সম্পাদকের কলমে

নারায়ণ দেবনাথ- সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম । ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম । নমস্কার সহ অঙ্কুর রায় সংখ্যার সম্পাদক অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী প্রধান সম্পাদক

লেখা পাঠানোর জন্য

আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com

Total Pageviews

By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.

   ভেসে যাওয়া নৌকা

    দেবার্ঘ্য গাঙ্গুলী


আজ ভোর থেকেই ,মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে ৷ চারিপাশ কেমন যেন ধূসর ধোঁয়ার আবরণে ঢেকে গেছে ৷দেখে মনে হচ্ছে, পুঞ্জ পুঞ্জ মেঘ যেন আকাশের সঙ্গে তীব্র প্রেমের মও নেশায় , একে অপরকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে ৷কফিতে ,সকালের প্রথম সুখের চুমুখ দেওয়ার মুহূর্তেই,আচমকা এক বিদ্যুতের ঝলকানি কাঁচের জানলা ভেদ করে চোখে ঝিলিক মারলো আর চারিদিক কেঁপে উঠলো ভীষন গুরুগম্ভীর , বিকট শব্দে ৷বুঝলাম ,এই শুকনো খটখটে মৃত্তিকা আর কিছুক্ষণের মধ্যেই দীর্ঘকাল বাদে অবগাহনের আনন্দে মেতে উঠবে ৷জীবনের সবচেয়ে সুখের একটি স্মৃতি মনে পড়ে যাওয়ায় পুরো কফিটা শেষ করতে পারলাম না ৷

মনে পড়ে গেল যাকে প্রথম দেখাতেই আমার ভাল লেগে গেছিলো ,যাকে দেখে মনে হয়েছিল তার থেকে বেশি আপন আমি জীবনে কাউকে করতে পারিনি,তাকে এক মুহূর্তের জন্য আমি ছুঁতে পেরেছিলাম এইরকমই এক দিনে ৷স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার সময় যখন অঝোরে বৃষ্টি পড়ছিল, প্রায় সকলেই  বাড়ির দিকে রওনা দিয়ে দিয়েছিল , আমি আর সে আস্তে আস্তে হেঁটে আসছিলাম ৷আচমকা প্রচন্ড জোরে বাজ পড়ায়,  অনামিকা  আমার বুকে মাথা গুঁজে দাঁড়িয়ে থাকে দু মিনিট,যখন সে মুখ তুললো তখন তার চোখ-মুখ ভয় শুকিয়ে গেছে,লজ্জায় তার মুখ লাল হয়ে গেছে ৷ "সরি আমি বাজ পড়লে প্রচন্ড ভয় পাই, এই উপকার আমি কোনদিন ভুলবো না",এই কথা বলে সে ছাতা নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে গেল বাড়ির দিকে ৷ তার থেকে একমাস পর স্কুলের রেজাল্ট বেরিয়ে গেল,তারপরেই এ এক স্কল ও অন্য স্কুল আর দেখা হয়নি অনামিকার সঙ্গে ৷তাকে আমি কোনদিন সামনাসামনি   বলেই উঠতে পারলাম না,যে তাকে আমি আমার জীবনের সবটুকু দিয়ে ভালোবাসতে চেয়েছিলাম ৷

আমার অপরাধ আমি একজন ভীরু পুরুষ , তাই মুখ ফুটে তিনটি শব্দ বলতে তাকে আমি পারলাম না, কিন্তু মনে মনে তাকে আমি বহুবার বলেছি," আমি তোমায় ভালোবাসি "৷আজ প্রায় ন-বছর পর এই রকম  বৃষ্টির দিনে মনে হল তাকে একবার ফোন করি, তার নাম্বার আমার কাছে স্কুল জীবন থেকেই ছিল ঠিকই, কিন্তু আজ অব্দি তাকে একবারও ফোন করার মতো সাহস করে উঠতে পারিনি ৷ফোন করলাম সে ফোন ধরল, গলা চিনলো বলল "কেমন আছিস ?",আমি বললাম,"চলে যাচ্ছে,তোর কি খবর?", উত্তর এলো "ভালো আছি" ৷ ৷সে বলল যে তার একটু আজ তারা আছে, তার স্বামী নাকি আজকে ,তাদের দুজনের জন্য  সিনেমার টিকিট কেটে রেখেছে তারা দুজন মিলে বৃষ্টিকে সঙ্গে করেই হলের দিকে রওনা দিচ্ছে, তাই সে বলল আরেকদিন আমায় ফোন করতে ,তখন  কথা হবে ৷

ওদিক থেকে ফোন রেখে দেওয়ার শব্দ হলো ,আমি চেয়ারে বসলাম ,অঝোরে বৃষ্টি নামলো ,চারিদিক আরো অন্ধকারে ছেয়ে গেল, ফ্রিজ থেকে আগের সপ্তাহে এনে রাখা স্কচ বের করলাম ,এরপর ধীরে ধীরে,নেশায় ডুবে যেতে যেতে, মনের মধ্যে তৈরি করা নৌকা যেটায় একদিন আমি আর অনামিকা শুধু দুজনে চড়ব ভেবেছিলাম নীলনদের বুকে, সেটি কাগজ দিয়ে তৈরি করে বাড়ির পাশের পুকুরের জলে ভাসিয়ে দিলাম।ঝড়ো হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে সেই কাগজের নৌকা চলে গেলে দূরে,বিদ্যুতের তেজে সেই নৌকা ধ্বংস হয়ে গেলেও আজ আমার আর কোন দুঃখ থাকবে না,কারণ এই নৌকায় আজ আমি শুধু একা ৷

0 comments: