সম্পাদকের কলমে
লেখা পাঠানোর জন্য
Total Pageviews
মানুষ মানুষের জন্য
পৃথা দে
আজ আরেকবার সত্য ,সুন্দর ,মঙ্গল এর মধ্যে ঈশ্বরের উপস্থিতি উপলব্ধি করলাম।
15 বছর আগে আমি যখন এই বাড়িতে বিয়ে করে আসি, তখন আমাদের বাড়িতে একটা বউ কাজ করতে আসত। বউটা মুসলিমদের বউ। ওর বর কেরালায় চাকরি করতো কিন্তু যেকোনো কারনেই সেখানে মারা যায়। তিনটে বাচ্চা নিয়ে খুব অসহায় অবস্থায় পরে।মেয়েটা বড় ,দুটো ছেলে একটা কোলে আর একটা ছেলে হাঁটতে শিখেছে। মলিনা, সেলিম ও আলিম।আশপাশের সব বাঙালি ঘর সেই ভাবে কোন জায়গায় কাজ পাচ্ছিল না। আমার শাশুড়ি মা বড় মনের মানুষ । অত জাতপাতের বিচার ওনার নেই। আমাদের বাড়িতে আগেও যিনি কাজ করতেন তিনি একজন মুসলিম বৃদ্ধা। ঐ মাসি অসুস্থ হয়ে কাজ ছেড়ে দেওয়ার পরে ,এই বউটা কে মা কাজে নেয়। আমি এসে মার কাছে শুনেছিলাম।আশেপাশে বাড়ি থেকে অনেকেই অনেক কথা বলতো যেহেতু ও দুটো বাচ্চাকে নিয়ে কাজে আসত ।এবং বাচ্চা দুটো আমাদের ঘরের একটা কোণে বসে খেলা করতো। কিন্তু আমরা কখনোই কিছু বলতাম না। বরং আমার মেয়েও ওদের সঙ্গে খেলত।
আমাদের পাশের বাড়ীর এক তলায় একজন ভাড়াটে আসে। বয়স্ক মা বাবা এবং ছেলে বউ বাচ্চা। আমার শাশুড়ি মা সাবিনাকে সেই ভদ্রলোকদের বাড়িতে কাজ করতে পাঠান। বয়স্ক ভদ্রলোকের ছেলে স্কুল টিচার । সে আপত্তি না জানালেও ,ভদ্রমহিলা রাজি হন না মুসলমান বউকে রাখতে এবং সবচেয়ে আপত্তি করেন, ওই বাচ্চা নিয়ে কাজ করার জন্য।
আজ ভদ্রলোক ভদ্রমহিলা বাড়ীতে একা ছিলেন। ছেলের বউ বেরিয়েছিলেন কোথাও। ভদ্রলোক হঠাৎ বাথরুমে পড়ে যান। ভদ্রলোক কিছুতেই উঠতে পারেন না। করোনার এই পরিস্থিতিতে আশপাশের লোক ও তাদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসতে চায় না। আমাদের বাড়িতেও সেরকম কেউ ছিল না। আমি এবং আমার শাশুড়ি বাড়িতে একাই ছিলাম। বাধ্য হয়ে কাউকে না পেয়ে, সেলিম আর আলিম কে ডেকে আনলাম। ওরা কোনো প্রশ্ন না করেই আমার কথায় এল এবং ভদ্রলোককে বাথরুম থেকে টেনে বের করে ,টোটো জোগাড় করে তাকে তুলে দিল এবং আমি আর মাসি মা সঙ্গে সেলিম আমরা নিয়ে গেলাম মেসোমশাই কে হসপিটালে। সেখানে মেসোমশাই এর প্লাস্টার হলো এবং মেসোমশাইয়ের ছেলে খবর পেয়ে সেখানে চলে এলো। আমি বাড়ি চলে এলাম।সারা রাস্তা টোটো তে একা আস্তে আস্তে এটাই ভাবছিলাম একদিন যে ছোট বাচ্চাগুলোকে বাড়িতে খেলতে দিতে হবে ,একটা কোণে বসে ।তাতে যাদের এত আপত্তি ছিল ।আজ বিপদের সময় সেই ছেলেগুলোই কিছু না ভেবে তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।
মানুষ মানুষের জন্য ,এ কথা অনেক সময় শিক্ষিত মানুষেরা সময় ভুলে যায় ।অসময় ঈশ্বর ই তাদের মনে করিয়ে দেয়।
0 comments:
Post a Comment