সম্পাদকের কলমে

নারায়ণ দেবনাথ- সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম । ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম । নমস্কার সহ অঙ্কুর রায় সংখ্যার সম্পাদক অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী প্রধান সম্পাদক

লেখা পাঠানোর জন্য

আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com

Total Pageviews

By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.

 লোপা বৌদি

প্রদীপ ঘটক 


লোপা বৌদি সবেতেই নির্লিপ্ত। আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম "তুমি কি করে পার গো?"

লোপা বৌদি হালকা হেসে উত্তর দেয় "আমি এমনই"।

অথচ লোপা বৌদির জীবনে অনেক কিছু থাকার ঘাটতি। একটা ছেলের জন্ম দিয়ে স্বামী  বাড়ি ফেরে না কতদিন। কলকাতায় কি করে, কার সাথে থাকে কিছুই জানে না লোপা বৌদি। চোখের জলও ফেলে না। শাশুড়ি খোঁটা দেয় " নিজের স্বামীকে ঘরে রাখতে পারিস না ক্যামন মেয়েছেলে তুই"।

লোপা বৌদি মনে মনে ভাবে "আমি এমনই, সে তার মত"।

আমরা অনেকে যাই লোপাবৌদির কাছে। লোপাবৌদি হেসে এড়ায় সকলকে। কপট চালে কেউ বিপথগামী করতে পারেনি লোপাবৌদিকে।  আমিও না। আমি পারিও না। যাই এক উদ্দেশ্যে আর লোপাবৌদির কাছে গিয়ে কেমন হয়ে যাই। মিষ্টি মুচকি হাসিতে লোপাবৌদি আমাকে পরাভুত করে। তবু বন্ধুরা আমাকে সন্দেহ করে। 

আমার যে বার কলকাতায় পোস্টিং হল আমি নবীনদার সন্ধানে হাওড়া গেছিলাম। দেখাও পেলাম এক বাজারে এক সুন্দরী বউ নিয়ে দুটো বাচ্ছা নিয়ে ঘুরছে। কথা হল, অনেক কিছু বুঝলাম। শেষে জিজ্ঞাসা করেছিলাম " তুমি বাড়ি যাও না কেন? লোপাবৌদি………"

আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলেছিল " আমার কাজটা তুই করগে না, পারমিশন দিচ্ছি"।

সপাটে একটা চড় মারতে ইচ্ছা করছিল। নবীনদা হালকা ভিলেনি হাসি হেসে সিগারেট টানতে টানতে চলে গেল। 

আমি বাড়ি আসি,কলকাতা যাই। কাজের প্রয়োজনে হাওড়াও। নবীনদাকেও দেখি। লোপাবৌদিকে কিছু বলি না। জানি তখনো ও কিছুই রি-অ্যাক্ট করবে না। শাশুড়ির গঞ্জনা, শ্বশুরের তীর্যক বাক্যবাণ কিছুই তার গায়ে আঁচড় কাটতে পারেনা। ছেলে আর রান্নাঘর তার পৃথিবী।

এই লোপাবৌদিও কাঁদল, স্বামীর সেবা করল নিষ্ঠাবান সতীর মতোই--যখন নবীনদা লিভার ক্যানসার নিয়ে বাড়ি এল। নবীনদা অন্যায় স্বীকার করল লোপাবৌদির কাছে আমার কাছে। 

তারপর একদিন সকালে ডুকরে ওঠা কান্নার আওয়াজ পেলাম। আমি বললাম "কি হারিয়ে কাঁদছো বৌদি?"

বৌদি চুপ করে চোখের জল ফেলে। মনে মনে বলে হয়তো "আমরা এমনই"।

0 comments: