সম্পাদকের কলমে
নারায়ণ দেবনাথ-
সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম ।
ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম ।
নমস্কার সহ
অঙ্কুর রায়
সংখ্যার সম্পাদক
অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী
প্রধান সম্পাদক
লেখা পাঠানোর জন্য
আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com
Total Pageviews
By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.
জোনাক জ্বলে
মিত্রা হাজরা
টিমটিম করে হারিকেনটা জ্বলছে। আজকাল কেরোসিন অমিল, তাই হারিকেনটা কমিয়ে রাখে বুলা। রাত নটা পর্যন্ত দোকান খুলে রাখা ঠিক নয়, হরিশ বলে। মোড়ের কোনের এই গুমটি টায় চা তৈরি করে বিক্রি করে বুলা। বিস্কুট, পান, বিড়িও রাখে। খদ্দের ভালোই হয়--- বুলার হাতের চায়ের নাম আছে। তবে রাতে তো আর বেশি লোক চা খেতে আসে না, তবুও কেন যে বুলা দু এক জনের জন্য দোকান খুলে বসে থাকে কে জানে। রোজ ই হরিশ গজ গজ করে। বাসটা হর্ণ দিয়ে এসে গেল, দুটো প্যাসেঞ্জার নামলো, একজন চলে গেল-- আর একজন এগিয়ে এলো চায়ের দোকানের দিকে। বাস চলে গেল-- ওদিকে তাকিয়ে চমকে উঠলো বুলা। বিড়ি হবে এক প্যাকেট,হু ---বিড়ির বান্ডিল এগিয়ে দেয় বুলা--একটা দেশলাই ও দাও। বিড়ি ধরিয়ে খেতে খেতে বললো-- একটু চা পেলে ভালো হতো, তবে রাত ও হয়েছে-- আবার আমি ই একা খদ্দের। তাতে কি হয়েছে-- বসুন করে দিচ্ছি। স্টোভ জ্বেলে চা করতে করতে লোকটাকে দেখলো সে, একদম অবিকল সে। একগাল দাড়ি, কাঁধে গেরুয়া ঝোলা, হাতা গোটানো পাঞ্জাবি পরনে। চা খেয়ে দাম মিটিয়ে লোকটা চলে গেল। আসলে সে চায় ও না আর সেই মানুষ টার মুখোমুখি হতে। বুলা দোকানের ঝাঁপ বন্ধ করে হারিকেন হাতে বাড়ির পথ ধরে। কাছেই তার ঘর। ঘরে ছেলে আছে তার রতন---কষ্টে সেষ্টে পড়াচ্ছে, বলে যেমন করেই হোক তোকে পড়াশোনা করে মানুষ হতে হবে। তবে পড়ায় মন নেই অতো--গান গায় সে, আর গান শুনলেই, বুলার রাগ হয়ে যায়--- ছেলেকে বকে। মায়ের ভয়ে বাপ ছেলে চুপ করে থাকে। তবে বুলা যখন ঘরে থাকে না, নিশ্চয় ই রতন গান গায়, ঐ বাপের আস্কারায়।
হরিশ আ্যক্সিডেন্টে একটা পা খোয়ানোর পর থেকেই বুলাই দোকান চালায়, আগে হরিশ বসতো দোকানে। দুপুরে একবার ঝাঁপ বন্ধ করে খেতে আসে সে, আবার তিনটে বাজলেই দোকানে গিয়ে চা তৈরিতে লেগে পড়ে সে। খুব ভীড় হয়--- সকালে আর বিকালে। তবেই তো সংসারটা চলে। সামান্য একটু জমি ছিল--- হরিশের আ্যক্সিডেন্টের সময় সেও চলে গেছে। আকাশে বাঁকা চাদ উঠেছে, তাই রাস্তায় অত অন্ধকার নেই। আগড় ঠেলে দোরে উঠে দেখলো, হরিশ তখন ও জেগে আছে। জিজ্ঞাসা করলো---রতন খেয়েছে? হ্যাঁ, খেয়ে ঘুমিয়ে গেছে। কটা রুটি দুপুরেই করে রাখে বুলা, তরকারী রাখা থাকে সকালের, হয়ে যায়। কাপড় ছেড়ে হাত পা ধুয়ে হরিশ কে খেতে দিয়ে নিজে খেতে বসে সে। সারাদিনের পর খেতে বসে টুকটাক কথা বলে দুজনে। হরিশ বলে-- জানিস্ আজ জবার ঠাকুমা এসেছিল --ওদের সত্যনারায়ণ পুজো কাল, যেতে বলেছে। বুলা বলল-- আমার তো দোকান, রতনের কাল ছুটি বলছিল স্কুলে, ওকে নিয়ে তুমি চলে যেও। তোর ঐ দোকান করেই সব গেল-- তুই রাত পর্যন্ত দোকান খুলে বসে থাকিস, দিনকাল ভালো নয়। আমাকে এখানে সবাই চেনে, চিন্তা কোরোনা, রাতের বাসটার জন্য বসে থাকি। কেউ যদি কিছু নেয়, আজ এই রাতেই একজন বিড়ি আর চা খেলো।
রাতে শুয়েও বুলা ভাবছে লোকটার কথা, ঠিক যেন মানিক--- সেই রকম দেখতে, কথা বলার ভঙ্গিটাও একদম এক। ঝুমুর গান গাইতো মানিক।
প্রাণ বন্ধু আসিতে----সখী আর কতদিন বাকি/চাতক পাখির মত আমি, আশায় চেয়ে থাকি।
ভালোবেসে দুঃখ দেওয়া সখী---ভালো হলো নাকি! /পাগল মনে আর কত দিন, প্রবোধ দিয়ে রাখি।
একটা কষ্ট ওর বুক ভেঙে দিয়েছিল, আত্মীয়রা তাকে বাঁজা বলতো--কোনোদিন ডাক্তারের কাছেও নিয়ে যায়নি তাকে হরিশ। পয়সাই বা কোথায় ! তবুও ঐ বাঁজাটা শুনে প্রাণের ভিতর হাহাকার করতো। হয়তো হরিশ ই-----যাকগে, ভাবে না সে। একটা সন্তানের জন্য কি না করেছে, মায়ের থানে কত মানত কত মাদুলি কবচ, অবশেষে সে সময় মানিক এসেছিল তাদের ঘরে। গ্রামের বন্ধু হরিশের, কোথায় ঝুমুর গান গাইতে এসেছিল। মুখময় দাড়ি, পাঞ্জাবি পরা, চোখদুটো মায়াময়। কি যে হলো--- হরিশের পা তখন ভালো, দোকান ও ই চালাতো। ঘরে মাদুরে বসে গান শুনছিল বুলা----
প্রাণ বন্ধু আসিতে সখী/আর কতদিন বাকি। নেশা জাগলো যেন, নিজেদের হারিয়ে ফেললো দুজনে। মাতৃত্বের আকাঙ্খা, বাঁজা বদনাম ---ঐ ঝুমুর গান, তাকে নেশায় ফেলে দিল। পরদিন ই মানিক চলে গেল, তার আকাঙ্খার ধন রতন এলো তাদের মাঝে। হরিশ ও খুব খুশি, আগলে রাখে যতনে রতনকে। দুজনের ই স্বপ্ন ওকে ভালোভাবে মানুষ করবে, তবে না, গান গাইতে দেবে না ওকে বুলা।
এরপর ই হরিশের আ্যক্সিডেন্ট হয়--- পা বাদ হয়ে যায় একটা, লাঠি নিয়ে একপায়ে কষ্ট করে চলে সে। বুলার পাপেই কি হলো তাহলে-----! ফেলে আসা সময়ের ইঙ্গিত নিয়ে মনের ক্ষতদাগ গুলো হাতড়ায় বুলা। একটা জোনাকি ঢুকেছে ঘরে, ঘরময় আলো ছড়াচ্ছে। ঘুমন্ত রতনকে গভীর মমতায় কোলের কাছে টেনে নেয় বুলা। পুরানো স্বপ্ন আর স্মৃতিতে বুঁদ হয়ে ডুবে যাচ্ছে সে। একটা বড় গাছ---তার পাতাগুলো ঝুম ঝুম শব্দে বাজছে ঝুমঝুমি র মত। মানিক--- না--- হরিশ, সব একাকার হয়ে যাচ্ছে বুলার। ওর মনের কথা যেন গাছটাই বোঝে। গাছটার সারা গায়ে জোনাকি--জ্বলছে, নিভছে।
Subscribe to:
Posts (Atom)
0 comments:
Post a Comment