সম্পাদকের কলমে
লেখা পাঠানোর জন্য
Total Pageviews
একাকী এক চন্দনা
অরিন্দম ঘোষ
-“আরে, সুবিনয় না?”
-“হ্যাঁ, কিন্তু… আপনাকে তো ঠিক…”
-“চিনতে পারছিস না? আমি অজয়… তোরা আমাকে কাঞ্জিলাল বলে ডাকতিস।”
-“কাঞ্জিভরম! রোল ওয়ান! একদম বদলে গেছিস তো! কেমন আছিস ভাই?”
-“হবে না? সেই আশি সালের পর এই দেখা। তোকে কিন্তু বেশ চেনা যাচ্ছে ভাই। কোথায় আছিস আজকাল?"
-“গুরগাঁও, ওখানে-ই সেট্ল্ড্। তোর খবর বল।”
-“আমার এই দু’নম্বর প্ল্যাটফর্মের বাইরে ঐ রিক্সাস্ট্যান্ডের পাশে চায়ের দোকান। বাবার আমলের… ভালোই চলে। মেয়ে বর্ধমান গেল… ইউনিভার্সিটিতে পড়ছে। ওকে তুলে দিয়ে ঘুরতেই তোর সঙ্গে দেখা।… তা হঠাৎ এতদিন পরে এখানে?"
-“এমনি… কলকাতা এসেছিলাম। তাই ভাবলাম একবার স্কুলটা দেখে আসি। চল্লিশ বছর তো আসা হয়নি এদিকে। যাবি নাকি?”
-“চল, যাই… পাশ করার পর থেকে আমারও ঢোকা হয়নি ভেতরে। তোর কল্যাণকে মনে আছে? সেই যে তারাপদ স্যারের ছেলে, ও এখন অঙ্কের মাস্টার ইস্কুলে।”
-“আচ্ছা, স্কুলের পাশের গলিতে সেই বেকারীটা এখনো আছে? টিফিনে আমরা মাঝে মাঝে গরম পাঁউরুটি খেতাম।"
-“কৃষ্ণা বেকারী… আগুনে পুড়ে শেষ। চল দেখবি, ওই দিকটা একদম বদলে গেছে।”
-“ঠিকই বলেছিস, স্কুলের ভেতরটাও আর আগের মতো নেই। মাঠটাও কত ছোট লাগছে।"
-“ওপাশের বিল্ডিংটা নতুন হয়েছে, স্ট্যাচুটাও শতবর্ষে বসল… জানিস, শতবর্ষে কয়েক দিন ধরে অনুষ্ঠান হল। প্রাক্তনরা অনেকে এসেছিল। তখন এলে পারতিস।”
-“চল তো অজয়, মাঠের ওধারে কৃষ্ণচূড়াটার কাছে যাই… তোর মনে আছে, সমাজ শিক্ষা ক্লাসে সেদিন বনসৃজন হচ্ছিল? …আমি কৃষ্ণচূড়ার নীচে এই টগর গাছটা পুঁতেছিলাম। আজ কত বড় হয়েছে, ফুলেফুলে সাদা!"
-“তোর চোখে জল, সুবিনয়!"
-“সেদিন ভোরে আমাদের চন্দনা পাখিটা হঠাৎ মরে গিয়েছিল। এখানে ওকে কবর দিয়ে তার ওপর গাছটা পুঁতেছিলাম…"
কৃষ্ণচূড়ার কোলে সাদা হয়ে থাকা টগরের পাশে ঘাসের ওপর দুই পঞ্চাশোর্ধ বসে রইলেন সারা বেলা। পাতাহীন লাল ফুলের মাঝে কখন উড়ে এসে বসল এক একাকী চন্দনা।
0 comments:
Post a Comment