সম্পাদকের কলমে

নারায়ণ দেবনাথ- সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম । ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম । নমস্কার সহ অঙ্কুর রায় সংখ্যার সম্পাদক অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী প্রধান সম্পাদক

লেখা পাঠানোর জন্য

আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com

Total Pageviews

28,046
By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.

  

আত্মজন 

জবা ভট্টাচার্য


               চাকরিতে প্রথম মাসের মাইনেটা পেয়ে সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেলল সুজয়--- ঠাম্মিকে ঢাকায় একবার ঘুরিয়ে  আনতে হবে। শ্বশুরভিটে ছেড়ে আসার দুঃখ এখনও ডার্লিং  ভুলতে পারেনি--- সবসময় আক্ষেপ --- এরপরে আর শারীরিক  সক্ষমতা যদি না থাকে--- আক্ষেপটা থেকেই যাবে।

               ছোট্টখাট্টো মানুষ বিরজা দেবী, মধ্য আশিতেও বেশ  শক্তসমর্থ-- প্রাণের ঠাকুর গোপাল  আর একমাত্র নাতিটিকে ছাড়া  আর কাউকে বিশেষ ধর্তব্যের মধ্যে আনেন না।নাতির সিদ্ধান্ত শুনে ফোকলা মুখে একগাল হাসি। চোখদুটিতে যেন তখনই মায়াস্বপ্নের জাল বুনতে শুরু করেন। 

               

              ফ্লাইটে ঢাকায়  পৌঁছানোর পর একটা গাড়ি ভাড়া করে ঘন্টা তিনেক পরে  তারা পৌঁছে যান সুজয়ের পূর্বপুরুষের  ভিটেতে।সেখানে এক দূরসম্পর্কের আত্মীয়  এখনও  ভিটেটুকু আগলে রেখেছেন--- তাকে আগেই খবর দেওয়া  ছিলো। ঠাম্মির আসার খবর পেয়ে  গোটা গ্রাম যেন ভেঙে  পড়ে ওদের বাড়িতে,  পুরনো  মানুষ কেউ কেউ আছেন  এখনও, তাদের সঙ্গে স্মৃতিচারণায় মগ্ন হয়ে পড়ে ঠাম্মি। শহুরে  সুজয় এই নির্ভেজাল আন্তরিকতায় অভিভূত  হয়ে পড়ে।  সুজয়দের পাশের বাড়ি সোহেল আলি চৌধূরীর। তারাও আসেন,  ঐ বাড়ির  মেয়ে  মুসকান  ওকে গ্রাম ঘুড়িয়ে  দেখায়--- ঝরঝরে, সাবলীল  মেয়েটিকে খুব ভালো লাগলো  সুজয়ের -- শিক্ষিতা ,সুন্দরী-- কিন্তু ব্যবহারে তার প্রকাশ  নেই। মুখচোরা সুজয়  মনে একটা চোরা টান অনুভব করে। 

মুসকান  ঠাম্মির বেশ কাছের মানুষ হয়ে ওঠে একদিনেই, স্বভাবগুণে।

                দুদিন  পরে ওরা ফিরে আসে কিন্তু  সুজয়, মুসকান  কেউই পারেনা তাদের  মন দুটিকে  ফিরিয়ে  নিতে।

                 এর মধ্যে  কেটে যায়  দুটি বছর--- সুজয়ের  অধ্যাপক  বাবা, অধ্যাপিকা  মা মনের দিক থেকে উদারমনস্ক হলেও মুসকানের রক্ষণশীল  পরিবার মেনে নেয়নি  এই সম্পর্ক  , তারা ওর বিয়ের  ব্যবস্থা  করে।  সুজয় কে সব কথা জানিয়ে  বন্ধুদের সাহায্যে  মেহেন্দির দুদিন আগে মুসকান  পালিয়ে  চলে আসে কোলকাতায়। --- এয়ারপোর্ট থেকে সুজয়ের বাবা ওকে নিয়ে তোলেন  তার বোনের বাড়িতে। ----- দমবন্ধ  পরিস্থিতি--- ঠাম্মিকে কিছু বলার সাহস কারুর নেই, তিনি জানলে যে কি অনর্থ হবে কেউ ভাবতেই  পারছে না। সুজয়ের  মা পড়েছেন  অথৈ  জলে-- এতোকাল ধরে শাশুড়ি কে দেখছেন--- গোপালের জন্য  তাঁর  হাজারো  আচার বিচার, এর মধ্যে  একটি মুসলিম  মেয়ে------ হাল ছেড়ে  তিনি  ছেলেকে  বলেন---- নাঃ আমি পারবো না, ঠাম্মিকে  যা বলবার তুমি বলো। --- সুজয়  ধীরে ধীরে  ঠাম্মির  ঘরে যায়,  অনেক ইতস্ততঃ  করে তাঁকে সব খুলে বলে।  পাথরের  মতো মুখ করে সব শোনেন বিরজা,  একটি কথাও বলেন না। প্রতি মুহূর্তে  বিস্কোরণের আশঙ্কায় সবাই  তটস্থ।   বিকেলে  ছেলেকে ডেকে বিরজা বলেন  " মাইয়াডা আছে কই?-- যা লইয়া  আয় তারে" ---- মুসকান কে পিসির বাড়ি থেকে নিয়ে  আসে সুজয়। ----‐ নিজের  শ্বশুরকালের তোরঙ্গ টা  খোলেন বিরজা--- যখের ধনের মতো  এতোকাল  আগলে রাখা শাশুড়ির  হাতের তৈরি  নকশীকাঁথাটা  মুসকানের গায়ে জড়িয়ে দিয়ে  বলেন--" ল- মাইয়া,  তোরেই দিলাম, শাশুড়ি  আমারে দিছিল--- গেরামের মাটির  গন্ধ মাখা এই কাঁথাখানের মম্ম  তুই ছাড়া  কে আর বোঝবো?---- গম্ভীর  গলায়  সুজয়ের  বাবা কে আদেশ দেন----" এইবার  বিয়ার  জোগাড়  কর দেহি-- আর খাড়াইয়া থাকস না" ---- মুসকানের  চোখে জলের  ধারা-- ঘরের  সকলে হতবাক!   বিরজা তখন ওদের  দুজনকে জড়িয়ে ধরে মিটিমিটি  হেসে বলেন-- " কান্দস  ক্যান  রে মাইয়া,  তগো  কষ্ট  দিয়া জাত ধম্ম ধুইয়া কি জল খামু? জানস না কথা আছে একখান,  সবার উপরে মানুষ সইত্য ,তাহার উপরে নাই--------।


আনন্দের আলোয়  ভেসে যায়  সারা  বাড়ি।



0 comments: