সম্পাদকের কলমে

নারায়ণ দেবনাথ- সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম । ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম । নমস্কার সহ অঙ্কুর রায় সংখ্যার সম্পাদক অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী প্রধান সম্পাদক

লেখা পাঠানোর জন্য

আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com

Total Pageviews

By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.

 ইছামতী....তোমাকে দিলাম

সুমেধা চট্টোপাধ্যায়
                                 
(১)
দুজনে হাত ধরাধরি করে হাঁটছিল সুতপা ও সৌম্য। ঠিক যেন সদ্যবিবাহিত। অবশ্য সবে তো দু'বছর হল, 'সদ্য'ই বটে। নৃপেন্দ্র অতিথিশালা থেকে হাঁটতে হাঁটতে পড়ন্ত বিকেলে তারা এসে দাঁড়াল টাকির ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন "পুকুর পাড়ের  জোড়া শিবমন্দির" এর সামনে। টলটলে কাজল-নয়না দীঘির জলে মন্দির-যুগলের প্রতিফলন মুগ্ধ করে সুতপাকে। ইস, একটা যদি DSLR থাকত! এবারের  মতো মোবাইল ক্যামেরাতেই ছবি তোলে ক'টি। কপালে আদর এঁকে সৌম্য বলে --" পরের বার এই দীঘির জলে তোমার প্রতিফলনের ছবি তুলবো আমি--- দেখে নিও আমার তোলা সেরা ছবি হবে সেটি।“  অতিথিশালার ম্যানেজার বলেছিলেন --" একবার বিজয়া দশমীর দিন বিসর্জনের সময়ে আসবেন দিদি। তখন ইছামতীর অন্য রূপ-- প্রাইভেট নৌকায় ঘুরিয়ে দেব।" বিসর্জনে আসা হয়েছিল তার কয়েক বছর পর কিন্তু....

(২) 
তিন বছর পর.... বিজয়া দশমীর দিন সুতপার মনটা কেঁদে ওঠে খুব। প্রতিবার সিদুঁর খেলতে যাওয়ার সময়ে মুখটা যেন রাঙিয়ে দিত সৌম্য। আগের বারও সে এই কাজ করেই বেরিয়েছিল....ইছামতীতে বিসর্জনের কিছু বিশেষ মূহুর্ত নতুন DSLR  এ বন্দী করবে বলে। এবার আর  সেই "সৌম্য"-কান্তি হাতজোড়া নেই সুতপার সিঁথি রাঙানোর জন্য। দুদিন পরে সৌম্যর দেহটা ভেসে উঠেছিল বিদ্যাধরীর মোহনার কাছে। এবার আবার সিঁদুর খেলতে ইচ্ছা করছে খুব। জোরে ঢাকের আওয়াজ বাইরে।এই সময়ে টুবলু এসে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে  "মা,  ঠাকুর যাচ্ছে, এস...." সাদা থান লুটিয়ে ছেলের হাত ধরে সদর দরজায় আসে সুতপা। অবাক দৃষ্টি মায়ের সিঁদুর লেপা কপালে...."আবার এসো, মা"। সেই  DSLR ক্যামেরা.... যা দিয়ে সৌম্য একদিন তার সেরা ছবিটি তুলবে ভেবেছিল...সৌম্য র দেহ টি পাওয়া গেলেও, ওটি আর পাওয়া যায় নি। সব কিছু তো একজন্মে হয় না...সেরা ছবিটা না হয় পরের জন্মে হবে। ইছামতী যে চিরতরে নিয়ে নিল তার সৌম্যকে...
(৩) 
আজ সুতপা প্রৌঢ়া।  চোখে চশমা। সামান্য পৃথুলা। চুলে পাক ধরেছে বেশ। জানুয়ারির এক পৌষ সকালে সূর্যোদয়ের অকৃত্রিম শোভা তার চোখের সামনে। এখানে আর আসতে চায়নি সে.. আঘাত করতে চায় নি সেই নির্মম স্মৃতিপট কে। কিন্তু তাকে এখানে আজ জোর করে নিয়ে এসেছে টুবলু, মানে সৌমাভ। তাদের একমাত্র সন্তান।তার ই সাথে ইছামতী র ডাকে আবার ছুটে এসেছে সুতপা। ইছামতী র বুকে সূর্যোদয় দেখে এসে দাঁড়িয়েছে সেই জোড়া শিব মন্দিরের সামনে। দীঘির সেই 'হৃদয়হরণ' টলটলে জল এখনো আছে...কিন্তু কে যেন নেই...সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে হঠাৎ করে পিছল পুকুরঘাটে পা হড়কাল সুতপার। কিন্তু পড়ার আগেই কে যেন ধরে নিল-- এবং সাথে সাথে ক্যামেরা ক্লিক এর আওয়াজ।  স্বনামধন্য ফটোগ্রাফার সৌমাভ বসুর হাত তখন তার মা সুতপা বসুর হাতে, অন্য হাতে DSLR এর শাটার....মুখে হাসি যেন ' বীরপুরুষ ' বলছে "আমি আছি, ভয় কেন মা কর"...
(৪) 
কথা রেখেছিল সৌম্য, নিজে না পারুক... রেখেছিল তার 'ঔরসজাত'। একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় একাধিক বিভাগে পুরস্কার পায় সৌমাভর তোলা ঐ ছবিটি....আজ সুতপার ড্রয়িং রুমে স্বমহিমায়। নিখুঁত,  ভয়ংকর সুন্দর। এক্ষুনি ফোন এসেছিল ক্যালিফোর্নিয়া থেকে টুবলুর,  দারুন বক্তৃতা হয়েছে তার ফটোগ্রাফি কনফারেন্সে।আজ এই পঁয়তাল্লিশতম বিবাহবার্ষিকী তে  ঐ ছবির দিকে তাকিয়ে সুতপার সেই পাথর-চাপা দুঃখের অনুভূতিটা কেমন যেন আবছা হয়ে গেল। মন ভরে উঠল সন্তানের কৃতকর্মের আনন্দে। সৌমাভর মধ্যেই যে বেঁচে আছে তার সৌম্য....

0 comments: