সম্পাদকের কলমে

নারায়ণ দেবনাথ- সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম । ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম । নমস্কার সহ অঙ্কুর রায় সংখ্যার সম্পাদক অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী প্রধান সম্পাদক

লেখা পাঠানোর জন্য

আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com

Total Pageviews

28,046
By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.

 প্রেম

সোমা নন্দী


জীবনটা পুরোপুরি বদলে গেছে দিশার ! 

বিয়ের আগে প্রেমপর্বের সময়ে দেখা দীপ কে তো নয়ই, বিয়ের পরে পরেও দেখা সেই মানুষটাকে দীপের ভেতরে যেন আর খুঁজেই পায়না দিশা ! 

...অথচ … সব ঠিকই তো ছিল । কোথাও কোন ছন্দপতন তো ঘটেনি তাদের মধ্যে ! তবু দিশা জানেনা কেন ভীষণ ভদ্র, আপাত লাজুক, নরম স্বভাবের সেই ছেলেটার মধ্যে কোথা থেকে ভিড় করে এলো এত কাঠিণ্য ! এত রুক্ষ্মতা ! 

আজকাল সবসময়ই যেন এক জ্বলন্ত সূর্যের সাথে ঘর করে দিশা , যার কোথাও এতটুকু স্নেহ নেই, ছায়া নেই, প্রশ্রয় নেই, প্রেম নেই ! যার সবটুকু জুড়ে আজ কেবল ব্যস্ততা, ঔদাসীন্য আর রুক্ষ্মতা ! 

মন বড় খারাপ হয়ে থাকে আজকাল দিশার । ঘরকন্না, চাকরি, সাজগোজ কোনকিছুতেই মন লাগে না আর তার । কি হবে সেজে ! একটা সময় সাজতো তো সে ও! অসামান্য না হলেও, দিশা রীতিমতো সুন্দরী। সাজগোজ করলে তাকে আরো সুন্দর লাগে। সোশ্যালাইজেশনের এই যুগে, সেই রূপের প্রশংসায় সারা পৃথিবী যখন পঞ্চমুখ হয়ে উঠতো, অবাক হয়ে দেখতো সে, দীপ কখনো কোন কমেন্ট করে না ! 

চাকরিতে প্রমোশন পেয়ে সে যখন সবার অভিনন্দনের বন্যায় ভেসে যাচ্ছিল সেবার, সেবার ও অনেক অপেক্ষার পর সে দেখেছিল, দীপ না দিয়েছে লাইক, না আছে তার কমেন্ট ! সবার উপস্থিতি ফিকে করে দিতো শুধু দীপের একার অনুপস্থিতি ! আর শুধু মনোযোগ না পাওয়ার অভিযোগ হলে তাও নয় মানা যেত ! দীপের এই আচরণ রীতিমতো ' অসামাজিক' হয়ে ওঠে সময়ে সময়ে । লজ্জায় মাথা কাটা যায় দিশার । এই তো সেদিন । বিবাহ বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে সবাই কত শুভেচ্ছা জানালো তাদের । অথচ দীপ ? সে যেন "যার বিয়ে তার হুঁশ নেই !" একটা রিআ্যাক্ট অবধি করলো না !

... সেবার দিশার মনে হয়েছিল, বিয়েটা যেন কেবল তার একার হয়েছে !

সেবার অনুষ্ঠানে নিজের আবৃত্তির অনুষ্ঠানটাকে নিজেই একের পর এক শিল্পীর পেছনে সরাতে সরাতে শেষপর্যন্ত দিশা যখন বলতে শুরু করলো- রাত তখন দশটা। না, দীপ তখনও এসে উঠতে পারেনি তার অনুষ্ঠানে। 

দীপের করা এইরকমই ছোটছোট কত না অবহেলা, অবজ্ঞা ভিড় করে আসে আজকাল দিশার মনে। দিন যত গড়াচ্ছে, বিয়ের বয়স যত পুরনো হচ্ছে ততই যেন হারিয়ে যাচ্ছে তার সেই চেনা প্রিয় মানুষটা ! 


কাবেরী আজকাল প্রায়শই লক্ষ্য করেন তার মেয়েটা বড় আনমনা হয়ে থাকে। এই ক'দিন আগেও যে মেয়ের মুখে কথার খই ফুটতো, আজকাল যখনই সে তার কাছে আসে, তিনি দেখেন চুপচাপ বসে আছে, নয়তো সিলিং এর দিকে তাকিয়ে শুয়ে আছে নিঃশব্দে । 

ফোনেও যেন দিশা আজকাল কথা খুঁজে পায় না তার সাথেও। কাবেরী বুঝতে পারেন, দাম্পত্য সম্পর্কের মধ্যেই কিছু একটা হয়েছে। নয়তো এমন মনমরা কেন হয়ে গেছে মেয়েটা ! 

কিন্তু মা হলেও সরাসরি এমন কথা জিজ্ঞাসা করতে সংকোচ হলো তার। তাই ঘুরিয়ে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন--"হ্যাঁ রে, পরশু নাকি তোদের ভালোবাসা দিবস ! তা কি কিনলি দীপের জন্য ? কি দিবি ওকে ? " 

মায়ের মুখে আচমকা এরকম প্রসঙ্গ শুনে একটু অবাক হয় দিশা ! এমনিতেই তার প্রতি করা তার জীবন-সঙ্গীর উদাসীনতা তাকে এই সপ্তাহভর চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে প্রিয়জনের কাছেও তাকে আসলে আর এতটুকু আহ্লাদী হওয়াও শোভা পায় না। সে এখন সহজলভ্য। তাই আর আবেগের প্রশ্রয় তার জন্য বরাদ্দ নেই। তারই মধ্যে মায়ের এই প্রশ্ন তার কষ্টের আগুনে যেন ঘি ঢাললো। একপ্রকার মুখঝামটা দিয়ে উঠলো সে …. বললো -- " তুমি হঠাৎ ভ্যালেনটাইনস্ ডে নিয়ে খোঁজ করছো ! হলো কি তোমার ?" 

একটু থতমত খেয়ে যান কাবেরী । একটু সংকোচ নিয়ে বলেন-- " না আসলে গয়নার দোকান গুলো পেপারে এত বিজ্ঞাপন দিচ্ছে! তাই জিজ্ঞাসা করলাম আর কি । নয়তো আমি আর এসব কোথা থেকে জানবো ! "

….. আচমকা নিজের হতাশার বহিঃপ্রকাশ এভাবে মায়ের ওপর করে ফেলে পরমুহুর্তেই ভীষণ লজ্জিত হয়ে পড়ে দিশা । মায়ের কাছে গিয়ে উঠে বসে বলে … " আমায় ক্ষমা করো মা। আমার এভাবে কথা বলা উচিৎ হয়নি। আসলে তোমাকে বাদ দিলে, আমার জীবনে ভালোবাসা বলেই আর কিছু নেই গো তায় আবার ভালোবাসার দিন ! What a joke ! "

মেয়ের মুখ ঘুরিয়ে চট করে মুছে নেওয়া চোখের জলটা দেখতে পান কাবেরী। মেয়ের মাথায় সস্নেহে হাত রেখে বলেন--- " কি হয়েছে দিশা ? এমন কথা কেন বলছিস ? বল আমাকে কি হয়েছে ?"

মায়ের কাছে একটু একটু করে সবটুকু বলে দিশা। 

কাবেরী তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলেন -- " তুই এখনো এত ইমম্যাচিওর কেন রে ? তোদের সোশ্যাল মিডিয়ার সামনে ও তোকে ভালোবাসা দেখালো না বলে ভালোবাসাটাই নেই হয়ে গেল ? এখনো এতটা বোকা আর অপরিণত থাকবি তুই তা আমি ভাবিনি মা !" 

…..মায়ের দিকে মুখ তুলে তাকায় দিশা। গাল থেকে গড়িয়ে পড়া চোখের জলটা মুছে নিতে নিতে বলে …. " হ্যাঁ আমি বোকা মা । আমি অপরিণত ! ধরো তাইই আমি। কিন্তু দীপ তো আমার সেই ছেলেমানুষিটাকেই ভালোবেসে আগলে রাখতে পারতো মা ! কই রাখলো না তো ! 

আর মা, শুধু এই যুগে কেন, ভালোবাসা চিরকালই একটু আবদার চায় , একটু দেখনাই চায়, একটু স্বীকারোক্তি চায় ! চায় না বলো ? এখনকার সোশ্যালাইজেশনের যুগে তো সেটা প্রোটোকল হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেখানে ও ওকে নিয়ে দেওয়া পোস্টে পর্যন্ত রিআ্যাক্ট করার সৌজন্যটুকুও দেখায় না । দুটো মানুষের সংসার আমাদের । সেখানে ওকে যদি দুটো শাড়ি হাতে নিয়ে বলি "বলোনা আজ কোন শাড়িটা পড়ি !" 

ও চোখ না তুলেই কাজ করতে করতে বলে …." পড়োনা যেকোন একটা । এর আর আমি কি বলবো।" 

….. এতটা উদাসীনতা মা ? এতটা তাচ্ছিল্য ? 

এমনটা যদি বাবা তোমার সঙ্গে করতো, পারতে মেনে নিতে ?

... এবার একটু হেসে ফেলেন কাবেরী। বলেন--

 " তোর বাবা ? ওর কথা আর বলিসনা। বিয়েবাড়িতে গিয়ে আমায় ফেলে রেখে একাই বাড়ি চলে এসেছিল একবার। বলে কিনা ' মনেই ছিল না তুমি সঙ্গে ছিলে।' পরে অবশ্য তার জন্য আমার প্রিয় মিষ্টিটা গিয়ে পরদিন কিনে এনে খাইয়েছিল। ...দিশা, ভালোবাসা একটু আহ্লাদ চায় হয়তো। কিন্তু সেটাই সব নয় মা। সত্যিকারের ভালোবাসা সবকিছুর মধ্যে বাতাস হয়ে মিশে থাকে। আর বাতাস দেখা যায় না যে !"


মায়ের কাছ থেকে ফিরে কাল থেকে দিশার মনটা একটু ফুরফুরে আছে। 

আজ নাকি "হাগ ডে" । ভালোবাসার লোককে ভালোবাসা দিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে রাখার দিন ! না, দীপ উইশ করেনি তাকে। দীপের হয়তো মনেই নেই ! আগে আগে মন খারাপ হতো দিশার। প্রত্যাশা কাজ করতো -- এই বুঝি দীপ কিছু বললো ! কিন্তু, দীপের দিক থেকে কোনকিছুতেই কোন গুরুত্ব বা আগ্ৰহ না দেখতে দেখতে এখন সবকিছু গা- সওয়া হয়ে গেছে তার। আর এখন কষ্ট হয় না। প্রত্যাশাও জাগে না বিন্দুমাত্র ! 

আজ নিজের জন্য নিজেই সাজলো সে। অফিস যাবে। দীপ যদি তাকে হাত ধরে একবার বলতো.."যেওনা" তবে অফিস তুড়িতে উড়িয়ে দিয়ে ডুব মারতো দিশা। কিন্তু দীপ তো তারও আগে অফিসে বেরিয়ে গেছে। ঘন নীল রঙের ঢাকাই শাড়িতে এতটাই সুন্দর লাগছিল তাকে যে সে নিজেই মুগ্ধ হয়ে একটু সময় নিজের দিকে তাকিয়ে রইলো।


আজ অফিসে জমজমাট দিন কাটলো দিশার । মনের ভেতরের অস্থিরতাটা তার অনেকটাই কেটে গেছে। অফিস থেকে বের হতে হতে সাতটা বেজে গেল দিশার । সাউথের ট্রেনগুলোয় এখন যা ভিড় ! তার মধ্যে ট্রেন ধরার জন্য ভেতরের ঐ শর্টকার্টটা একটা বিভীষিকা তার কাছে। সারা পৃথিবীর অন্ধকার আর আবর্জনার স্তূপ সেখানে। 

আজ দিশা প্রায় ছুটছে। দৌড়ে না গেলে এই ট্রেনটা মিস করলে করেসপন্ডিং ট্রেন পেতে পেতে রাত হয়ে যাবে। কোনদিকে না তাকিয়ে প্রায় দৌড়াচ্ছিল দিশা। হঠাৎ অন্ধকার ঠেলে কয়েকটা ছায়ামূর্তি তার পথ আটকে দাঁড়ালো। দিশার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জানান দিলো তার প্রতি আসন্ন প্রবল বিপদের ! সে হাতের ফোনে স্পিড ডায়ালের এক নম্বর বাটনে প্রেস করে শুধু পেছনে সরে যেতে যেতে শুনতে পেল দীপ ফোন ধরেছে । হ্যালো হ্যালো করছে। তারপরেই তার শাড়ির আঁচলে ঐ ছায়ামূর্তিদেরই কারোর প্রবল হ্যাঁচকা টানে ফোনটা সমেত সে ছিটকে গিয়ে পড়লো মাটিতে। 

তার মাথায় কিসের ভয়ানক ধাক্কা লাগলো যেন । একবার প্রাণপণে "বাঁচাও" বলে চিৎকার করে উঠেই জ্ঞান হারালো দিশা। আর কিছু তার মনে নেই।


আজ নার্সিংহোম থেকে বাড়ি ফিরেছে দিশা। 

এই সময়টুকু ধরে মা তো বটেই, দীপ ও এতটুকু কাছ থেকে সরেনি তার । নার্সের কাছে সে শুনেছে তার কান থেকে সোনার দুল টেনে ছিঁড়ে নিয়ে গেছে দুষ্কৃতীরা। তার সাথে যা করার বাসনা তাদের ছিল তা তারা সবটা পূর্ণ করতে পারেনি। কারণ, তার ফোনের কন্ঠস্বর শুনেই তার স্বামী সবটা বুঝতে পেরে উওম্যান হেল্পলাইন নম্বরে লালবাজারে ফোন করে এবং তার নম্বর ট্র্যাক করে আশু তৎপরতায় পুলিশ সেখানে পৌঁছায় ও সংজ্ঞাহীন দিশাকে স্থানীয় নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়।


…. নিজের ঘরের বিছানায় একা শুয়েছিল দিশা। দীপ ঘরে এলো। দিশার কাছে গিয়ে বসলো। দিশার মুখের দিকে তাকিয়ে চোখে চোখ রেখে বললো -- " তুমি মাকে কি বলছিলে তখন আমি শুনেছি। মাথা থেকে এসব ঝেড়ে ফেলে দাও বাবু। তুমি আমার কাছে চিরকাল যা ছিলে, আজও তাই আছো। যেমন সেদিন রান্না করতে গিয়ে দুম করে হাতটা কেটে ফেললে, এ ও তাই। জাস্ট একটা দুর্ঘটনা। তোমাকে তো ওরা ক্ষতি করতে পারেনি। আর ক্ষতিই বা কেন বলবো। এমন ঘটনা আর কখনো ঘটলে একদম লড়াই করবে না। কারণ তুমি, তোমার প্রাণটা আমার কাছে সবচেয়ে দামি। আর সুযোগ পেলে সব মিটে যাবার পর জাস্ট একটা লাথি মেরে সরিয়ে দিয়ে বলবে … " দূর হ। স্যাটিসফাইই করতে পারলি না !" 

হা হা করে হাসতে হাসতে দীপ বলে… " পৌরুষে পুরো গ্যামাক্সিন হয়ে যাবে দেখবে। "

অবাক চোখে দেখে দিশা ! ঐ যে হাসছে-- হা হা করে! কি নির্মল ওর হাসি। কি নিরাপদ লাগে ও কাছ এসে বসলে ! ও এতদিন কোথায় হারিয়ে গিয়েছিল !!!!!!!

.....কাঁদছে দিশা । কাঁদতে কাঁদতে বলছে-- " আমার কানের লতি চিরে গিয়ে দুটুকরো হয়ে গেছে। মাথায় সেলাই দিতে ডাক্তার আমার মাথার চুল খাপচে কেটে দিয়েছে। আমি ভেতরে, বাইরে সবদিক থেকে খারাপ হয়ে গেছি দীপ। আর আমি তোমার সেই সুন্দর, সুশ্রী দিশা নই ! আর আমি তোমার যোগ্য নই! আর আমি লোকের সামনে যেতে পারবোনা। আমাকে দেখলেই লোকজন এবার ফিসফিস শুরু করবে।"

….দীপ দিশাকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলে বলুক। তুমি পাত্তা দেবে না। আর তুমি যে কতটা জেদি তা নিজেও তুমি জানো। আমি যখন এতকাল বলে এলাম চুলে লক্স কাটবে না। আমার ভালো লাগে না। তাও তো জোর করে প্রত্যেকবার কেটে আসতে - মনে আছে ? ঠিক সেই ভাবে একদম জাস্ট ডোন্ট কেয়ার করে দেবে ওদের। ওরা নিজেরাই একদিন চুপসে চুপ করে যাবে।" 

দীপের বুকে আরো একটু ঢুকে গিয়ে দিশা কাঁদে আর বলে--" লক্স তো তোমাকে জ্বালানোর জন্য কাটতাম। তুমি আমাকে সময় দিতে না, আমার দিকে তাকিয়ে দেখতে না, তাই।" 

দীপ বলে -- " ওরে বোকা মেয়ে, তুই লক্স কাট আর ন্যাড়া হয়ে আয়, তুই তুইই থাকবি। " তারপর একটু গম্ভীর হয়ে বলে…" আমার কাছে এই পাঁচ ফুটের শরীরটা দিশা নয় দিশা। তুমি তার ভেতরের মানুষটা। আমরা শরীরের মাধ্যমে মানুষকে ভালোবাসি ঠিকই, কিন্তু তাই বলে তোমার শরীরটাই তুমি নও। তাই, তোমার বাইরের শরীরটার সাথে কি হলো না হলো, ওতে আমার কিছু যায় আসে না। আর সময় দেওয়া? আমিও যে সব পারিনা দিশা। সবকিছু ঠিক আসে না। তার মধ্যে কাজের ব্যস্ততায় মেজাজ ও বিগরে থাকে। ক্ষমা করে দিও তার জন্য। বোঝোই তো ! চাকরি মানেই চাকর-গিরি । তবে হ্যাঁ। ভালো আমি তোমাকে খুবই বাসি কিন্তু।" 

…. আবার হাসছে দীপ। এবার তার বুকে মুখ গুঁজে হাসছে দিশাও। তার বহুদিনের আগের সেই ভুলে যাওয়া হাসি !


...বসন্ত আসছে ! খোলা জানলা দিয়ে ফুরফুরে দক্ষিণের বাতাস ঢুকে তা জানান দিচ্ছে দুজনকেই। ক্যালেন্ডারের পাতায় আজ চোদ্দ ই ফেব্রুয়ারি! 

..... "ভালোবাসার দিন" !

না, ওরা আজও কেউ কাউকে উইশ্ করেনি ।

0 comments: