সম্পাদকের কলমে
লেখা পাঠানোর জন্য
Total Pageviews
বাঁধ
প্রদীপ ঘটক
-মইনুল, আরে এ মইনুল …………
হাঁকটা কেটে কেটে যাচ্ছে বৃষ্টির সাথে। সন্ধ্যার বৃষ্টির দাপট রাত দুপুরেও অব্যাহত। সারা গ্রাম জলময়। বহু কষ্টে বেতের ছাতাটা মাথায় ধরে আর টর্চটা নিয়ে জল পেরিয়ে বাড়ি বাড়ি হাঁক মারছে কানু ভটচাজ।
টিনের চালে জলের শব্দে নিজের কথাই শুনতে পাওয়া যাচ্ছে না। টিনের ঝাঁপ আঁটা।বাইরের ডাক মইনুলের কানে পৌঁছায় না।
মইনুল ঘরের এক কোণে ছেলেদুটোকে রেখে ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে। কাদা নেপে দিয়েছে। তবু জলের তোরে দরজা ভাঙার উপক্রম। প্রাণপণে দরজা আটকাচ্ছে সে। ইঁদুরের গর্ত দিয়ে জল ঢুকে ঘর ভেসে যাচ্ছে।
ভটচাজ মশাই টিনের ঝাঁপে আরো একবার ধাক্কা দিয়ে ডাকে "মইনুল, এ মইনুল ....."
সাবিনা হাঁক দিয়ে বলে " তোমাকে কেউ ডাকছে গো, মনে হচ্ছে?"
সাবিনাকে দরজার সামনে দাঁড় করিয়ে মইনুল সদর ঝাঁপ খোলে -কে?
"আমি রে, কানু ভটচাজ। তোর ধাপাটা নিয়ে আয়, বাঁধ ভেঙেছে। গাঁয়ে জল ঢুকছে। তাড়াতাড়ি আয়।"
কয়েকদিন ধরেই গাঁ সন্ধ্যার পর নিস্তব্ধ। ভটচাজদের শিব মন্দিরে কারা গরুর মাথা রেখে গেছিল। তুমুল দাঙ্গা। রক্তপাত, হুজ্জুতি চলছে বেশ কয়েকদিন। পুলিশের আগমণ হঠাৎ হঠাৎ। অনেকে ঘরছাড়া। সন্দেহের চোরাস্রোত আর উত্তেজনায় কাঁপছে গ্রাম। রাতের অন্ধকারে বাড়ি ফেরে গ্রামের পুরুষেরা।
-গাঁয়ে জল ঢুকছে, কারা আছো, বেরিয়ে এসো।
পাড়ায় পাড়ায় হাঁক দিতে থাকে মইনুল আর কানু ভটচাজ। চারিদিকে দেওয়াল পড়ার আওয়াজ। বৃষ্টি তোড় একটু ধরেছে আওয়াজ পৌঁছে যায় ঘরে ঘরে। জল উপেক্ষা করে মরদরা বাইরে বেরোয়।
রাতের অন্ধকারে কিছু টর্চ আর ধুপধাপ কোদাল ধাপার শব্দ। মাঝে মাঝে চিৎকার "এদিকটায় আরো কয়েক কোদাল দে, আরো উঁচু কর।" সবাই যুক্তি করে আজ রাত জাগতে হবে বাঁধের ধারে। বাঁধের ধারে প্রার্থনা চলে "ঠাকুর, এবার থামিয়ে দাও", "আল্লা, দুয়া কর।"
পরদিন সকালে বাঁধের উপর দাঁড়িয়ে গোটা গ্রাম। সারা মাঠ জলে এক হয়ে গেছে। হালিম পরাণ মুখুজ্জের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে কেঁদে ওঠে " ঠাকুর মশাই ,ধারদেনা করে জমিক'টা রুইয়েছিলাম, সব গেল গো ও ও ও।"
পরাণ মুখুজ্জে হালিমের মাথায় হাত রাখে।
0 comments:
Post a Comment