সম্পাদকের কলমে
লেখা পাঠানোর জন্য
Total Pageviews
জড়ুল
প্রদীপ ঘটক
কলকাতা শহর ভাল লাগে না দীপের। ঘিঞ্জি,গাড়ির মেলা, সব জায়গাই একই রকম। কিছুই বুঝতে পারে না। শুধু নিজের মেস থেকে কলেজ। এটুকুই চেনে। আর সব গন্তব্যহীন ঘোরা।
তবু সে ঘোরে। নাইট ক্লাস। সাড়ে আটটায় শেষ। তারপর প্রতিদিন একই কাজ।
মা বারণ করেছিল। কলকাতায় নাকি মানুষ হারিয়ে যায়। কিন্তু দীপ হারাবে না।মা'কে দেওয়া কথা রাখবে।
রাস্তার ভিতর গলি। সারি সারি ঘর। নীল দেওয়াল। ঘুপসি।গলি জুড়ে অসংখ্য মেয়েমানুষ। পণ্যের মত সেজে।
দীপ ঘোরে গলিতে। সব মেয়েগুলোকে দেখে। রাস্তার লোকগুলোর সাথে ঢলাঢলি করছে। হাসছে, খিস্তি করছে, কেউ কেউ সিগারেট খাচ্ছে।
অনেকটা রাত হল। বেলঘরিয়ার বাস ধরে ফিরে আসে। আরো একটা হতাশার দিন। টিনের বাক্স থেকে ছবিটা বের করে। যে মেয়েগুলোকে দেখেছে, তাদের সঙ্গে মুখের মিল খোঁজে।
আবারও যায়। আবারও ফেরে হতাশা নিয়ে।
একদিন একটা মেয়েকে দেখে দাঁড়িয়ে যায়। নাকের পাশে তিল। বেশ লম্বা, ফর্সা। অনেকটা মিল। কিন্তু কিছু বলতে পারে না। মিতনের কাছে শুনেছে এটা খারাপ পাড়া।
তবু যায়। মেয়েটাকে খোঁজে। কোনদিন দেখতে পায়, কোনদিন পায় না।মনে জোর আনে। এরপর যেদিন দেখতে পাবে কথা বলবেই।
আজ দেখল মেয়েটা ছোট দরজার চৌকাঠে বসে। থুতনিতে হাত।অন্য মেয়েমানুষগুলোর মত নয়। বেশ শান্ত। অনেকক্ষণ মাপে। একটু এগিয়ে যেতেই মেয়েটি ডাকে "একশ টাকা, হবে?"
দীপ সাহস করে বলে ফেলে "একটু আড়ালে কথা বলা যাবে?"
"সব হবে, কিন্তু একশ টাকার এক পয়সা কম নয়।"
"বেশ। তাই দেব।"
ছোট ঘর। তার ভিতরে আরেকটা। ঘরে মা কালীর ক্যালেন্ডার। পাশাপাশি কিছু নগ্ন মেয়ের ছবি। সাদা চাদরে গোচানো বিছানা। মেয়েটি দীপকে বসতে বলে ভিতর ঘরে যায়। দীপ ঘামতে থাকে। কিভাবে বলবে?
মেয়েটি ওর পাশে বসে। দীপ দেখে। তারই মত সামান্য মোটা ঠোঁট, লম্বা ঘাড়।
"কি বলবেন বলছিলেন?" নীরবতা ভাঙে মেয়েটি।
একবুক সাহস নিয়ে দীপ বলে ফেলে "আপনার নাভির একটু নীচে একটা লাল জড়ুল আছে কি?"
মেয়েটি চমকে ওঠে।
0 comments:
Post a Comment