সম্পাদকের কলমে
লেখা পাঠানোর জন্য
Total Pageviews
আমার স্বদেশ
মিত্রা হাজরা
আমার চোখে আমার স্বদেশ স্বমহিমায় উজ্জ্বল। উত্তরে দাঁড়িয়ে দিগন্ত বিস্তৃত হিমালয়, পদতলে ফেনিল সমুদ্র। নানা ভাষা, নানা ধর্ম, নানা জাতি আর নানা মতবাদে বিশ্বাসী মানুষ একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা প্রীতি ও ভালোবাসার অপূর্ব সমন্বয় এ গড়া। এমন বৈচিত্র্য ময় দেশকে বর্ণনা করে গৌরবগাথা রচনা করে গেছেন দেশী বিদেশী নানা লেখক, কবি,শিল্পী কাহিনীকারেরা। তাঁদের চোখে ধরা পড়েছে বৈচিত্র্য এর মাঝে ঐক্যের এক সুন্দর ছবি। ভারতের অতীত গৌরবময়।
একদা দেশ মাতৃকাকে ব্রিটিশ এর অধীনতা থেকে মুক্ত করতে কত দেশ মায়ের সন্তান অকুতোভয়ে ফাঁসির দড়ি গলায় পড়েছেন, কত বীর সন্তানেরা বন্দুকের গুলিতে লুটিয়ে পড়েছেন--- কত মানুষ যে কারা অন্তরালে অকথ্য অত্যাচার সহ্য করেছেন তার ইয়ত্তা নেই। এরপরে কাঙ্খিত স্বাধীনতা পেয়েছি। আজ আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। স্বাধীনতার পরে উন্নত দেশ গড়ার লক্ষ্যে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছেন দেশের নাগরিক বৃন্দ। আজ ও করে চলেছেন।
ভারতীয় জীবন দৃষ্টির বৈশিষ্ট্য তার সমগ্র বোধে, তার অদ্বয় চেতনায়। উপনিষদ প্রকাশিত বিশ্ব ও জীবন সম্বন্ধে উপলব্ধি ভারতীয় ষড়দর্শনে যুক্তি নির্ভর নানা মতবাদে পরিণত, সকল দর্শনের মূল জিজ্ঞাসা জগৎ জীবন ও ঈশ্বরের পারস্পরিক সম্পর্ক ভারতের মুনি ঋষিরাই বিশ্বকে জানিয়েছেন। এই দেশেই জন্মেছেন তুলসীদাস, কবীর, নানক, শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর মত মহামানব, শ্রীরামকৃষ্ণ, স্বামী বিবেকানন্দ এর মত ত্যাগী মানব। পেয়েছি রামমোহন, বিদ্যা সাগরের মত সমাজ সংস্কারক মহাত্মা গান্ধী, নেতাজী সুভাষচন্দ্র র মত দেশসেবক ।তাই এ দেশের মাটি আমাদের চন্দন তিলক।
পৃথিবীর কোন দেশে আমাদের মত এত ঋতু বৈচিত্র্য? ধূ ধূ রুক্ষ প্রখর রুদ্র তাপস গ্রীষ্ম আসে, তারপরেই শ্যামল সুন্দর বর্ষার আবির্ভাব, বর্ষা শেষে মেঘমুক্ত আকাশে বাতাসে শিউলিফুলের গন্ধভাসা শরৎ আসে। কুয়াশায় মুখ ঢেকে হেমন্ত লক্ষীর এর পরেই হয় আবির্ভাব। শীতের ধূসর বার্ধক্য---এর পরে চুপিচুপি কড়া নাড়া দেয়,হাতে বৈরাগীর একতারা। বনের শুকনো পাতাগুলো বেদনায় যেন ঝরে পড়ে, ধান কেটে নেওয়া মাঠ রিক্ত, হলুদ সরষে ক্ষেতে মৌমাছির গুঞ্জন ওঠে, পাকা ধানের গন্ধে, খেজুর রসের গন্ধে ধরণী রিক্ত হয়েও পূর্ণ। এর পরেই পুলক জাগানিয়া বসন্তের আবির্ভাব হয়। সেজন্য মনে হয়--- ভাগ্য ভালো যে এ দেশে জন্মেছি,ধন্য আমি ।
তবে দুঃখ লাগে --স্বাধীনতার এতগুলো বছর পেরিয়েও সামগ্রিক উন্নয়ন এখনো হয়নি ।সমাজের সর্বশ্রেণীর মানুষের
ন্যূনতম চাহিদা টুকু ও পুরণ হয়না সব সময়। দরিদ্র মানুষের ঘরের আচ্ছাদন ছিদ্রযুক্ত চালুনি ,পোষাক যোগীদের লজ্জা দেবে, ওদের অসুখে ওষুধের ভূমিকায় থাকে সান্তনা, অভাবে শুধুই আশ্বাস। স্বদেশের এই রূপ বড় কষ্ট দেয়। সার্বভৌম রাষ্ট্র নাগরিক কে সমভাবে সেবা দেবার প্রতিশ্রুতি বদ্ধ। ভারত পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, তবে দেশের মানুষ তো আর সংবিধান পাঠ করে অধিকার আর কর্তব্য বুঝে নিতে পারে না। বরং জন সাধারণ তাদের সাংবিধানিক অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে অজ্ঞ থাকলেই ক্ষমতালোভীদের সুবিধা। মুক্তবাজার অর্থনীতির ফলে দেশীয় শিল্প থেকে সংরক্ষণ তুলে দিয়েও ক্ষতি হচ্ছে ছোট ছোট শিল্পের। বিদেশী বিনিয়োগের প্লাবন আসবে ভেবে এখন ---দেশীয় শিল্পের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। নোটবন্দী, তারপরেই করোনা আমাদের অর্থনীতিকে দুমড়ে দিয়েছে। শিল্পে কলকারখানায় ব্যাপক ছাঁটাই,স্বেচ্ছা অবসর, সরকারী সংস্থা বেসরকারীকরণ দিনে দিনে নাগপাশের মত জড়িয়ে ধরছে মানুষ কে। এর থেকে মুক্তি কবে পাওয়া যাবে জানা নেই। বধূ হত্যা,নারী নির্যাতন, এখনো ভারতে হয়েই চলেছে, পুরুষ তান্ত্রিক সমাজে আজ ও নারী লাঞ্ছিত, সংস্কারে জড়িত, নারী পুরুষের সংখ্যাগত অসম অনুপাত ভাবায় আমাদের,শিশু শ্রমিক নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠেছে। । নিদারুণ দারিদ্র শিশুদের জীবন কে ঠেলে দিচ্ছে চরম অনিশ্চয়তার দিকে। স্কুল ছুটের সংখ্যা বাড়ছে। তবুও এতো প্রতিকূলতার মধ্যে ও আশায় বাঁচি আমরা, সব ঠিক হয়ে যাবে। "ভারত আবার জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে"----আর শেষ করি এই উক্তি দিয়ে---"আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে" ।
0 comments:
Post a Comment