সম্পাদকের কলমে

নারায়ণ দেবনাথ- সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম । ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম । নমস্কার সহ অঙ্কুর রায় সংখ্যার সম্পাদক অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী প্রধান সম্পাদক

লেখা পাঠানোর জন্য

আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com

Total Pageviews

By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.

 খাজনা

তানিয়া ভট্টাচার্য

বাকি রাখা খাজনা, মোটে ভাল কাজ না বাবা খাজনা কি ?’ বুবাই ছুটে এল তার বাবার কাছে স্বপন ঘোষাল মধ্যবিত্ত ঢিলেঢালা লোক স্থানীয় ব্যাঙ্কে সকাল টা পাঁচটার দৌড়ে ঘড়ি ধরে পেন্ডুলামের মত দোল খাওয়া একজন কর্মী মাত্র বছরের বুবাইয়ের সব প্রশ্নের উত্তর তাঁর শব্দকোষে সবসময় থাকেনা ঐটুকু বাচ্চাকে কি করে খাজনা শব্দের মানে বোঝাবেন বুঝে পেলেন না এমনিতেও সকালের এই সময়টায় তাঁর ভারী তাড়া থাকে তাড়াহুড়োয় প্রায় দিনই দাড়ি কামাতে গিয়ে গাল কেটে ফেলেন দুটাকার সাইজের ছোট্ট ফটকিরি গালে ঘষে আর মাছের ঝোল ভাতের বৃহৎ গ্রাস গালে ফেলে বাস স্টপে পৌঁছান পিছনে কোনদিন মঞ্জরীরদুগ্গা দুগ্গাশোনা যায়, কোনোদিন যায়
না এই থোড় বড়ি খাড়ার মধ্যে খাজনা কিভাবে ঢুকে পড়ল ? কিন্তু একবার যখন ঢুকেছে উত্তর না নিয়ে সে যাবে না দাড়ি কামাতে কামাতেই স্বপনবাবু উত্তর দিলেন, ‘খাজনা হল ট্যাক্স এক রকমের টাকা দেওয়ার ধরণ যা আমাদের সরকার কে দিতে হয়

-‘কেন ?’

বোঝ কাণ্ড ! শুধু খাজনা শুনেই ক্ষান্ত নয়, এবার খাজনা দেওয়ার কারণ বলতে হবে, মনে মনে ভাবতে ভাবতে স্বপনবাবু উত্তর খুঁজতে লাগলেন শেষে মুখ মুছে গামছা ঘাড়ে ঝুলিয়ে বললেন, ‘আমরা ট্যাক্স দিই যাতে সেই টাকা কাজে লাগিয়ে সরকার আমাদের জন্যই অনেককিছু ভাল ভাল কাজ করতে পারে আর কোন কথা নয়, এবার আমাকে ছাড় আমায় অফিস যেতে হবে বাকি কথা মাকে জিজ্ঞাসা কর

বুবাইয়ের প্রশ্নাবলী নিজের স্ত্রীর ঘাড়ে চালান করে বেশ আশ্বস্ত হলেন স্বপনবাবু মঞ্জরী খুব ধীর স্থির প্রকৃতির বুবাইয়ের শত প্রশ্নেও বিব্রত হয় না, বরং প্রত্যেক প্রশ্নের মানে বুঝে ঠিকঠাক উত্তর ছেলেকে জলের মত করে বুঝিয়ে দেয় বাথরুমে ঢুকতে ঢুকতে শুনতে পেলেন মঞ্জরীর খুন্তি নাড়ার আওয়াজ আর সেই সাথে বুবাইয়ের গলা, ‘মা, সরকার আমাদের জন্য কি কি ভাল কাজ করে ?’

কান খাড়া করলেন স্বপনবাবু মঞ্জরী কি উত্তর দেয় শোনার জন্য গায়ে তেল মাখতে মাখতে শুনলেন মঞ্জরী অনেক ভাল ভাল কথা বলছে, যেমন রাস্তা ঘাট তৈরির কথা, গ্রামে গ্রামে জল আর বিদ্যুৎ পৌঁছানোর কথা, স্কুল কলেজ তৈরির কথা, আরও কত কি কিন্তু সবই বছরের নাবালকটি বুঝতে পারে এমন ভাষায় নিশ্চিন্ত হয়ে শাওয়ার চালালেন স্বপনবাবু স্নান করতে করতে যেন চোখের উপর দেখতে পেলেন ছেলে বুঝতে পারছে খাজনা দেওয়াটা কতটা জরুরী মনে মনে ভাবলেন, ‘যাক, আজকের মত হয়ত বুবাই আর প্রশ্ন করবে না প্রশ্নকে তাঁর বড্ড ভয় বিয়ের সময় তাঁর মধ্যবিত্ত শ্বশুর জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘তোমার কি কি লাগবে, বাবা ?’ ঠোঁটের ডগায় এসে গিয়েছিল, ‘কিছু না কিন্তু স্বপনবাবুর বাবা বৈষয়িক মানুষ অত সহজে ছোড়নেওয়ালা ছিলেন না তিনি তাই ছেলেকে থামিয়ে দিয়ে দানসামগ্রীর লম্বা লিস্টির সাথে সোনা আর টাকার অঙ্কের লম্বা চওড়া ফর্দ গুনে গুনে শুনিয়ে দিয়েছিলেন একবারও ভেবে দেখেননি তাঁর নম্র চরিত্রের ভালমানুষ ছেলে বিষয়টা মোটেও ভাল চোখে দেখছে না স্বপনবাবু মঞ্জরীর চোখেও প্রশ্ন দেখেছিলেন কালো উজ্জ্বল চোখ দুটো যেন বারবার জিজ্ঞাসা করছিল, ‘এত লোভ আপনাদের ? এত কিছু প্রয়োজন ! একা আমি যথেষ্ট নই ?’

স্নান সেরে বেরিয়ে এসে শুনতে পেলেন বুবাই বলছে, ‘আমি বুঝে গেছি, মা বাবা তোমাকে খাজনা দেয়, আর তুমি বাবার জন্য ভাল ভাল রান্না কর, মাংস, মাছ, পায়েস, পিঠে তাই না ! মা, আমি যখন অনেক বড় হয়ে যাব তখন বাবাকে অনেক টাকা খাজনা দেব আর তোমাকে কোন কাজ করতে দেব না

মঞ্জরী খিলখিল করে ঊঠল   সত্যি শিশুরা কত অবোধ ! মঞ্জরী তো কোনদিন বলেই উঠতে পারল না, ‘বিয়ের সময় আমার বাবা তোমাদের অনেক টাকা দিয়েছে আমি কোন নতি স্বীকার করব না সারাদিনের জোয়াল টেনে মাঝরাত অবধি কাজ করাটা ওর একটা স্বভাব হয়ে গেছে এত ক্লান্ত হয়ে যায়, তবু মুখের হাসি মেলায় না

সারাদিন কাজের মধ্যে স্বপনবাবু মন বসাতে পারলেন না বারবার কানে এল বুবাইয়ের ছেলেমানুষি কথাগুলো, ‘আমি যখন অনেক বড় হয়ে যাব তখন বাবাকে অনেক টাকা খাজনা দেব আর তোমাকে কোন কাজ করতে দেব নাসত্যি তো আট বছর পেরিয়ে গেল, এখনও তো সময় করে উঠতে পারলাম না যে টাকা গুলো ফিরিয়ে দিই, মনে মনে ভাবলেন তিনি অবশ্য দিতে চাইলেই যে মঞ্জরীর বাবা তা ফেরত নিতেন এমনটা নয় তবুও একবার চেষ্টা করেননি বলে স্বপনবাবু মনে মনে গুটিয়ে গেলেন, ‘ইশ্ ! বড্ড দেরী হয়ে গেল না তো !’

সাড়ে সাতটা নাগাদ বাড়ী ফিরে দেখেন শ্বশুর এবং শালাবাবু স্বয়ং হাজির সন্দীপ তাঁর একমাত্র
শালা অনেকদিন ধরেই শুনছিলেন সন্দীপের বিয়ে দেওয়ার জন্য তাঁর শ্বশুরকুল বেশ উঠেপড়ে লেগেছে আজ একটি পাত্রী মনের মত পাওয়া যাওয়ায় অবশেষে তাঁরা নিশ্চিন্ত কথায় কথায় স্বপনবাবু শুনতে পেলেন তাঁর শ্বশুরমশাই কিম্বা সন্দীপ এক পয়সাও পণ নিচ্ছেন না এতে মনে মনে তিনি আরও কুণ্ঠিত হয়ে পড়লেন নিজের বাবার উপর বেশ অসন্তুষ্টও হলেন তাঁর মনে হল, ‘ইশ্, আবার যদি পুরনো দিনে ফিরে যাওয়া যেত, তাহলে কিছুতেই বাবাকে পণ নিতে দিতাম না বাবা তো চলে গেলেন, আমাকে চির ঋণী রেখে গেলেন

রাতে সব কাজ মিটিয়ে মঞ্জরী যখন ঘরে এল স্বপনবাবু তখনও জেগে মঞ্জরী একটু অবাক সচরাচর এত রাত অবধি উনি বিশেষ জাগতে পারেন না মঞ্জরী বলল, ‘তুমি জেগে আছ ভালই তারপর একটু থেমে বলল, ‘সন্দীপের বিয়েতে একটু কিছু ভাল তো দেওয়া উচিৎ মানে সোনার দুল টুল যদি দেওয়া যায়

-‘নাস্বপনবাবু বলে উঠলেন

উত্তর শুনে মঞ্জরী কুঁকড়ে গেলেও মুখে কিছু না বলে শুয়ে পড়ল

স্বপনবাবু বললেন, ‘ভাবছি সন্দীপের বৌভাতের খাওয়া দাওয়ার দায়িত্বটা যদি আমরা নিই !’

মঞ্জরী যেন ভূত দেখল অবাক চোখে জিজ্ঞাসা করল, ‘মানে ? তুমি সত্যি বলছ ?’

স্বপনবাবু বললেন, ‘হুম একশ শতাংশ সত্যি

মঞ্জরী বলল, ‘কিন্তু কেন ?’

স্বপনবাবু হেসে বললেন, ‘বাকি রাখা খাজনা, মোটে ভাল কাজ না

 

0 comments: