সম্পাদকের কলমে

নারায়ণ দেবনাথ- সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম । ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম । নমস্কার সহ অঙ্কুর রায় সংখ্যার সম্পাদক অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী প্রধান সম্পাদক

লেখা পাঠানোর জন্য

আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com

Total Pageviews

By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.

 বইমেলায় মনের মানুষ  

     পার্থজিৎ ভক্ত

 

      কলিকাতা পুস্তকমেলা তখন পার্ক স্ট্রীট ময়দানে। বারোদিন ধরে একটানা থাকতাম মেলায়,একেবারে প্রথম দিন থেকে। বিভাস নামে একটা ত্রৈমাসিক ছোট পত্রিকা বের করতাম তখন,খুব নিয়মিত প্রকাশ ছিল। পত্রিকার সব কাজ নিজেই দেখাশোনা করতাম,লেখা জোগাড় থেকে শুরু করে ছাপাতে দেওয়া, প্রুফ দেখা,বাইন্ডারের কাছ থেকে নিয়ে এসে লেখক কপি পৌঁছানো,স্থানীয় কয়েকজন গ্রাহককে বিক্রি পর্যন্ত। প্রত‍্যেক বইমেলায় পত্রিকার একটা স্পেশাল সংখ‍্যা – কখনো একটা বিষয়ভিত্তিক প্রবন্ধ সংকলন,অণু গল্প,অণু কবিতা অথবা ছোট গল্প। সাকুল‍্যে পরিসর যদিও দু-ফর্মা,মানে প্রচ্ছদ বাদে ৩২ পৃষ্ঠা। সারা বছর এমনকী পুজোর সময়তেও ডিউটি করে ছুটি জমাতাম বইমেলায় যাওয়ার জন্য।

      সেবারও গেছি বইমেলায়। সালটা বোধহয় ১৯৯২। আমার সাইড ব‍্যাগ ভরে বিভাস – এর বইমেলা সংখ‍্যা। ৬৪ টা অণু কবিতার এক বিশেষ সংকলন। ব্ল‍্যাক-স্টোন কালারের প্রচ্ছদে পত্রিকার রূপ খুলেছে দারুণ। আনন্দ পাবলিশার্সের স্টলের বাইরে একজিট গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে পাঁচ টাকা দামের ক্ষীণ পত্রিকাটা বেরিয়ে আসা মানুষের কাছে তুলে ধরছি। মানুষ কিনছেও পত্রিকার অভিনব বিষয় এবং প্রচ্ছদের আকর্ষণীয় রঙ দেখে। তখন আনন্দ প্রকাশনের দাপুটে প্রকাশক বাদলবাবু বেশ ডাকাবুকো এবং ছোটাছুটি করবার ক্ষমতা রাখেন। রেগে গিয়ে বেশ কয়েকবার ওনার স্টলের সামনে ফালতু ভিড় বাড়াতে বারণ করেছেন। যথারীতি আমি শুনিনি। ভেতর থেকে এনাকে গেটের দিকে আসতে দেখলেই আমি একটু দূরে সরে যাচ্ছি,উনি ঢুকে গেলেই আবার ওনার স্টলের বাইরে আউট গেটের বাইরে ঝাঁপ দিচ্ছি। এভাবে লুকোচুরি খেলা চলছে। হঠাৎ দেখি ঝকঝকে ফর্সা,না ঠিক ফর্সা নয়,আপেলের মত লালচে ফর্সা সুদীর্ঘ একজন মানুষ হাতে একটা ইয়া মোটা মানি পার্স নিয়ে বাইরে এলেন। আমিও দেরী না করে শিকার ধরতে ঝাঁপিয়ে পড়ি। সুদর্শন মানুষটি একটু ভ‍্যাবাচাকা খেয়ে যান। জিজ্ঞস করেন – এটা কত দিতে হবে? আমি পাঁচ টাকা জানাতে উনি একটা দশ টাকার নোট বার করে প্রশ্ন করেন – আপনার কাছে ভাঙানী হবে তো ভাই? পাঁচ টাকার নোট লাগবে জেনে আমি মাস খানেকের চেষ্টায় জোগাড় করা পাঁচ টাকার এক বাণ্ডিল নোট নিয়েই মেলায় গিয়েছিলাম। তড়িঘড়ি একটা পাঁচ টাকার নোট ওনার হাতে দিতে উনি ধন্যবাদ দিয়ে এগিয়ে গিয়ে ভিড়ে মিশে যান। একটু দূর থেকে আমার অগ্রজপ্রতিম এক কবি ব‍্যাপারটা লক্ষ‍্য করে আমাকে ডেকে জিজ্ঞেস করেন – পত্রিকাটা কাকে বিক্রি করলি জানিস? আমি ঘাড় নেড়ে না বলাতে তিনি আমাকে সচকিত করে বলেন – বুদ্ধদেব গুহ। প্রতিষ্ঠিত এক জন সম্মানীয় লেখক আমার মত এক অর্বাচীন ছোট পত্রিকা সম্পাদককে যে সম্মান দেখিয়েছিলেন,আমি সত‍্যিই অভিভূত হয়ে পড়েছিলাম।

0 comments: