সম্পাদকের কলমে

নারায়ণ দেবনাথ- সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম । ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম । নমস্কার সহ অঙ্কুর রায় সংখ্যার সম্পাদক অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী প্রধান সম্পাদক

লেখা পাঠানোর জন্য

আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com

Total Pageviews

By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.

  দুই পৃথিবী

রাণা চ্যাটার্জী

                                                                        


তুমি পল্লবী না ? অর্ডার পাওয়া ফুলের তোড়া টা তৈরি করতে করতে প্রশ্নটা করেই ফেললো ঋজু।


কোনো সাড়া না পেয়ে আর একবার বললো "ঠিক চিনেছি ! আমি ঋজু দা ! সেই যে  গোন্দল পাড়া চন্দননগর , মনে পড়ে !

ভ্রূ কুঁচকে এড়ানো দৃষ্টিতে তাকালো মেয়েটা । কে বলবে সেই ফর্সা হাড় লিকেলিকে মেয়েটা আজ স্টাইলে , পোষাকে আর হাত ভর্তি চুড়ি, গয়নায় নিজেকে মুড়ে ফেলেছে। একদম যেন ভোল পাল্টে মাড়োয়ারি ঘরের লাল টুসটুসে বহু রানী। খুশি হয় ঋজু পরিচিত মানুষগুলোর উন্নতি দেখলে কিন্তু ভারী আশ্চর্য্য লাগে যখন তাদের চিনতে না পারার অভিনয় দেখে।

ফুলের তোড়াটা তৈরি করার ফাঁকে  অবাক হয়ে দেখছিল ঋজু।গাড়ির কালো কাঁচ নামিয়ে মেয়েটির পতিদেব মা বোন তুলে গালি দিলো তাকে। শুনেও ওসবে ভ্রূক্ষেপ করতে নেই গরীব ফুলওয়ালার। ভাবনারা কোথায় যে ঋজুকে মাঝে মধ্যে দৌড় করায় , হাঁফিয়ে তোলে স্মৃতির কথা মনে করিয়ে দেয় ! তারপর হাঁ করে ভাবে বড়দের , স্কুলের মাস্টার মশাইদের সব আশীর্বাদেও ভেজাল ছিল।

বরাবর এক দাগ রেজাল্ট করেও রাস্তার ধারে ফুলের দোকান দিতে বাধ্য হয়েছে সে।প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি থেকে অবসর পেয়ে বাবা যেটুকু টাকা পেয়েছিল সব ওই প্রাইমারি স্কুলে চাকরি দেবে বলে পাড়ার চামচা নেতা খেয়ে বসে আছে। বাবাদের এই হলো মুশকিল,বৃদ্ধ বয়সে সন্তানদের কষ্ট বড্ড পীড়া দেয় । বাড়িতে কিছু না জানিয়েই নিজেই টাকা দিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছে বাবা ।ঋজু আগে জানলে বাধা দিতো বাবাকে , বরং বোনকে ভালো ঘরে পাত্রস্থ করতে পারতো । বড় হয়েছে বোনটা । বাড়ির অমন হতশ্রী দশা আর মা , বাবা , বোনের রুগ্ন মুখ যত কম দেখা যায় ভেতরের আনচান ভাবটা ততো কমে তাই সকাল সন্ধ্যা টিউশন পড়িয়ে বাইপাসের ধারে টেবিল পেতে ফুলের দোকান দিয়েছে । যে টেবিলে বসে মাথা উঁচু করে বাঁচার স্বপ্ন দেখতো সেই টেবিলটাই পেতেছে খোলা আকাশের নিচে । তাজা ফুলের মাঝে বাসি পচা ফুলের মতো একটা অনিশ্চিত জীবন আগে মুষড়ে রাখতো কিন্তু অভ্যস্ত হয়ে গেছে এখন । এখন হেসে নিজেকেই বলে 'ঋজু এটা হলো  অভিযোজন।'

তখনো ভাবনারা মাথায় উঁকি দিচ্ছে .... সেই প্রাথমিক স্কুলের জানলার গরাদ ধরে বাচ্চাগুলোর হাঁ করে রাস্তার দিকে মুখ বার করার মতো । এই কিনা সেই সুন্দরী গবেট মেয়েটা,যাকে প্রতি ক্লাসে নিজের বই আর নোটের খাতাগুলো দিয়েও পাশ হতে দেখতো না ।আজ বড়লোকের বাড়ির বউ, হাবে ভাবে ঔদ্ধত্বে,বিদেশে থাকে মনে হচ্ছে!

"গুলদস্তা খরিদ নে কে লিয়ে ইতনা লেট!"জানালা খুলে বিশ্রী ভাবে পানের পিক ফেলে প্রশ্ন ছুঁড়লো ভেতরের লোকটা! একবার কষ্ট হলো ঋজুর,ইস এই চুয়াড় ছোটলোকটা কিনা পল্লবীর স্বামী! টাকার এত মহিমা অবশ্য সেটাই স্বাভাবিক ভেবে ফুলের দাম নিয়ে খদ্দেরকে ছাড়লো ঋজু।কোথায় যেন একবার তার করুণা হলো।মনে পড়লো দুদিকে বিনুনি ঝুলিয়ে সস্তা পোষাকে  মায়ের সাথে পল্লবীর তাদের বাড়িতে আসার দিন গুলো।কত দিন লুডো খেলেছে কিন্তু একদম বুদ্ধু ছিল বলে খুব বকুনি খেতো মায়ের কাছে।ভাবুক হচ্ছিল ঋজু-টাকা সম্পত্তি ওলা মানুষের সাথে থাকলেও মেয়েরা সত্যি কত অসহায়,যেনো কলের পুতুল।

সেদিন ছিল রবিবার।কর্মখালী পাতাটা বড় করে পেতে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ছে ঋজু দোকানে।একটা টোটো একদম সামনে দাঁড়াতেই চমকে দাঁড়িয়ে পড়ে ঋজু,এ সে কি দেখছে!অতি সাধারণ রং চটা সালোয়ার কামিজে পল্লবী তো,তবে কি সেদিন অন্যজন ছিল!"কি এত ভাবছো ঋজু দা, ওটা আমিই ছিলাম কিন্তু ওসব যা দেখলে সব ছিল মেকি গো মেকি"- বলে চোখের কোনটা চিক চিক করে উঠলো পল্লবীর।মানে,কিছুই মাথায় ঢুকছে না ঋজুর।শোনো না ওসব মানে শুনে লাভ নেই,হ্যাঁ উনিই আমার স্বামী লম্পট জুয়াখোর ,এ শহরের দু দুটো পেট্রোল পাম্পের মালিক।তুমি কেমন আছো আগে বলো ঋজুদা, আর মাসিমা?ঋজুর সাবলীল হতে সময় লাগলো,এত দিন এই গবেট মেয়েটার কত অঙ্ক সে নিমেষে মিলিয়ে দিলেও আজ যেন সব অঙ্ক পেঁচিয়ে জটিল হয়ে যাচ্ছে ঋজুর।

ঋজু দা, তুমি পেয়ারা খেতে খুব ভালোবাসতে মনে আছে আমার।ওই মোড়ের মাথায় পেয়ারা বিক্রি হচ্ছে দেখে কিনে আনলাম । এই নাও ধরো বলে টেবিলে নামিয়ে দিয়েছে পৌলমী । এই বলনা রে আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছি না তো সেদিনের তুই আর আজকের তুই এত আকাশ পাতাল ফারাক কেন রে ! একটা দীর্ঘ নিঃশাস ফেলে ঠোঁট কামড়ে পল্লবী বলল ভালো ক্লায়েন্ট ধরতে বাড়ির বউকে সাজিয়ে টোপ হিসাবে ব্যবহার করা হয় দাদা ।এসব তুমি বুঝবে না গো । ঋজু অবাক চোখে আরো কিছু জানতে চাইছিলো ।পল্লবী বলল ওসব বাদ দাও না , এই জগৎ ভালো নয় ঋজু দা , প্লিজ তুমি এসব জানতে চেয়ো না। পরে আসবো বলে চলে যাবার জন্য উদ্যত হলো । টোটোতে চেপে মাথা নিচু করে আরো বলল,"সেদিনের আচরণ ছিল আমার অভিনয় ঋজু দা । খুব কষ্ট হচ্ছিল তোমায় না চেনার ভান করায় তাই আজ লুকিয়ে অপরাধ কমাতে এলাম'। 

ঋজু আবার কর্মখালির বিজ্ঞাপন দেখতে পেপারটা খুললো । তখনও অনেক দূর চলে যাওয়া টোটো যেন তার অতীতের সুঘ্রাণ ছড়িয়ে তাকে ঘিরে ধরে আছে ।

0 comments: