সম্পাদকের কলমে
লেখা পাঠানোর জন্য
Total Pageviews
দেখা হবে তো?
অনুব্রতা ভট্টাচার্য্য
শরতের আকাশে গোধূলির ম্লান আলোয় দেখা হলো মেঘবালিকার সাথে। ঝিঁ ঝিঁ পোকা ডাক শুরু করেছে সবে। সূয্যি তার রঙের খেলায় স্নাত হয়ে বাড়ি ফেরার পথে। দেখলাম একরাশ কালো চুলের ঢেউ অগোছালো হাওয়ায় যেন প্রাণ পেয়েছে। মনের মধ্যে লাগলো খুশির ঢেউ। ডাক দিলাম " মেঘবালিকা ও মেঘবালিকা কেমন আছো? কতদিন পর তোমায় দেখলাম। " ঠোঁট ফুলিয়ে অভিমানী সুরে সে বললে ", মনে করতো শেষ কবে ডেকেছো আমায়? " আমি বলি " তা বটে, কতদিন যে তোমায় খুঁজিনি, কতদিন যে তোমায় খুঁজতে চাইনি তার হিসেব নেই। জানো আমার চারিদিকে শুধু গভীর অন্ধকার। অসুখ, মৃত্যু, যুদ্ধ, হিংসা, অবিশ্বাস, প্রতারণা " বলতে বলতে হাঁপিয়ে উঠি আমি। থমকে দাঁড়ায় সে। ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে, "ও তো তোমার মনের বাইরের জগৎ, ডুব দিয়েছো কখন ও রূপ সাগরে? সে রূপে মজলে ভুলে যাবে সব শোক.। " তাকিয়ে থাকি থমকে থাকা মেঘবালিকার দিকে। অল্প আলোয় আকাশ জুড়ে রঙের খেলায় ভেসে ওঠে না জানি কত ছবি। লাল, নীল, সাদা, কালো এ তো আমার জীবন, আমার পটচিত্র। কাশফুলের বনে লুকোচুরি, নদীর ধারে কুল গাছের তলায় কুল কুড়ানোর ধুম, গভীর কালো ঘন মেঘের আগমনে দুহাত তুলে নাচ... হৃদয় আমার নাচে রে আজিকে, ময়ূরের মতো নাচে রে। জমে থাকা বৃষ্টির জলে জোড়া পায়ে লাফিয়ে ওঠা, ধুমজ্বরে প্রাণের সখীর সাথে একমনে কথা বলে যাওয়া.... ওই সেই আমার ছেলেবেলা। প্রথম প্রেমিকের অভিমানী মুখ আর বুকের মধ্যে গোপন সেই যন্ত্রনা... ওই তো আমার ছেলেবেলা.। ওই তো সে মেঘবালিকার সাথে ভেসে যাচ্ছে সীমা থেকে অসীমের পানে। হঠাৎ হুড়মুড়িয়ে নেমে আসে বৃষ্টি। কপাল থেকে চোখ, চোখ থেকে ঠোঁট ভিজিয়ে দেয় সারা শরীর। আবার চেঁচিয়ে উঠি, " মেঘবালিকা তুমি ভারি দুস্টু। আজ এই শরতের আকাশে গোধূলির মায়া ভরা ফেলে যাওয়া আলোতে ভিজিয়ে দিলে আমায়, ফিরিয়ে দিলে আমার ছেলেবেলা! " খিলখিলিয়ে ওঠে সে, আর বলে, "যাই বন্ধু আবার আসবো, মন খারাপের সাঁঝে আমায় ডেকো কিন্তু, ভুলে যেও না। আমি তোমার আকাশ, আমি তোমার মন, আমি তোমার, শুধু তোমার ফেলে যাওয়া দিন, হারিয়ে যাওয়া রাত, আর গভীর রাতের স্বপ্ন। খুশি থেকো বন্ধু, খুশি থেকো.। " ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক তীব্র হয়ে ওঠে, টুপ্ করে নেমে আসে অন্ধকার সামনের সুপুরি গাছের ওপর। স্নিগ্ধ আলোয় ভরে ওঠে রাতের আকাশ। বসে থাকি আমি, আর জেগে থাকে চাঁদ।
0 comments:
Post a Comment