সম্পাদকের কলমে

নারায়ণ দেবনাথ- সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম । ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম । নমস্কার সহ অঙ্কুর রায় সংখ্যার সম্পাদক অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী প্রধান সম্পাদক

লেখা পাঠানোর জন্য

আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com

Total Pageviews

By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.

 সিমলার স্মৃতি 

শ্রেয়া সেনগুপ্ত 



সিমলা ভ্রমণ আমার জীবনের এক অবিস্মরণীয় স্মৃতি। আমি তখন বেশ ছোট্ট। এপ্রিল মাস আমাদের সিমলা যাওয়ার দিন স্থির হলো। আমার মনে তখন স্বপ্নের আনাগোনা, টিভি তে দেখা, গল্পে শোনা বরফের দৃশ্য, বরফের মাঝখানে দেবাদিদেব মহাদেব বসে আছেন ইত্যাদি হলো সিমলা ভ্রমণের পূর্বে আমার কল্পনার বিষয়বস্তু।

            যাই হোক, গুয়াহাটি থেকে রাজধানী এক্সপ্রেসে আমরা দিল্লীর উদ্দেশ্য রওনা হলাম। দিল্লী গিয়ে একদিন হোটেলে ছিলাম। তার পরদিন কালকা যাবো বলে শতাব্দী এক্সপ্রেসে চড়ে বসলাম আর পৌঁছে গেলাম সকাল ৮ টায়।কালকা অপূর্ব সুন্দর ছোট্ট একটা পাহাড়ী শহর।টয় ট্রেনে করে গতিপথের সৌন্দর্য্য উপভোগ করবো বলেই কালকাতে এক রাত থেকে গেলাম, হোটেল "লোটাস" এ। জলখাবার সেরে দেখতে গেলাম দ্রষ্টব্য জায়গাগুলি। যাদভিন্দ্র গার্ডেন, পূর্বের পিঞ্জর গার্ডেন, দেখে মন ভরে গেলো। সারাদিন খুব আনন্দ করলাম। রাত প্রায় ৯ টায় খাওয়া দাওয়া সেরে হোটেলে ফিরে এলাম। সেখানেই শীতের আমেজ পাওয়া গেলো। ভোরবেলা উঠে কালকা স্টেশনে পৌঁছলাম, দেখলাম টয় ট্রেন দাড়িয়ে আছে। টিকিট কেটে উঠে বসলাম খোলা জানালার পাশে। ধীরে ধীরে গাড়ি এগিয়ে চললো, জানালা দিয়ে দেখতে থাকলাম প্রকৃতির ও আঁকাবাঁকা রাস্তার সৌন্দর্য্যরাশি। ছুটন্ত ট্রেনে বসে গাছের পাতা ছেরার আনন্দ যে কী তা আমি লিখে বোঝাতে পারবো না।

               প্রায় বিকেল ৪:৩০ মিনিটে সিমলা স্টেশনে নামলাম। এপ্রিল মাস কিন্তু গায়ে জড়ালাম শীতের কাপড়। স্টেশনে আমাদের হোটেলে নিয়ে যাওয়ার জন্য ৩-৪ জন মালবাহক এগিয়ে এলেন। শেষ পর্য্যন্ত একজনের সাথে এলাম " হোটেল মহারাজ " এ। রাতটা হোটেলে থাকলাম। পরদিন ভোর হতেই " মানালি " যাওয়ার প্রস্তুতি - সকাল ৭টায় রওনা দিলাম। স্করপিও গাড়ী করে আমাদের যাত্রা শুরু হলো। পাহাড়ী আঁকাবাঁকা রাস্তায় তীরের মত ছুটে চললো গাড়ী। একদিকে বিশাল খাঁদ, আর একপাশে পাহাড়। যাত্রাপথে আমাদের কিকু মন্দির দেখানো হলো। মাঝে মাঝে গাড়ী থেকে নেমে পাহাড়ী সৌন্দর্য্য উপভোগ করলাম। বেলা তখন প্রায় ২টো , ড্রাইভার আমাদের একটা ভালো হোটেলে নিয়ে গেলেন আর আমরা দুপুরের খাওয়া সারলাম। আবার যাত্রা শুরুর কিছুক্ষণ পর একটা সুড়ঙ্গের মাঝখান দিয়ে গাড়ী চলতে লাগলো, অ-নে-ক সময় লাগলো সেই সুড়ঙ্গ পার হতে। 

                   মানালি পাওয়ার প্রায় ঘণ্টা খানেক আগে আমরা কুল্লু শহরে পৌঁছলাম। শহরে নেমে কিছু গরম জামাকাপড় কিনে নিলাম ও একটু টিফিনো খেয়ে নিলাম। আবার শুরু হলো আমাদের পথ চলা। সন্ধ্যে ৬টা নাগাদ গিয়ে পৌঁছলাম তুষার সম্রাজ্ঞী মানালি তে। আমাদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল " হেমা হলিডে হোম " এ। এই হোমের পাশ দিয়ে কুলু কুলু বয়ে চলেছে বীজ নদী। বিখ্যাত ক্লাব হাউস ঠিক হলিডে হোমের ডান দিকে। রাতে খাওয়া- দাওয়া করে নিদ্রা দেবীর কোলে আশ্রয় নিলাম। মনে অফুরন্ত উচ্ছ্বাস, কখন ভোর হবে আর গাড়ী নিয়ে ছুটবো " রোটাং পাস " এ , যেখানে তুষার সম্রাজ্ঞী দুহাত বাড়িয়ে আমাদের ডাকছেন। ভোর হওয়ার আগেই আমার ঘুম ভেঙে গেলো, ভাবলাম দেরী হয় যাবে। জানালা দিয়ে বরফ ঢাকা পাহাড় দেখতে পেলাম, ইচ্ছে করছিল ছুট্টে গিয়ে ছুঁয়ে দেখি। গরমজলে স্নান করে প্রাতরাশ সেরে বেরিয়ে পড়লাম । বেশ কিছু দুর যাওয়ার পর ভাড়া করা শীতের পুলোভার, , স্নো হাইকিং বুট জুতো সবই পরে নিতে হলো। আরো কতটা যাওয়ার পর পৌঁছলাম রোটাং পাস এ। হাড় কাপানো হাওয়া গায়ে লাগতেই ভয় পেয়ে গেলাম ও কাপতে শুরু করলাম । এরপর কিছুটা ঘোড়ার পিঠে চড়ে এগোলাম। নামলাম দুধসাদা তুষারের কোলে। রোদের ঝলমল কিরণ বরফের গায়ে ছড়িয়ে দিয়েছে এক স্বর্গীয় সৌন্দর্য্য। আমার কল্পনাকে চোখে দেখলাম, ছুঁয়ে দেখলাম, মনেহলো এটা স্বর্গ। সেই স্বর্গীয় সৌন্দর্য্যকে দুহাতে তুলে নিবেদন করলাম দেবতার উদ্দেশ্যে। স্থানীয় মহিলাদের থেকে ভাড়া করা স্থানীয় পোশাক পরে অনেক ছবি তুললাম। স্নো স্কেটিং করার চেষ্টা করেছিলাম, হলো না। আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। ছুটোছুটি করতে করতে আমার একসময় এত খিদে পেয়েছিল, দেখলাম পাহাড়ী মহিলারা খাবারের অস্থায়ী দোকান দিয়ে বসেছে। আমরা সবাই যার যার পছন্দ মত খেয়ে নিলাম। কখন যে ফেরার সময় হয়ে এলো বুঝতেই পারিনি। মানালি তে ফিরে আসতে আমাদের সন্ধ্যে গড়িয়ে গিয়েছিল।

             পরদিন আমরা মানালির আসে পাশের দ্রষ্টব্য স্থান গুলো দেখে নিলাম। শীতের জামাকাপড়ও কিনলাম। চতুর্থ দিন সারাদিন ঘোড়াঘুড়ির পর বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ আমরা সিমলার যাওয়ার পথে পাড়ি দিলাম। মন চাইছিলো না ফিরে আসতে, তবুও ফিরতে তো হবেই। রাত ১২টায় এসে পৌঁছলাম সিমলায়। সকাল হতেই বেরিয়ে পড়লাম সিমলা ভ্রমণ এ। দেখলাম বাঙালির অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান " সিমলার কালি বাড়ি" । ম্যাথ সিমলার প্রানবিন্দু। ২৪৫৫ মিটার উচ্চতায় " জাখু " হলো এ অঞ্চলের সবচেয়ে উঁচু পাহাড় চূড়া। ভারতের দ্বিতীয় ও সবচেয়ে পুরনো চার্চ " খ্রিস্ট চার্চ" দাড়িয়ে রয়েছে এ অঞ্চলে। দেখলাম হিমাচল রাজ্য জাদুঘর, সামার হিল, প্রসপেক্ট হিল, চাঁদ্বিক প্রপাত, টুটিবান্ডিতে চিড়িয়াখানা, নবাবাহারে বিশাল পুষ্পদ্দ্যান। শতদ্রু নদীর তীরে গন্ধক জলের উষ্ণ প্রস্রবণ যার নাম "তত্তাপানি"। ফিরে আসার আগের দিন সন্ধ্যায় আবার গেলাম কালি বাড়ি - সন্ধ্যারতি দেখলাম, প্রসাদ নিলাম, খুব ভালো লেগেছিলো।

0 comments: