই। আপনি কি বলছেন?

রতন- টাকা পাবেন?

জনৈক মানুষ- পাব? আমি আপনার মুখ চেয়ে আছি।আমি শুধু আপনার সাথে কথা বলেই টাকা টা রেখে ছিলাম ।আপনাকে বিশ্বাস করেছি। আমার টাকা তো ম্যাচিওর হয়ে গেছে। ও টাকা না পেলে আমার ছেলেটাকে বাঁচান যাবে না।আমি ওকে কেমন করে মরতে দিতে পারি?

রতন- আপনি পাবেন। আমি কথা দিলাম।

জনৈক মানুষ- আপনাকে আমি বিশ্বাস করেছি কারন আপনি সরল,সোজা  

রতন- (ভাবে) আর বোকা...

                                                                      [লাইট কাট]

দৃশ্য – ৭

        

                    [বাম জোনের আলো জ্বলে। বসের ঘর]

রতন- টাকা ?

বস- বললাম তো?

রতন- আর ওরা ?

বস – কারা?

রতন – যারা আমাকে দেখে...

বস- তোমাকে? ভুল তোমার।

রতন – আমি তাহলে? আমি যে কথা দিলাম!

বস- নিজেই ভাবো। আর আমি আজ রাত থেকে এই অফিস বন্ধ করছি। কাল থেকে আর আসতে হবে না।

রতন- মানে?

বস- একটাই, আমি চালাক।

রতন- আমি বোকা...(চলে যায়)

বস- শালা।

                                                                  [লাইট কাট]

    দৃশ্য – ৮

                               

                      [ডান জোনের আলো জ্বলে। প্রিয়াঙ্কার ঘর]

রতন- (হাত বাড়ায়) প্রিয়াঙ্কা?

প্রিয়াঙ্কা- মোটেই নয়। তোমার বোকামির ভাগিদার আমি হব না।

রতন- কিন্তু ঐ লোকটার যে ছেলের অপারেশান ?

প্রিয়াঙ্কা- সে টাকা দেবে কোম্পানি?

রতন – কিন্তু ও আমাকে দেখে...।আমি যে কথা...

প্রিয়াঙ্কা- তুমি আবার বোকামি করছ।

রতন- না না টাকা আমায় দিতেই হবে।নাহলে...

প্রিয়াঙ্কা- বোকা , বোকা , বোকার হদ্দ।

রতন- এক জন কে সাহায্য করলে যদি পাপ...

প্রিয়াঙ্কা- তাই তো তুমি বোকা।

রতন- (হার টাকে ছিনিয়ে নিয়ে) আমি বোকা হয়ে থাকতে চাই। তোমাদের মত চালাক হতে চাই না।

[রতন এর ওপর ছাড়া সব আলো নিবে যায়।সে মাঝ খানে দাঁড়ায় আর হার তার দিকে তাকায়।  হঠাৎ জনৈক মানুষ টার গলা শোনা যায় -“আমার ছেলেটা ...আপনি ...”]

নেপথ্যে গান শোনা যায়  -- থাকলে বোকা এমন করে

                                   সংসারটা সাদা

                               চালাক হবার মাঝে শুধুই

                              সাদা রং টাই বাধা,

                         গুছিয়ে নাও    মুছিয়ে দাও

                         টুকরো যেন কর না মন

                            হয়োনা আধা আধা।

                                           [আলো নিবে যায় পরদা নেমে আসে]

শেষ 

 

                        

বিঃ দ্রঃ - অভিনয় করার আগে নাট্যকারের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক 


 

 

 

 

0 comments: