সম্পাদকের কলমে
নারায়ণ দেবনাথ-
সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম ।
ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম ।
নমস্কার সহ
অঙ্কুর রায়
সংখ্যার সম্পাদক
অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী
প্রধান সম্পাদক
লেখা পাঠানোর জন্য
আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com
Total Pageviews
By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.
প্যান্ডেল
মিত্রা হাজরা
পুজো প্যান্ডেলের কাজ প্রায় শেষ ।এবারের কাজ দেখে সবাই প্রশংসা করছে, মাটির খুরি দিয়ে প্যান্ডেল হয়েছে ।কাল পঞ্চমী--কাল ই ঘরে ফিরবে নবীন। পাকা দুমাস পর ঘরে যাবে, আশালতা একা কি করছে কে জানে! খুকি ও সাথে আছে। বলেছে---বাবা পুতুল আনবে। টাকা পেয়ে বৌয়ের একটা শাড়ি, মেয়ের লাল ফ্রক, আর একটা পুতুল কিনেছে নবীন। মনটা খুশি খুশি লাগছে, কাল গ্রামে ফিরবে ।শরতের শিউলির গন্ধ সে এখানে বসেই টের পায়, তবে শহর তাই চোখে দেখে না শিউলি কোথাও, কোথায় ই বা কাশফুল? এই সময় পল্লীর পথে পথে বাউলের একতারায় মায়ের আগমনীর সুর শুনে ঘুম ভাঙে তাদের। এখানের এই আলোর রোশনাই, হৈ হৈ ভীড় সব ই তুচ্ছ লাগে নবীনের কাছে।
মনে পড়ে একবার পুজোয় গ্রামে যাত্রা হচ্ছিল, সেবার ফসল ও ভালো হয় নি, খানিকটা দেখে সে চলে আসে, আশার বোধহয় ভালো লাগছিল, বলল---বোসো না, দেখি আর একটু, ---না ভালো লাগছে না--শুনে আশাও ওর সাথে চলে এসেছিল। ঘরে এসে বলে---এতো দুঃখ মানুষ জন এর, তাও সব হো হো করে হাসছে। মাঝে থেকে তোমার দেখা হলো না, আশা হাসে, বলে-- আচ্ছা পাগল তো, দুঃখ বলে লোকে যাত্রা দেখবে না!
আশ্বিনে অবসন্ন অপরাহ্ন, বেলাশেষের মিঠে রোদ, হিমেল বাতাস গায়ে লাগে নবীনের। অথচ শহরে কী গরম !চা করে এনে ওর হাতে দেয় কাপটা আশা। খুকি পুতুলটা ছাড়ে নি, লাল ফ্রকটাও পরিয়েছে তাকে আশা, যেন ডলপুতুল লাগছে খুকিকে। বোষ্টমপাড়ার ঘর গুলো থেকে শাঁখের শব্দ ভেসে আসছে। ঘরে ঘরে সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বলে উঠছে, আশাও সন্ধ্যা দিচ্ছে। একটা দুটো করে তারারা আকাশে আসন পাতছে। উঠোনের কোণের লেবুগাছ থেকে মিষ্টি লেবুফুলের গন্ধ ভেসে আসছে। খুকি তার কোলেই ঘুমিয়ে পড়লো। বৌ আসে---ওকে ঘরে শুইয়ে দিয়ে আসি বরং।
নাহ--থাক আমার কোলে, কতোদিন পায় নি আমাকে। তোমার কাজ শেষ হলে আমার পাশে এসে একটু বোসো। আশা এসে পাশে বসে। বলে-- জানো, কাল বনমালী দাদার দোকানে গিয়ে ধারটা মিটিয়ে দিয়ে এসো। নবীন বলে-- যাবো বৌ, কাল ই যাবো, দাদা না থাকলে এই দুমাস, তোমাদের দুজনের চলতো কি করে?
আমি যাওয়ার আগে বলে গিয়েছিলাম, বনমালী দাদা বলল--তুই চিন্তা করিস না, যা ,আমি খুকি, বৌমাকে দেখবো। হ্যাঁ, বৌদিও মাঝে মাঝে এসে আমাদের খোঁজ খবর নিয়ে গেছে। খুকি কে নিয়ে চলে যেত ওদের বাড়ি, রানী দি, ঠান দি ও আসতো। তবে তুমি নেই, ভালো লাগতো না। জানি বৌ, আমার ই কি আর ভালো লাগে, কিন্তু কি করবো !প্যান্ডেলে র কাজটা শিখেছিলাম, তাই পুজোর সময় চলে যাই, বাড়তি রোজগারের জন্য। এই চাষবাস করে আর কতো চলে সংসার বল।
কেমন হলো--- প্যান্ডেল ---বললে না ,দারুণ হয়েছে রে, এবারে মাটির ভাঁড় দিয়ে প্যান্ডেল হয়েছে-- সে কি গো! চা খাওয়া হয় যা দিয়ে, হেসে ওঠে আশা। হ্যাঁ, তাই দিয়ে, বড় জব্বর হয়েছে-- বুঝলে!
আগের দিন থেকেই পিল পিল করে লোক আসছে, যদি দেখাতে পারতুম তোমায়, ভালো হতো। বা --বা ,একবার গেছিলুম সেই রানীহাটি কি ভীড়, কী ভীড়! দুর কোথা তোর রানীহাটি !এর নাম কোলকাতা!
এখানে বোসেদের বাড়ি পুজো হবে, তোমায় নিয়ে, খুকিকে নিয়ে যাবো। হ্যাঁ, আমি তো অঞ্জলি দেবো। বললে না তো, শাড়িটা কেমন হয়েছে? খুব সুন্দর, কিন্তু লাল এনেছো কেন? লাল শাড়ি তো একটা আছে আমার। থাক্, মা বলতো---পুজোর সময় লাল পরতে হয়। মায়ের কথা খুব মনে পড়ে জানিস। পুজোর সময় লাল পাড় সাদা শাড়ি পরে মা আমার হাত ধরে অঞ্জলি দিতে যেত।
পরদিন চান করার জন্য নবীন আসে পদ্মপুকুর। নামেই পুকুর, আসলে এটা একটা ঝিল। নবীন তার সবল পেশীময় শরীরে তেল ডলতে ডলতে চেয়ে থাকে জলের দিকে। ছোটবেলায় মায়ের মুখে গল্প শুনতো এই পদ্মপুকুরের জলের তলায় সিন্দুকে মোহর আছে ঘড়া ঘড়া। পেতল তামার ঘড়ায় মোহর থাকতো, রাজার গুপ্তধন। মনে মনে তাই রাজার প্রাসাদ, বড় বড় কক্ষ, তার অলিন্দ, খিলান দেখতে পেত সে। ফুল, ধূপ আতরের গন্ধ, আর সুন্দরী রাজকন্যা ---বালক মনে কল্পনার নকশী কাঁথা বুনতো। গামছা খানা কষে বেঁধে সে ঝিলের পাড়ে চলে এলো---দেখলো, একটা তালের ডোঙা বাঁধা আছে। সে জানে এটা নিতাই দাদার ডোঙা। ওর পায়ের আওয়াজে তীরের ব্যাঙ গুলো ধুপধাপ লাফিয়ে জলে সেঁধলো ।অজস্র লাল সাদা শালুক ফুটে আছে। লাফ দিয়ে ডোঙায় উঠে সে লগি টাকে জোরে ঠেলে জল কেটে এগিয়ে চললো। ক্রমশ স্বচ্ছ কাচের মত জলে দাম ঝাঁঝির মাঝে সে রুই, মৃগেল ছোট মাছের ঝাঁক দেখতে পেল। গামছা দিয়ে গোটাকয়েক মাছ ধরে ফেলল সে। ডোঙা নিয়ে এসে পাড়ে বাঁধে,আশা মাছ দেখে খুশি হয়ে যাবে, ঘরে এসে বলে-- দেখ কি এনেছি, ভেজে দে, বাপ বেটিতে খাই। আশা হাসতে থাকে।
অষ্টমীর দিন বোসেদের বাড়ি এসে খবরটা শুনলো, সনাতন দাদা, বোসবাড়ির শুভ্রদাদা বললো-- তোর হাতে তৈরি প্যান্ডেল তো পুরস্কার পেয়েছে রে। অবনী পেন্টস্ এর পক্ষ থেকে। এবারে টিভিতে দেখিয়েছে---একুশ পল্লীর প্যান্ডেল সেরা হয়েছে-- দুলাখ টাকার চেক সেরার পুরস্কার দিয়েছে ।শুনে আশা খুব খুশি, সেও খুশি হলো, তবে শুভ্রদাদা বললো-- কই,তোর নাম তো বলল না। নবীন বলল আমি কি একা নাকি, সকলে মিলেই তো করেছি গো। তবে মন তো খারাপ হয় ই, এই দুইমাসে কত ই বা সে পেয়েছে--দশ হাজার টাকা। ধার শোধ করতেই তো, পাঁচ হাজার চলে গেছে। চোখটা কর কর করে উঠলো, এতো খাটলো, কি হতো, যদি সকলের সামনে ওরা নবীনের নামটা করতো! যাহ, আর যাবে না সে। চোখ চলে গেল মাদুর্গা র দিকে। একি ভাবছে সে! তার হাতে তৈরি প্যান্ডেলে মা এসেছেন----- এই তো অনেক! মনে মনে বলে ক্ষমা করো মা। খুকিকে কোলে নিয়ে ঢাকের তালে তালে নাচতে থাকে সে। মায়ের আরতি শুরু হয়ে গেল যে! আশা হেসে ওর স্বামী আর মেয়েকে দেখে। খুকিও হাসছে খিল খিল করে।
Subscribe to:
Posts (Atom)
0 comments:
Post a Comment