সম্পাদকের কলমে
লেখা পাঠানোর জন্য
Total Pageviews
পতাকা আর ছায়া
অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী
মঞ্চের আলো জ্বলতেই দেখা যায় একটি ঘরের ড্রয়িং রুম, সেখানে পাজামা পাঞ্জাবী পরে কিছু (চার জন) ছেলে বসে আছে ।
তাদের মাঝখানে টেবিলে একজন নেতা গোছের ছেলে বসে আছে।
দেখে মনে হচ্ছে তার সাঙ্গপাঙ্গরা এসে জড় হয়ছে।
দুজন পতাকা নিয়ে ব্যস্ত ।
মাঝে চেয়ারে বসা নেতা গোছের ছেলেটি খবরের কাগজ পড়ছে ।
১ ছেলে- দাদা, তাহলে কখন ?
২ ছেলে- আরে দাঁড়া, দাঁড়া, দাদা যাচ্ছে ।
১ ছেলে- না আসলে সকাল সকাল হয়ে গেলে ভাল হত ।
২ ছেলে- কটা বাজে ?
( ১ ছেলে ঘড়ি দেখে )
১ ছেলে- ৯ টা ।
২ ছেলে- নটা ! এখন কি ছেলে আসবে ।
আজ আবার রবিবার।
মানুষ ঘুম থেকে উঠবে, তারপর মাংস কিনবে, তারপর তো আসবে ।
এতো সময় আছে ?
১ ছেলে- তা নেই, কিন্তু কাজ টা …
২ ছেলে- হবে হবে ।
৩ ছেলে- দাদা হয়ে গেছে ।
১ ছেলে- কি হল ?
৩ ছেলে- ঐ পতাকা …
১ ছেলে- ও ।
ঠিক আছে ।
ঘরের কোণটায় রেখে দে ।
৩ ছেলে- তুমি বললে মাঠে লাগিয়ে দিতে পারি ।
১ ছেলে দরকার নেই ।
৩ ছেলে- তবে ?
২ ছেলে- হবে হবে, দাঁড়া দাদা আগে বলুক ।
৩ ছেলে- (৪ ছেলে কে) চুপ দাদা এখনও বলেনি ।
১ ছেলে- (দাদাকে) দাদা ? দাদা ?
( দাদা খবরের কাগজ থেকে মুখ তোলে , একবার ১ ছেলেকে দেখে, তারপর বাকিদের দেখে )
দাদা- কি ? কি হল ?
১ ছেলে- বলছিলাম যে পতাকা মাঠে লাগিয়ে দিতে বলব ?
দাদা- পতাকা ! আমাদের দেশের পতাকা ?
২ ছেলে- হ্যাঁ দাদা, পার্টির পতাকা আজ তোলা যাবে, মানে তোলা যায় ?
১ ছেলে- ধুস , কি যে বলিস ? এই তো ক-দিন আগে আমাদের পার্টির জন্মদিনে পতাকা তুললাম ।
আবার সেই এক পতাকা ? কি বলিস?
৩ ছেলে- কেন ? পতাকা মানে পতাকা, দেশ বা পার্টি, সবই তো এক ।
তাই নয় ?
১ ছেলে- তাই হয় না কি ? বোকা ? দেশ মানে দেশ, আর পার্টি মানে পার্টি ।
দেশ আর পার্টি কি এক হল ?
দাদা- কে বলল এক নয় ?
১ ছেলে- অ্যাঁ !
দাদা- কে বলে এক নয় ।
জানিস, আমাদের দেশের ব্যাপারে সব সিদ্ধান্ত তো নিয়েছিল কংগ্রেস ।
মানে একটা পার্টি, আমাদের মত দল, তাহলে দেশ আর আমরা কি আলাদা ? ধুস সব এক ।
২ ছেলে- তাহলে দাদা, কোন পতাকা …
দাদা-
আমাদের সিদ্ধান্তের দিন আজ ।
১ ছেলে- মানে? দল কি ছেড়ে দেবে ?
২ ছেলে- নতুন দল ?
৩ ছেলে- নতুন পতাকা ।
৪ ছেলে- নতুন ছেলে কি জোগাড় করতে হবে ? আরে শুনছো ? (চিৎকার করে ছেলে কে জানাতে চায়)
দাদা- আরে দূর পাগল ।
এবার আমার নতুন রুপ ।
দেশ মানে আমি আমি মানেই দেশ ।
১ ছেলে- তাহলে দাদা , কি করবো ? এটা কি লিখে ফেলব, না কি মাইক নিয়ে বেড়িয়ে যাব ?
দাদা- তুই কি আমাকে ক্যালানি খাওয়াবি ?
১ ছেলে- কেন দাদা?
দাদা- আরে এই ভাবে কি কিছু হয় ? এর জন্য একটা প্লানিং লাগে ।
২ ছেলে- মানে দেশের পতাকার জায়গায় দলের পতাকা তুলতে ?
দাদা- (হাসে) না রে, সেটা নয়, আসল দরকার মানুষ কি চায়, সেটা জানা নয়, আমি কি চাই মানুষকে বুঝিয়ে বলা যাতে মানুষও সেটাই চায়।
তাহলেই আমাদের জয় ।
৩ ছেলে- বেশ কথা ।
(বলেই সে পতাকা গুটতে শুরু করে)
২ ছেলে- কি হল পতাকা গোটাচ্ছিস যে বড়?
৩ ছেলে- বুঝছনা, দাদা যখন বলেছে পার্টির ফ্ল্যাগ আজ উঠবে তার মানে সেই ফ্ল্যাগ না ওঠায় সাধ্য কার ।
১ ছেলে- তাহলে ?
দাদা- তাহলে ।
( আলো নিবে যায়।
নেপথ্যে একটা হুলুস্তুল হবার আওয়াজ শোনা যায় ।
মনে হচ্ছে সবাই চিৎকার করছে ।
ঠিক সেই মুহুর্তে আলো জ্বলে ওঠে।
মঞ্চ কে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে, আর বামদিকের মঞ্চে তখন আলো জ্বলে ওঠে ।
বাম দিকের মঞ্চে তখন দেখা যায় একটা রাস্তা, সেখানে কয়েকটা ছেলে মিলে একটা বড় পর্দা টাঙাচ্ছে ।
পাশে মাইক হাতে ১ ছেলে দাঁড়িয়ে ।
সে কিছু প্রচার করছে ।
কিছু মানুষ এসে পাশে দাঁড়িয়ে দেখছে, কিছু মানুষ একবার দেখে আবার চলে যাচ্ছে ।
)
১ ছেলে- শুনুন, শুনুন, শুনে যান।
আপনারা জানেন আজকের দিন কেন গুরুত্বপুর্ন।
সেই জন্য আপনাদের দাদা আজকে আপনাদের সামনে আসতে চলেছেন।
আপনারা জানেন কি ভাবে করোনা আমাদেরকে শেষ করে দিচ্ছে ।
তাই দাদা ঠিক করেছেন এবারের পতাকা উত্তোলন হবে ভার্চুয়াল।
( মানুষ জড় হতে শুরু করে ।)
১ ছেলে- আপনারা এখানে দাঁড়ান, দাদা আপনাদের নতুন বার্তা দেবেন ।
কোরাস- নতুন বার্তা? কি বার্তা?
১ ছেলে- তার জন্য আর মাত্র কিছুক্ষন, তারপর দেখতে পাবেন, শুনতে পারবেন দাদার বার্তা।
দাদা মানেই দেশ।
দল মানেই স্বদেশ।
কোরাস- তাই! দাদা মানে…
১ ও ২ ছেলে- (একসাথে) দেশ ।
কোরাস- আর দল মানেই…
১ ও ২ ছেলে- হুম স্বদেশ।
( স্টেজের ঐ অংশের আলো নিবে যায়, আর অন্য দিকের আলো জ্বলে ওঠে ।
সেখানে দাদা তাদের সাং পাঙ্গ দের নিয়ে জড় হয় । )
দাদা- বুঝেছিস তোরা কি করবি ?
১ ছেলে- জানি , দাদা।
দাদা- মাথায় রাখিস এটা কিন্তু লাইভ টেলিকাস্ট
হবে, তাই একটা ভুল মানেই সব শেষ ।
১ ছেলে- চিন্তা করোনা, আমরা রীতিমত রিহার্সাল দিয়ে নিয়েছি , কি করতে হবে ।
দাদা- আমি রেডি হচ্ছি ।
তোরা একটা কাজ কর কিছু কাগজ নিয়ে আয়।
২ ছেলে- কেন ?
দাদা- আহা তোরা বুঝতে পারছিস না ।
এগুলো ছিঁড়ে তোদের ছুঁড়ে মারতে হবে আমার দিকে ।
১ ছেলে- তাহলে …
( আলো নিবে যায় সমস্ত স্টেজের )
(নেপথ্যে শোনা যায় মাইক ঠিক করার আওয়াজ ।
-
হ্যালো টেস্টিং, হ্যালো টেস্টিং।
সব ঠিক আছে ? হ্যালো হ্যালো হ্যালো সব শোনা যাচ্ছে ?
ফ্রন্ট স্টেজের আলো জ্বলে ওঠে ।
তিনজন মানুষ হাতে ক্যামেরা নিয়ে ছুটোছুটি করে মাঝ খানে আর দুই ধারে দাঁড়ায়।
বাকি স্টেজের লাইট তখনও জ্বলে নি ।
ফ্রন্ট স্টেজ দিয়ে কিছু মানুষ আসছে, যাচ্ছে।
ঠিক সেই মুহুর্তে নেপথ্যে শোনা যায় মাইকের শব্দ ।
-
হ্যালো হ্যালো, আপনারা রেডি হয়ে যান দাদা আসছে ।
আজকের শুভ দিনে …
সমস্ত স্টেজে আলো জ্বলে যায়।
দেখা যায় বিশাল পর্দা টাঙানো আছে।
তার মাঝে দান দিকে একজন মাইক নিয়ে ভাষণ দিচ্ছে ।মাঝখানে পতাকা টাঙানোর জায়গা ।
)
ছেলে- দাদা আসছেন আপনাদের কাছে।
করোনার জন্য আমাদের সবটাই ভার্চুয়াল করতে হচ্ছে ।
আপনারা ফেসবুক, ইউটিউবে সরাসরি দেখতে পারছেন সব।
( দাদা এসে উপস্থিত হলেন।
মাইকের কাছে গেলেন ।
আশে পাশে সকলের দিকে তাকালেন ।
সাম্নের দিকে থাকা ক্যামেরা গুলো সবাই ঠিক করে ধরল ।
)
দাদা- নমস্কার , আপনারা জানেন, আজকের কি পরিস্থিতি ।
আপনারা জানেন আমি কি ভাবে আপনাদের পাশে থেকে কাজ করার চেষ্টা করেছি।
আজ পতাকা উত্তোলনের শুভ দিনে আপনাদের জানাতে চাই …
( সেই মুহুর্তে নেপথ্যে শোনা যায় একটা আওয়াজ – ছাড় ছাড় আমাকে ছাড় ছাড় ছাড় আমাকে , আমি দাদার কাছে যেতে চাই।
ছাড় ।
ছাড় ।
)
( দাদা দেখল সেই দিকে ।
ডান দিকের পর্দা সরিয়ে একজন ভেতরে আসছে ।
সব কিছুই হচ্ছে স্টেজের মধ্যে টাঙানো বিশাল পর্দার মধ্যে )
দাদা- দাও , দাও ওকে আসতে দাও ।
আসতে দাও ।
( ছেলেটি ভিতরে আসে ।
)
দাদা- বল, কি চাও ? কি বলার আছে ?
ছেলে- আমি আপনার মস্ত বড় ফ্যান।
আমি জানি আমার মতো ফ্যানের কথা আপনি রাখবেন। বলুন রাখবেন?
দাদা- আহা বলই না কি কথা ?
ছেলে- না বলুন আপনি রাখবেন?
দাদা- তোমার কথা আগে শুনি ।
বল ।
ছেলে- আমি আজ পতাকা তুলতে চাই ।
কোরাস- কি ?
১ ছেলে- কি বলছ? মাথা ঠিক আছে ?
২ ছেলে- দাদার জায়গায় তুমি পতাকা ...
১ ছেলে- হতেই পারেনা ।
পারেনা, পারেনা।
কোরাস- পারেনা
ছেলে- দাদা?
কোরাস- দাদা?
দাদা- পারে।
কোরাস- কি?
ছেলে- দাদা।
দাদা- হুম পারে ।
পারে ।
আজ তুমি-ই পতাকা তুলবে ।
ছেলে- ( হাতজোড় করে দাদার সামনে বসে পরে) দাদা, আমি তুলব? ঠিক ?
দাদা- হ্যাঁ।
ভাই তোমার সাথে আমার কি পার্থক্য আছে ?
ছেলে- আপনি মহান ?
দাদা- নাও ভাই , সময় হল পতাকা তোল ।
( লোকটি এগিয়ে যায় পতাকার দিকে।আশে পাশে থাকে সমস্ত ছেলেরা অসন্তোষ প্রকাশ করলেও লোকটি এগিয়ে যায়।
পতাকার দড়ি দাদা লোকটির হাতে তুলে দেয়।
পতাকা উত্তোলন শেষ হয় ।
লোকটি পতাকা তলার পর হাত তুলে চিৎকার করে, - জয় দাদার জয়।
আমাদের মহান নেতা দাদাকে আমরা কুর্নিশ জানাই, যার জন্য আমরা এই স্বাধীনতা ভোগ করছি ।
বল দাদার জয়।
কোরাস- দাদার জয়।
দাদা তুমি মহান ।
লোক- দেশ মানেই দাদা ।
কোরাস- দেশ মানেই দাদা।
( এই সময়ে একটি ছেলে এগিয়ে আসে)
১ ছেলে- কিন্তু দাদা পতাকা তুলবে না এটা মানা যায়না ।
২ ছেলে- কিন্তু দেশের পতাকা একবার তোলা হয়ে গেলে আর তো তোলা যায় না ।
কোরাস- তবে ?
১ ছেলে- এক কাজ করা যাক ।
২ ছেলে- কি ?
১ ছেলে- দেশ মানে যখন দাদা, তখন পার্টি মানে দেশ, তবে …
কোরাস- তবে?
১ছেলে- তাহলে দাদা পার্টির পতাকা তুলুক।
কোরাস- দারুন দারুন ।
( হাতে থাকা কাগজ তারা আকাশে উড়িয়ে দেয়, সাথে সাথে
তারা বাইরে থেকে একটা পতাকা নিয়ে আসে । সাথে
সাথে সেটা আসল পতাকার পাশে লাগিয়ে দেয় । তারপর
দাদা পতাকা তুলতে আসে)
লোক-
দাদা দাঁড়াও , আমি তোমার হাতে পতাকা তুলে
দেব ।
আজকে দেশের পতাকা সাথে তোমার হাতে যে পতাকাই
উঠবে সেটাই হবে দেশের মানুষের পতাকা।
১ ছেলে-
ঠিক বলেছ । দাদার
পতাকা মানেই দেশের পতাকা ।
২ ছেলে-
দেশ মানেই দাদা, দাদা মানেই দেশ ।
লোক-
সত্যি । (লোকটি মাইক তুলে নেয়) বন্ধুগন, আপনারা দেখুন আজ কি ভাবে প্রমানিত হল
দাদার কাছে একজন সাধারণ মানুষেরও কত গুরুত্ব । দাদা
আর স্বাধীনতা যারা এনেছিল তাদের মধ্যে কি কোন পার্থক্য আছে
? কোন পার্থক্য নেই । দাদা
সেই মহান নেতাদের মতো একজন ।
( দাদা পতাকা তোলে
) (মুহুর্তে আলো নিবে যায়। যখন
আবার আলো জ্বলে দেখা যায় তখন পর্দা লাগানো থাকলেও সামনের দিকে থাকা ক্যামেরা নিয়ে যারা
ছিল তারা আর নেই ।
দাদা চেয়ারে বসে হাসছে,
চারপাশে তার ছেলেরা )
দাদা-
হা, হা , হা । দেখলি
, এটা হল বুদ্ধি । কেমন
বুদ্ধি করলাম বলত ?
লোক-
দারুন, দারুন, আর
আমরা সবাই প্রমান করলাম আপনি কত বড় দেশপ্রেমিক । এখন
সব চ্যানেলে আপনাকে দেখা যাচ্ছে ।
দাদা-
( হেসে) তাই ? দেখাচ্ছে
?
১ ছেলে-
দেখাবে না, সেটা আবার কখনও হয়। যে
ভাবে সেটিং করেছি, তাতে দেশের পতাকা আর পার্টির
পতাকা এক করে দিলেন।
২ ছেলে-
পরের ইলেকশানটা এই ভাবেই কেটে যাবে ।
দাদা- তাই তো নিজেকে এই ভাবে তুলে ধরলাম ।
লোক- এরপর ? কি করব দাদা ?
দাদা- এই ভিডিও গুলো দিয়ে প্রচার কর ।
চারিদিকে ছড়িয়ে দে আমার নাম ।
ট্যাগ হবে- দাদা মানেই দেশ ।
দেশ মানেই দাদা।
১ ছেলে- দারুন ।
দারুন ।
লোক- তাহলে দাদা আমরা নেমে পড়ি ? আজ থেকেই ।
( ঠিক এই সময়ে মঞ্চের ডানদিক দিয়ে একটি কম বয়সি, জামা কাপড় ছেঁড়া আট –নয় বছরের বাচ্চা ছেলে তার অন্ধ ভিক্ষুক দাদুকে নিয়ে প্রবেশ করে ।
ভিক্ষুক এর হাতে বড় লাঠি, মাথায় টাক ।
গান্ধীজীর মতন কাপড় পরা আর গায়ে কোন জামা নেই।
ছেলেটির নাম রাম ।
)
রাম- (দাদাকে)
বাবু , বাবু ।
দাদা- (বিরক্ত) কি হল ?
১ ছেলে- কি হল? কি চাস?
রাম- বাবু- রুটি , আর …
দাদা- আবার আর ? আরও চাস? কি চাস ?
রাম- ঘর ।
দাদা- ঘর?
রাম- আসলে আমার দাদুর শরীর টা খুব খারাপ ।
দাদুকে একটু থাকতে দেবেন ?
১ ছেলে- মামার বাড়ি !
রাম- না, না দাদু একটু শোবে ।
আরে একটা রুটি ।
যদি
…
দাদা- শোন ওসব হবে না।
আমরা ওসব দিতে পারব না ।
বুড়ো- বাবু একটু … ( বুকে হাত দিয়ে বসে পরে)
রাম- (দাদুর কাছে গিয়ে) দাদু দাদু ?
১ ছেলে- কি হল এর ?
দাদা- আরে দেখ দেখ মরে গেল না কি ?
রাম- এক্তু দেখুন না ? কি হল দাদুর ? একটু দেখুন ।
(২ ছেলেটি এগিয়ে যায় ।
হাত দিয়ে বুকটা দেখে ।
)
২ ছেলে- দাদা ?
দাদা- কি হল ?
২ ছেলে- দাদা?
দাদা- কি হল ?
২ ছেলে- মনে হচ্ছে …
রাম – (কাঁদে) (ডাকে) দাদু , দাদু ।
দাদা- এবার ?
১ ছেলে- দাদা ডাক্তার ডেকে আনব?
দাদা- ধুর শালা, ডাক্তার ডেকে কি হবে।
২ ছেলে- দাদা, মিডিয়া ডাকব ?
দাদা- মিডিয়া?
১ ছেলে- এই মৃত্যুটা মানুষের সামনে আনলে কেমন হয়।
আসলে মৃত্যু নিয়েই তো খেলা ।
দাদা- তাহলে ?
২ ছেলে- মিডিয়া নিয়ে এসে দেখাব আপনি কেমন করে মৃত্যু সন্মান দেন ।
কোরাস- ঠিক, ঠিক ।
( সাথে সাথে আলো নিবে যায়, সাথে সাথে দুটো ক্যামেরা নিয়ে দুটো লোক চলে আসে )
( মঞ্চে আবার আলো জ্বলে ।
দেখা যায়, মৃত দেহ ঘিরে দাদা সমেত সবাই দাঁড়িয়ে ।
পাশে তখনও দুটো পতাকা উড়ছে। দাদার হাতে মালা।
পাশে দুজন ফোন
নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। )
১ ছেলে- আপনারা সরাসরি দেখছেন দাদা কি ভাবে সাধারণের পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
একটি মৃত্যু তাকেও কি ভাবে সন্মান দিতে হয় তা দাদা দেখিয়ে দিচ্ছেন ।
( দাদা হাতে মালা নিয়ে এগিয়ে যান।
কিন্তু দেখে মৃত দেহের গায়ে কিছু নেই।
তিনি ২ ছেলেকে গলা নামিয়ে ডাকে )
দাদা- আরে কি করলি তোরা ? একটা চাদর আনলি না, নাহলে একটা কাপড় ।
এমন উদল গা !
২ ছেলে- কি হবে দাদা?
দাদা- কি হবে ? ব্যবস্থা কর ।
২ ছেলে- দাঁড়াও ।
( ছেলেটি এদিকে ওদিক খুঁজতে খুঁজতে দেখল পার্টির পতাকা উড়ছে ।
সে সাথে সাথে পতাকা নামাল।
পতাকাটা খুলল, তারপর সাথে সাথে তার গায়ে চাপিয়ে দিল ।
)
দাদা- এটা কি করলি ? আমার তোলা পতাকাটা নামিয়ে দিলি ?
২ ছেলে- কিছু পাইনি তো ?
দাদা- তা
বলে আমাদের পতাকা ? অন্য পতাকা তো ছিল ?
২ ছেলে- সেটা
তো দেশের পতাকা !
দাদা- দেশ
মানেই তো …
( রাম চিৎকার
করে কেঁদে উঠল । )
রামা- আমার
দাদার গায়ে কিছু দেবে না ?
( সাথে সাথে
ক্যামেরা রামের ওপর পরে)
দাদা- দিচ্ছি।
দিচ্ছি । (বিরক্ত হয়ে ২ ছেলের থেকে পতাকা নিয়ে গায়ে চাপা দিয়ে দেয়)
( সবাই তখন
চিৎকার করে বলতে যাবে- দাদা…
হঠাৎ আলো নিবে যায়, শুধু বৃদ্ধের ওপর
আলো পরে । বৃদ্ধ গা থেকে পতাকা সরিয়ে উঠে দাঁড়ায়
। তার মুখ অন্ধকার হলেও তার শরীর স্পষ্ট বোঝা যায় । সে লাঠি হাতে করে দাঁড়িয়ে ভারতের
পতাকার দিকে এগিয়ে যায় । যেন একটা ছায়া মুর্তি। তারপর তাকায় সেই দিকে – আর নেপথ্য থেকে গান ভেসে আসে –
বৈষ্ণব জন তো তেনে কহিয়ে জে
পীড় পরাই জানেরে,
বৈষ্ণব জন তো তেনে কহিয়ে জে
পীড় পরাই জানেরে,
পর দুঃখে উপকার করে তো য়ে
পর দুঃখে উপকার করে তো য়ে
মন অভিমান না আয়ে রে,
বৈষ্ণব জন তো তেনে কহিয়ে জে
পীড় পরাই জানেরে। )
[নাটকটির স্বত্ব সম্পূর্ণ রুপে গল্পগুচ্ছ দ্বারা সংরক্ষিত। পত্রিকার ছাড়পত্র ছাড়া এই নাটকের ব্যবহার সম্পুর্ন রুপে নিষিদ্ধ ]
4 comments:
অসাধারণ লিখেছিস অভিজিৎ। ব্যঙ্গের চাবুকের যে কী প্রচণ্ড ক্ষমতা তার দুর্ধর্ষ নমুনা। তোর জন্য গর্ব হচ্ছে। প্রধান সম্পাদকের কলম থেকেই তো এরকম লেখা আশা করা যায়। কুর্ণিশ।
দারুন
OSADHARON SIR
স্ক্রিপ্ট এর বাঁধুনী নিঃসসন্দেহে শক্তিশালী। বর্তমান সমাজের রাজনৈতিক অন্ধকারে ঘুরে বেড়ানো ভন্ড চরিত্রগুলোকে ব্যাঙ্গাত্বক লাইনগুলো সপাটে চড় কষিয়েছে।
বর্ননা নিঁখুত। প্রতিটি দৃশ্যপট এক একটা চলচ্ছবির মত চোখে ধরা পড়ছে।মঞ্চস্থ না করেও পাঠক পাঠিকাকে যে লেখা চিত্রকল্প বুঝতে সাহায্য করে,সে লেখা প্রবল শক্তিশালী।
Post a Comment