সম্পাদকের কলমে

নারায়ণ দেবনাথ- সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম । ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম । নমস্কার সহ অঙ্কুর রায় সংখ্যার সম্পাদক অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী প্রধান সম্পাদক

লেখা পাঠানোর জন্য

আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com

Total Pageviews

28,046
By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.

নস্যি  বিভ্রাট

তানিয়া ভট্টাচার্য 


“যেদিন  থেকে  আমি  নস্যি  নিয়েছি,  সেদিন  থেকে  ক্লাসে  প্রথম  হয়েছি ।”  রমণীস্যার  তর্জনী  আর  বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের  মাঝখানে  একটিপ  নস্যি  নিয়ে  বেশ  দর্প  সহযোগে  কথাটি  বললেন ।  তারপর  দুই  নাকের  ছিদ্রে  বেশ  আড়ম্বরের  সঙ্গে  তা  গুঁজে  দিয়ে  খান  দুই  পেল্লায়  হাঁচি  দিলেন ।  হাতটা  কাঁচিপাড়  ধুতিতে  মুছে  পাঞ্জাবির  খুঁট  দিয়ে  নাক  মুছলেন ।  এ  দৃশ্য  ভাদু  আর  টুসুর  খুব  চেনা ।  রোজই  পড়তে  বসে  দেখে।  চোখের  চশমাটা  হাঁচির  তাড়সে  নাকের  ডগায়  ঝুলে  পড়েছে  রমণীস্যারের।  তিনি  চশমাটা  খুলে  পাঞ্জাবি  দিয়ে  মুছে  আবার  পরলেন ।  বললেন,  “বুঝলে তোমরা ?  প্রথম  হওয়াটা  এমন  কিছু  অসম্ভব  কাজ  নয় ।  কারোর  খেলাধুলো  করলে  মাথা  খোলে,  আমার  নস্যিতে  খুলেছিল ।”

ভাদু,  টুসু  মুখ  চাওয়াচাওয়ি  করল । 

রমণীস্যার  যদিও  তাঁর  নস্য  গ্রহণের  তথ্যকে  নস্যাৎ  করে  প্রথম  হওয়ার  তথ্যটিকেই  প্রতিপাদ্য করেছিলেন,  কিন্তু  বোঝানোর  রকমফেরে  খুদে  ছাত্রছাত্রী  দুটি  বুঝে  ফেলল  অন্যকিছু । 

ভাদু  চোখ  পিটপিট  করে  বলল,  “স্যার  নস্যি  নিতে  আপনার  ভয়  করেনি ?”

ভাদু  ক্লাস  সিক্সের  বেজায়  ফিচেল  ছেলে ।  স্কুলের  মাস্টাররা  তার  প্রশ্নবাণে  সর্বদা  জর্জরিত ।  তার  সব  প্রশ্ন  সবসময়  ফেলে  দেওয়ার  মত  হয়ও  না ।  কিন্তু  বেখাপ্পা  প্রশ্ন,  সিলেবাসের  বাইরে  গিয়ে  প্রশ্ন,  এক্তিয়ারের  বাইরে  গিয়ে  প্রশ্ন  তার  মাথায়  একটু  বেশীই  খেলে ।  তাই  নস্যি  নিতে  রমণীস্যার  ভয়  পেতেন  কিনা  এমন  প্রশ্ন  তার  পক্ষে  করা  খুবই  সম্ভব । 

রমণীস্যার  ভাদুর  আপাত  মায়াময়  মুখটার  দিকে  তাকিয়ে  গলায়  অল্প  স্নেহ  টেনে  এনে  বললেন,  “দূর  ক্ষ্যাপা !  ভয়  পাব  কেন ?  আমার  বাপ,  তার  বাপ,  তার  বাপ,  গুষ্টিসুদ্ধ  সক্কলে  ঢালাও  নস্যি  নিতেন ।  এ  তো  খুব  সোজা  ব্যাপার ।  ভগ্নাংশ,  আসন্নমানের  চেয়ে  ঢের  সোজা ।”

-“সত্যি ?”  টুসুর  চোখ  জুলজুল  করে  উঠল ।  সহজ  সরল  মেয়েটি  সবকিছুতেই  বিশ্বাস  মাখিয়ে  প্রশ্ন  করে ।  বয়সে  ভাদুর  চেয়ে  এক  বছরের  বড়  হলে  কি  হবে,  উল্টে  ভাদুই  টুসুকে  শাসনে  রাখে ।  বেলের  মোরব্বা  বড়মার  বয়াম  থেকে  টুসু  চুরি  করলেও  কোনদিন  বড়  টুকরোটা  পায়নি ।  বরাবর  ভাদু  বড়  টুকরোটা  নিয়ে  ছোটটা  তাকে  দিয়েছে ।  তখনও  বিশ্বাস  মাখিয়ে  ও  প্রশ্ন  করেছে,  “আমাকে  বড়টা  দিবি  না ?”  উল্টে  ভাদু  বলেছে,  “কাল  তুই  তিনবার  হেঁচেছিলি  না  টুসু ?  আমি  পষ্ট  শুনেছিলাম ।  জানিস  সর্দি  লাগলে  বেলের  মোরব্বা  খেতে  নেই ।  তাও  তো  তোকে  এক  টুকরো  দিলাম ।  এখন  এটাই  খা ।  পরেরবার  বড়টা  নিস ।”  বলাই  বাহুল্য  সেই  পরেরবার  কোন  বারই  আসেনি ।

টুসুর  সেই  সরল  সোজা  প্রশ্নের  মুখে  পড়ে  রমণীস্যার  বললেন, “সত্যি  নয়  তো  কি !  আমিই  কি  ছাই  পড়া  পারতুম  না  কি !  বাবা  যে  তাঁর  সাড়ে  তেরোটা  ছড়ি  আমার  পিঠে  ভেঙেছিলেন  সে  কি  এমনি  এমনি ?”

-“সাড়ে  তেরোটা  ছড়ি ?  সে  কিরকম  ব্যাপার ?”  ভাদু  কৌতূহলী  হল ।

-“চোদ্দ  নম্বর  ছড়িটার  কোণা  ভেঙেছিলেন  প্রথমে ।  পুরো  ছড়িটাই  প্রায়  আস্ত  ছিল ।  সেটাকেই  অর্ধেক  ধরেছি ।”

-“কিন্তু  স্যার,  ওই  ছড়িটাকে  ঠিক  অর্ধেক  ধরা  তো  উচিৎ  হয়নি ।”  ভাদু  ফোড়ন  কাটল ।  “সম্পূর্ণ  ছড়িটার  মাপ  পেলে,  আর  ভাঙা  টুকরোটার  মাপ  জানলে  একটা  আসন্নমান  হিসেব  করতে  পারতুম ।  যাক  গে,   তারপর  কি  হল ?”

রমণীস্যার  কটমটিয়ে  তাকালেন  ভাদুর  দিকে ।  “গতবারের  মাসিক  পরীক্ষায়  একটাও  আসন্নমানের  অঙ্ক  তোর  মেলেনি,  না  ভাদু ?”  বেশ  জোর  দিয়ে  বললেন  তিনি । 

ভাদু  ফিচেল  হেসে  মাথা  নিচু  করল ।

-“আপনার  খুব  লেগেছিল,  তাই  না  স্যার ?”  টুসু  বলল ।

টুসুর  মনে  ভীষণ  মায়া ।  ভাদু  ছাড়া  সে  কক্ষনো  কাউকে  মারে  না ।  কিছুদিন  আগেই  রাঙাকাকিমা  হাত  ভর্তি  কাচের  চুড়ি  কিনে  দিয়েছিলেন  ওকে ।  লাল,  কালো,  সাদা,  সবুজ  মেশানো  দু’ডজন  বাহারি  রেশমি  চুড়ি ।  একডজন  হাতে  পরে  আরেকডজন  মায়ের  আলতা  সিঁদুরের  বাক্সে  তুলে  রেখেছিল  টুসু ।  ভাদু  কোন  ফাঁকে  ওই  একডজন  চুড়ি  শান  বাঁধানো  মেঝেতে  সাজিয়ে  পাথর  মেরে  মেরে  টিপ  প্র্যাকটিস  করছিল  কেউ  খেয়াল  করেনি ।  টুসু  দেখতে  পেয়ে  তীব্র  প্রতিবাদ  জানায় । কিন্তু  ততক্ষণে  তার  আধা  ডজনেরও  বেশী  চুড়ি  ভেঙে  গেছে ।  ছুটে  এসে  ভাদুর  মাথার  চুল  ধরে  ঝাঁকিয়ে  দেয়  ও ।  ভাদুও  পাল্টা  আক্রমণ  চালায় ।  টুসুর  কাচের  চুড়ি  পরা  হাত  সজোরে  চেপে  ধরে ।  হাতের  চাপে  পলকা  কাচের  চুড়ি  ঝুরঝুরিয়ে  ভেঙে  যায় ।  একটুকরো  ভাঙা  কাচ  দিয়ে  টুসুর  হাত  ফালাফালাও  হয়ে  যায় ।  খুব  কেঁদেছিল  টুসু ।  মায়ের  হাতে  যদিও  ভাদু  এরপর  বেধড়ক  ঠ্যাঙানি  খেয়েছিল,  কিন্তু  তাতে  তো  আর  টুসুর  ব্যথা  কমেনি,  কাচের  চুড়িও  জোড়া  লাগেনি । 

ডান  হাত  দিয়ে  বাঁ  হাতের  শুকিয়ে  যাওয়া  ক্ষতস্থানের  ওপর  হাত  বোলাল  ও ।  রমণীস্যার  টুসুর  দিকে  তাকালেন ।  ওর  বড়  বড়  সরোবরের  মত  আয়ত  চোখের  কোণ  ঘেঁষে  একটা  বড়সড়  জলের  ফোঁটা  যেই  না  ভেসে  উঠেছে  অমনি  রমণীস্যার  বলে  উঠলেন,  “ব্যথা  কেন  লাগবে  না  মামনি,  খুব  লেগেছিল,  বেজায়  লেগেছিল ।  কিন্তু  এখন  আর  ব্যথা  নেই ।”

-“তারপর  কি  হল ?”  ভাদু  অধৈর্য  হয়ে  উঠল । 

-“তারপর  একদিন  কি  জানি  কেন,  খুব  নস্যি  নেবার  শখ  হল ।  ঠাকুর্দার  নস্যির  ডিবে  থেকে  একচিমটি  নস্যি  নিয়ে  দিলাম  টান ।  কায়দা  দেখাই  ছিল ।  বাবা,  ঠাকুর্দাকে  রোজ  দেখতাম  নস্যি  নিতে ।”  রমণীস্যার  বললেন ।

-“তারপর ?”  ভাদু  জিজ্ঞাসা  করল ।

-“তারপর  আর  কি !  মাথাটা  এক  ঝটকায়  যেন  সাদা  হয়ে  গেল ।  অ্যাক্টিভ  ভয়েস,  প্যাসিভ  ভয়েস,  সন্ধি,  সমাস,  জীবনানন্দ,  বঙ্কিমচন্দ্র,  আসন্নমান,  সিঁড়িভাঙ্গা,  কম্প্রিহেনশান,  ধাতুরূপ,  শব্দরূপ  সব  জলবৎ  তরলং  হয়ে  গেল ।  চাইকি  একদিনে  আস্ত  ইলিয়াডও  পড়ে  ফেললাম ।”

-“তারপর ?  তারপর ?”  ভাদু,  টুসু  একসঙ্গে  ভীষণ  কৌতূহলী  হয়ে  উঠল ।  ভাদুর  আসন্নমান  কিছুতেই  আয়ত্ত  হয়না ।  আগের  পরীক্ষার  মত  আসন্ন  পরীক্ষায়ও  আসন্নমানকে  নিয়ে  ও  ভয়ে  ভয়ে  আছে ।  টুসুর  অ্যাক্টিভ  ভয়েস,  প্যাসিভ  ভয়েসের  প্রশ্নে  সব  গোলমাল  হয়ে  যায় ।  ওদের  চোখের  সামনে  সাফল্যের  চাবিকাঠিটা  যেন  রমণীস্যার  দুলিয়ে  দিলেন ।

-“তারপর  আর  কিছুই  না ।  তারপর  থেকে  প্রতিবারই  ক্লাসে  প্রথম  হতে  লাগলাম।”  রমণীস্যার  বললেন ।  একটু  থেমে  আবার  বললেন,  “মোদ্দা  কথা  হল  ক্লাসে  প্রথম  হওয়াটা  কোন  বড়  ব্যাপারই  নয় । প্রতি  বছর  কেউ  না  কেউ  হচ্ছে ।যে  কেউ  যখন  তখন  হয়ে  যেতে  পারে ।  তোমরা  চেষ্টা  কর ।  তোমরাও  পারবে।”

ভাদু  ফিসফিসিয়ে  বলল, “টুসু,  তুই  বড়,  তুই  চেষ্টা  কর ।  তুই  যদি  পারিস,  তবে  আমি  চেষ্টা  করব ।”  টুসু  চোখ  মটকিয়ে  ভাদুকে  চুপ  করতে  বলল ।

পড়াশুনো  আর  কয়েক  কদম  এগোতে  না  এগোতেই  রাঙাকাকু  ঘরে  এলেন ।  নাহারকাটিয়ার  সক্কলে  একবাক্যে  বাঙালি  ডাক্তারবাবুকে  চেনে ।  অবশ্য  আসামের  এই  আধা  শহর  আধা  গ্রামটিতে  ভালো  ডাক্তার  ক’জনই  বা  আছে  ডাক্তার  নীহাররঞ্জন  বটব্যালের  যেমন  প্রতাপ  তেমনি  দরাজ  দিল ।  অত্যন্ত  সুদক্ষ  ডাক্তার  বলে  সব  মহলেই  তার  বেজায়  খাতির । রাঙাকাকু  ঘরে  ঢুকেই  গুরুগম্ভীর  গলায়  জিজ্ঞাসা  করলেন,  “ভাদু  টুসুর  লেখাপড়া  কেমন  চলছে  মাস্টারমশাই ?”

রোগাভোগা  রমণীস্যার  বরাবরই  রাঙাকাকুর  সামনে  থতমত  খেয়ে  ফেলেন ।  আজও  ঢোঁক  গিললেন ।  তারপর  নাকের  ডগাটা  একবার  চুলকে  নিয়ে  বললেন,  “ভালোই  তো ।  ভালোই  পড়ছে ।”

-“হুঃ”,  মুখ  দিয়ে  একটা  বিরক্তিসূচক  শব্দ  করে  রাঙাকাকু  বললেন,  “ভালোই  যদি  পড়ছে  তবে  নম্বর  বাড়ছে  না  কেন ?  দেখুন  মাস্টারমশাই,  আমার  দাদা,  মানে  ভাদু  টুসুর  বাবা  আমার  হাতে  ওদের  রেখে  বর্ডারে  গেছেন  ডাক্তারি  করতে। তাই  বুঝতেই  পারছেন  আমার  কতটা  দায়িত্ব ।  আজ  যদি  ওরা  লেখাপড়া  ভালো  করে  না  করে  তাহলে  দাদা  ফিরলে  দাদাকে  কি  জবাব  দেব ?”

-“চিন্তা  করবেন  না  ডাক্তারবাবু ।  ওরা  এবার  ভালো  ফল  করবেই ।”  মাথাটা  একটু  ডানদিকে  হেলিয়ে  রমণীস্যার  বললেন । 

-“তা  ভালো ।  পড়ান,  পড়ান ।  মন  দিয়ে  পড়ান ।”  রাঙাকাকু  বললেন ।

রমণীস্যারকে  কথা  বলতে  ব্যস্ত  দেখে  ভাদু  টুসুর  দিকে  চোখ  টিপে  ইশারা  করল।  টুসু  এই  ইশারা  বিলক্ষণ  বোঝে ।  ভাদুর  মাথায়  যখন  কোন  দুষ্টু  বুদ্ধি  খেলে  তখন  চোখ  টিপে  আগে  টুসুকে  সাবধান  করে  যেন  আগ  বাড়িয়ে  ও  কিছু  না  বলে ।  মাথা  নেড়ে  ও  সায়  দিল । ভাদু  অঙ্ককষার  খাতাটাকে  সুযোগ  বুঝে  টেবিলের  ওপর  রাখা  রমণীস্যারের  নস্যির  ডিবের  ওপর  ফেলল ।  তারপর  আস্তে  আস্তে  খাতাটাকে  টুসুর  দিকে  টেনে  এনে  টুক  করে  টুসুর  কোঁচড়ে  ডিবেটাকে 
ফেলল ।  টুসু  যেন  ওঁত  পেতেই  ছিল ।  চিলের  মত  ছোঁ  মেরে  চক্ষের  পলক  ফেলার  আগেই  ফ্রকের  পকেটে  চালান  করে  দিল  ও ।  তারপর  ভালো  মুখে  সারা  সন্ধ্যে  “হে  বঙ্গ,  ভাণ্ডারে  তব  বিবিধ  রতন”  পড়ে  কাটিয়ে  দিল ।

রাতে  ভাদু  টুসু  দুজনেরই  ঘুম  এল  না ।  রোজ  যেখানে  সন্ধ্যে  হওয়ার  আগেই  ঢুলতে  থাকে,  আজ  রাত  বারোটা  অবধি  জেগে  জেগে  সকলের  ঘুমনোর  অপেক্ষা  করতে  লাগল ।  আর  মাত্র  কয়েকটা  মিনিট ।  তারপর  কাল  থেকে  ওরা  দুজনেই  নিজের  নিজের  ক্লাসের  ফার্স্ট  বয়,  ফার্স্ট  গার্ল  হয়ে  যাবে  এই  চিন্তায়  বেজায়  উত্তেজিত  হয়ে  পড়ল ।  বড়মা  ঘুমোলে  দুজনে  দুপাশ  থেকে  নেমে  চুপিচুপি  বারান্দায়  এল ।  ইংরাজি  ‘এল’  আকৃতির  বারান্দার  একপ্রান্তে  রান্নাঘর ।  নিঃশব্দে  শিকল  খুলে  ওরা  রান্না  ঘরে  এসে  আলো  জ্বাললো,  তারপর  দরজা  ভেজিয়ে  দিল।  পকেট  থেকে  টুসু  রুপোলী  রঙের  নস্যির  ডিবেটা  বের  করে  আলোতে  ধরল ।  ডিবে  তো  নয়,  যেন  ভাদু  টুসুর  ভাগ্য  ঝকমকিয়ে  উঠল ।  নস্যি  নিতে  আর  কোন  বাধা  নেই ।  কায়দা  তো  দেখাই  আছে ।  রোজ  রমণীস্যারকে  দেখে  ওরা ।

 

 সারা  দিনমানে  এককড়ার  দাঁও  জোটেনি  হারানের ।  আজ  হাটবারেও  যদি  দাঁও  না  জোটে  তাহলে  যে  তার  বাপ-পিতেমোর  ব্যবসাতে  লালবাতি  জ্বলবে  আর  ক’দিনের  মধ্যেই  তাতে  আর  আশ্চর্যের  কি  আছে ! হারান  ছোট্ট  করে  একটা  নিঃশ্বাস  ফেলল ।  সে  চোর  হতে  পারে,  তবে  জাত চোর ।  শিল্পীও  বলা  যায় ।  বাতাসের  মত  লোকের  পাশ  দিয়ে  যখন  বয়ে  যায়  পাঞ্জাবির  পকেটে  মানিব্যাগ  যেমনকে  তেমন  থাকে,  শুধু  টাকাগুলো  গায়েব  হয়ে  যায় ।  মহিলাদের  গলার  চেন  এমন  নিঃশব্দে  খুলে  নিতে  পারে  যে  একবেলা  মহিলারা  বুঝতেই  পারে  না  তাদের  গলা  খালি ।  কানের  ঝুমকো  এমন  নিঃসাড়ে  ঝেঁপে  দেয়  যে  মেয়েরা  মনে  করে  ‘আজ  বোধহয়  দুল  পরিইনি’ ।  এ  হেন  হারানেরও  আজকাল  দাঁও  জুটছে  না ।  জুটবে  কি  করে ?  যুগের  কেতা  যে  বন-জঙ্গলকেও  ছাড়ছে  না ।  পোড়ামুখোরা  আজকাল  যে  কেউ  টাকা  পয়সা  নিয়ে  বেরই  হয়  না ।  ব্যাঙ্ক  থেকে  কতগুলো  ছাইপাঁশ  ডেবিট  কার্ড  না  ক্রেডিট  কার্ড  বের  করেছে,  ওই  দিয়েই  বাজার  হচ্ছে,  দোকান  হচ্ছে ।  আর  যেখানে  অনামুখো  কার্ড  চলে  না  সেখানে  মোবাইল  ফোন  দিয়ে  টাকা  পাঠাচ্ছে ।  মোবাইল  সটকালেও  চলত ।  কিন্তু  মোবাইল  তো  কেউ  পকেটেই  রাখেনা ।  প্রাণ  ভোমরার  মত  হাতে  চেপে  রাখে ।  হাতের  মুঠোর  ভেতর  থেকে  কিভাবে  জিনিস  গায়েব  করতে  হয়  ঠাকুর্দা  জানত  বটে ।  কিন্তু  হারান  কোনদিনই  শিখে  উঠতে  পারেনি ।   শিখবে  কি  করে?  হারানের  খুব  ছোটবেলায়ই  তো  ঠাকুর্দা  দেহ  রাখল ।  তার  বাপ  খুব  একটা  উজ্জ্বল  চোর  ছিল  না ।  মাঝেমাঝেই  ধরা  পড়ে  যেত ।  কপালে  হাটুরে  মারও  জুটত ।  গায়ে  ব্যথা  নিয়ে  কয়েকদিন  ব্যবসায়  বেরত  না,  বাড়িতেই  থাকত ।  তখন  হারানকে  তার  বাপের  গল্প  শোনাত ।  ছোট্ট  হারান  চোখের  পলক  না  ফেলে  সেসব  গল্প  শুনত  আর  ভাবত  কবে  ঠাকুর্দার  মত  এলেমদার  চোর  হবে ।  ছোট  থেকেই  অনেক  দাঁওপ্যাঁচ  হারান  নিজে  নিজে  শিখেছে,  বাপকেও  শিখিয়েছে ।  বাপ  তার  গর্ব  ভরে  বলত  “তুই  একদম  তোর  ঠাকুর্দার  মত ।  জাত  শিল্পী ।”

সে  সব  কতদিন  আগেকার  কথা ।  ছোট্ট  একটা  নিঃশ্বাস  ফেলে  হারান  নীহার  ডাক্তারের  বাড়ির  দিকে  এগোল ।  সামনের  সোমবার  থেকে  দুগ্গাপুজো  শুরু ।  মানে  হাতে  আর  তিনটে  মোটে  দিন ।  ডাক্তারবাবুর  বাড়িতে  পুজো  হয় ।  হারানের  খোঁচর  নীলমণি  সারাদিন  তক্কে  তক্কে  থেকে  দেখেছে  ডাক্তারবাবু  আজ  ব্যাঙ্ক  থেকে  দুগ্গার  গয়নাগাঁটি  এনে  বাসায়  রেখেছেন ।  ঠাকুরঘরের  সিন্দুকে  সব  গয়না  ভরে  রেখে  মোটা  আধমণি  একটা  তালা  ঝুলিয়েছেন ।  চাবি  তাঁর  মায়ের  আঁচলে  বাঁধা ।  “নীলমণিটা  কাজের  ছেলে ।  ওকে  এবার  ভালো  করে  ব্যবসার  তালিম  দিতে  হবে”  ভেবে  হারান  ডাক্তার  নীহাররঞ্জন  বটব্যালের  বাড়ির  সামনে  এসে  দাঁড়াল ।  দুর্গার  গয়না  পেতে  হলে  প্রথমে  বাড়ির  ভেতরে  ঢুকতে  হবে ।  মাঠের  সমান  উঠোন  পেরিয়ে  লোহার  গ্রিল  খুলে  প্রথমে  ডাক্তারবাবুর  মায়ের  ঘরে  ঢুকে  তাঁর  আঁচল  থেকে  চাবি  হাতাতে  হবে ।  কাজটা  সোজা  নয়,  কারণ  বাড়ির  বাচ্চাদুটো  ওঁর  সাথেই  শোয় ।  ওদের  ঘুম  বেজায়  পাতলা ।  ওদের  ঘুম  না  ভাঙিয়ে  কাজটা  করতে  হবে ।  তারপর  ঠাকুরঘরে  ঢুকে  সিন্দুক  খুলে  গয়না  সটকাতে  হবে ।  বিস্তর  কাজ ।  বাড়ির  মানচিত্রটা  নীলমণি  বেড়ে  বানিয়ে  দিয়েছে।  পেটে  ব্যথার  নাটক  করে  বিকেলবেলা  নীহার  ডাক্তারের  কাছ  থেকে  ওষুধ  আনতে  গিয়ে  পাঁচ  মিনিটে  জরিপ  করে  নিয়েছে  পুরো  বাড়িটা ।  সেই  হিসেবে  ছবি  এঁকে  হারানকে  বুঝিয়ে  দিয়েছে  কোন  দিক  দিয়ে  এগোনো  উচিৎ ।  মনে  মনে  কার্তিককে  স্মরণ  করে  হারান  সেই  মত  আমগাছটার  সামনে  এল ।  এই  আমগাছটার  একটা  ডাল  রান্নাঘরের  ছাতে  এসে  পড়েছে ।  ছাতের  দরজাটা  যদি  একবার  খুলে  ফেলা  যায়  তাহলে  তরতরিয়ে  বারান্দায়  নেমে  আসা  যাবে । আর  বারান্দায়  নামলেই  তো  অনেকটা  কাজ  এগিয়ে  গেল ।  হারান  উদ্যম  নিয়ে  আমগাছের  ডাল  বেয়ে  আরামসে  রান্নাঘরের  ছাতে  নিঃসাড়ে  নেমে  পড়ল ।  নাহারকাটিয়ায়  পুজোর  আগেই  ঠাণ্ডা  পড়তে  শুরু  করে  দেয় ।  তাই  জানালা  দরজা  সব  বন্ধ ।  একদিকে  এটা  হারানের  জন্য  সুবিধেরই ।  এক  ঘরের  খুটখাট  শব্দ  অন্য  ঘরে  যাবে  না ।  চক্ষের  পলকে  ও  সিঁড়ির  দরজার  খিল  খুলে  ফেলল ।  আজকাল  অনেকে  ঘুমপাড়ানি  ওষুধ  ছিটিয়ে  চুরি  করে ।  হারান  সে  সবের  বিপক্ষে ।  সে  চুরির  সময়  কাউকে  অজ্ঞান  করায়  বিশ্বাসী  নয় ।  নিজের  স্বার্থের  জন্য  অন্যের  স্বাস্থ্যকে  আঘাত  করতে  তার  মন  চায়  না ।  টাকা  পয়সা  মানুষ  আবার  কামিয়ে  নিতে  পারে,  কিন্তু  স্বাস্থ্য  একবার  গেলে  ফিরে  পাওয়া  কঠিন ।  তাছাড়া  তার  মত  গুণী  শিল্পীও  যদি  আর  পাঁচজনের  মত  ছোট  কাজ  করে,  সহজ  কাজ  করে  তবে  তাকে  আর  শিল্পী  বলে  মানবে  কে ?  বারান্দায়  নেমে  সোজা  ডাক্তারবাবুর  মায়ের  ঘরের  সামনে  গিয়ে  দাঁড়াল  হারান ।  আলতো  করে  দরজা  ঠেলতেই  দরজা  খুলে  গেল ।  একটু  চমকালো  ও ।  এভাবে  তো  দরজা  খুলে  যাওয়ার  কথা  নয় ।  ডাক্তারবাবুর  মা  রীতিমত  সন্দেহপ্রবণ  বলে  সারা  নাহারকাটিয়া  একবাক্যে  জানে ।  পাশের  বাড়িতে  দুপুরবেলা  কেউ  যদি  বলে  “বলাই  ফিরলি  নাকি ?”,  তিনি  সন্দেহ  করেন  বলাইয়ের  নির্ঘাত  শরীর  খারাপ  হয়েছে ।  আকাশ  দিয়ে  দুটো  কাক  পরপর  উড়ে  গেলে  তাঁর  সন্দেহ  হয়  নির্ঘাত  কেউ  ভাত  ফেলেছে  আশেপাশে ।  এ  হেন  মানুষ  দরজা  খুলে  ঘুমোবেন  বলে  বিশ্বাস  হয়না  হারানের ।  তার  মানে  কেউ  নিশ্চয়ই  উঠেছে ।  উঁকি  মেরে  কলঘর  দেখে  হারান ।  দরজা  হাট  করে  খোলা  কলঘরের,  আলোও  নেভানো ।  ডিঙি  মেরে  বারান্দার  অপর  প্রান্তটা  দেখে  সে ।  রান্নাঘরের  দরজা  বন্ধ ।  কিন্তু  তলা  দিয়ে  খুব  সরু  একটা  আলোর  রেখ  দেখতে  পায়  হারান ।  ‘এ  তো  ভালো  কথা  নয়’,  মনে  মনে  ভাবে  ও ।  বিনিদ্রিত  গেরস্ত  বাড়িতে  রাত-বিরেতে  আলো  আসবে  কোথা  থেকে ?  কে  জ্বালবে ? 

হারান  রান্নাঘরের  দরজায়  কান  পাতল ।

“ডাক্তারবাবু  একটু  দরজাটা  খুলুন  না ।”  রমণীস্যার  জোরে  জোরে  দরজায়  ধাক্কা  দিতে  দিতে  তারস্বরে  বললেন ।  মাথা  ব্যথায়  তাঁর  প্রায়  পাগল  পাগল  অবস্থা ।  সেই  সন্ধ্যেবেলায়  নস্যি  নিয়েছিলেন ।  তারপর  থেকে  নস্যির  ডিবে  গায়েব ।  ভাদু  টুসুকে  পড়িয়ে  বাড়ি  ফেরার  পর  থেকে  আর  ডিবেটা  পাচ্ছেন  না ।  তাঁর  স্পষ্ট  মনে  আছে  টেবিলের  ওপর  রেখেছিলেন ।  তারপর  ডাক্তারবাবুর  সাথে  কথা  বলছিলেন ।  তারপর  আর  মনে  নেই ।  হিসেব  মত  ডিবেটা  তাঁর  পাঞ্জাবির  পকেটে  থাকার  কথা ।  কিন্তু  না,  নেই  তো ।  টেবিলের  ওপর  ছিল  না  যখন  তখন  স্বাভাবিকভাবেই  তিনি  নিশ্চয়ই  পকেটে  ঢুকিয়েছিলেন,  এ  কথাটাই  তিনি  ভেবেছেন ।  কিন্তু  যত  সময়  পার  হয়েছে  তত  মনে  হয়েছে  যে  নস্যির  ডিবে  এই  বাড়িতেই  আছে ।  ভাবতে  ভাবতে  একসময়  যখন  তাঁর  সব  ভাবনা  থেমে  গেছে,  তখন  তিনি  থাকতে  না  পেরে  ছুটে  এসেছেন  ভাদু  টুসুর বাড়িতে । দিনের  আলোতে  পাড়ার  যে  কুকুরগুলো  আলসেমি  করে  এধারে  ওধারে  পড়ে  থাকে,  রাতের  অন্ধকারের  ওগুলোই  যেন  এক  একটা  বাঘ ।  বিস্কুট  খাইয়ে  ওদের  কাবু  করতে  হারান  জানলেও  রমণীস্যার  জানেন  না ।  তাই  তাঁকে  ওভাবে  চেঁচাতে  দেখে  কুকুরগুলোও  সদর  দরজার  সামনে  জমা  হয়ে  গিয়ে  তারস্বরে  চেঁচাতে  লাগল ।  এমন  বিদঘুটে  আওয়াজে  কি  আর  কেউ  ঘুমিয়ে  থাকতে  পারে ?  সারা  বাড়ির  আলো  জ্বালিয়ে  সকলে  বেরিয়ে  এল  যে  যার  ঘর  থেকে ।  আশপাশের  বাড়ি  থেকে  বেরিয়ে  এল  প্রতিবেশীরা ।  রামকানাইবাবুর  বাবা  সন্ধ্যেবেলা  থেকেই  আফিম  খেয়ে  ঢোলেন,  তিনিও  উঠে  এলেন । চারদিকের  গোলযোগে  যখন  প্রায়  হারানের  চক্ষু  চড়কগাছ  তখন  উপায়ান্তর  না  পেয়ে  রান্নাঘরের  দরজা  ঠেলে  ভেতরে  ঢুকে  চমকে  উঠল  ও ।  ভাদু  টুসু  তখন  দু’জনে  দু’টিপ  নস্যি  নিয়ে  সবেমাত্র  নাকে  গুঁজেছে ।

-“হ্যাঁচ্চো ।”

-“হ্যাঁচ্চো ।”

-“হ্যাঁচ্চো ।”

-“হ্যাঁচ্চো ।”

ক্রমাগত  “হ্যাঁচ্চো”  “হ্যাঁচ্চো”  রবে  সারাবাড়িতে  সাড়া  পড়ে  গেল ।  রাঙাকাকু  ভীমবেগে  রান্নাঘরে  পৌঁছে  দেখেন  হাঁচতে  হাঁচতে  ভাদু  আর  টুসুর  তখন  প্রায়  দমবন্ধ  হওয়ার  জোগাড় ।  ওদের  সামনে  ধরা  পড়ে  গিয়ে  হারান  চোর  তখন  খাবি  খাচ্ছে ।  এর  মধ্যে  রাঙাকাকিমা  গিয়ে  সদর  দরজা  খুলে  দিতেই  রমণীস্যার  ঊর্ধ্বশ্বাসে  বাড়ির  ভেতর  ঢুকলেন ।  হাঁচির  আওয়াজে  ততক্ষণে  তাঁর  কাছে  এটুকু  অন্তত  পরিষ্কার  হয়ে  গেছে  যে  তাঁর  নস্যির  ডিবে  রান্নাঘরেই  আছে ।  রাঙাকাকু  হারানের  ঘাড়টিকে  নিজের  থাবার  মধ্যে  বেশ  যুৎ  করে  ধরে  বললেন,  “এটাকে  আজ  পুলিশে  দেব ।”  হারান  থরথরিয়ে  কাঁপতে  কাঁপতে  বলল,  “ছাড়ান  দেন  বাবু ।  আর  হবে  না ।”

-“আর  হবে  না  কি  বলছ  হে !  তোমাকে  সেই  লায়েকই  ছাড়বে  না  পুলিশ ।”  রাঙাকাকু  বললেন ।

বড়মা  আর  মা  এগিয়ে  গিয়ে  ভাদু  আর  টুসুকে  ধরতে  গেলে  রাঙাকাকু  হুঙ্কার  দিয়ে  বললেন,  “কেউ  ওদের  ধরবে  না ।  ওরা  হাঁচতে  থাকুক ।  এটাই  ওদের  শাস্তি।  সারাজীবন  যেন  মনে  থাকে  নস্যি  চুরির  ফল ।”

রমণীস্যার  রান্নাঘরে  ঢুকে  মাটিতে  নস্যির  ডিবেকে  পড়ে  থাকতে  দেখে  লাফিয়ে  গিয়ে  তুলে  নিলেন ।  তারপর  একটিপ  নস্যি  দুই  নাকের  ছিদ্রতে  গুঁজে  বেদম  জোরে  হেঁচে  বললেন  “আঃ ।”  শব্দে  রাঙাকাকু  অবধি  চমকে  উঠলেন ।  আর  সেই  ফাঁকে  হারান  তাঁর  হাত  ছাড়িয়ে  একলাফে  বারান্দায়,  দ্বিতীয়  লাফে  সদর  দরজায়,  আর  তৃতীয়  লাফে  রাস্তায়  পৌঁছে  গেল ।  রাস্তার  কুকুরগুলো  কতদূর  অবধি  হারানের  পিছু  নিল  জানা  গেল  না ।  তবে  তারপর  থেকে  হারানকে  আর  কোনদিন  নাহারকাটিয়াতে  দেখা  যায়নি ।  রামকানাইবাবু  কাশীতে  গিয়ে  হারানের  মত  দেখতে  একজন  সাধুকে  দেখেছিলেন ।  আশপাশের  লোকদের  থেকে  নাম  শুনেছিলেন  ‘মৌনীবাবা’।  কথা  বলেন  না ।  শুধু  নস্যি  টানেন ।

 

0 comments: