সম্পাদকের কলমে

নারায়ণ দেবনাথ- সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম । ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম । নমস্কার সহ অঙ্কুর রায় সংখ্যার সম্পাদক অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী প্রধান সম্পাদক

লেখা পাঠানোর জন্য

আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com

Total Pageviews

By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.

 পিঠের কথকতা

মিত্রা হাজরা 


"পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে আয় রে চলে আয়"-শীত এসে গেছে, মন খুশি খুশি, কুয়াশা কাটিয়ে সূর্য দেখার আনন্দ বা শিশিরে ভেজা ঘাসে পা ডুবিয়ে হাঁটা ---সমান ভালো লাগা। সঙ্গী বা সঙ্গিনীর সাথে একান্তে সময় কাটানো, পরিবার বন্ধু বান্ধব দের সাথে চেটেপুটে শীত মাখানো সময় উপভোগ করার এই উপযুক্ত দিন। সারা বছর কাজে অকাজে হৈ হৈ, বছর শেষের কটা দিন পরিযায়ী পাখি হওয়া। পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে যেমন পরিযায়ী পাখিরা আসে জলাশয়ের গেঁড়ি গুগলি শামুক, শ্যাওলা খেতে আমাদের দেশে, আমরা ও শীতের সবজি, ফল, পিঠে পুলি খেতে সব হতাম গ্রামমুখী।  হরেক রকমের টাটকা আনাজ পাতি, যা দিয়ে সুস্বাদু সব খাবার পেতাম ছোটবেলায়, তখন তো এত দোকান ছিল না গ্রামে, ঘরেই তৈরি হতো নানা খাবার। মা ঠাকুমাদের রান্নাঘর থেকে নানা সুগন্ধ আসতো,  ঘ্রাণে আমরা  বিভোর ও ঘুরে ফিরে হামলে পড়তাম তার উপর।

তা সে সজনে ফুলের বড়া ভাজা ই হোক, বা পিঠে পায়েস। রাতে কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঠাকুমার পাশে সব গড়াগড়  শুয়ে---শুনছি ভূত, পেত্নী দৈত্য দানোর গল্প।

শীতের দিনের পিঠে পায়েস বাঙালি ঘরের খাদ্য ঐতিহ্য,তা সে শুধু নিজের ঘরের জন্য নয়, তৈরি হতো আশেপাশের পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয় বন্ধু সবার জন্য। যে বাড়িতেই যেতাম বাটি নিয়ে বসে যেতাম পিঠে খেতে, কারোর ঘরের ভাপা পুলি, কারোর ঘরের পাটিসাপটা বা সরুচাকলি ,আর মুড়ির মোয়া, চিড়ের মোয়া, তিলের নাড়ু--- হাসবেন না কেউ, জামার পকেটে ভরে নিতাম। আমি যে ফ্রক পরতাম--তাতে পকেট থাকতো তখন। আজ হোক একটু পিঠের কথকতা তা হলে----

সরুচাকলি--সেদ্ধ চাল আর কলাই ডাল রাতে ভেজানো হয়, সকালে মিহি করে বেটে চাপা দিয়ে রেখে দেওয়া খানিকক্ষণ। তখন শিলে পেষা হতো, এখন মিক্সিতে।  এরপরে জল দিয়ে লেই বানানো, খুব মোটাও নয়, খুব পাতলাও নয় গোলা। এরপর উনুনে তাওয়া বসিয়ে অল্প তেল বা ঘি দিয়ে তার উপর হাতায় করে গোলা ঢালতে হবে, বেগুনের বোঁটা বা তেজপাতা দিয়ে সমান রুটির মত গোল করতে হবে, আস্তে আস্তে খুন্তি দিয়ে এক ধার থেকে তুলে নেওয়া, খেজুরের গুড়ের সাথে খাওয়া বা অনেকে আলু মটরশুঁটির চচ্চড়ি দিয়েও খেতে পছন্দ করে।

ভাপাপুলি---ফুটন্ত গরম জলে চালের গুঁড়ো মেখে---তা থেকে একটু করে নিয়ে পুলি তৈরি করা---নারকেল খেজুর গুড়ের পুর ভরে মুখ বন্ধ করে ভাপে চাপানো হবে। এই পুর অনেকে ফুলকপি মটরশুঁটি বা মুসুর ডালের শুকনো পুর ভরেও ঝাল পিঠে বানায়, যার যেমন রুচি খাওয়া যায়।

চিড়ের পিঠে--দুধে চিড়ে ভিজিয়ে রাখতে হবে--ভিজে গেলে ওর সাথে অল্প ময়দা ও ছানা মিশিয়ে চটকে মাখতে হবে--নরম মনে হলে আরো একটু ময়দা দিয়ে মোলায়েম করতে হবে--ওর থেকে নিয়ে পুলি বানিয়ে ক্ষীর নারকেলের পুর ভরে ঘিয়ে পুলি গুলো ভাজতে হয়। ছোট ছোট পুলিগুলো তৈরি করতে হয়। এর পরে অনেকে খেজুরের পাতলা রসে ডোবায়, আমি বলি এমনিই খেতে ভালো, রস চপচপে ভালো  লাগে না।

রাঙা আলুর পিঠে---রাঙা আলু সেদ্ধ করে জল ঝরিয়ে রাখতে হয়, ঠান্ডা হলে খোসা ছাড়িয়ে ময়দা দিয়ে মেখে পুলি গড়ে নারকেলের পুর  এলাচ গুঁড়ো  গুড় দিয়ে তৈরি করা  ওর মধ্যে ভরে ভাজা, এটাও খেতে সুস্বাদু হয়।

মুখ বেশি মিষ্টি হয়ে গেলে--আলু সেদ্ধ করে ভিতরে মটরশুঁটি র সাথে লঙ্কা, ভাজামশলা নুন মিশিয়ে ঝাল পুর তৈরি করে সাদা তেলে ভাজা---খুব ভালো লাগে খেতে।

বন্ধুরা শীত এসে গেছে--জমিয়ে পিঠে হোক, নিজেরা বানিয়ে খান, বন্ধু বান্ধব দের খাওয়ান । এই তো সময় পিঠে খাওয়ার।

1 comments:

Mita ghosh said...

চিড়ের পিঠে টা করে দেখতে হবে। কখনো খাইনি কিন্তু! বেশ নতুন রকম লাগল। অবশ্যই ক‍রব...🌷❤️