সম্পাদকের কলমে
নারায়ণ দেবনাথ-
সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম ।
ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম ।
নমস্কার সহ
অঙ্কুর রায়
সংখ্যার সম্পাদক
অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী
প্রধান সম্পাদক
লেখা পাঠানোর জন্য
আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com
Total Pageviews
By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.
ঝলক দর্শন
সুভাষচন্দ্র ঘোষ
কানু তার স্ত্রী রাধাকে বলল----আধা বৌ,ঐ দ্যাখ হাওড়ার বিরিজ্--দশ তালগাছ উঁচু,লুহার খাঁচার মতুন,ওটার তলা দিয়েই যাব ঐ বিরিগেডের মাঠে ।ক্যামুন হাওড়ার ইস্টিশন থেকে ই্ঁদুরের খালের মতুন সুরুঙ্গু দিয়ে সুরুৎ করে বেড়িন এলাম বুল? বিরিজের ধার ঘেঁষে এলিং ধরে হাঁটবি বৌ,বেচ্যাল করবি ন্যা বেপদে পড়ে যাব,নামুতে দেখবি--মা গঙ্গার ওপর দিয়ে কত বড় বড় বাড়ির মতুন ইস্টিমার ভেসে যেছে। রাধা বলল---ওসব দেখে কাম নাই--আমি বাবা আস্তার মাঝ দিয়ে হাঁটব----নামু দিকে তাকালে আমার আবার মাতা ঘুরে। কানু হেঁসে বলল---আস্তার মাঝ দিয়ে তুকে হাঁটতে দিবে নাকি?ঐ দ্যাখ সাদা জামা পরা পুলিশ বাঁশি বাজাছে। ঐধারের উঁচু আস্তা ,উঠা ফুটপাত ,ঐ দিয়েই হাঁটতে হবে চালাকি চলবে না বাবা, ইটা কলকেতা বটে--কানু বিজ্ঞের মত বলল। সে আগে একবার সিপি এমের মিছিলে এসেছিল,এখন এসেছে তৃনমূলের মিছিলে,তাই তার খানিকটা অভিজ্ঞতা আছে। কানু বলল---বিরিজ পার করেই দেখবি বৌ--কত বড় বড় ডালান--একেবারে আকাশে ঠেকেছে।দেখিস বৌ--হাত যেন ছাড়িস ন্যা,ইখানে হারালে তুকে আর খুঁজে পাব ন্যা। রাধা আরো জোরে হাঁটছে আর পিছনে একেবারে হেলে উঁচু দালানের মাথা দেখবার চেষ্টা করছে।কানু বলল--পড়ে যাবি বৌ-সুজা হাঁট। হাঁটতে হাঁটতে মিছিলের ভীড়ে তারা ব্রিগেড মাঠে গিয়ে পৌঁছালো। রাধা বলল----- ওরে-এ-এ বাপরে !কত লোক গো--- ই--গাঁটা খুব বড়ো লয়---- ১৮ পাড়া খড়গাঁ থেকে ও বড় মনে হয়। কানু বলল--ওরে আধা বৌ----ইটা কলকেতা,খড়গাঁর থেকে
কত বড় যা আমি বুলতে পারব না----এ্যার ই মাথা উ মাথা নাই। রাধা বলল----- চারিদিকে এত মায়েক---কি সব বুলছে গো--এ্যাতো কলকলানি----কিছুই বুঝতে পারছি ন্যা।কানু বলল-----তুকে আর বুঝতে হবে ন্যা,চল্ উঠে আয়,পাতাল এল (রেল) দেখে আসি--ঐ দ্যাখ জিতনা ডাকছে।
দূরে দেখলো-- ও পাড়ার জিতেন তাদের হাত নাড়িয়ে ডাকছে। কানু বলল---জিতনা আমাকে কাল বুলেছে --আমাদের দুজনাকে কলকেতা ঘুরিয়ে দ্যাখাবে--উ সব জানে ,ইখানে অনেক বার এসেছে। জিতেনকে অনুসরণ করে কানু রাধা মিটিং থেকে বেরিয়ে এলো।একটু হেঁটেই মেট্রো স্টেশনের মুখ।জিতেন বলল---বৌ দিদি এই মাটির তলা দিয়ে কিন্তু টেরেন যেছে, ঐ শুন গুম গুম শব্দ।কানু রাধা এবার সত্যি সত্যিই গুম গুম শব্দ ও ট্রেনের ভোঁ শুনতে পেল। জিতেন পরবর্তী স্টেশনের তিনটে টিকিট কেটে দুটো তাদের হাতে দিল এবং সতর্ক করে দিল ,যেন টিকিট না হারায়--- হারালে কিন্তু মাটির নিচ থেকে আর উঠতে দেবে না। রাধা টিকিট দুটো মনযোগ দিয়ে দেখে বলল--টিকিট মুনেই হছে না,এ্যা তো কেলাবের(ক্লাবের) ছেল্যারা চারকুনা কাঠের তক্তার ওপর খ্যালে তার ঘুঁটির মতুন লাগছে। সে ঐ দুটো তার পড়নের শাড়ির খুঁটে দুটো গিঁট দিয়ে বাঁধলো। মাটির ভিতরে খুব বড় লম্বা ঘরের মতো স্টেশন,কী পরিস্কার আয়নার মতো ঝকঝক করছে,আবার কোথা থেকে গানের আওয়াজ ভেসে আসছে।রাধা কানু মুগ্ধ হয়ে দেখছে,রাধা কে গান করছে তা দেখার চেষ্টা করেও বুঝতে পারল না। রাধা দেখ সিঁড়ির মতো কি একটা উঠছে--পাশ দিয়ে আর একটা নামছে, লোকজন হাঁটে না,শুধু চেপে আছে, সিঁড়িটায় খালি অনবরত ঘুরছে। জিতেন বলল--ইটা ইসকালেটার ,ওতেই চাপতে হবে।বৌ দিদি সাবধান,শাড়ি একটু তুলে ধরে চাপতে হবে,দাঁতে ধরে গেলে কিন্তু বেপদ । রাধা ভয়ে ভয়ে শাড়িটা প্রায় হাঁটুর উপর তুলে লাফিয়ে চলন্ত সিঁড়িতে উঠতে গিয়ে প্রায় পড়েই যাচ্ছিল---- এক ভদ্রলোক খপ করে তাকে ধরে কোনরকমে সোজা করে দিয়ে বললেন--ঐরকম করে কেউ লাফায়---এখনই পড়ে যেতেন। লজ্জায় রাধা মরে গেল---পরপুরুষে হাত দিয়ে সোজা করে দিয়েছে।চলন্ত সিঁড়িতে ঠিক বিসর্জনের সময় যেমন মা কালী হেলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে তেমনি স্বামীর উপর ভর দিয়ে কোনরকমে স্টেশনের নীচের তলায় নেমে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। সামনেই কয়েকটা গলির মধ্যে ডান্ডা লাগানো আছে,ওর ভিতর দিয়েই সবাই যখন যাচ্ছে তখন ডান্ডাটা সরে যাচ্ছে।রাধা কাউকে দেখতে পেল না ---কে ঐ ডান্ডা খুলছে--- লাগাচ্ছে বুঝতে পারল না। জিতেন বলল---ঐ কাঠের পয়সার মতো ঘুঁটিটা গলির মুখে বাঁধের গোলে ঠেকাতে হবে ,তখনি ডান্ডা খুলবে আর সুরুৎ করে ওপারে বেড়িয়ে যেতে হবে ---দেরী করলে হবেনা,ডান্ডা বন্ধ হলে আর যাওয়া যাবে না।রাধা খুঁট থেকে খুলে একটা স্বামী কে দিয়ে একটা নিজে মুঠো বন্ধ করে ধরে রাখলো। জিতেন প্রথমেই বেড়িয়ে চলে গেল।এরপর রাধা সব গুলিয়ে ফেলে টিকিট না ঠেকিয়েই গলিতে ঢুকে পড়ল,ডান্ডা খুলল না -- হাত দিয়ে খোলার চেষ্ঠা করে,না পেরে লাফিয়ে ওপারে চলে গেল।সঙ্গে সঙ্গে কোথায় ছিল দুটো মহিলা পুলিশ ----এসেই কপাৎ করে রাধাকে ধরে ফেলল। রাধা ভয়ে কেঁদে ফেলল । ততক্ষণে কানু কাছে এসে গেছে, সে বলল। -----মাশাই বুজতে পারে নি ---খ্যামা করে দ্যাও,উঠা আমার ইস্তিরি এই পেথম কলকেতা এয়েছে। জিতেন গন্ডগোল বুঝে টিকিট গুলো দেখিয়ে বলল----- ছার্, গাঁয়ের মানুষ জানে না। যাই হোক পুলিশরা বুঝতে পেরে তাদের ছেড়ে দিয়ে বলল---আর যেন ভুল না হয়। কানু রাধা কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলল---মাতা খারাপ, আর ভুল হয়! ততক্ষণে মেট্রোট্রেন হূস করে চলে এলো। দরজা খোলার পর রাধা স্বামীর হাত ধরে ট্রেনে উঠেই স্বামীর পাশেই সিটে বসে পড়ল।
এক ভদ্রলোক বললেন-- আপনি ঐদিকের সিটে বসুন ,খালি আছে---আমরাও তাহলে বসতে পারি।কানু রাধা দুজনেই উঠে ওপাশের সিটে এক ভদ্র মহিলার পাশে বসার সঙ্গে সঙ্গে ভদ্রমহিলা কানুকে বললেন-- আপনি এখানে কেন--ওপাশে বসুন।কানু বলল----যাঃ বাবা! উরা বুলছে ঐদিকে---আমনিও বুলছো ঐদিকে----আমরা যাই কোতা? ভদ্রমহিলা বুঝতে পেরে বললেন ,ঠিক আছে বসুন।
পরবর্তী স্টেশনে একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা জিতেনের ইশারায় ট্রেনের দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গেই তারা নেমে গেল। দরজা হূস করে বন্ধ হলো,তারাও জিতেনকে অনুসরণ করে তার পিছন পিছন সিঁড়ি ভেঙ্গে উপরে উঠে এলো। কত লোক যেছে আসছে তার ইয়াত্তা নাই,কলকেতার মেয়্যা গুলার তো নজ্জা শরম নাই গো---সব ছিঁড়া পেনটুল, অং চটা ঢুলা জামা কাপুড় পরে ,দামড়া দামড়া চুলে তেল না দেওয়া ছোঁড়া গুলার সঙ্গেগায়ে গা দিয়ে ঘুরে বেড়াছে,, চুলে দেওয়ার তেলের পয়সা নাই, পুরোনো তাপ্পি দেওয়া পেনটুল পরছে,ওরা কি আমাদের চেয়েও গরীব নাকি?-----রাধা জিজ্ঞাসা করল।
তারা ব্রিগেডে মাঠের দিকে গাঁয়ের সবার সঙ্গে মিশবার জন্য পা বাড়াল-----সবার আগে জিতেন ,মাঝে কানু পিছনে রাধা।কানু বলল---- ওরে আধা বৌ------উরা আমাদের চেয়েও গরীব---উদের খুলা আকাশ নাই,বাতাস নাই, সবুজ খ্যাত ভরা ফসল নাই। রাধা কলকাতা আসার আগের দিনের সদ্য ২৫ টাকা দিয়ে কেনা প্লাস্টিকের চটিজোড়া পা থেকে খুলে বগলে নিয়ে খালি পায়ে ময়দানের সবুজ ঘাসে পা দিয়ে বলল---ঠিক বলেছ গো---কলকেতা দেখে আর কাম নাই,কলকেতায় কিছুই নাই-----শুদুই ইঁট আর সিমেনের জংগল----একটুকু মাটি শুদ্ধু নাই-------
বাপরে পায়ে কি লাগছে।সবাই তখন দেখল---- রাধার পায়ে একটা বড়ো ফোস্কা ---------।
Subscribe to:
Posts (Atom)
0 comments:
Post a Comment