সম্পাদকের কলমে
লেখা পাঠানোর জন্য
Total Pageviews
লোপা বৌদি
প্রদীপ ঘটক
লোপা বৌদি সবেতেই নির্লিপ্ত। আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম "তুমি কি করে পার গো?"
লোপা বৌদি হালকা হেসে উত্তর দেয় "আমি এমনই"।
অথচ লোপা বৌদির জীবনে অনেক কিছু থাকার ঘাটতি। একটা ছেলের জন্ম দিয়ে স্বামী বাড়ি ফেরে না কতদিন। কলকাতায় কি করে, কার সাথে থাকে কিছুই জানে না লোপা বৌদি। চোখের জলও ফেলে না। শাশুড়ি খোঁটা দেয় " নিজের স্বামীকে ঘরে রাখতে পারিস না ক্যামন মেয়েছেলে তুই"।
লোপা বৌদি মনে মনে ভাবে "আমি এমনই, সে তার মত"।
আমরা অনেকে যাই লোপাবৌদির কাছে। লোপাবৌদি হেসে এড়ায় সকলকে। কপট চালে কেউ বিপথগামী করতে পারেনি লোপাবৌদিকে। আমিও না। আমি পারিও না। যাই এক উদ্দেশ্যে আর লোপাবৌদির কাছে গিয়ে কেমন হয়ে যাই। মিষ্টি মুচকি হাসিতে লোপাবৌদি আমাকে পরাভুত করে। তবু বন্ধুরা আমাকে সন্দেহ করে।
আমার যে বার কলকাতায় পোস্টিং হল আমি নবীনদার সন্ধানে হাওড়া গেছিলাম। দেখাও পেলাম এক বাজারে এক সুন্দরী বউ নিয়ে দুটো বাচ্ছা নিয়ে ঘুরছে। কথা হল, অনেক কিছু বুঝলাম। শেষে জিজ্ঞাসা করেছিলাম " তুমি বাড়ি যাও না কেন? লোপাবৌদি………"
আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলেছিল " আমার কাজটা তুই করগে না, পারমিশন দিচ্ছি"।
সপাটে একটা চড় মারতে ইচ্ছা করছিল। নবীনদা হালকা ভিলেনি হাসি হেসে সিগারেট টানতে টানতে চলে গেল।
আমি বাড়ি আসি,কলকাতা যাই। কাজের প্রয়োজনে হাওড়াও। নবীনদাকেও দেখি। লোপাবৌদিকে কিছু বলি না। জানি তখনো ও কিছুই রি-অ্যাক্ট করবে না। শাশুড়ির গঞ্জনা, শ্বশুরের তীর্যক বাক্যবাণ কিছুই তার গায়ে আঁচড় কাটতে পারেনা। ছেলে আর রান্নাঘর তার পৃথিবী।
এই লোপাবৌদিও কাঁদল, স্বামীর সেবা করল নিষ্ঠাবান সতীর মতোই--যখন নবীনদা লিভার ক্যানসার নিয়ে বাড়ি এল। নবীনদা অন্যায় স্বীকার করল লোপাবৌদির কাছে আমার কাছে।
তারপর একদিন সকালে ডুকরে ওঠা কান্নার আওয়াজ পেলাম। আমি বললাম "কি হারিয়ে কাঁদছো বৌদি?"
বৌদি চুপ করে চোখের জল ফেলে। মনে মনে বলে হয়তো "আমরা এমনই"।
0 comments:
Post a Comment