সম্পাদকের কলমে

নারায়ণ দেবনাথ- সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম । ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম । নমস্কার সহ অঙ্কুর রায় সংখ্যার সম্পাদক অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী প্রধান সম্পাদক

লেখা পাঠানোর জন্য

আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com

Total Pageviews

By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.
Image result for panchalingeswar



শিবের মাথার জল 


ঠিক করেছিলাম এই পুজোতে পঞ্চলিঙ্গেশ্বর -এ মহাদেব কে দেখতে যাব, অর্পিতা,শুভায়ু আর শ্রীরুপা তো এক কথায় রাজি। বেড়িয়ে পরলাম বালেশ্বরের উদেশ্যে। বালেশ্বর মানে এখন কার বালাসোর প্রাচীন জনপথ। কলিঙ্গ রাজপাঠ সেখান থেকে উৎকল, তারপর মুকুন্দ দেবের মৃত্যুর পর মুঘল রা তা দখল করে নিল। তারপর মারাঠা দের হাত ঘুরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে গেল । ১৮২৮ সালে বালেশ্বর জেলার জন্ম হয়। আসলে 'বাল-ই-শোর' -পারসি নাম থেকে বালাসোরের জন্ম যার অর্থ সমুদ্রের মধ্যে শহর। সেখান থেকে প্রায় ত্রিশ কিলোমিটার দূরে নীলগিরি পাহাড়ের একটি অংশ হল পঞ্চলিঙ্গেশ্বর শিব। ঝরনার জলের ভিতরে পাঁচটি শিব লিঙ্গ একসাথে থাকে।
আহুতি কানন পেড়িয়ে যখন বাবা মহাদেবের দিকে রওনা দেব ঠিক সেই মুহুর্তে প্রচণ্ড বৃষ্টি। চারিদিক কাল আর তার মাঝে সবুজ নীলগিরি পর্বত যেন মোহময়ি। আমি অর্পিতা কে বললাম - কিরে এই বৃষ্টিতে ভিজবি?
সে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে জবাব দিল- না।
আমরা তখন ছোট্ট একটা চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছি। এখান কার চায়ের স্বাদটাই যেন আলাদা।
শুভায়ু আর শ্রীরুপা তখনও শেলফি তোলাতে মত্ত। আমি আবার অর্পিতার দিকে চেয়ে বললাম- কি, শেলফি তুলবি?
- দেখেছ, ঐ মেয়েটাকে?
মেয়ে! আমি অবাক হয়ে চাইলাম সামনের মাঠের দিকে। দেখি একটা মেয়ে তখন মাঠের ওপর দিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে মাথায় কিছু একটা বোঝা চাপিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
- হ্যাঁ, দেখলাম তো। কেন কি হয়েছে?
- আচ্ছা ওরা বাবা শিবের কাছে কিছু চাইলে বাবা দেননা , না?
প্রশ্ন টা বড্ড কঠিন হয়ে গেল । আমি কি জবাব দেব। ইশ্বর মানি কি না সে প্রশ্ন এখানে অবান্তর । শুধু সুন্দরের টানে চলে আসা। তাই ইশ্বরের ব্যাপার নিয়ে মাথা খারাপ কখনও করিনি।
- চল বৃষ্টি কমে গেছে।
- চল।  অর্পিতা উঠে পড়ল আর বাকিদেরও ডেকে নিল।
দেবগিরি পর্বতের অংশ, নিচে থেকে ২৬০ টা সিঁড়ি পেড়িয়ে বনদেবির মন্দির পেড়িয়ে যখন পঞ্চলিঙ্গেশ্বর শিবের দর্শন জলের মধ্যে করলাম তখন কি আশ্চর্য্য লাগলো। শিব যেন জলের নিচে হাজার বা লক্ষ বছর ধরে বসে আছেন। অর্পিতা শিবের মাথার জল খানিকটা হাতে নিয়ে ব্যাগে রাখা শিশি তে ভোরে নিল। আমি ভাবলাম ভক্তি ভাব। মুখে বললাম- কি রে শিবের মাথার জল দিয়ে কি শিবের মত বড় কে পুজো করবি?
সে হেসে জবাব দিল- না, এমনি।
ফেরার পথে আবারও মেঘ ঘনিয়ে বৃষ্টি নামল। আমরা আরেকটা চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে চা আর বিস্কুট খাচ্ছি, ঠিক তখন-ই দেখলাম অর্পিতা হঠাৎ বৃষ্টির মধ্যে ভিজে হেঁটে যাচ্ছে। হাতে তার সেই শিশি। সামনে আরেকটি মেয়ে জলে ভিজে গরু নিয়ে ঘরে ফিরছে। অর্পিতা ওর কাছে এগিয়ে গেল। হাতের শিশি থেকে জল বের করে তা-কে যেই দিতে যাবে সে কি একটা বলে হেসে পাশ দিয়ে চলে গেল। অর্পিতার হাতের শিশিটা অজান্তেই মাটিতে পরে গেছে। সে যেন সংজ্ঞাহীন না হয়েও কেমন যেন হয়ে গেল। আমি ছুটলাম তার পাশে।
- কি হয়েছে? মেয়েটা কি বলল? তুই কি করতে গেছিলি?
অনেক বার জিজ্ঞাসার পর অর্পিতার সংজ্ঞা ফিরল। সে বলল- আমি শিবের মাথার জল ওর মাথাতে ছোঁয়াতে গেছিলাম, কারন ও সকাল থেকে ভিজছে। যদি শরীর খারাপ হয়, যদি এই জলে তার শরীর...
- তুই কি বিশ্বাসি না...
- জানিনা কি করে বিশ্বাস এল। ভাব লাম আমার বিশ্বাসে ওর নিশ্চয় ভাল হবে।
- ও কি বলল?
- বলল, বাবা শিব যে এই বৃষ্টি হয়ে সর্বক্ষন তাদের মাথার ওপর ঝরে পড়ছে। আর কি সের জলের প্রয়োজন ।
আমার চোখের পাশ দিয়ে বৃষ্টির জল নয়, চোখের জল পড়ছে কি জানি না, তবে যেটাই পড়ছে  তা যে বড্ড গরম এটা বুঝতে পারলাম।


0 comments: