সম্পাদকের কলমে

নারায়ণ দেবনাথ- সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম । ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম । নমস্কার সহ অঙ্কুর রায় সংখ্যার সম্পাদক অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী প্রধান সম্পাদক

লেখা পাঠানোর জন্য

আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com

Total Pageviews

By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.

 


বাংলা গদ্যের জনক --ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর 


- মিত্রা হাজরা 


বীরসিংহের সিংহশিশু ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, আর মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে তাঁর জন্মের দুইশত বর্ষপূর্তি তে ফিরে দেখি এই মহান মানুষের অবিস্মরণীয় সাহিত্য সৃষ্টি কে। রবীন্দ্রনাথ তাঁকে বাংলা গদ্যের যথার্থ শিল্পী বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্য, বিরাট ব্যক্তিত্বে তিনি আমাদের দেশে সমাজ সংস্কারক হিসাবেই বেশি আলোচিত ।

তিনি বাংলা গদ্যের বাল্য কালকে ,কৈশোরে উপনীত করেছেন। বিদ্যা সাগর এর রচনারীতি সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন--- ""বিদ্যা সাগর গদ্যভাষার উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে সুবিভক্ত, সুবিন্যস্ত, সুপরিচ্ছন্ন ও সুসংহত করিয়া তাহাকে সহজাত ও কার্যকুশলতা দান করিয়াছেন। এখন তাহার দ্বারা অনেক সেনাপতি ভাবপ্রকাশের কঠিন বাধাসকল পরাহত করিয়া সাহিত্যের নব নব ক্ষেত্র আবিস্কার ও অধিকার করিয়া লইতে পারেন--কিন্তু যিনি এই সেনানী রচনাকর্তা যুদ্ধজয়ের যশভাগ সর্বপ্রথম তাঁহাকে দিতে হয়। ""

তাঁর বিধবাবিবাহ প্রচলন, স্ত্রী শিক্ষার বিস্তার, বিভিন্ন স্থানে বিদ্যালয় স্থাপন, প্রভৃতি কাজে তিনি সমাজ সংস্কারক হিসাবে সদা স্মরণীয়। অনেক বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে তিনি রূপদান করেছেন এই সকল মহৎকার্য। তিনি বাঙালি জাতিকে অশিক্ষার তমসা থেকে আলোয় আনতে চেয়েছিলেন। সেইজন্য প্রয়োজন ছিল উপযুক্ত শিক্ষার। আর সেই শিক্ষা হবে মাতৃভাষার মাধ্যমে। ‌সেইজন্য বাংলা ভাষাকে উন্নতি করার দিকে মন দিয়েছিলেন প্রথমে। তাঁর সাহিত্য চর্চা কে মোটামুটি পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়। 

১)অনুবাদ মূলক--সীতার বনবাস, শকুন্তলা, ভ্রান্তিবিলাস 

২)শিক্ষামূলক--বর্ণ পরিচয়, বোধোদয়, কথামালা

৩) সমাজ সংস্কার মূলক--বিধবা বিবাহ চলিত হ ওয়া উচিত কি না

বহুবিবাহ রদ হওয়া উচিত কি না। 

৪)লঘু রচনা--অতি অল্প হইল,আবার অতি অল্প হইল ।

৫) মৌলিক রচনা--প্রভাবতী সম্ভাষণ (বন্ধু রাজকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর একমাত্র কন্যার মৃত্যু তে লিখিত)

বর্ণপরিচয় --ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত এক বাংলা প্রাথমিক পুস্তিকা। দুইভাগে এটি প্রকাশিত হয়েছিল-১৮৫৫--সালে। দুই পয়সা মূল্যের এই বই বাংলা শিক্ষা জগতে এক যুগান্তকারী ঘটনা। বাংলা বর্ণমালা কে সংস্কৃত ভাষার জাল থেকে বের করেন বিদ্যাসাগর এবং শুধু সে যুগে নয়, আজ ও আদৃত এই বই। বিহারীলাল সরকারের রচনা থেকে পাওয়া যায়---মফঃস্বলে স্কুল পরিদর্শনে যাওয়ার সময় পালকিতে বসে পথেই বর্ণপরিচয় এর প্রাথমিক পান্ডুলিপি তৈরি করেন ঈশ্বরচন্দ্র। শিশুদের উপযোগী সহজবোধ্য ও সংক্ষিপ্ত বাক্য দিয়ে পাঠ রচনা করা হয়েছে---শিশু প্রথমে বর্ণ ক্রমিক বর্ণ শিখবে ও বর্ণের সঙ্গে সঙ্গে ছোটছোট শব্দ শিখবে। এর পর বর্ণপরিচয় পরীক্ষা, তার পর বর্ণযোজনাও ফলা সংযোগে বানান শেখার শুরু----(পথ ছাড়, জল খাও, হাত ধর, বাড়ি যাও) 

আর যতি চিহ্নের ব্যবহার। এর আগে বাংলা গদ্যে যতিচিহ্ন এর বিষয়ে সচেতনতা ওপ্রয়োগ দেখা যায় নি। 

যেমন -------গোপাল যখন পড়িতে যায়, পথে খেলা করে না। সকলের আগে পাঠশালায় যায়, পাঠশালায় গিয়া আপনার জায়গায় বসে। -------

১৮৫৫--সাল থেকে বিদ্যা সাগর এর মৃত্যুর আগে পর্যন্ত মোট -৩৫-বছরে বর্ণপরিচয় প্রথম ভাগের--১৫২টি মুদ্রণ সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল। প্রথম তিন বছরে--১১টি সংস্করণে ৮৮ হাজার কপি মুদ্রিত হয়েছিল। (তথ্যসংগ্রহ উইকি) 

ইংরেজী গ্রন্থ এর অনুবাদে তিনি বিশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দান করেন। তাঁর রচিত বাংলার ইতিহাস-- History of Bengal- এর অনুবাদ। তিনি ঈশপ ও শেক্সপিয়র এর নাটক অনুবাদ করেন। অনুবাদ যে সাহিত্যকে উচ্চতর মানের অধিকারী করে তোলে তা তিনি জানতেন। তাই তাঁর মৌলিক প্রতিভাকে তিনি অনুবাদকের কাজে নিয়োগ করে বাংলা সাহিত্যকে উন্নীত করেছেন। তাঁর মৌলিক রচনার মধ্যে সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ক প্রস্তাব, বিধবা বিবাহ নিয়ে রচনা ,প্রভাবতী সম্ভাষণ উল্লেখযোগ্য। এই রচনাগুলির মধ্যে তাঁর অসাধারণ সাহিত্যরস চেতনা, প্রখর শাস্ত্রজ্ঞান ও প্রগাঢ় পাণ্ডিত্য এর প্রকাশ আছে।

0 comments: