সম্পাদকের কলমে

নারায়ণ দেবনাথ- সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম । ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম । নমস্কার সহ অঙ্কুর রায় সংখ্যার সম্পাদক অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী প্রধান সম্পাদক

লেখা পাঠানোর জন্য

আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com

Total Pageviews

By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.

 নৈশাভিযান 

অনুরাধা মুখার্জী 

        সনটা বোধ হয় 1979 ।কলেজের কিছু কাজ ও কিছু ব্যক্তিগত কাজে রাঁচি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল তাই একদিন প্রাতরাশের পর আমি আমাদের কলেজের প্রিন্সিপালের সঙ্গে তাঁরই গাড়িতে রওনা হলাম ।ইউনিভার্সিটিতে আমার কাজ তো ঘন্টাখানেকের মধ্যেই সারা হয়ে গেল তখন ম্যাডামকে বলে আমার পরিচিত এক পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে চলে গেলাম, কথা রইল পাঁচটা থেকে সাড়ে পাঁচটার মধ্যে অবশ্যই ফিরায়ালালে এসে একে অন্যের অপেক্ষা করব ।কারণ চাইবাসা পৌঁছতে অন্তত সাড়ে তিন ঘন্টা লাগবে আর রাস্তা মোটেই ভালো নয় ।ফাঁকা, জঙ্গলের রাস্তা ।চতুষ্পদ প্রাণীর সঙ্গে দ্বিপদ প্রাণীর ভয়ও যথেষ্ট বরং দ্বিতীয় শ্রেণীর প্রাণীরাই বেশি ভয়াবহ ।কথামত আমি তো পাঁচটাতেই এসে ফিরায়ালালের সিঁড়ির ওপর বারান্দার কোণে আইসক্রিম কর্ণারের পাশে দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু ম্যাডামের দেখা নাই ।এদিকে ফিরায়ালাল শপিংমলে (যদিও এই শব্দ -বন্ধ তখন অপ্রচলিত ছিল )দাঁড়িয়ে আছি অথচ শপিং নিদেনপক্ষে উইন্ডো শপিং করতে পারছি না এটা আমার মতো গেঁয়ো মানুষের পক্ষে বড়ই কষ্টকর কিন্তু আমার তো নড়ার উপায় নেই ।কারণ সেযুগে তো আর মোবাইল ফোন ছিল না যে একে অন্যকে খুঁজে নেব ,তাই পূর্ব নির্ধারিত জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই ।অবশেষে হাঁপাতে হাঁপাতে ম্যাডাম এলেন ছটার পরে ।আমি তো রাগের চোটে পদমর্যাদা ভুলে চেঁচামেচি জুড়ে দিয়েছি --আপনার কোনো আক্কেল নেই, লাস্ট বাস ও চলে গেছে ।এরপর রাস্তায় বিপদাপদ হলে কি হবে? আর কিছু না হোক গাড়ীই যদি খারাপ হয় তাহলে? ইত্যাদি ইত্যাদি ।ম্যাডাম আমার মুখের তোড় সামলাতে নাজেহাল হয়ে বললেন অত রাগ করোনা, ইউনিভার্সিটির কর্মপদ্ধতি তো তোমার জানা নেই! আমি সারাদিন কয়েক কাপ চা ছাড়া কিছু খাই নি ।আগে চলো শীতলছায়াতে ধোসা খেয়ে নিয়ে রওনা দিই ।তাই হলো তার পর পঞ্জাব সুইট হাউস থেকে মিষ্টি কিনে আমরা দুজন মিষ্টি প্রেমী যখন ফাইনালি চাইবাসার জন্য রওনা হলাম, ঘড়ি তখন সাতটার ঘর ছাড়িয়েছে ।ছোট ফিয়েট গাড়ি ।ড্রাইভারের পাশের সীটে ফাইল পত্র ।পিছনে আমরা দুই বীরাঙ্গনা ।অন্ধকারে নিঝুম প্রকৃতি দেখতে দেখতে চলেছি ।নির্বিঘ্নে রাঁচি জেলা পার হলাম ।এবার বাঁধগাঁও--সিংভূম জেলা শুরু হলো।বাঁধগাঁও থানার সামনে একটু অপেক্ষা ।কয়েকটা গাড়ি জমা হলে থানা থেকে এসকর্ট দেয় কারণ এখান থেকেই শুরু হয় টেবো ঘাটির রাস্তা ।যে রাস্তা দিনে যেমন চিত্তাকর্ষক রাতে তেমন ভয়ানক।

বিপজ্জনক অবশ্য সর্বদাই ।একদিকে জঙ্গলে ঢাকা পাহাড়, অন্য দিকে জঙ্গলাবৃত গভীর খাদ ।একটু এদিক ওদিক হলেই দুর্ঘটনা ।প্রতি ট্রিপে একাধখানা উল্টানো ট্রাক চোখে পড়বেই ।দূর থেকেই দেখলাম বেশ কয়েকটি গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে, এমনকি চাইবাসা গামী লাস্ট বাস টিকেও দেখতে পেলাম ।ধড়ে একটু প্রাণ এলো আর এতগুলো গাড়ী যখন জমা হয়েছে তখন এসকর্ট সার্ভিস পেতেও দেরি হবে না ।কিন্তু অভিজ্ঞ ড্রাইভার বেণীর চোখে চিন্তার ভ্রূকুটি ।আমাদের গাড়ি থেকে নামতে বারণ করে নিজে খোঁজ খবর করতে বার হলো ও অল্পক্ষণ পরে একজন বনকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে ফিরে এল ।শুনলাম বিশাল হাতির পাল বেরিয়েছে,রাস্তা ক্লিয়ার হওয়া এখন হাতিদের মর্জির উপর ।এত ছোট গাড়িতে থাকা নিরাপদ নয়, আমাদের সে থানার ভিতর যেতে অনুরোধ করল ও সঙ্গে করে নিয়েও এল ।থানা কম্পাউন্ডের ভিতর অনেক যাত্রী ।ম্যাডামের পরিচিতির দরুণ আমরা দুজন থানা ইনচার্জের ঘরে বসার জন্য চেয়ার পেলাম ।

       এবার সামনে তাকিয়ে স্তব্ধ হয়ে গেলাম ।এক বিশাল হাতির পাল ।পাহাড়ের দিক থেকে নেমে আসছে, ইচ্ছে মতো ডালপালা ভেঙে খাচ্ছে বা ফেলে দিচ্ছে ।গাছের গুঁড়িতে গা ঘষছে কখনো বা বিনা কারণে কোনো গাছ উপড়ে ফেলছে ।কিংবা এক জায়গাতে দাঁড়িয়ে নেক্সট প্ল্যান অফ অ্যাকশন ঠিক করার জন্য মীটিং করছে ।আড়ে আড়ে গাড়ির সারির দিকে তাকাচ্ছে  ভাবখানা কি করা যায়? দেবো নাকি খেলা ধূলো করার ছলে একাধটাকে গুঁড়ো করে !ছোট গুলো তো নস্যি, নেব নাকি পাঙ্গা একাধটা বড়ো নয়া জানোয়ারের সঙ্গে ?কিন্তু মুশকিল এই যে বনকর্মীরা আর পুলিশেরা মশাল, পটকা সব নিয়ে ব্যারিকেড করে আছে ।দরকার নেই ঘাঁটিয়ে ওদের ।বেশ আনন্দে ঘুরেবেড়াচ্ছি কি দরকার বাবা অনর্থক ঝুট ঝামেলাতে জড়িয়ে ভালো মুডটা নষ্ট করার! তার থেকে মহীরুহ গুলোর সঙ্গেই শক্তি পরীক্ষা করা যাক ।এইভাবে হেলেদুলে ঘণ্টা খানেক গজেন্দ্র গমনে ঘোরাফেরার পর শোনা গেল উচ্চ নাদে বৃংহন।এটা সম্ভবত দলনেত্রীর নির্দেশ  (যতদূর জানি হস্তীদলের নেতৃত্ব দেয় কোনো বয়স্কা হস্তিনী )"অনেক হয়েছে এবার ফিরে চল স্বস্থানে ।"সঙ্গে সঙ্গে হাতির পাল ফিরে চলল পাহাড়ের পথে ।সবকটি হাতি দৃষ্টি সীমার বাইরে মিলিয়ে যাওয়ার পর আরো বেশ কিছুক্ষণ সময় কেটে যাওয়ার পর আমাদের সিগন্যাল সবুজ হলো ।এবার বাড়ি ফেরার পথ ধরলাম আমরাও ।মনে মনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীদের ধন্যবাদ দিলাম কারণ তাদের লেট লতিফ কার্যধারার জন্য আমাদের এত কাছ থেকে এত গুলো বুনো হাতির পাল ও তাদের খেলা ধূলা দেখার সৌভাগ্য হল ।কিছুটা আসার পর ম্যাডাম বললেন যাক এতটা রাত হয়ে গেছে, তাছাড়া হাতির পাল বেরোনোর খবরও নিশ্চয়ই ছড়িয়ে পড়েছে কাজেই মানুষ পশুর ভয় আজ আর নেই আশা করি।ড্রাইভার হাসিমুখে জবাব দিল "ডাকুলোগ অব সো গয়া ।রাত  নৌদশ তক ওলোগ সে খতরা রহতা হায় ।উসকে বাদ ওলোগ সো জাতা হায় ।"যাহোক আমরা আমাদের নৈশাভিযান শেষ করে যখন চাইবাসা পৌঁছলাম তার বেশখানিকক্ষণ আগেই ক্যালেন্ডারে তারিখ বদল হয়ে গেছে ।

            চাইবাসা -রাঁচি যাতায়াতের সময়ে ফেরার পথে টেবো ঘাটির জঙ্গলঘেরা রাস্তায় একবার এক বিশাল সাপ ও আরেকবার একটি নাবালক বাঘ দেখেছি কিন্তু এরা কেউ কোনো ক্ষতি করেনি আর দুবার দুপেয়ে জন্তুদের পাল্লায় পরেছিলাম সেই দুবার নেহাত ঈশ্বর কৃপায় রক্ষা পেয়েছি তাও একেবারে অক্ষত অবস্থায় নয়, তাই আমি নির্জন পথে দ্বিপদ প্রাণীকেই বেশি ভয় পাই ।যাক এই অভিজ্ঞতার সাথে হস্তীদর্শনের কোনো যোগ নেই ।তাই আজ এখানেই ইতি টানলাম ।

0 comments: