সম্পাদকের কলমে

নারায়ণ দেবনাথ- সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম । ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম । নমস্কার সহ অঙ্কুর রায় সংখ্যার সম্পাদক অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী প্রধান সম্পাদক

লেখা পাঠানোর জন্য

আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com

Total Pageviews

By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.
ডুয়ার্স ১
Image result for pic of duarse

সেখানে বরং ইতিহাস হয়ে থাকুক
ঈষৎ কিছু চলযান।
সবুজ ছায়ার গালিচা যেখানে
মায়া পেতে বসে।
কেমন সব কুয়াশা যেন ঘোলা করে দেয় দৃষ্টি।
হাঁটাপথ ম্লান করে যায় স্মৃতি।
পাইনের বিন্যাস হয়ে ওঠা হেমা কতবার
শ্যাওলা এঁকে রেখেছে নিঃশব্দে।
ঘুম ষ্টেশনের কুপির আলোয়
বারবার সূর্যোদয় দেখেছে শীতার্থ রাত।
হাতের তালুতে তিস্তারেখা ফুটে ওঠে ,
পায়ে পায়ে ঝাউবনের মত ঘন হতে শেখেনি
জেসব পাকদণ্ডী পথ,
তাদের সবুজ সমাধি নিয়ে
ঘুমের ভানে জেগে আছে জোড়পুখরী ।



ডুয়ার্স ২

পাষাণের প্রতিবর্তে যেমন নটরাজ
এইভাবেই আছি আমরাও
সিঙ্কোনার গান্ডুষে গোছা গোছা ফুল
রাত জাগা এখন পীড়াহীন এক পার্বত্য সমারোহ
তারা  গুনি সম্প্রচারবিহীন
ঐ পাহাড়ী পথেই কতশত ব্যার্থ দুরাভাষ
রডোডেনড্রনের     অনুনাদিত  প্রার্থনা
অনেক আত্মপ্রেম দুবে গেছে প্রলাপে
অনেক ইঙ্গিত ছলনার মায়ামৃগে
কালিম্পঙে দীর্ঘ পাহাড়বাস
আজন্ম ঋণী থেকে যায় নিমগ্ন এক সন্ন্যাসী।



ডুয়ার্স ৩

শীতলতার কারন খুঁজতেই বুঝি বরফে গড়েছি রাজ্যপাট
আমার একান্ত ব্যালকনী ঘিরে
সার বেঁধে দাঁড়িয়ে গাজোলডোবার পরিযায়ী পাখী।
সম্পর্ক যেন ক্ষণস্থায়ী ঋতুবৈষম্য।
গলা বূজে আসে কুহক বরফগুঁড়োয়।
হলদে ঠোঁটের পাখীরা উড়াল দিয়েছে সেই কবে...
নানা আঙ্গিকের ওয়েসিসে আবার এক মরশুমি প্রতীক্ষা।
বোবা ম্যাজিশিয়ান হয়ে থাকে তিস্তা ব্যারেজ।


ডুয়ার্স ৪

অবসরের ছুতোয় নিভৃতে ভাজ করে রেখেছি চরৈবেতি
কোনো এক আয়েশি দুপুরে
সবুজ গালিচা ডাকে।
দীর্ঘ পথ, আদিবাসীর পোষ্য বুনো মুরগী,
শুয়োরের আনাগোনা কাব্যময় এক জীবন।
একচিলতে হাওয়ার হাত ধরে ভেসে আসে গুলমার জঙ্গল।
প্রথম চেনা রঙে চিনেছি সবুজসর্বস্ব এই পৃথিবী
সবুজের বুক ফুঁড়ে আসা ট্রেন বুঝিয়ে দেয় বেঁচে ওঠার স্পষ্ট শহরতলী।


ডুয়ার্স ৫

সে হেঁটে গেলে পাইনের বন পেত নির্বাসন।
সে নির্বাক থাকলে মেঘ পেত ঝরে পড়ার প্রতিশ্রুতি।
ফিরে আসার কথা ভেবেই কতবার হারিয়ে গেছে ডাউহিল।
ভেজা ঝরাপাতা আর প্রাচীন  শ্যাওলা সাহচর্যে কিশোরী হয়েছে সে।
শুধু রিনরিনে ডাকে যেসব পাখীরা উড়ে গেছে কুয়াশার পথে
তাদের ডাকেনি আর কোনোদিন।
শুধু আদিম ধ্যানে থেকে রোমন্থন করে গেছে উড়তে পারার সময়টুকু।


ডুয়ার্স ৬

সমর্পণ কোনোদিন দ্বিধা রেখে যায়না
যায় শুধু খামখেয়াল।
শহরতলীর পথে কুড়িয়ে পাওয়া অন্ধকারে
বারবার আঁজলা দিয়ে আলো রেখে গেছে তিনধারিয়া
এ কোনো আলোবিভ্রম নয়
এ এক নিরন্তর আলোর দিকে চেয়ে থাকা।
শীতার্ত রাতে খুঁজে পাওয়া গলে পড়া বরফকুচি।
স্নায়ুর আলোতর্পণে রোজ গড়ে ওঠে মায়াময় এক খেলাঘর।




ডুয়ার্স ৭

পাতাকুড়ানীর থলের ভেতর নির্বাসিত কোনো সম্রাট জেগে আছে।
বনটিয়ার মুখে লেগে থাকা পাতার মুকুট পরে
সে কখনো বনদেবী।
গাছবাড়িতে শুয়ে সে উড়িয়ে দেয় বুনো আঁচলঘ্রাণ।
লাটাগুড়ীর জঙ্গল কৃপণতা শেখেনি কোনোদিন।
যেমন শেখেনি অবিন্যাস।
মূর্তি নদীর জলজ অভিধানে
নিঃসঙ্গতাও যেন নিসর্গ হয়ে উঠতে পারে।
শুধু পড়ে থাকে ভারাক্রান্ত দিনযাপন।


ডুয়ার্স ৮  

সমস্ত চড়াই উতরাই বড্ড নিকট করে আনে।
মন্দির ঘণ্টার প্রতিধ্বনি বারবার নতজানু হয়ে আসে সবুজ নির্বাণে।
জলপোকার কারুকার্য জলাশয় হয়ে থেকে যায়।
বটের আগন্তুক হয়ে ঝুরি নামতে থাকে জলের শীতল বুকে।
রঙিন সব চিরকুট ভাসিয়ে ,ডাকপিয়নের ব্যাস্ততায়
ছুটে আসছে কাগজিফুলের ঝোপ ।
জলফড়িং যেন এখনি বলে উঠবে
প্রস্তরের জল হয়ে ওঠার গল্প।
রোহিণী আজও অনন্ত পাথেয় নিয়ে চলা এক পথিক।
ছায়াছাপে এক দুই নিবিড় অভ্যেস।



ডুয়ার্স ৯

পাহাড়ি গ্রামে ভিড় করে ছিল বোধের কিছু প্রত্নমুখোশ ।
রাতচরা পাখিদের শিষ ভেসে আসে স্তব্ধ আলোর বিজনবাড়ি ষ্টেশনে।
মনে হত সব জ্যামিতিক বোধের মুক্তি বোধহয় এখানেই।
তবু সব মনে হবার পরও নোনতা স্রোত বয়ে যায় ভেতরে।
ঝুমঝুম শব্দে অতল খাদে বয়ে যাওয়া তিস্তা যেমন।
রঙিন পাহাড়ি মেয়ে কোনো সবুজ চুরি করে হারিয়ে গেছে পাকদণ্ডী পথে।
বড় নাছোড় এসব শাব্দিক প্রতিধ্বনি।
মৃত্যুদিন অবধি অনুরণিত হতে থাকে হৃদস্পন্দনের সাথে।


ডুয়ার্স ১০

চা বাগানের পেন্সিলে আঁকা সবুজ স্মৃতির ইস্তেহার।
যেন ঘটবেই মেটেলী বা চালসায়।
সবজেটে গালিচার ভেতর গোপন কিছু স্টেপিং।
সেসব হাতড়ে মাটিশরীর ছাড়া আর কিছু নেই।
হয়ত আলোয় ছিলাম...
আলোহীন থেকে গেছে বোধের সব গল্প।
এরপর আর এগোয়নি আমার একান্ত বনজ ক্যালেন্ডার!
দীর্ঘ সবুজবাস কখন যেন ফ্যাকাসে করেছে যাবতীয় শহুরে ক্লান্তি।
চা পাতার শরীর ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা যেন স্বীকারোক্তি হয়ে গেছে সেই কবে।
আদিবাসীর নিকনো উঠোন জুড়ে শুয়ে থাকি ছড়িয়ে পড়া আমি।
দূরে দাড়িয়ে থাকে অনন্ত কবরময় একটা পরিতৃপ্তি।

        
কবি সাগরিকা বিশ্বাস একজন শিক্ষিকা। কিন্তু তার নেশা কবিতা লেখা । তার মনের গহন বনে থাকা আশ্চর্য পৃথিবীকে আমাদের কাছে নিয়ে আসেন।                                         


0 comments: