সম্পাদকের কলমে

নারায়ণ দেবনাথ- সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম । ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম । নমস্কার সহ অঙ্কুর রায় সংখ্যার সম্পাদক অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী প্রধান সম্পাদক

লেখা পাঠানোর জন্য

আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com

Total Pageviews

By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.



 ভক্তিমার্গ : হিন্দু – মুসলমানের যৌথ সাধনা

অঙ্কুর রায়

                 ভারতে হিন্দু-মুসলমান সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুণগত পরিবর্তন হয়েছে রামমন্দির- বাবরি মসজিদ মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রামমন্দিরের পক্ষে রায়দানের কারণে । এমনকি এন আর সি , সি এ এ পাশ হবার পরেও যা হয়নি সুপ্রিম কোর্টের একটি রায় সেটা করতে সক্ষম হয়েছে । মোদি যখন চোদ্দ সালে ক্ষমতায় আসে এদেশের মুসলমান সমাজ মানসিকভাবে তৈরীই ছিল কিস্কিন্ধ্যাবাহিনীর দাপাদাপি অনেক বাড়বে । তাই দ্বিতীয় দফায় মোদি আসার পরে এন. আর. সি , সি .এ .এ এবং তিনশো সত্তর ধারা বিলোপ ইত্যাদিতে তারা আলোড়িত হলেও একটা নিশ্চিন্ততা তাদের ছিল যে শাহিনবাগের পাশাপাশি আসমুদ্রহিমাচল ভারতে আপামর জনগণ তাদের পাশেই আছে । কিন্তু সমস্ত প্রমাণ নস্যাৎ করে রামমন্দিরের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের রায় ভারত রাষ্ট্রের ওপর মুসলিম সমাজের সমস্ত ভরসা টলিয়ে দেয় । আপামর মুসলিম সমাজের মনে এই ধারণা জন্মায় যে ভারত রাষ্ট্রে আজ তারা অবাঞ্ছিত , তারা আজ দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক । বিজেপি , আর. এস. এস এবং তাদের বিভিন্ন গণসংগঠন মায় বিজেপি পরিচালিত বিভিন্ন রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রের বিজেপি সরকার যখনই মুসলিমদের অধিকারে হস্তক্ষেপ করেছে , তখনই তারা বিচারবিভাগের ওপর ভরসা রেখেছে। কিন্তু এবার সর্বোচ্চ আদালত পক্ষাবলম্বন করায় তাদের শেষ ভরসাস্থলও সরে গেছে । বিশাল সংখ্যক মুসলমান জনগণ অনুভব করেছে যে ভারত আস্তে আস্তে হিন্দু রাষ্ট্র হবার দিকে এগোচ্ছে যেখানে মুসলমানের কোন মৌলিক অধিকার , স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার অধিকার , নিজের পছন্দের খাদ্য খাবার অধিকার , পোশাক পরার অধিকার খর্ব হতে হতে চলেই যাচ্ছে ।

                      এই পরিপ্রেক্ষিতে হিন্দু- মুসলমানের যে কোন ঐক্য-র আলোচনা , সম্প্রীতির আলোচনার মিলনভূমি হল ধর্ম ও সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পূর্ণ সম্পর্করহিত ক্ষেত্র । সম্পূর্ণ ধর্মনিরপেক্ষ যে বিষয়গুলো যেমন – অর্থনৈতিক , জীবিকাসংক্রান্ত , নির্বাচনসংক্রান্ত ইত্যাদি বিষয়গুলো সামনে রেখে এক আপাত ঐক্য ও সম্প্রীতি তৈরীর চেষ্টা চলছে । এই পরিবেশ ও পরিস্থিতিতেই একবার ফিরে দেখা যাক ভারতে ইসলামের আবির্ভাবের সময় সবচেয়ে যে সংবেদনশীল বিষয় অর্থাৎ ধর্ম , সেই ধর্মীয় সাধনার ক্ষেত্রে ভারত ইতিহাসের মধ্যযুগে কিভাবে সমন্বয় সাধিত হয়েছিল ।

                  আলোচনার  শুরুতেই একটি বিষয় স্পষ্ট করা যাক যে আজকের হিন্দু সংস্ক্তি তৈরী হয়েছে বহু দেশি বিদেশি জাতির বিশ্বাস , বিদ্যা , দেবতা , আচার ইত্যাদি মিলে । আর এর সম্পূর্ণ কৃতিত্ব ভক্তিমার্গের সাধনা ও ভাগবতদের । তাঁদের উদারতার জন্যই এই মহা মিলন সম্ভব হয়েছে ।

                   ভক্তিযোগ বা মার্গ কিন্তু সম্পূর্ণ অনার্য পথ । এর উদ্ভব দ্রাবিড়দেশে । পদ্মপুরাণে আছে ভক্তি বলেছেন – ‘ আমার জন্ম দ্রাবিড়ে, বৃদ্ধি কর্ণাটে , কিছুকাল স্থিতি মহারাষ্ট্রে , জীর্ণতা গুজরাতে ।‘

                   ভক্তি আন্দোলন মূলতঃ  আবর্তিত হয়েছে অবৈদিক শিব ও বিষ্ণুকে কেন্দ্র করে। প্রথম থেকেই বেদপন্থী ব্রাক্ষণদের তীব্র বিরোধিতা সইতে হয়েছে ভক্তি আন্দোলনকে কারণ এই আন্দোলনের  পুরোধা  অন্তজ শ্রেণীর মানুষ । মহাভারতের বৈষ্ণবরা আভীর জাতির মানুষ,  তামিল দেশে আলভার– রাও  নিম্নশ্রেণীর, এমনকি কন্নরদেশের বীরশৈবরাও অনার্য , অন্তজ ।  

                    এই ভাগবতদের প্রচেষ্টাতেই ভারতে আগত গ্রীকরা এই দেশের সংস্কৃতি আপন করে নেয় । বেসনগরে প্রাপ্ত খ্রী পূ দ্বিতীয় শতাব্দীর এক শিলালেখ অনুসারে তক্ষশীলার ডিয়সের পুত্র হেলিয়োডোর বিষ্ণুমন্দিরের গরুরধ্বজ তৈরী করে দিচ্ছেন । অনেক শক – হুণ – যবন শৈব হয়ে গেছেন যেমন  কেডফাইসস ।

                     মুসলমান রাজত্বের বহু আগেই ভারতে এসেছিলেন মুসলমান সাধকরা তাঁদের বাণী নিয়ে । জৈনদের পুরাতন – প্রবন্ধগ্রন্থে আছে দেবী অনুপমা মুসলমান ভক্তদের জন্য চুরাশিটি মসজিদ গড়ে দিয়েছিলেন । বহু প্রাচীন লেখ পাওয়া গেছে যেখানে আছে মুসলমান সাধকদের জন্য হিন্দু রাজা ভূমিদান করেছেন । যেমন দক্ষিণ ভারতে খ্রীষ্টান সাধকদের ব্রহ্মোত্তর জমি দিয়েছিলেন সেখানকার রাজারা ।  

                     ভক্তির পথে এভাবেই শক – হুণ – যবন – পাঠান যারাই যুগে যুগে এদেশে এসেছেন হিন্দু সংস্কৃতি তাকে সাদরে আপন করেছে এবং নিজেও ঋদ্ধ হয়েছে । আজও তাই দেখা যায় হুসেনী ব্রাহ্মণ , মালকানা রাজপুত , গুজরাটে পীরাণা বা কাকাপন্থী , মধ্যপ্রদেশের পীরজাদা , বাংলার নট , পটুয়া প্রভৃতি শাস্ত্রীয় আচারের বাইরে এক মিশ্র সংস্কৃতির ধারক যাকে বলা যায় ভারত সংস্কৃতি ।

                       পন্ডিত ও মোল্লারা আচার বিচারের যে পাঁচিল তুলেছিল রাজনৈতিক ইসলাম আসার পরে ভক্তির পথে তাকে ভেঙে সমন্বয়ের কাজ শুরু হল মধ্যযুগে রামানন্দ , কবীর প্রভৃতি সন্তদের জীবন- সাধনায় ও  বাণীতে ।

                      রাজশক্তিরূপে ইসলামের অভ্যুদয়ের আগেই ভারতে আসেন ইসলামপন্থী সুফী সাধকরা । ভারতে প্রথম আসেন সূফী সাধক মখদুম সৈয়দ আলি অল্‌ হুজবেরি । লাহোরে তাঁর সমাধিস্থান । তাঁর সমাধি মন্দিরে হিন্দু মুসলমান উভয়ই সম্মান জানাতে যান ।

                       সবচেয়ে জনপ্রিয় সূফী সাধক হলেন খাজা মৈনুদ্দিন চিস্তি । আজমের শরীফে তাঁর দরগা এই উপমহাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় তীর্থ । তাঁর শিষ্য , প্রশিষ্য ফরিদ উদ্দিন , নিজামুদ্দিন , সেলিম চিস্তি প্রমুখ ভক্তির পথে  ধর্ম প্রচার করে ঐক্যের সুরটি বেঁধে দেন । যেমন  বল্মভাচার্য সম্প্রদায়ের বৈষ্ণবদের মধ্যে ইসমাইলি গুরুরা ধর্মপ্রচার করলেন । তাঁরা পুরো হিন্দু থেকেও , রামনবমী জন্মাষ্টমী পালন করেও মুসলমান সাধনার সাথে যুক্ত হলেন । গুজরাটের কাকাপন্থীরা , রাজপুতানার মেও ও মিরশিরাওরা , লবানা ও সখীসরোবরের উপাসকরা এমনই যুক্ত সংস্কৃতির অন্তর্ভূক্ত । সামসী সম্প্রদায় গীতা ও মানেন মুসলমান সাধকদের ভক্তি ও করেন । রসুলসাহিরা তন্ত্র মানেন । আজমেরে মৈনুদ্দিন  চিশতির দরগায় হুসেনি ব্রাহ্মণরা আধা হিন্দু আধা মুসলমান । এমন আরো অনেক উদাহরণ  দেওয়া চলে ।

                 এদেশে এসে মুসলমান বাদশারা এমনকি সংস্কৃত অক্ষরে মুদ্রা ও লিপি ছাপিয়েছেন , হিন্দু মঠ ও মন্দিরের জন্য বহু দানপত্র করেছেন । সেইসব প্রচুর নজির প্রকাশ পাচ্ছে আজ ।  

                 ভারতের পক্ষ হতে ধর্ম সাধনায় প্রথম ঐক্যের বাণী প্রচার করলেন রামানুজের শিষ্য রামানন্দ । রামানন্দের হাতেই দক্ষিণের ভক্তি উত্তর ভারতে এল । তিনি সংস্কৃত ছাড়লেন। ব্রাহ্মণেতর মানুষদের মধ্যে প্রেমের বাণী প্রচার করলেন । তাঁর প্রধান দ্বাদশ শিষ্যের মধ্যে রবিদাস ছিলেন মুচি , কবীর ছিলেন জোলা , সেনা নাপিত , ধন্না জাঠ , পীপা রাজপুত । পরবর্তীকালে কবীরের ধারাতেই এলেন দাদূ, রজ্জব , সুন্দরদাস প্রমুখ । দাদূ ও রজ্জবের জন্ম মুসলমান তুলা ধুনকরের ঘরে ।  

                 ঐক্যসাধনায় ভারতের শ্রেষ্ঠ সাধক হলেন কবীর । হিন্দু – মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মিলন চেষ্টায় ছিল কবীরের ব্রত । তিনি বলতেন – ' খোদা যদি শুধু মসজিদেই বাস করেন তবে বাকি জগৎটা কার? তীর্থে ও মূর্তিতেই যদি কেবল রাম থাকেন তবে বাইরেটা দেখেন কে ? '

' পূরিব দিশা হরি কা বাসা পছিম অলহ মুকামা ।

দিল হী খোজি দিলৈ দিল ভীতরি ইহাঁ রাম রহিমানা।।'

পুব দিকে হরির বাসা পশ্চিমে আল্লার মোকাম । আরে খুঁজে দেখ হৃদয়ের মধ্যে সেখানেই রাম রহিমান ।‘

                   কবীরের এই উদার সাধনায় ক্ষিপ্ত হয়ে গোঁড়া হিন্দু ও মুসলমানরা তাঁর নামে বাদশার দরবারে নালিশ ঠুকলেন । সেখানে মোল্লা ও পণ্ডিতদের একত্রে দেখে কবীর বললেন – হায় ! আমি তো মিলনই চেয়েছিলাম । বিশ্ববিধাতার সিংহাসনতলে তোমাদের মিলবার স্থান সংকুলান হল আর স্থান কুলালো কিনা পৃথিবীর রাজার অপ্রশস্ত  সিংহাসনের নিচে ? তোমাদের মেলাতে চেয়েছিলাম প্রেমে , ভক্তিতে আর আজ তোমরা মিলেছ বিদ্বেষে ? বিদ্বেষ থেকে কি প্রেম – ভক্তির স্থান প্রশস্ত নয় ?

                    ভারতীয় সাধনার ধারায় কবীর এক বিরাট পুরুষ । কবীর পরবর্তী সমস্ত সাধকই – দাদূ  থেকে শ্রী  চৈতন্য – তাঁর দ্বারা অল্পাধিক প্রভাবিত হয়েছিলেন । এমনকি স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও তাঁর অনেকগুলি দোঁহা , যা বিধৃত আছে বীজক গ্রন্থে , ইংরেজীতে অনুবাদ করেছিলেন । আজও কবীর এবং তাঁর বীজক , ভক্তিমার্গের যা প্রধানতম সুর অর্থাৎ সম্প্রদায়নিরপেক্ষতা তা অটুট রেখে যাবতীয় ঝড় উপেক্ষা করে , নিশ্ছিদ্র অন্ধকারের মাঝেও উজ্জ্বলতম আলোকবর্তিকা।

                কবীরের ছয় পুরুষ পরে আসেন দাদূ । তিনি বলেন – ‘ অলখ ইলাহী এক তু , তুহী রাম রহিম ।‘ তুমিই অলখ ইলাহী , তুমিই রাম রহীম ।
' না তহাঁ হিন্দু দেহুরা ন তহাঁ তরুক মসীতি ।‘ – ঈশ্বরের রাজ্যে না আছে হিন্দুর দেউল , না আছে মুসলমানের মসজিদ । কারণ ' সেখানে তিনি আপনি বিরাজিত , সেখানে সম্প্রদায় ও সাম্প্রদায়িকতার স্থান নেই । '

              দাদূর শিষ্য রজ্জব মুসলমান বংশজাত । তাঁর উদারতাও অতুলনীয় । তিনি বলেন ' জগতের সমস্ত সত্যর সাথে যে সত্য না মেলে তা অসত্য , ঝুটা । ‘ রজ্জব বলেন ' যত জীব তত সম্প্রদায়। ' আর ভক্তিমার্গের সার কথা ' হিন্দুর পথেই হিন্দু খুশি , তুরুকের পথে তুরুক , কিন্তু প্রেমময়ের কাছে কোন পক্ষপাতই নেই । '

              ভারতে হিন্দু মুসলমানের যুক্ত সাধনা এমনই মিলেমিশে গিয়েছে যে সাধনপথ ও রচনা দেখে হিন্দু মুসলমান ভাগাভাগি করা অসম্ভব । দরাফ খাঁর রচিত গঙ্গাস্তব অতি নিষ্ঠাবান  ব্রাক্ষণেরও আজ নিত্যপাঠ্য । আবার বেদপরায়ণ মারাঠি ব্রাক্ষণ তুলসী সাহেব হাথরসীর লেখা দেখে মনে হয়  যেন কোন মুসলমান সাধকের লেখা ।

               এঁদের পরেও আরো কত শত সাধক   এমন ঐক্যের কথা বলে গেছেন । এই বাংলায়ও হিন্দু – মুসলমান সাধনার  কম যোগ হয় নি। বহু মুসলমান বৈষ্ণব পদকর্তাতো আছেনই , তা ছাড়াও রামায়ণ , মহাভারত বাংলায় অনুবাদে বহু মুসলমান শাসক উৎসাহ দিয়েছেন । বহু মুসলমান অসাধারণ আগমনী গান বেঁধেছেন । এর পাশেই আছে আউল- বাউল- দরবেশদের অপূর্ব সঙ্গীত-সাহিত্য , যা বাংলার জাতীয় সম্পদ।

               ভারত ইতিহাসের মধ্যযুগ কোনদিক থেকেই অন্ধকারাচ্ছন্ন সময় ছিল না । শিল্প – বিজ্ঞান – সাহিত্যের সবক্ষেত্রেই বরং উৎকর্ষ সাধিত হয়েছিল । মোল্লা ও পণ্ডিতরা যখন সংকীর্ণ আচার বিচার নিয়ে বিবাদে মত্ত ছিল তখন সহজিয়া ও ভক্তি মার্গের সাধনায় , সাহিত্য , শিল্প , স্থাপত্য, ভাস্কর্য সর্বত্রই দেখি হিন্দু মুসলমানের যুক্ত সাধনা । 

ভক্তির উদার ও প্রশস্ত পথেই একদিন ভারতে হিন্দুধর্ম ও ইসলাম - দুই মহাসাগরসম সংস্কৃতি ও ধর্ম পরস্পর আলিঙ্গন করেছিল। আজ যখন পুনরায় বিভেদের উঁচু দেয়াল তোলা হচ্ছে মৌলবাদী আর কুরাজনীতির যৌথ প্রচেষ্টায় তখন ভক্তিমার্গই পুনরায় মহামিলনের পরিবেশ ও পথ তৈরী করতে পারে , যে মিলন হবে পূর্বের ন্যায় আন্তরিক ও দীর্ঘস্থায়ী । ধর্ম ও সংস্কৃতি বিচ্ছিন্ন আর্থ - রাজনৈতিক মিলন , এটা বুঝতে হবে যে , নিতান্তই প্রয়োজনভিত্তিক এবং সেই কারণেই স্বল্পমেয়াদি ও ভঙ্গুর। তাই ইতিহাস থেকেই আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় মিলন , যা সম্ভব কেবল সন্ত কবীর , গুরু নানক থেকে শুরু করে শ্রীচৈতন্য এমনকি ইদানিংকালের শ্রীরামকৃষ্ণ নির্দেশিত ভক্তিপথে , রুখে দিতে পারে যাবতীয় বিভেদ , সংকীর্ণতা ও মৌলবাদ এবং গড়ে তুলতে সক্ষম বৈচিত্র্যময় ঐক্যবদ্ধ ভারত।

0 comments: