সম্পাদকের কলমে

নারায়ণ দেবনাথ- সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম । ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম । নমস্কার সহ অঙ্কুর রায় সংখ্যার সম্পাদক অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী প্রধান সম্পাদক

লেখা পাঠানোর জন্য

আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com

Total Pageviews

By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.


 ব্যাখ্যার অতীত 

বিষ্ণু আচার্য্য


আজ আপনাদের সাথে আমার জীবনে ঘটে যাওয়া আর একটা ঘটনা শেয়ার করবো। ঘটনা টা আমার জীবনে একটা বিশাল দাগ কেটে যায়। চলুন শুরু করি ...

আমার বাড়ি বাঁকুড়া জেলার একটা প্রত্যন্ত গ্রামে । গ্রামে থেকে মাধ্যমিক পাস করার পর গ্রামে সেরকম পড়াশোনা বা টিউশনের সুযোগ সুবিধা না থাকায় আমি বাঁকুড়া শহর এ পড়াশোনা করতে চলে যাই সাথে পেলাম আমার পাশের গ্রামের এক বন্ধু শান্তনু কে । প্রথম কিছুদিন রোজ আসা যাওয়া করতাম কিন্তু খুব ই অসুবিধা হচ্ছিল তাই ঠিক করলাম বাঁকুড়া তে রুম নিয়ে থাকবো দুজনে। বাড়িতে বললাম বাড়িতে বললো হ্যাঁ ওখানে থাকা টাই ঠিক হবে। রুম খুঁজতে শুরু করলাম শান্তনু আর আমি। একটা বাড়ি পেলাম একতলা বাড়ি ২ টা রুম বাথরুম , কিচেন আর একটা ছোট্ট বারান্দা। কিন্তু আমাদের তো শুধু মাত্র একটা রুম হলেই হতো পুরো বাড়িটা নিলে ভাড়াটাও বেশি পড়ছিল। তাই আরো ২ জন রুম পার্টনার খুঁজতে থাকলাম। পেয়েও গেলাম সহজেই আমাদেরই সদ্য বন্ধু  হওয়া শফিকুল ( নাম পরিবর্তন করলাম কিছু কারণের জন্য) আর অমিয় বলে দুজন কে। শফিকুল এর বাড়িটা দক্ষিণ বাঁকুড়া -এর একটা গ্রামে( নাম বলছি না) আর অমিয়র বাড়ি সুশুনিয়া গ্রামে। তো চার জনে রুম এ এসে থাকতে শুরু করলাম । বেশ কাটছিল দিন গুলো স্কুল টিউশন ঘুরতে যাওয়া সব কিছু নিয়ে। নানা রকমের গল্প গুজব হতো রাত্রে বেলাতে । ভূতের গল্প ও হতো যদিও ভূতের গল্প হলে আমি বাধা দিতাম কারণ আমার ভূতে একটু ভয় ছিল কারণ আমি ভূতে বিশ্বাসী ছিলাম । বাকী তিন জন শান্তনু শফিকুল আর অমিয় ছিল খুব সাহসী ছেলে যদিও অমিয় ভূত এ বিশ্বাসী ছিল কিন্তু খুব একটা ভীতু ছিল না কিন্তু সব থেকে সাহসী ছিল সফিকুল তার ভূত প্রেত আত্মা দুষ্টু লোক কোনো কিছু কে ভয় ছিল না সে অত্যন্ত সাহসী ছেলে আর সেরকম ই সুঠাম তার দেহ খুব শক্তিশালী ছেলে শফিকুল আর শান্তনু ও ভূতে বিশ্বাস করতো না। এই ভাবে ৫ মাস কেটে গেল এখন আমাদের বন্ধুত্ব অনেক গভীর সবাই সবার মা বাবা বাড়ির লোক সবার সাথেই ফোন এ কথা বলতাম । শফিকুল  ছিল আমাদের সবার মধ্যে শান্ত ভদ্র ছেলে কোনো নেশা করতে দেখিনি ওকে কোনোদিন খুব-ই ভাল ছেলে। ওর বাবাও এসেছিল এক দুবার আমাদের রুম এ তিনিও খুব ভালো মানুষ খুব ভালো বাসতো আমাদের । 

একদিন টিউশন করে ফিরছি চারজন মিলে রাত তখন ৮:৩০ হবে আসতে আসতে বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজের গেট এর কাছে একটা বড়ো গাছ আছে সেই গাছ তলে হটাৎ দাড়িয়ে পড়লো শফিকুল যদিও আমরা গল্প করতে করতে এগিয়ে গিয়েছিলাম শান্তনু হটাৎ বললো শফিকুল কই রে । পিছনে তাকিয়ে দেখলাম শফিকুল সেই গাছের নিচে দাড়িয়ে আছে। আমি আর শান্তনু গেলাম ওর কাছে অমিয় সেখানে দাড়িয়ে থাকলো, গিয়ে বললাম কি রে কি হলো দাঁড়িয়ে পড়লি কেনো? একটু হকচকিয়ে শফিকুল বললো কিছু না চল রুম। তখন আমরা অতটা গুরুত্ব দিলাম না ব্যাপার টা । রুম পৌঁছলাম সবাই বসলাম প্রতিদিনের মতো গল্প করতে কিন্তু শফিকুল কে আজ একটু অন্যমনস্ক মনে হলো সে যেনো কিছু একটা চিন্তা করছে । যাই হোক খওয়া দাওয়া করে শুয়ে পরলাম সবাই । অনেক রাত্রে কিছু একটা গোঙানির মতো শব্দে আমার ঘুম ভাঙলো চোখ খুললাম দেখলাম শফিকুল নিজের বিছানার ওপর হাঁটু গেড়ে বসে মুখ নিচের দিকে করে ওরকম শব্দ করছে । পাশের বেড এ দেখলাম শান্তনু ও জেগেছে সে ও তাকিয়ে আছে শফিকুল এর দিকে ও আমাকে ইশারা করলো তারপর দুজন এ গেলাম শফিকুলের কাছে ওকে ডাকলাম ৪ বার কিন্তু কোনো উত্তর পেলাম না তারপর ওর কাঁধে হাত দিতেই ও একটা অবাক চাওনি তে  আমাদের দিকে তাকালো চোখ গুলো ওর অনেক বড়ো বড়ো লাগলো আর পুরো লাল চোখ দুটো । ওর গায়ে হাত দিয়ে বুঝলাম ওর ভীষন জ্বর ওকে জিজ্ঞাসা করলাম কি রে এত জ্বর তাও আমাদের ঘুম থেকে তুলিস নি কেনো? ও কোনো উত্তর দিল না শুধু একটা বিকৃত হাসি দিল কেমন একটা ভয় ধরানো হাসি । 

অমিয় এর কাছে প্রায় সবরকম ই প্রাথমিক ওষুধ থাকতো , অমিয় কে ঘুম থেকে উঠিয়ে একটা প্যারাসিটামল দিলাম শফিকুল কে । শফিকুল ওষুধ টা খেয়ে শুয়ে পরলো আমরাও শুলাম ওর ঘুম আসার পর। সকাল হলো আমরা তিন জন উঠলাম টিউশন যাবার জন্য কিন্তু শফিকুল দেখলাম তখন ও বিছানা তে ঘুমাচ্ছে , ওকে ডেকে তুললাম ও বললো ও আজ টিউশন যাবে না ওর শরীর টা দুর্বল লাগছে । আমরাও বললাম হ্যাঁ তুই রেস্ট নে আমরা টিউশন টা করে আসি। আমরা চলে গেলাম টিউশন শফিকুল একা রুম এ থাকলো। টিউশনের পর রুমে এলাম কিন্তু এসে যেটা দেখলাম তা দেখে আমাদের মাথা ঘুরতে থাকলো , দেখলাম শফিকুল ব্লেড দিয়ে তার হাত এ কাটাকুটি করে ঘুমোচ্ছে বিছানার চাদরে রক্তের দাগ আর হাত এ তখনও রক্ত গড়াচ্ছে । আমরা কি করবো বুঝতে পারছিলাম না একটা অটো ডেকে তাকে মেডিক্যাল নিয়ে গেলাম। সেখানে গিয়ে ডাক্তার ব্যান্ডেজ করে দিল ওর হাতে ওষুধ দিয়ে । আমি শফিকুল এর বাবা কে ফোন করে সব বললাম উনি বিকেলে এলেন । শফিকুল তখন হসপিটাল এ ওর বাবা এসে বললো এটা তুই কি করেছিস বেটা খুব কাঁদছিল ওর বাবা কিন্তু শফিকুল বললো কিছু না বাবা চিন্তা করো না আর তারপর শফিকুলের মুখে সেই ভয় মাখানো নিস্তব্ধ হাসি দেখলাম। সেদিন আর ছুটি হলো না ওর রাত্রে আমরা তিনজন আর শফিকুলের বাবা  হসপিটালে থাকবো ঠিক করলাম । রাত্রে আমরা হোটেল এ খাবার খেলাম আর শফিকুলের জন্যও খাবার নিয়ে আসলাম। শফিকুল সে খাবার গুলো সব খেলো ( ৬ টা রুটি সবজি আর অমলেট ) তারপর বললো আরো কিছু নিয়ে আই খাবার আমার খুব খিদে পেয়েছে ।

 আমরা একটু অবাক হলাম কারন শফিকুল কোনোদিন ই এত খাবার খেত না যাই হোক আর ৬ টা রুটি সবজি আনলাম ও সব খেলো তারপর বললো যা তোরা একটু রেস্ট নে আমিও একটু ঘুমাবো এবার । আমরা চারজন চলে এলাম বাইরে শোয়ার জন্য । সকাল হলো দেখতে গেলাম শফিকুল কে দেখলাম বসে আছে ও বেড এ । কথা বললাম ওর সাথে দেখলাম সব নরমাল ই আছে সেই আগের শফিকুল যেনো আমরা খুশি হলাম। ছুটি হলো বেলা ১১:৩০ এ শফিকুলের ওকে রুম নিয়ে এলাম স্নান করলাম । শফিকুল এর বাবা কিছু দরকারি কাজ থাকার জন্য বিকালে বাড়ি চলে গেলো আমরাও বললাম আপনি যান সব তো ঠিক ই আছে। কিন্তু না আমাদের ধারণা ভুল ছিল সেই রাত্রে শান্তনু বাথরুম যাবার জন্য ঘুম থেকে উঠে দেখে শফিকুল তার বিছানা তে নেই । শান্তনু প্রথমে ভাবে বাথরুম গিয়েছে হই তো কিন্তু বাথরুমে গিয়ে দেখে শফিকুল সেখানেও নেই তখন সে আমাদের উঠিয়ে বলে ব্যাপার টা । আমরা খুব চিন্তায় পরে গেলাম । অমিয় বলে উঠলো চল একবার ছাদে দেখে আসি আমরাও ভাবলাম হ্যাঁ ঠিক ই তো ছাদে দেখি , তিনজন মিলে সিড়ি বেয়ে ছাদে উঠলাম কিন্তু শেষ সিঁড়িতে তিনজনেই দাড়িয়ে পড়লাম অবাক হয়ে দেখলাম শফিকুল ছাদে দাঁড়িয়ে কারো সাথে গল্প করছে , আমরা দেখলাম শফিকুল এর ঠিক সোজাসুজি ছাদের কার্নিশ এর কাছে দাড়িয়ে একটা ছায়ামূর্তি , স্পষ্ট কিছু দেখতে পেলাম না কিন্তু বুঝতে পারলাম একটা ছেলের ছায়ামূর্তি দাড়িয়ে আছে আর তাকে উদ্দেশ্য করেই কথা বলছে শফিকুল । শফিকুল এর কথা আমরা স্পষ্ট শুনতে পেলাম সে বলছে তুমি কাল চলে গেলে কেনো আমি তো তোমাকে কতো খেতে দিলাম । 

এসব শুনে আমরা বুঝলাম এটা নিশ্চই কোনো আত্মার ভর শফিকুলের ওপর। শান্তনু ডাকলো ওকে পেছন থেকে কিন্তু শফিকুল যেনো খুব রেগে গর্জে উঠল শান্তনুর ওপর বললো তুই চলে যা এখান থেকে আমি পরে যাচ্ছি , আমি আর অমিয় তো ভয়ে শুকিয়ে গেলাম ওর ওই মূর্তি দেখে কিন্তু শান্তনু হার মানলো না আমাদের ডেকে বললো ধর ওকে তার আগে শান্তনু আকরে ধরেছে শফিকুল কে আমরাও দৌড়ে গেলাম ধরলাম ওকে তারপর তিনজন মিলে ধরে ওকে নিচে নিয়ে এলাম । নিচে এসেই শান্তনু এক মগ জল ওর মুখে মারলো কিছুটা শান্ত হলো শফিকুল । সেদিন রাত্রে শফিকুল ঘুমালো কিন্তু আমরা সারারাত জেগে কাটালাম । আমরা তিন জনেই বুঝলাম কিছু একটা ব্যাবস্থা করতে হবে এটা কোনো স্বাভাবিক ব্যাপার নয়। সকাল হলো শফিকুল উঠলো আমাদের বললো কি রে ঘুমাস নি নাকি সারারাত এরকম চেহারা তোদের । যেনো সে কিছুই জানে না কালকের ব্যাপারে হয় তো সত্যি জানত না। সারাদিন কাটলো আর কিছু ঘটলো না । কিন্তু রাত্রি  ৮ টা নাগাদ শফিকুল আমাদের বললো একটু ঘুরে আসছি এই বলে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়লো , আমরা আলোচনা করে ওর পিছু নিলাম এটা দেখার জন্য যে কোথায় যাচ্ছে ও। ওর পিছু পিছু আমরাও সাইকেল নিয়ে বেরোলাম ওর থেকে একটু দূরে দূরে যেতে থাকলাম আমরা যাতে আমরা ওর পিছু নিয়েছি ও বুঝতে না পারে। দেখলাম ও হসপিটাল এর গেট এ ঢুকে গেলো আমরা ও ঢুকলাম একটু পর । অনেক খুঁজলাম চারিদিকে কোথাও পেলাম না শফিকুল কে শুধু মাত্র মর্গের দিক টাই গেলাম না আমরা । 

শান্তনু শেষে বললো চল মর্গের ওদিক টা একবার দেখে আসি কিন্তু আমি আর অমিয় সোজাসুজি মানা করে দিলাম যে আমরা ওদিকে যাবো না , কিন্তু শান্তনু কিছুতেই ছাড়লো না আমাদের যেতে হলো ওর সাথে । মর্গের সামনের দিকটায় কোথাও পেলাম না শফিকুল কে আমরা বেশ হতাশ হলাম ছেলে টা গেলো কোথা । একটু পর আমি শুনতে পেলাম যে কে যেনো একটা গোঙাচ্ছে মর্গের পিছনে পুকুরের দিক টাই । বললাম ওদের কে শুনতে ওরা বললো হ্যাঁ ওরাও শুনতে পাচ্ছে সেই রকম গোঙানি যেরকম শফিকুল সেই এক রাত্রে গোঙাচ্ছিল । আমরা তিন জনে চুপচাপ পা টিপে টিপে পিছন দিকে গেলাম কিন্তু কিছু দেখতে পেলাম না শুধু সেই শব্দ টা শুনতে পাই। হটাৎ অমিয় কাপতে কাপতে আমাদের টেনে ধরলো আমরা ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম ও কিছু একটা দেখে ভীষণ ভয় পেয়েছে তারপর শান্তনু ওর টর্চ টা ফেললো সেদিকে যেদিকে অমিয় আঙ্গুল নির্দেশ করেছিল আমাদের দেখার জন্য , আর টর্চের আলো পড়তেই আমরা দেখলাম শফিকুল  নিচু মুখ করে বসে আছে সেখানে যেখানে মর্গের  ভেতর থেকে  জল টা এসে যেখানে পড়ছে একটা পাইপ এর মাধ্যমে সেই পাইপ টার মুখের গড়া তে আর তার পাশে দাড়িয়ে সেই ছায়ামূর্তি টা,আমরা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম সেদিকে শফিকুল বসে বসে গোঙাচ্ছে , এরপর শান্তনু প্রথম টর্চ নিয়ে এগিয়ে গেলো ওর দিকে তার পিছু পিছু আমাদের ও যেতে হলো কারণ আমরা ভয়ে সেখানে দুজনে দাড়িয়ে থাকতে পারছিলাম না । সামনে এসে দেখলাম ছায়ামূর্তি টা উধাও তারপর শফিকুলের শরীরের ওপর টর্চ এর আলো ফেললো শান্তনু আর অবাক সন্ত্রস্ত হয়ে দেখলাম শফিকুল সেই মর্গের থেকে আসা জল পান করছে আর মাথা আর শরীরে ছেটাচ্ছে । আমরা ডাকলাম ওকে অনেকবার কিন্তু কোনো সাড়া নেই ওর, আমরা আর দাড়িয়ে থাকতে পারলাম না ওই মর্গের জলের দুর্গন্ধ আর শফিকুল এর ওই অবস্থা দেখে । 

আমরা শান্তনু কে ওখান থেকে টেনে নিয়ে এলাম হসপিটাল এর গেট এর সামনে । তারপর সেখানেই আলোচনা হলো, এভাবে আর নয় কিছু একটা করতে হবে  বললো শান্তনু কিন্তু আমরা বললাম চল রুম আর যাবো না ওখানে শফিকুল ঠিক রুমে ফিরে আসবে ভাই । অনেক বুঝিয়ে শান্তনু কে রুমে নিয়ে এলাম আমরা , খাবার আর খেলাম না সেদিন শুধু বিছানাই শুয়ে অপেক্ষা করতে থাকলাম শফিকুল এর বাড়ি ফেরার । রাত ১১ টা ৪৫ এ সাইকেল এর আওয়াজ পেলাম আমরা বুঝলাম সে আসছে । একটু পরেই ঘরে ঢুকলো শফিকুল তার জামা প্যান্ট এ রক্তের দাগ তার মুখ টা কেমন যেনো ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে । ঘরে ঢুকে আমাদের বললো কি রে ঘুমাস নি তোরা সাথে সাথে শান্তনু জিজ্ঞাসা করলো তুই কোথায় গিয়েছিলি সফিকুল .?  সে বলল একটা বন্ধুর সাথে দেখা করতে , শান্তনু বললো আর এই রক্তের দাগ গুলো কি করে হলো? তার উত্তরে বললো বন্ধুটার অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে ওকে হসপিটাল এ দেখতে গেছিলাম সেই ওর রক্ত লেগেছে । শান্তনু বললো খাবার খাবি না , সে বললো না রে আজ খুব বেশি খাবার খেয় এ নিয়েছি বাইরে । সব যেনো নরমাল কিন্তু আমাদের ভয় এ ঘুম হলো না কারো সফিকুল ঘুমোতেই আমরা ছাদে গেলাম আলোচনা করতে যে কি করা যায়। ঠিক করলাম কাল সকাল ওর বাড়িতে ফোন করে সব বলব , এই ঠিক করে আমরা নিচে আসলাম আর এসেই যেটা দেখলাম আমাদের শরীর ঠাণ্ডা হয়ে গেল আর অমিয় তো ধপ করে পড়ে গেলো অজ্ঞান হয়ে। দেখলাম শফিকুল এর দেহ টা বিছানা থেকে ১ ফুট ওপরে ভাসছে এরকম দেখতে দেখতে কম সে কম ১০ মিনিট পর দেহ টা বেড এ নেমে গেলো এবার। আমরা অমিয় কে চোখে মুখে জল দিয়ে ঠিক করে আবার ছাদে গিয়ে বসলাম সেই রুম এ ওর সাথে আর থাকতে পারলাম না আমরা। সারারাত জেগে ওরকম বসেই সকাল হতেই আমি ফোন করলাম শফিকুলের বাবা, সমস্ত ঘটনাটা বললাম ওর বাবা বললো ওকে একটু দেখো তোমরা বেটা আমি যাচ্ছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব । 

ফোন টা কেটে নিচে এলাম আমরা দেখলাম শফিকুল ঘুমোচ্ছে আর ওর মুখ টা কেমন যেনো শুকিয়ে গেছে চোখের নিচে কালি পড়েছে । খুব খারাপ লাগলো ওকে এরকম দেখে । সকাল ৯:৩০ এর দিকে একটা গাড়ি তে শফিকুলের বাবা ওর কাকা আর কাকার ছেলে এলো । দেখলাম শফিকুল এর বাবা খুব কাঁদছে এসেই আমাদের জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকলো । আমরা ওনাকে ধরে রুমের ভেতর নিয়ে গেলাম । বাড়িতে ঢুকেই ওরা অবাক একি হয়েছে ওদের রাজপুত্রের মত দেখতে ছেলেটার অবস্থা , আমরা সব ঘটনা ওর কাকা আর কাকার ছেলে কে বললাম । ওর কাকা বললো এটা জিনের (আত্মা) কাজ নিশ্চয়ই শফিকুলের ওপর জিন এর প্রভাব পড়েছে। যাই হোক শফিকুল ঘুম থেকে উঠলো ওর বাবা বললো চল বেটা বাড়ি যেতে হবে , শফিকুল বললো কেনো? ওর বাবা বললো কিছু কাজ আছে দরকারি । কিন্তু শফিকুল কিছুতেই রাজি হয় না , অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে আমরা ওকে রাজি করলাম । ১২ টা নাগাদ ওনারা শফিকুল কে নিয়ে চলে গেলো আর যাবার আগে ওর বাবা আমাদের আলাদা করে বলে গেলো যে বাবা তোমরা ভালো থেকো সাবধানে থেকো , শফিকুল কে আর এখানে পাঠাবো না আমি। সেটা শুনে আমাদের খুব খারাপ লাগলো । ওরা চলে যাবার পর খুব মন খারাপ আমাদের তিন জনের সারাদিন শুধু ওর নিয়ে আলোচনা হলো। 

আমাদের আর রাত্রে করো ঘুম হয় না শফিকুলের কথা মনে পড়ে আর কিছুটা ভয় এ । যাই হোক এভাবে ৩ দিন কেটে গেল । আমরা ও টিউশন পড়াশোনা করতে শুরু করেছি অনেক টা আগের মতো। শফিকুল এর সাথে ফোনে কথা ও হলো একদিন। পঞ্চম দিন রাত্রে আমি একটা স্বপ্ন দেখলাম ,  যেনো সফিকুল আমার পাশে দাড়িয়ে বলছে তোরা সাবধানে থাকিস আমি চললাম । আমার ঘুম টা ভেঙে গেলো সাথে সাথে । উঠে বুঝলাম সব টাই স্বপ্ন , জলের বোতল থেকে জল খেলাম সময় দেখলাম মোবাইলে দেখলাম ১:৪০ তারপর আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে শান্তনুর ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো , আমিও কোন অজানা আশঙ্কা তে ধরপরিয়ে উঠেই বললাম কি হয়েছে?

 তার পর শান্তনু আর অমিয় আমাকে যেটা বললো সেটা শুনে আমার মাথায় যেনো বাজ পড়লো, চারিদিকে অন্ধকার দেখলাম এক মুহূর্তের জন্য , শান্তনু বললো শফিকুলের কাকার ছেলে ফোন করে জানিয়েছে যে শফিকুল কাল রাতে তাদের বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে মারা গেছে । আমি মনে মনে ভাবলাম কাল রাত্রে শফিকুল যে আমার স্বপ্নে এলো তাহলে কি সেটা কি স্বপ্ন নয় ? শফিকুল এর  মৃত্যুর পর তার আত্মা এসেই কি আমাকে ওরকম বলে গেলো? 

0 comments: