সম্পাদকের কলমে
নারায়ণ দেবনাথ-
সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম ।
ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম ।
নমস্কার সহ
অঙ্কুর রায়
সংখ্যার সম্পাদক
অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী
প্রধান সম্পাদক
লেখা পাঠানোর জন্য
আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com
Total Pageviews
By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.
ছাতা
সুদীপ ঘোষাল
এদিকে অজয় তীরে নেমে এলো সন্ধ্যা চারিদিকে সন্ধ্যার অন্ধকারে প্রকৃতি ছিল ঢাকা। কিছু দেখা যাচ্ছে না। শুধু দেখা যায় আকাশের তারা, অগুন্তি তারা। তবু তার মধ্যেই চলে সময় প্রবাহ। আবার সকাল হয়। কলরবে মেতে যায়,গ্রাম। আর পাশের এলাকার গুমটিতে পুরুলিয়া মুসলমানের বসতি কম। তবু কেতুগ্রাম রাউন্দী এলাকায় মুসলমান বসতি আছে। বিভিন্ন গ্রামের মুসলমান পাইকার আসে। তারা ভুলকুড়ি, দক্ষিণ দিকে কোপা, কোমডাঙ্গা গ্রাম থেকে গরু ছাগল নিয়ে কেনাবেচা করে। এদিকে প্রবাহিত হয় অজয় নদ সময়ের তালে তালে।
ফলে হিন্দু মুসলমান আত্মীয়-স্বজন এখানে। মুসলিম পাড়ার নদের জল মিলিত হয় হিন্দু পাড়ার নদের জলে। তারা একে অপরের প্রতি বিশ্বাস রাখে তার সম্পর্কে।
খুব সুন্দর পরিবেশে বড় হয়েছে নুর আলি । আর স্বপনও নুর আলির বন্ধু।
বাবার সঙ্গে ছোট থেকেই নুর আর স্বপন নিজেদের চাষের জমিতে যেত এবং চাষবাস দেখাশোনা করত। মধ্যবিত্ত পরিবার। অভাব থাকলেও সংসার চলে যায় কোন রকমে তাদের।
সকালে মাঠে যাওয়ার পথে পা দিতেই স্বপনে ঘুম ঘুম ভাবটা কেটে গিয়ে চনমনে লাগে ঘড়িতে তখন বিকেল চারটে সমস্ত গ্রামটা যেন নিষ্পাপ শিশুর মত লাগে।
স্বপন হালদার বয়স 25। গ্রাজুয়েট হয়েছে হাওড়া নরসিংহ দত্ত কলেজ থেকে। টিউশানি করে চুটিয়ে।
গ্রামে থেকে চাষবাস দেখাশোনা করা, টিউশনি করা তার পেশা। বাবা মারা গেছেন দু বছর আগে বাড়িতে মার ছোট ভাই আছে।
স্বপনের অনেক বন্ধুর মধ্যে কেতুগ্রামের নুর আলি অন্যতম প্রধান বন্ধু। বাড়ি আসে আবার সময় পেলে ওদের বাড়ি যায় স্বপন। আসলে নুর আলির বাবার বন্ধু ছিলেন স্বপনের বাবা। এইভাবে হিন্দু-মুসলমানের পরিবার বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ।
কবি নজরুল লিখেছিলেন, "আমরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান।"
স্বপন আজ খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে মাঠে গিয়েছিল কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একটি গান গাইতে গাইতে। " যদি তোমার দেখা না পাই প্রভু এ জীবনে" গাইতে গাইতে যাচ্ছিল!
হঠাৎ মর্নিং ওয়াক করতে যাওয়া যদু মাস্টারের 19 বছরের মেয়ে তনুর সঙ্গে দেখা।
সে বলল স্বপনদা মাঠে যাচ্ছ আজ একবার আমাদের বাড়িতে যেও ইংরেজিটা দেখিয়ে দেবে। বাড়িতে বাবা আছেন।
বেগুনি আর মুড়ি খেতে খেতে স্বপন আর তনু কথা বলছিল। পাশের ঘরে তনুর বাবা-মা জানে ওদের প্রেমের কথা।
ওদের দুই পরিবারের মধ্যে মিলনে কোন বাধা নেই। সকালে মুড়ি খাওয়ার পর হাত ধুয়ে তনু সামনে বসল বিয়ের দিন ঠিক হয়েছে পনেরোই কার্তিক মাস। নদীর জলে ভরা ঢেউ লাগলো, কেঁপে উঠলো শরীর বাঁশি।
দুজনেই বিয়ের আগেই মিলনের অপূর্ব স্বাদ মিটিয়ে নিল।
বিধাতার খেলা। কখন যে কার কি হয় কেউ বলতে পারে না।
সেদিনের সেই ঘটনার পরে স্বপন চাইছিল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়েটা সেরে ফেলতে। কারণ সাবধানতা অবলম্বন না করায় মা হওয়ার লক্ষন প্রকাশ পেল তনুর দেহে।
বিয়ে হওয়ার কথা ছিল কিন্তু তনুর দাদু মরে যাওয়ায় বিয়ের দিন ঠিক হল এক বছর পরে।
এদিকে তো চিন্তায় পরলো স্বপন আর তনু।
স্বপন খুব ভোরে মাঠে গিয়েছে।
নিজে গিয়ে জমিতে আল বেধেছে। অভ্যাস নেই।
তবুও চেষ্টা করছে ।
ঠিকই কিন্তু মুনিষ দিয়ে বেশিরভাগই কাজ করায়।
কিন্তু ওর ইচ্ছে সব কিছু নিজে চাষ করে ফসল ফলানো।
তার মজাই আলাদা।
একমাত্র কৃষক ছাড়া কেউ তা অনুভব করতে পারে না।
কৃষকের জয় হোক।
ছাত্রদের এই বাণী স্বপন শেখায়।
আল বেঁধে দেওয়ার সময় হঠাৎ কি করে কি যেন একটা কামড়ে দিলো স্বপনের আঙুলে। খুব জ্বালা করছে রক্ত পড়ছে। শব্দ না করে কেতুগ্রাম হাসপাতালে গেল স্বপন সাইকেলে চেপে। সাইকেল চালাল নুর। সে পাশে দাঁড়িয়ে গল্প করছিল।
কিন্তু কেতুগ্রামে সাপে কাটা রোগীর কোন চিকিৎসা হয় না। সেখানে সাপে কামড়ানোর ওষুধ নেই যদি পাওয়া যেত ভালো হতো। তা শোনা মাত্রই তাকে ভ্যানে করে কাটোয়া হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই সে পথে মরে গেল বোধহয়, নুর আপনমনে বলল। সিওর হল হাসপাতালে গিয়ে।
ডাক্তারবাবু তাকে দেখে মৃত ঘোষণা করল।
মানুষ ভাবে এক আর হয় অন্যরকম তনু এই খবরে খুব ভেঙে পড়ল গর্ভে সন্তান আর বিয়ের আগেই স্বপন তাদের ছেড়ে চলে গেল।
খুব রাগ আর অভিমান হল স্বপনের উপর একটা আম গাছের তলায় দাঁড়িয়ে চিন্তা করতে লাগল ঘন্টার পর ঘন্টা বাড়ি আর ফিরে যাবে না সে আত্মহত্যা করায় ঠিক করলো সে।
কুমারী গর্ভবতী। যদিও সে জানে কুমারী গর্ভবতী সুপ্রিমকোর্টের এক রায়ে, সন্তানের একমাত্র অভিভাবিকা হতে পারে। তবু মন এখনো পুরোপুরি সংস্কারমুক্ত নয় মানুষের।
তাই সে শিবলুনে ট্রেন ধরল। কাটোয়া থেকে হাঁটতে হাঁটতে কাটোয়া গঙ্গার ধারে এল।
কিন্তু গঙ্গার ঘাটে দিনের আলোয় অনেক মানুষের আনাগোনা।
তাই সে অন্ধকার হওয়ার জন্য বসে প্রতীক্ষা করতে লাগল। আর চিন্তা করতে লাগল, স্বপ্নে ভালোবাসার কথা, কত ভালোবাসতো তাকে।
সে আদরে সোহাগে ভরে তুলেছিল অন্ততর। অল্প সময়ে চলে যাবে বলে হয়তো এত তাড়া ছিল। ভাল লোকের স্বর্গীেও প্রয়োজন হয়।
তাই ঈশ্বর বোধহয় ভালো লোককে বেশিদিন পৃথিবীতে রাখতে চান না কিন্তু কি দায়িত্বজ্ঞানহীন এর মত চলে গেল সে, তনু বিড়বিড় করে পাগলের মত।
এসব চিন্তা করতে করতে তনু ঘুমিয়ে পড়েছিল ক্ষুধায় ক্লান্ত অবসন্ন হয়ে।
হঠাৎ যখন ঘুম ভাঙলো দেখল নুরআলি সামনে দাঁড়িয়ে। চোখে অশ্রু এসেছিল।
নুর বাজার করতে এসে দেখে তনুকে।
আর গঙ্গার ধারে ওর এক আত্মীয় বাড়িতে দেখা করে করে একটু বেড়াতে এসছিল এদিকে। তাই দেখা হল,
এই মুহূর্তে।।
বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করতে লাগল নুর কিন্তু কিছুতেই রাজি নয় তনু। সে লাফ দিতে চেষ্টা করছে গঙ্গায়। অবশেষে বাধ্য হয়ে থাপ্পড় দিল তনুর গালে, নুর।
তনু নিজে মা হতে চলেছে,এই খবর নুরকে জানাল।
নুর বলল তুমি যদি রাজি থাকো তাহলে আমি তোমার বিয়ের ব্যবস্থা করে দিতে পারি।
তবু বলল আমি যে মা হতে চলেছি।
তখনই আমার এক বন্ধু রাজি হবে আশা করি।
সমস্ত সংবাদ জানিয়ে তনুর বাবাকে একটা ফোন করল।
তনু বলল, আমি কাউকে ঠকাতে পারব না।
নুর বলল,তাহলে আমি স্বইচ্ছায় ঠকতে রাজী।
চল আজ আমরা বহরমপুরে যাব। ঘরভাড়া নেব। সংসার করব চুটিয়ে।
আজ থেকে তুমি আমার স্ত্রী হলে। তনু বলল, এটা কি করে সম্ভব। তুমি ভাল ছেলে। আমার কলঙ্ক তুমি বইবে কেন?
নুর বলল, এ কলঙ্ক কালো নয়। আমি তোমার মধ্যে আলোর বিজুলি দেখেছি। তুমি মা হও স্বপনের স্বপ্ন পূরণ কর।
তনু ভাব আকাশে দেখল, নুর আলি আর বংশীধারি একসাথে পাশাপাশি তার সাথে ছাতা ধরে চলেছে কঠিন জীবনের চড়াই উৎরাই পথে...
Subscribe to:
Posts (Atom)
0 comments:
Post a Comment