সম্পাদকের কলমে

নারায়ণ দেবনাথ- সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম । ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম । নমস্কার সহ অঙ্কুর রায় সংখ্যার সম্পাদক অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী প্রধান সম্পাদক

লেখা পাঠানোর জন্য

আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com

Total Pageviews

By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.

 প্রতিশোধ 

অনুরাধা মুখার্জি 


   মিত্রবাড়ীর ছোট মেয়ের বিয়ে।এই কাজটিই মিত্র গিন্নীর শেষ কাজ।দুই মেয়ে ও একমাত্র ছেলের বিয়ে আগেই দিয়েছেন,তারা যে যার সংসার নিয়ে ব্যস্ত।এই মেয়েটির বিয়ে হয়ে গেলে সংসার থেকে মুক্তি।একটু ইচ্ছে মতো তীর্থভ্রমণ করতে পারবেন, সারাজীবন সংসারের ঘানি টানতে টানতে নিজের দিকে, নিজের সাধ-আহ্লাদের দিকে তো কোনো দিন ফিরে তাকাননি, এবার ছুটি।সেই কথাই বলেছিলেন মেজননদকে।ননদ বলে সেকি বৌদি।আর জয়া।বরণডালা গোছাতে গোছাতে উত্তর দেন তাকে আমি কি দেখবো?সে নিজেই যথেষ্ট লায়েক।

 একথা বলো না বৌদি, দাদার মৃত্যুর পর জয়া যদি বুক দিয়ে না আগলাতো তার ছোট ভাইবোনদের,তবে এত সুষ্ঠুভাবে , এতো তাড়াতাড়ি কি সব দাঁড়িয়ে যেত!আর এখন তাকে একা ফেলে তুমি তীর্থভ্রমণে যাবে?যে সংসারের জন্য সব ছাড়লো,আজ তাকে একা ছেড়ে দেবে?

    সংসারের জন্য সব ছাড়লো এটা আবার কি কথা? ওর বাবার তো নয়নমণি ছিল ঐ মেয়ে, সর্বস্ব উজাড় করে ঐ মেয়েকে বিদূষী তৈরি করলো, অন্যগুলোর মানুষ হতেও যে টাকাপয়সা লাগবে, ভেবে ছিল তোমার দাদা?কিনা ওর মতো প্রতিভা আর কারো নেই।আরে যাদের মেধা কম, তাদের জন্য ই তো টাকা রাখা দরকার।তাই বাবার টাকা খরচ করে নিজে দাঁড়িয়েছে , তাহলে ভাইবোনদের প্রতি এটুকু তো করতেই হবে।ননদ আর কথা না বাড়িয়ে চুপ করে যায়। বৌদি কে ঠিক বুঝতে পারেনা সে। তাদের সংসারের সর্বপ্রথম সন্তান জয়া, তাদের সবার আদরের।রূপে, গুণে,মেধায় সবার নজর কাড়া মেয়ে। কিন্তু দাদার মৃত্যুর পর জয়ার প্রতি বৌদির ব্যবহার আচমকা পাল্টে গেল। অন্যান্য ছেলেমেয়েদের জন্য বৌদি আক্ষরিক অর্থেই জয়াকে শোষণ করে গেল। মাঝে মাঝে এই চাপা মেয়েটার জন্য বড়ো কষ্ট হয় তার।

      পাশের ঘরে খুকুর বিয়ের বাক্স গোছাতে গোছাতে সব কথাই কানে গেল জয়ার।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চুপ করে রইলো সে। চুপ করে থাকাই তার স্বভাব। আর আজ তার সবচেয়ে ছোটো বোন খুকুর বিয়ে।খুকুকে সে বড্ডো ভালোবাসে, আর খুকুও তার ভীষণ ন্যাওটা। তাদের দুজনের স্বভাব একেবারে আলাদা,তাই বোধ হয় তাদের মধ্যে পারস্পরিক স্নেহের টান টা আরসবার থেকে বেশি।তবে এই হালকা স্বভাবের জন্য বার দুয়েক  নিজের সর্বনাশ করতে যাচ্ছিল সে, কিন্তু জয়ার তীক্ষ্ণ নজরদারি তাকে বাঁচিয়ে এনেছে। এবারের ছেলেটি জয়ার পরিচিত, ভালো ছেলে,তাই এবার জয়া কোনো বাধা দেয় নি।বাধা দিয়েছিল যে দুবার, দুবার ই মা খড়্গ হস্ত হয়েছিল ‌তার উপর। মায়ের ‌ধারণা সে নিজে বিয়ে করেনি বলে চায়না খুকুর বিয়ে হোক,তাই সে বাধা দেয়।যাক বাবা খুকুর বিয়ে হয়ে গেলে এই অপবাদ থেকে তো সে রক্ষা পাবে।

      সন্ধ্যা লগ্নে বিয়ে ছিল,সব সেরে এখন সবাই বাসর ঘরে।হাহা,হিহি চলছে, গানের আওয়াজ ও আসছে মাঝে মাঝে।জয়া ক্লান্ত শরীরে ছাদের কার্ণিসে হেলান দিয়ে শুনশান রাস্তার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।দেখছিল ধীরে ধীরে মহানগরীর রাতের চোখেও ঘুম নামছে।আজকেও  সস্ত্রীক  শুভ এসেছিল,সেই শুভ,যার সঙ্গে ভবিষ্যতজীবন কাটাবার কল্পনা ছিল তার। বাবার ও সম্পূর্ণ সায় ছিল এসম্পর্কে,তবে মার মত ছিল না কোনো দিন।মা চাইত মেজবোন বাণীর সঙ্গে যেন শুভর বিয়ে হয়। বাবার মৃত্যুর পর শুভকে ফিরিয়ে দিয়েছিল সে।মা'র প্রস্তাব শুভর সামনে রাখতে পারে নি সে।সেই থেকেই মা'র আক্রোশ তার উপর। যাক পুরনো কথা আর ভাববে না সে।বাবা তাকে বলতো আমার বড়ো ছেলে।তাই বাবার সেই কথার দাম রেখেছে সে। এবার সে মুক্ত, চেষ্টা করবে বিদেশে স্থিতু হতে।সব পিছুটান কাটিয়ে এবার নতুন ভাবে বাঁচবে।না এবার গিয়ে একটু শুয়ে পড়া যাক,কাল সকাল সকাল কন্যা বিদায়ের আয়োজন করতে হবে,আর দেরি নয়।কার্নিশ থেকে ঘুরে সিঁড়ির দিকে যাওয়ার সময় চোখে পড়ে নতুন জামাই প্রভাত সিগারেট টানছে।তাকে দেখে সিগারেট ফেলে এগিয়ে আসে--দিদি আপনি এখনো জেগে।

--এবার শুতে যাচ্ছি,একটু ঠাণ্ডা হয়ে নিলাম।

--আমি অবাক হয়ে গিয়েছি দিদি আপনার ক্ষমতা দেখে।কি ওয়েল-প্ল্যানড প্রতিটি কাজ। আপনার বোনের মুখে তো সর্বদা ই দিদির কথা।

--খুকুটা বরাবরই দিদিভক্ত। ছোটো বলে ম্যাচিওরিটি আসে নি। তুমি দেখে শুনে ঠিক করে নিও।

--আচ্ছা দিদি একটা অনধিকার চর্চা করছি। খুকুর মুখে শুভবাবুর কথা আগেই শুনেছিলাম,আজ দেখলাম। আপনার কিন্তু ওঁকে ফেরানো উচিত হয়নি।

 এবার জয়ার চোখ মুখ ঝাঁঝা করে ওঠে,খুকুটা কি ! শুভর কথাও বলা হয়ে গেছে।সব সাধু সাজছো।মা আর বোনেরা মিলে কী অপমান করে শুভকে ফিরিয়ে দিয়েছিলে তোমরা আর আজ সাধু সাজে সবাই। ভেবেছিলে শুভকে বিয়ে করে নিজের সংসার গড়লে যদি তোমাদের দাবী পূরণ না করি,তাই সবাই মিলে অপমান করে তাকে সরিয়ে দিয়েছিলে আর আজ সবাই ভালো ।মাথাটা ঝিমঝিম করে ওঠে জয়ার,সে নিজের অজান্তেই বলে বসে--ছাড়ো তো ওর কথা, এখনও ছেলেমানুষ।কি বলতে কি বলে, কি করতে কি করে, তুমি একটু সামলে রেখো। হালকা স্বভাবের মেয়ে তো, কখন কি করে বসে।এই তো দু-দুবার এমন বাজে ছেলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পরল যে সেখান থেকে বার করে আনতে আমার প্রাণান্ত পরিচ্ছেদ। সেজন্য তোমার মতো ধীরস্থির ছেলের হাতে তুলে দিয়ে নিশ্চিন্ত হলাম আমি জানি তুমি ওকে ঠিকপথে চালিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।যাক আমি চলি একটু গড়িয়ে নিতে,বলে সিঁড়ির দিকে চলে যায় জয়া।আর প্রভাত স্থির ভাবে সামনের কালো রাতের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে একভাবে। পিছনের বাসরঘরের সব আকর্ষণ হারিয়ে গেছে তার কাছে।

0 comments: