সম্পাদকের কলমে

নারায়ণ দেবনাথ- সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম । ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম । নমস্কার সহ অঙ্কুর রায় সংখ্যার সম্পাদক অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী প্রধান সম্পাদক

লেখা পাঠানোর জন্য

আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com

Total Pageviews

By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.

 কুয়াশা ও সান্টা ক্লজ

 রানা সেনগুপ্ত

 —আরে!‌ চলে যাচ্ছেন কেন?‌ দাঁড়ান, সান্টা ক্লজ, দাঁড়ান।

 —আপনি ভুল লোককে ধরেছেন। আমি মোটেই আসল সান্টা নই।  একটা জামাকাপড়ের সংস্থার ভাড়া করা লোক। আমার কাজ সেই সংস্থার বিজ্ঞাপন করা। সামনে বড়দিন আসছে বলে আমি সান্টা সেজেছি।  ওপরের এই ঝলমলে লাল  কোটটা খুলে ফেললেই, আমার নোংরা জামা আর তালিমারা প্যাট দেখতে পাবেন। আমি  বিনয় দাস। থাকি রাজাবাজার বস্তিতে। সারাদিন ঘুরে পাই ১৩০টাকা।

 —আমাকে ঠকাবার চেষ্টা করবেন না মশাই। আমি বেশ বুঝতে পারছি, আপনিই সান্টা। সেই সান্টা। যিনি আমার ছেলেবেলায় ২৪ ডিসেম্বর রাতে এসে আমাকে উপহার দিয়ে যেতেন। আচ্ছা এখন আর আসেন না কেন?‌

— বলছি তো, আমি সান্টা–বান্টা কেউ নই। আমার নাম বিনয় দাস। রোজগার দিনে ১৩০। আমাকে ছেড়ে দিন। অনেক কাজ বাকি। একবার সল্টলেকের দিকটা ঘুরতে যেতে হবে।

 —দেখুন, আমি জানি কলকাতা, মফফসলের মলগুলো কেকের দোকানে সান্টা সেজে কেউ না কেউ বসে আছে। তারাই গ্রাহকদের হাতে সদ্যে কেনা জিনিস তুলে দিচ্ছে। কিন্তু তাদের কারও এমন লর্ড মার্কা চেহারা নেই।

  —বুঝলেন না, মেকআপ। মেকআপের কারসাজিতে আমার চেহারাটা এমন দেখাচ্ছে। আমি আসলে বিনয় দাস।

 —আরও প্রমান আছে। সান্টা ক্লজ।

 —কি প্রমান, বলুন তো দেখি।

 —দূরে আপনার স্লেজটা আলো আর কুয়াশার  মিশে দাঁড়িয়ে রয়েছে। স্লেজের সামনে ওগুলো কি!‌ ঘোড়ার মত দেখতে হলেও, ওদের শিং রয়েছে। আর অমন খাঁজেখাঁজে  গজানো শিং কেবল বল্গা হরিণদেরই থাকে। এই স্লেজ, এমন বল্গা হরিণ নিয়ে ঘুরতে আসেন শুধু একজনই— সান্টা ক্লজ। আমার একটা প্রশ্ন আছে। সেটার জবাব পেলেই আমি আপনাকে ছেড়ে দেব।

— নাঃ। তোর চোখ আছে বলতে হবে। এতজন তো আমাকে দেখলো। কেউ জানতেও পারেনি, আমি আসল সান্টা ক্লজ। তুই–ই একমাত্র ধরে ফেললি। আসলে আমি ভয় পাচ্ছিলাম। তুই তো আবার কাগজে লিখিস–টিখিস। আমার একটা ইন্টারভিউ না চেয়ে বসিস‌!‌

 —না, ইন্টারভিউ চাইবো না। কারণ আমার সঙ্গে সত্যিকারের সান্টা  ক্লজের দেখা হয়েছে, তিনি আমাকে একখানা আস্ত ইন্টারভিউ দিয়েছেন, একথা আমার কাগজের কেউ বিশ্বাসই করবে না। তাই আমি বানিয়ে যাহোক লিখে দেব। শুধু একটা কথা, আপনার সঙ্গে একখানা নিজস্বি মানে সেলফি তুলতে পারি কি?‌ নাতিনাতনিদর দেখাতে পারবো, সান্টার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। প্রমান হিসেবে।

— চাইলে তুলে দেখতে পারিস। তবে ওতে আমার চেহারা  পাবি না। কুয়াশার মত একটা অবয়ব দেখা যাবে। সেটা দেখিয়ে কাউকে বিশ্বাস করাতে পারবি না। সকলে ভাববে তোর মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। আসলে আমি তো বাস্তবে নেই। রূপকথার রাজারানি দত্যিদানবের মতই আমি আছি মানুষের কল্পনা আর বিশ্বাসে।

— তা বললে কি করে হবে!‌ এই তো সেদিন একটা ইংরেজি সিনেমায় দেখলাম, আপনি তিনটে সাহেব কিশোরকিশোরীকে দেখা দিলেন, তাদের হাতে নানা রকমের অস্ত্রশস্ত্র তুলে দিলেন। সেগুলো কাজে লাগিয়ে তারা বিরাট একটা যুদ্ধ জিতেও গেল। তাহলে আপনি কল্পনায় কেন, বাস্তবেও আছেন।

 —তুই না বাচ্চাবেলার মতই একটু বোকা, কল্পনাপ্রবণ আর গাঁড়োল। তাই তুই আমাকে দেখতে পেলি। বাস্তববুদ্ধির লোকেরা এসব দেখতে পায় না। সিনেমাও তো কল্পনাই রে। এবার প্রশ্নটা করে ফেল বাপু। আমি নিষ্কৃতি পাই।

— আপনি আগের মত আর আসেন না কেন?‌  ছেলেবেলায় যেমন ২৫ ডিসেম্বর  সাকলে ঘুম থেকে উঠেই মাথার গোড়ায় একটা মোজা। সেই মোজার ভেতর ভরা উপহার। খুব সামান্য সে উপহার। তবু পেয়ে মনটা ভরে যেত স্যার। আমার ছেলে তো আপনার সেই উপহার পায়নি। নাতিনাতনিরাও পাচ্ছে না। হোয়াই!‌

— তোদের এখানে আর তেমন শীত পড়ে কই!‌ দার্জিলিংয়ে তুষারপাত ঘটলে তোদের মিডিয়া নেচেকুঁজে একসা হয়। চারিদিকের পরিবেশ দূষিত হয়ে চলেছে। আমার এমন দূষিত বায়ুতে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। কি করে আসবো?‌ চারিদিকে এত আবর্জনা, সেই আবর্জনার পাহাড়ে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে কারা। ধোঁয়ায় ধোঁয়ায় সব কিছু ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। আমার হরিণগুলো পথ চিনে চলতে পারছে না। কি করে আসবো, বল!‌

 —তাহলে আগে যে আসতেন!‌ তখনও তো পরিবেশ দূষণ ছিল, মানুষে মানুষে হিংসে ছিল। খুন জখম ডাকাতি রাহাজানি ধর্ষণ সবই তো ছিল। তাহলে?‌

— হ্যাঁ তোদের জনপদে রামরাজত্ব ছিল না ঠিকই। কিন্তু এমন জঘন্য কাজকারবারের বাড়বাড়ন্ত ছিল না।  কেউ অপরাধ করলে সে নিজে লজ্জা পেতো। এখন তো যে অপরাধ করে, যার ঘরে সবচেয়ে বেশি কালো ধন আছে, সে–ই সবচেয়ে বুক ফুলিয়ে ঘোরে। সততা নামের শব্দটা লুপ্ত হয়ে গিয়েছে রে!‌

— তাহলে আর আপনার দেখা পাওয়া যাবে না?‌ আর আপনি বাচ্চাদের উপহার দিতে আসবেন না?‌ তাদের শৈশবটা সান্টার উপহার বিনেই কাটবে!‌

— না, না। আমি তো যাই। বিপন্ন মানুষের শিশুদের আজও উপহার দিয়ে থাকি। দেখ না, দূরের ফুটপাথে যে ছেলেটা খালিপেটে এই রাতে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে, কাল সকালে উঠে মাথার গোড়ায় একটা বড় কেক পাবে। এমন অনেকেই পায় রে।

— আর আমরা, যাদের মাথার ওপর ছাদ, পিছনের কাপড় আর ইংরেজি মিডিয়ামে পড়া শিশু আছে, তারা আপনার উপহার পাবে না!‌

— না পাবে না। কারণ, তাদের উপহারের দরকার নেই। তোকেও একটা সত্যি কথা বলে রাখি, আমি কোনদিন তোকে কোনও উপহার দিইনি। তুই যে মোজাটা পেতিস, সেটা প্রতিবছর ২৪ ডিসেম্বর রাতে তোর বাপ লুকিয়ে লুকিয়ে রেখে যেতো শিওরে। এটা  তোদের রীতি। তুই এমন উপহার রাখ না তোর নাতিনাতনিদের ঘুমন্ত মাথার কাছে। সকালে উঠে বল, আমি, সান্টা এসেছিলাম। উপহারটা দিয়ে গিয়েছি। দেখবি, ওরা কোনও হেলদোল দেখাবে না। কারণ ওরা জানে, সান্টা–ফান্টা বলে আসলে কেউ নেই!‌ তবে আমি আসবো। বছর–বছর ২৪র রাতে। যাদের সত্যিকারের দরকার, তাদের মাথার কাছে উপহার রেখে যাবো। দেখিস, এটা যেন আবার তুই খবরকাগজ লিখে ফেলিস না।‌‌

2 comments:

Mita ghosh said...

টুউ গুড...

ANKUR ROY said...

কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না পাচ্ছি না। এত ভালো। আর এটি দিতে আপনি সংকোচ করছিলেন ? পিকনিক কিন্তু চাইই চাই।