সম্পাদকের কলমে

নারায়ণ দেবনাথ- সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম । ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম । নমস্কার সহ অঙ্কুর রায় সংখ্যার সম্পাদক অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী প্রধান সম্পাদক

লেখা পাঠানোর জন্য

আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com

Total Pageviews

By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.

 বন ভোজন বেত্তান্ত ...

    সুকন্যা   সাহা          

 

অভিধান   বলছে  ইংরাজী শব্দ পিকনিক এর  আমদানি ফরাসী দেশ থেকে । এর বুৎপত্তিগত  অর্থ হল লেকের  ধারে  বা প্রাকৃতিক পরিবেশে   একসঙ্গে   বসে  খাওয়া   দাওয়া   করা ।pique-nique  শব্দটি প্রথম   পাওয়া যায় Tony willis এর লেখায় । তা  ফরাসীরা  যে অনেক বিষয়েই অনেক জাতির  থেকে   এগিয়ে   তা  বলাই বাহুল্য...সাহেবরা এদেশ  ছেড়ে চলে   গেলেও বাঙ্গালি কিছু কিছু  সাহেবী কেতাকে আত্তীকরন করেছে । পিকনিক তার মধ্যে অন্যতম।মুক্ত প্রকৃতির   তলায়  সম্মিলিত  অনুদানে খাওয়া দাওয়া এবং  open air  live performance এর   সাহেবী রীতিকে  বাঙ্গালী নিয়ে এল বনভোজন বা চড়ূইভাতির  আঙ্গিনায় । শীত কাল আসলেই গুটি গুটি পায়ে  দল বেঁধে   হাঁড়ি কুড়ি পোঁটলা পুঁটুলি সঙ্গে  নিয়ে কাছে পিঠে নদীর  ধারে নিদেন পক্ষে  পুকুর পাড়ে  বেরিয়ে  পড়াই হল বাঙ্গালি বনভোজনের ফর্মূলা ।খাবারের ব্যাপারে যদিও সাহেব সুবোরা প্রাধান্য দিতেন শুকনো খাবার যথা ... স্যান্ডুইচ, মাংস  , মদ  কিন্ত বাঙ্গালী তার খাদ্যাভ্যাস  অনুযায়ী তা থেকে   বেরিয়ে  এসে গাছের তলায় বসে  কুটনো কুটে  রেঁধে  বেড়ে খাওয়ার পক্ষপাতী ছিল  বেশী। কব্জি ডুবিয়ে  কচি পাঁঠার ঝোল আর ভাত , নদী থেকে ধরা পাকা মাছের  কালিয়া ছাড়া  কেমন যেন বাঙ্গালি পিকনিক জমে উঠত না ... কালের  নিয়মে  তাই বনভোজনে   ডাক পড়ল রান্নার ঠাকুর   আরও পরে ক্যাটারিং এর লোকের ।

              পিকনিক বা বনভোজনের  আয়োজন  করার   ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল স্থান নির্বাচন । কথিত  আছে ১৭৮৯ সালে ফরাসী বিপ্লবের  পর সমস্ত রাজকীয় উদ্যানগুলি খুলে   দেওয়া হয়েছিল সর্ব সাধারণের  জন্য ।  আর  সাধারণ মানুষের মধ্যে  ওইসব উদ্যানে  পিকনিক করার চল শুরু হয় । উনবিংশ  শতাব্দীতে   ফ্যাশান সচেতন লন্ডনবাসীর   মধ্যে তৈরী হয়েছিল পিকনিক সোসাইটী । বাঙ্গালিদের মধ্যে  পিকনিকের   ভেনু ঠিক  করার   মধ্যে  অগ্রাধিকার   পায় বাড়ির কাছাকাছি স্থান  যেখানে   রয়েছে   একটুকরো প্রকৃতির ছোঁয়া । তাই পঁচিশে ডিসেম্বর বা পয়লা জানুয়ারী , " একদিন দল বেঁধে  কজনে   মিলে ...প্রতিদিনকার   এই ইঁট কাঠ পাথরের অভ্যস্ত  জীবনে  একটুকরো মুক্তির স্বাদ পেতে প্রকৃতির কোল ...হাঁপ ছেড়ে বাঁচার আশ্বাস ,গাছ-গাছালির সান্নিধ্যে  তারই গালভরা নাম হয়েছে   পিকনিক । উনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে শহুরে কোলকা্তার  পড়তি রহিসী বাবুদের মধ্যে পিকনিকের  চল ছিল । পরিবারের বউ মেয়ে সকলে  মিলে জুড়ি বা ফিটন

গাড়ি হাঁকিয়ে  বাবুরা শীতের দুপুরে  পিকনিকে বেরুতেন  গড়ের মাঠ  বা ভিক্টোরিয়ায় ।  সঙ্গে অবশ্যম্ভাবী মদ্যপান ও শুকনো খাবার । চলত দাবা বা তাসের মতো ইন্ডোর গেমসগুলিও । তবে শীতকালের সঙ্গে  পিকনিকের  অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক । আমাদের এই গরমপ্রধান দেশে  যেখানে  সারাবছরই গরমে প্রায় হাঁসফাঁস  অবস্থা  শীতের দুপুরে নরম রোদ্দুর  পিঠে মেখে পিকনিক করার মজাটাই অনেকটা মরসুমী পরিযায়ী পাখির মতো । 

          শীতকাল শখের সময় আর শীতের অন্যতম শখ যে  পিকনিক তা অস্বীকার  করার উপায় নেই । সময়ের  সঙ্গে সঙ্গে  বদলে   গেছে  পিকনিকের ধরণ ধারণ । আগে যেমন সবাই মিলে বাস বা ম্যাটাডোর  ভাড়া করে হই হই করতে করতে   যাওয়া হত পিকনিক স্পটে এখন আর তেমনটি নেই । যে যার নিজস্ব গাড়ী করে পিকনিক স্পটে পৌঁছাচ্ছে  প্রায় জলখাবারের সময় ।দিন বদলের সঙ্গে সঙ্গে হয়তো পিকনিকে চাকচিক্য এসেছে  এসেছে জৌলুস  কিন্তু হারিয়ে গেছে সেই হই হই করে একসাথে পাত পেড়ে খাওয়া দল বেঁধে  হই হই করতে করতে একসঙ্গে পিকনিক স্পটে পৌঁছোনো ।

 

        পিকনিকের শুরুতে ছিল ফিস্ট ।  শীতের দুপুরে পাড়াপ্রতিবেশী , বন্ধুবান্ধবরা মিলে  এর বা ওর বাড়ির  ছাদে  কাঠের  চুলায় খিচুড়ি বা মাংস ভাতের ফিস্ট লেগেই থাকত । ফিস্টেরই বাংলা ভার্সন চড়ুইভাতি ।ক্রমশঃ সাহেবসুবোদের পিকনিকের অনুকরণে শুরু হল বনভোজন । হাঁড়ি কুড়ি বাসন  পত্র ম্যাটেডোরের মাথায় চাপিয়ে হই হই করতে করতে একদল বেরিয়ে পড়ত কাছে পিঠে বাগান বা নদীর পাড়ে ।বাঙ্গালিদের পিকনিকে  মহিলাদের আগমন বোধকরি  আশির দশকে । ফলে পিকনিকের স্থান বা ভেনু নির্বাচনেও কিছু পরিবর্তন এল ।খোলা মাঠ বা  ময়দানের পরিবর্তে প্রেফারেন্স পেলওয়াশরুম  যুক্ত বাগান বাড়ি । এতদিন  পর্যন্ত  ছেলেরাই বড় লোহার কড়াইতে পাঁঠার মাংস রান্নার দায়িত্বে ছিল ;  ফলে অনেক সময়েই দুপুরের  খাবার তৈরী হতে হতে বেলা গড়িয়ে যেত; মেয়েরা

সক্রিয় ভূমিকা নেবার  পর থেকে রান্নায় অনেক নৈপুন্য আসল । কাটাকুটির ঝামেলা বর্তাত মেয়েদের ওপরেই ; কালের নিয়মে মেনুতেও অনেক পরিবর্তন এল ... ডিমসিদ্ধ , কেক , কলার  মত চটজলদি ব্রেকফাস্টের পরিবর্তে জায়গা করে নিল কড়াইশুঁটির কচুরী আলুরদম । ঝামেলা এড়াতে  প্রথমে   এল  রান্নার ঠাকুর আরো পরে ক্যাটারিং । আর  এখন তো পিকনিক রীতিমত ট্যুর কোম্পানিগুলোর ডে- আউট প্যাকেজ । MNC  গুলির ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ।

      পিকনিকের আরেকটা মজা ইনডোর গেমস । আগে চলত তাস বা দাবা  সময়ের  দাবি মেনে এসেছে আন্তাক্ষরী , টাংটুইস্টার , মেমরি গেম , পাসিং দ্য পিলোর মতো খেলা ।আগের মত ক্রিকেট  বা ব্যাডমিন্টন খেলার চল এখনও আছে ।

      তবে পরিবর্তন  হলেও স্বল্পস্থায়ী শীতকালের পিকনিক এখনও তার আকর্ষন হারায় নি ।ছুটির দিনে সকালে  শীতের রোদ গায়ে মেখে কাছে পিঠে  প্রকৃতির সান্নিধ্যে  বেড়িয়ে পড়তে ভালোই লাগে । তাই শীত পড়লেই এখনও মন বলে ওঠে পিকনিক পিকনিক..

0 comments: