সম্পাদকের কলমে
লেখা পাঠানোর জন্য
Total Pageviews
ভূত, ভগবান আর বাঁদরামি
অরিন্দম ঘোষ
-“দাদু, দাদু, গল্প বল” বলে সব নাতি-নাতনিরা ছেঁকে ধরল ধূর্জটিবাবুকে। আজকাল লকডাউনের জন্য সবার পড়াশোনা অনলাইনে, সেটা আদপেই কতটা হচ্ছে তার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। বাড়িতে স্মার্টফোন তো সাকুল্যে দুটো, তা নিয়ে বাড়ির তিনটে বাচ্ছা কোনও রকমে হয়তো সামলাতে পারত। কিন্তু টুপাই আর রন্টি হঠাৎ মা'র সঙ্গে মামাবাড়ি এসে সেই মার্চ মাস থেকে আটকে পড়েছে। কবে যে এসব ঝামেলা মিটবে তার নিশ্চয়তা নেই। ওদের বইপত্তরও রয়ে গেছে কলকাতাতেই। সুতরাং পড়াশোনার অবস্থা গত দু'মাস ধরে যেমন চলছে তাতে অন্যান্য মা-বাবার মতো মনিদীপারও চিন্তার শেষ নেই। টুপাই যদিও ক্লাস টু, রন্টি এবার ক্লাস এইটে উঠল। এই দু'মাসে করোনার আক্রমণ কমবার তো কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না, বরং লকডাউন ক্রমে ক্রমে বাড়তে বাড়তে চার নম্বর দফায় শুরু হল আবার। তারপর আবার দু'দিন আগে সেই ঘূর্ণিঝড়। চারিদিকে গাছটাছ পড়ে তার ছিঁড়ে যাচ্ছেতাই অবস্থা, গতকাল রাতে তো কারেন্ট এল পাক্কা দেড় দিন পর। তাও আজ সারাদিন কতবার যে এল গেল তার ইয়ত্তা নেই।
-“না না, দাদুকে আর বিরক্ত কোরো না তোমরা, একটু রেস্ট নিতে দাও।” বলে মনিদীপা বাবাকে বাঁচাবার চেষ্টা করে। কিন্তু ধূর্জটিবাবু নিজেই বলেন, “আহা বকিস না, বাচ্ছাগুলো একটু আব্দার করছে, আমার তো কিছু করার নেই এখন।” ব্যাস, হৈহৈ করে চেঁচিয়ে উঠল টুপাই, রন্টির সঙ্গে এ বাড়ির তিনটে বাচ্ছাও, ঝিমলি, পাপান আর তুলি। বলতে বলতেই ঝপ করে আবার লোডশেডিং। ইনভার্টারটাও ঠিকঠাক চার্জ পাচ্ছে না, তাই মনিদীপা একটা মোটা মোমবাতি টেবিলের ওপর জ্বালিয়ে দেয়। পাপান চেঁচিয়ে বলে, “দাদু, অন্ধকারের মধ্যে ভূতের গল্প বেশ জমবে, বল? একটা ভূতের গল্পই হোক আজ।” ধূর্জটিবাবু বললেন, “ঠিক আছে, একটা গল্প শুরু করা যাক, ভূতের কিনা তোরাই বল শেষ অবধি।”
সবাই ঘিরে বসল দাদুকে, সবচেয়ে ছোট টুপাই একদম দাদুর কোলের মধ্যে। ধূর্জটিবাবু বলতে শুরু করলেন, “এই গল্পটা কিন্তু আমার ছোটবেলার আমলের, তখনো আমাদের গ্ৰামে ইলেকট্রিক লাইট আসেনি। সন্ধ্যে হতেই একদম অন্ধকার আর নিঝুম নিস্তব্ধ হয়ে যেত চারদিক। খুব দরকার না পড়লে কোনোমতেই কেউ বাড়ি থেকে বার হত না, মোটামুটি আটটা সাড়ে আটটার মধ্যে রাতের খাওয়া সেরে সবাই ঘুম লাগাতাম। ভূতের ভয় ছিল সবার মনের মধ্যেই কমবেশি, তাই গ্রামের কিছু কিছু জায়গায় সন্ধ্যে হব হব অবস্থাতেই অনেকে যেতে চাইত না। বুড়ো বটতলা ছিল এ-রকমই একটা জায়গা। জায়গাটা বেশ ফাঁকা ফাঁকা, বটগাছ ছাড়াও বড় বড় আমগাছ আর নারকেল গাছ ছিল অনেকগুলো। এক সরস্বতী পুজোর রাতে আমাদের প্ল্যান হল মন্দিরে রাত জাগা হবে।”
-“তোমার তখন কত বয়েস দাদু?” ঝিমলি হঠাৎ প্রশ্ন করে।
-“কত আর? চোদ্দ পনেরো হবে।… তারপর যা বলছিলাম, রাত তখন দশটা বেজে গেছে, ঠিক হল যে কয়েকজন মিলে বুড়ো বটতলার নারকেল গাছ থেকে নারকেল পাড়তে যাওয়া হবে। সুবীরদা বলে একজন ছিল আমাদের লিডার গোছের, আমাদের থেকে প্রায় চার পাঁচ বছরের বড়। ব্যায়াম করা চেহারা আর তেমনই সাহস। এক দমে সাঁতরে বড় বড় দিঘি পার হওয়া বা বড় বড় গাছে অনায়াসে উঠে যাওয়া তার কাছে নস্যি। সেই উৎসাহ দেখাল আগে আর বাকি কয়েকজন তার কথায় নেচে উঠল। আমিও দলে পড়ে বুক ঢিপঢিপানি নিয়েও ভিড়ে গেলাম। আমাদের চার পাঁচ জনকে নীচে দাঁড় করিয়ে রেখে সুবীরদা নারকেল গাছে চড়তে শুরু করল। আলো বলতে আমাদের সম্বল একটা কেরোসিন লন্ঠন আর আকাশে শুক্লা পঞ্চমীর সরু এক ফালি চাঁদ। তারই মধ্যে আমরা ঘাড় উঁচু করে দেখতে লাগলাম সুবীরদা কেমন তরতর করে নারকেল গাছ বেয়ে উঠতে উঠতে ক্রমশ অন্ধকারে মিলিয়ে গেল। আমরা কান খাড়া করে আছি নারকেল মাটিতে পড়ার শব্দ শুনব বলে, হঠাৎ এক বিকট চিৎকার আর তারপরই ‘বাবারে মারে’ বলে চেঁচাতে চেঁচাতে অত্যন্ত দ্রতগতিতে সুবীরদা নীচে নামতে লাগল, শেষে প্রায় বিশ ফুট ওপর থেকে লাফ দিল মাটিতে। থরথর করে কাঁপছে ভয়ে, চোখ মুখ সাদা হয়ে গেছে একদম। খালি একবার গাছটার দিকে তর্জনী তুলে মুখ দিয়ে ‘ভূ…ভূ…’ আওয়াজ করে সুবীরদা অজ্ঞান হয়ে গেল। আমাদের অবস্থা তখন চিন্তা কর, ওকে ফেলে পালিয়েও আসতে পারছি না, সবাই মিলে ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপতে কাঁপতে রামের নাম জপ করছি। পা দুটো যেন পেরেক দিয়ে মাটির সঙ্গে কেউ আটকে দিয়েছে, হাঁটু দুটো কাঁপছে, দাঁতে দাঁত লেগে গেছে কারোর ভয়ে। যে সবচেয়ে ছোট ছিল সে বেচারা ভয়ে কাপড় ভিজিয়ে ফেলল। সবাই সবাইকে জড়িয়ে ধরে ‘রাম রাম’ করতে করতেই সুবীরদার জ্ঞান ফিরল। তখন সবাই প্রাণপণে ছুটতে লাগলাম, এক ছুটে একদম মন্দিরে। অবশেষে শোনা গেল গল্পটা, সুবীরদা যখন গাছের প্রায় মাথার কাছে পৌঁছেছে তখন হঠাৎ দেখে গাছের ওপরে একটা ছায়ামূর্তি, তার চোখদুটো জ্বলজ্বল করছে, ভাল করে কিছু বোঝার আগেই একটা ঠান্ডা রোমশ হাত দিয়ে কেউ ওর হাতটা শক্ত করে চেপে ধরল। ঐ অবস্থায় যে ও গাছ থেকে পড়ে যায়নি এই যথেষ্ট।
সেই সময় গ্ৰামে বেশ কয়েকটা বড় বড় চুরি হয়েছিল, তাই রাতে পাহারা দেওয়ার জন্য দল তৈরি করা হয়েছিল বড় বড় ছেলেদের নিয়ে। তারা সারারাত ধরে সমস্ত গ্ৰাম টহল দিতে। ঐ দলে আমার কাকাও থাকত। মন্দিরে আমাদের উত্তেজনা আর কথাবার্তা শুনে তারা এসে জিজ্ঞেস করল কী হয়েছে। আমরা বকুনির ভয়ে বলব কি বলব না ভাবছিলাম, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ধমক খেয়ে বলেই দিতে হ’ল। কাকারা তখন ‘চল তো, দেখি কেমন ভূত’ বলে সবাই মিলে যাবার তোড়জোড় করল। সুবীরদাকে বলল, ‘তুই আয় আমাদের সঙ্গে, কোন গাছটা দেখিয়ে দিবি।’ আমরা বাকিরা কী করব বুঝতে পারছিলাম না, সত্যি কথা হল মন্দিরে থাকতেও ভয় করছিল আমাদের, তাছাড়া বুড়ো বটতলায় কী হয় সেটা চাক্ষুষ দেখার লোভও হচ্ছিল। তাই আমরাও ইতিউতি চেয়ে ওদের দলেই যোগ দিলাম।
বুড়ো বটতলায় পৌঁছে আবার যেন আমাদের হাত পা ঠাণ্ডা হতে শুরু করল। সুবীরদা আঙুল দিয়ে দেখিয়ে ফিসফিস করে বলল, ‘ঐ গাছটা।’ দলটা আস্তে আস্তে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে চলল সেই দিকে, যেন পায়ের আওয়াজ পেলে ভূত সতর্ক হয়ে যাবে। আমরাও নিশ্চুপ মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে রইলাম একটু দূরে জটলা করে। আর একটু এগোবার পর কাকাদের দলটা দাঁড়াল, আর এক সঙ্গে দুটো লম্বা ব্যাটারি টর্চের আলো গিয়ে পড়ল নারকেল গাছটার মাথায়। আমাদের সবার লোম খাড়া হয়ে গেল হঠাৎ, গাছের মাথায় একজোড়া জ্বলজ্বলে চোখ… ঠিক সুবীরদা যেমন বলেছিল। ‘হাঃ হাঃ!’ করে হেসে কাকা বলল, ‘ভূতের চোখটাই শুধু দেখতে পেলি? অত বড় লম্বা ল্যাজটা দেখলি না?’ সঙ্গে সঙ্গে এক বিকট ‘হুপ হুপ’ শব্দ করে লম্বা লেজের মালিক নারকেল গাছের মাথা থেকে পাশের বড় আম গাছটায় লাফ দিয়ে পড়ল।”
গল্প শেষ হওয়া মাত্র সবাই হৈ হৈ করে উঠল, “এটা তো ভূতের গল্প ঠিক হল না দাদু, এটা তো হনুমানের গল্প।” ধূর্জটিবাবু বললেন, “ভূত না হয় নাই হল, ভগবানের গল্প তো হল।” টুপাই বলল, “হ্যাঁ দাদু, আমি দেখেছি হনুমানের পুজো হয় আমাদের ওখানে।”
-“হবেই তো, হনুমান যে আসলে ভগবান।”
-“কিন্তু ওরা যে এত এত ফলমূল নষ্ট করে, খায় কম, ফেলে নষ্ট করে বেশি!”
ধূর্জটিবাবু হেসে বললেন, “তাহলে তো তোমাদের এখন ভগবান হনুমানের গল্প বলতে হবে।”
-“হনুমানের গল্প তো জানি, লেজে আগুন দিয়ে রাবণ রাজার বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছিল।”
-“শুধু কি সেই গল্প? আরো অনেক গল্প আছে, কোনটা শুনবে তোমরা বল।”
-“যেটা খুশি বল। আচ্ছা, হনুমানের মুখটা কালো হয়ে পোড়া কেন সেটা বল আগে। ” তুলির প্রশ্ন।
পাপান বলে, “আরে এটা তো বোঝাই যাচ্ছে, রাবণ রাজার প্রাসাদে আগুন লাগাতে গিয়ে অসাবধানে পুড়ে গিয়ে থাকবে।"
ধূর্জটিবাবু বললেন, “না না, এটা নিয়েও অনেক কথা আছে পুরাণে। হনুমানের জন্ম হয় রাক্ষসদের হাত থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করার জন্যে, তিনি আসলে শিবের অবতার। তাই তাঁর বিশাল শক্তি, বিরাট তাঁর লাফ দেওয়ার ক্ষমতা। ছোট্ট হনুমান একদিন বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করছে, তো খেলতে খেলতে তার খুব খিদে পেয়ে যায়। মনে পড়ে যে মা বলেছিল খিদে পেলে ফল খেতে, উজ্জ্বল টকটকে লাল লাল পাকাপাকা ফল। কিন্তু কাছেপিঠে কোনো গাছে সে পছন্দসই ফল পেল না, গাছে যেগুলো পেকে আছে তাও কেমন ছোট ছোট। তখন তার চোখে পড়ে ভোরের আকাশে লাল টুকটুকে সূর্যটাকে। হনুমান ভাবে ওটাও বুঝি একটা পাকা ফল, তখন সে এক বিশাল লাফ দিয়ে সূর্যের কাছে পৌঁছে খেতে যায়, আর সূর্যর তেজে তার মুখ যায় পুড়ে।”
-“হনুমান কি সূর্যকে সত্যি সত্যি খেয়ে ফেলেছিল?" পাপানের প্রশ্ন।
-“নাহ্। পাছে খেয়ে ফেলে, তাই দেবরাজ ইন্দ্র একটা বজ্র দিয়ে ছোট্ট হনুমানকে আঘাত করে। সূর্য্ না উঠলে তো পৃথিবীই থাকবে না, বাঁচবে না কেউ। তাই…”
-“আর একটা গল্প?” এবার প্রশ্ন রন্টির।
-“আর একটা গল্পও সূর্যর সঙ্গে রিলেটেড। হনুমানের মায়ের নাম ছিল অঞ্জনা, তিনি হনুমানকে সূর্যর কাছে পড়াশোনা করতে পাঠান। সূর্য তো হনুমানকে দেখেই চিনেছে, ছোটবেলায় এই তো তাকে প্রায় গিলে খেয়েছিল একবার। তাই নানান ছুতো করে কাটিয়ে দিতে চায়, বলে “আমার টাইম নেই, সারাদিন তো আমাকে পুব থেকে পশ্চিম ছুটে বেড়াতে হয়।" হনুমান তখন বলে যে সেও সূর্যর সঙ্গে ছুটতে ছুটতে শুনে শুনে পড়া তৈরি করে নেবে। কিন্তু হনুমান যদি সূর্যর পেছনে ছোটে তো শোনার অসুবিধে, তাই ঠিক হ'ল হনুমান সূর্যর দিকে মুখ করে পিছনের দিকে ছুটবে সূর্যর আগে আগে, আর সূর্য শাস্ত্রজ্ঞান শোনাতে শোনাতে ছুটবে তার পেছন পেছন। হনুমানের স্মৃতিশক্তি প্রখর, খাতা পেন্সিল নিয়ে নোট নেবার দরকার হ’ত না, শুনে শুনেই সব মনে রাখতে পারত। কিন্তু সমস্যা হ'ল এই সারাক্ষণ সূর্যের দিকে মুখটা ফিরিয়ে রাখার জন্যে বেচারা হনুমানের মুখটা গেল কালো হয়ে পুড়ে।”
-“দাদু, এসব কি সত্যি?" ছোট্ট টুপাই জিজ্ঞেস করে।
-“পুরাণে এসব কথা লেখা আছে। বিশ্বাস করলে সত্যি, আর বিশ্বাস না করলে সব মিথ্যে।”
মনিদীপা চলতে ফিরতে কাজের ফাঁকে শুনতে পাচ্ছিল দাদুর সঙ্গে নাতি নাতনিদের এই আড্ডা। এবার সে বলল, “হনুমানের গল্পই যেকালে শুনছিস তো আমি একটা গল্প বলি, গল্প নয় কিন্তু, একদম সত্যি কথা।” তুলি বলল, “এখানে এসে বসে বল, পিসিমনি।” মনিদীপা এসে সোফায় বসে বলতে শুরু করল, “ঘটনাটা বছর পাঁচেক আগের, আমরা কলেজের রিইউনিয়ন এর জন্যে দার্জিলিং এসেছিলাম। পরেরদিন কয়েকজন বন্ধু মিলে মিরিক বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যান হল। আমরা বেশ ভোরেই বেরিয়েছিলাম সবাই মিলে একটা ইনোভা ভাড়া করে। সবাই আমরা কলেজের বন্ধু, অনেক দিন পর যোগাযোগ, তাই খুব আনন্দ করব বলে সবাই মুখিয়ে ছিলাম। মিরিক পৌঁছে দেখি সেদিন ঘন কুয়াশা আর বেশ ভালই ঠান্ডা। আমরা ব্রেকফাস্টের জন্য কেক, ফ্রুটস, ডিম সেদ্ধ, কফি সব নিয়ে গিয়েছিলাম সঙ্গে। মিরিক লেকের ধারে একটা বেঞ্চ দেখে বসে সবে খাবারগুলো ব্যাগ থেকে বার করতে শুরু করেছি আমরা হঠাৎ কোথা থেকে একদল বাঁদর এসে হাজির। মুখ কালো হনুমান নয়, গোলাপি মুখওয়ালা বাঁদর সব। কারও কারও কোলে একদম কুঁচো সাইজের লালচে কালারের বাচ্চা। আমাদের দু একজন মোবাইল বার করে ছবি তুলতে লাগল, কেউ বলল, ‘এই ওদের কিছু খাবার দে না, তখন ছবি তোল… ভাল আসবে।’ ওদের ছুঁড়ে ছুঁড়ে টুকটাক খাবার দিতে লাগলাম আমরা। খাবার পেয়ে বাঁদরগুলোর সাহস আরও বেড়ে গেল, তখন আর তাড়াতে গেলেও আর যেতে চায় না। অগত্যা আমরাই প্রমাদ গুনলাম, ব্যাগ গুছিয়ে অন্যদিকে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু করলাম, হয়তো লেকের অন্য দিকটায় বাঁদরের উৎপাত কম হবে। আমরা এক এক জন এক একটা ব্যাগ হাতে হাতে নিচ্ছি, হঠাৎ কোত্থেকে ঝপ করে একটা মোটাসোটা বাঁদর লাফিয়ে এসে বসল আমাদের বেঞ্চটার ঠেসান দেওয়ার জায়গায় আর মুহূর্তের মধ্যে একটা ফলের ব্যাগ নিয়ে পিছনদিকে দৌড় মারল। সবাই ‘হেই হেই’ করে চিৎকার করতে করতে একটু ধাওয়া করতে গেলাম আর অমনি আর একটা বাঁদর চোখের পলকে আমার কাঁধের ব্যাগটা নিয়ে অন্য দিকে গায়েব। আমার তো তখন কান্না এসে গেছে, ঐ ব্যাগেই আমার যাবতীয় টাকা পয়সা, এটিএম কার্ড, মোবাইল, চাবি, আইডি কার্ড সব কিছু। কুয়াশার মধ্যে দিয়ে ক'জন মিলে ছুটলাম বাঁদরটার পিছনে, একটু দুরে গিয়েই দেখা গেল ব্যাটা বসে ব্যাগটা ছিঁড়ে সব জিনিসপত্র ছত্রাকার করে রেখেছে। আর মোবাইলটা ঠিক সেলফি নেওয়ার মতো করে মাথার ওপর তুলে ধরেছে, সামনে আরও তিন চারটে এমন ভাবে বসে আছে যেন গ্ৰুপ ফটো তোলার জন্য রেডি। আমরা ওদের কান্ড দেখে হাসতে হাসতে পেট চেপে বসে পড়লাম। এরপর তাড়া দিতেই ওরা সব ফেলে রেখে পালাল, আমিও বাঁচলাম জিনিসপত্র সব ফেরত পেয়ে।”
মনিদীপার গল্পও শেষ হল, কারেন্টও চলে আসল তখন। রান্নাঘর থেকে ঝিমলি, তুলির মা তনয়া চেঁচিয়ে বলল, “এই বাঁদরগুলো, এবার খেতে আয়, ডিনার রেডি।”

0 comments:
Post a Comment