সম্পাদকের কলমে
লেখা পাঠানোর জন্য
Total Pageviews
অঙ্কনে- অমিত দাস |
সত্যজিত ও পন্থা
ড. আবীর চট্টোপাধ্যায়
বাঙালী তথা ভারতীয় মাত্রেই নানা সমস্যাক্লিষ্ট জীবনে লড়াই করতে করতে কতগুলি হাতিয়ার নিজেরাই বানিয়ে নিয়েছেন যার মধ্যে বিশেষ একটি হলো পন্থা জানার বাসনা অথবা একটা প্রবল উদ্যোগ। এই উদ্যোগ ততক্ষণ চলতে থাকে যতক্ষণ সেই ব্যক্তি স্বীকৃতির নিরিখে ধরাছোঁয়ার বাইরে না চলে যান। কেউ একটা কাজ শুরু করছেন অথবা বেশ কয়েকটি কাজ ইতিমধ্যেই করে ফেলেছেন, এবং তাঁকে কোনো না কোনোভাবে আলোচনায় আনতেই হচ্ছে – এমন পরিস্থিতিতে আগে যেটা জানা চাই তা হলো তিনি কোন ‘পন্থী’। পারিবারিকভাবে তিনি কোন পন্থী – তিনি কি নিজে সেটা ফলো করেন – তাঁর কাজগুলিকে পন্থার বিচারে কোনদিকে ফেলা যায় অথবা ‘ওহ উনি তো ওইদিকে’ এইসব। অর্থাৎ তিনি যেই হোন না কেন, অথবা যত মেধাভিত্তিক কাজই করে থাকুন না কেন, সমর্থনের নিরিখে পন্থা ও পন্থী অস্ত্রে আগে তাকে নিয়ে আসা এক লেভেল’এ – তার পরে কথা, আলোচনা, সমালোচনা সব হবে। এবং এর পরেও আলোচনার শুরুতে পন্থা-বিচার করতে গিয়ে সমর্থনের মাত্রায় আগে মেপে দেখা হবে – অর্থাৎ পন্থী হলেও প্রকাশ্যে কতটা সমর্থন করেছেন বা একেবারে বিশেষ প্রশংসা করে করে কথা বলেছেন সেটা আগে খুঁজে পেতে দেখা হবে তার পর অন্য কথা।
এমন কঠিন পথে সত্যজিতের কী বিচার হয়েছিল সেটা আজ বা সমকালীনতা দিয়ে বিচার করলে হবে না – অস্কার পাওয়ার পর থেকে তিনি ধরাছোঁয়ার উর্ধ্বে। তিনিই শেষ কথা এমন একটা সাধারণ জনজীবনে প্রতিষ্ঠিত, একথা বলাই বাহুল্য। কিন্তু জীবনের প্রতিপথে তাঁর জীবন এমনটা ছিল না। এ প্রসঙ্গে বলে রাখি, এই আলোচনার পথ এমনও হবে না যে গোটা জীবনে তিনিই শ্বাশ্বত আর বাকি বিচারকরা সবাই ভুল – অর্থাৎ ঠিক-ভুল এর বাইনারি বিরোধিতা ছেড়ে এই নিবন্ধ অন্য কথা বলতে চেষ্টা করবে। কিন্তু বাঙালী জনজীবনে সত্যজিতের পন্থা নিয়ে বারংবার আলোচনা হয়েছে অতীতে।
গতশতকের ষাট-সত্তর দশকের অশান্ত বাংলায় তাঁর বিচরণ কোন পন্থার নিকটে এ নিয়ে প্রবল আলোচনা চলেছিল। মুখ্যত যে ক’টি ছবি নিয়ে এই জাতীয় আলোচনার অন্ত ছিল না সেগুলি হলো ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ (১৯৭০), প্রতিদ্বন্দ্বী (১৯৭০), সীমাবদ্ধ (১৯৭১), জনঅরণ্য (১৯৭৫)। অবশ্য এর আগে ১৯৬৯-এ ‘গুপী গাইন
বাঘা বাইন’ ছবিতে তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠানবিরোধী চরিত্র বা অবস্থান স্পষ্ট করে
দিয়েছিলেন। আবার ১৯৮০-তে হীরক
রাজার দেশে ছবিতে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস কেমনতরো চেহারা নিতে পারে বা দেশীয় ক্ষেত্রে
ফ্যাসিবাদী চেহারাটা কেমন হতে পারে তার এক প্রত্যক্ষ চেহারা ফুটিয়ে তুলেছিলেন। শুধু তাই নয়, রাষ্ট্রের চাপে
জনগণের নাভিশ্বাস আর সর্বোপরি সৈন্যবাহিনীর শ্রেণীচরিত্র আর ক্ষুধাচরিত্রের মধ্যে
যে কোনো পার্থক্য নেই এবং তা যে জাতীয়তাবাদের অনেক উর্ধ্বে সেটা দুই ক্ষেত্রেই
তিনি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলেন। তা থেকে বাঙালী তথা আরও যাঁরা দেখেছেন
কতিপয় প্রগতিবাদী ছাড়া বাকিরা যে কিছু শেখেন নি তা বলাই বাহুল্য – কেন বলা বাহুল্য
তা সমকালীন ভারতকে দেখলে আরও বেশি বোঝা যাবে।
কিন্তু এর পরেও সত্যজিতের পন্থা নিয়ে আলোচনা যে
থামল না তার সঙ্গত কারণ হলো উপরের চারটি ছবি - যে ছবিগুলিতে সত্যজিত মধ্যবিত্তের চরিত্র
অংকনই নয় বলা যায় মধ্যবিত্ত প্রগতিবাদের অন্দরমহলকে প্রকাশ করে দিয়েছিলেন। আসলে ঐ
সময় মধ্যবিত্ত প্রগতিশীলতা তার “গভীর” রাজনৈতিক বোধ’কে আক্ষরিক অর্থে বহুমাত্রিক
পথে চালনা করছিল যেখানে মার্কসীয় এবং ফ্রয়েডীয় ‘ফর্ম’এর উদ্ভাস ঝলকে ঝলকে প্রকাশ
হচ্ছিল। এই ফর্ম বা গড়নই আসলে মানবচরিত্র যা মার্কস ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের নিরিখে
শ্রেণীগত প্রশ্নে গড়ে তুলেছিলেন আর ফ্রয়েড মনোগত গড়নের বিশেষত্ব ধরে প্রমাণ করতে
চেয়েছিলেন।
স্বভাবতই এই বহুমাত্রিক মধ্যবিত্ত প্রগতিশীলতার
মধ্যে পারস্পরিক বিরোধ ছিল। একে তবু দ্বন্দ্ব বলা গেল না কারণ দ্বন্দ্ব বিচারে
সত্যজিতের সঙ্গে বাকি প্রগতিশীলতার কোনো প্রতিযোগিতা ছিল না – তাঁরা একই চিরকালীন
পথে ছিলেন। কিন্তু এরা বিরোধী অবস্থানে ছিলেন কারণ মধ্যবিত্তের বস্তুবাদের মধ্যে
সমকালীন সামাজিক পথ যেমন এক ধরণের রাজনীতি ছিল তেমনি মনস্তাত্ত্বিক বস্তুবাদী পথও
আর একটি ফর্ম ছিল যা মধ্যবিত্ত প্রগতিশীলতাকে প্রবলভাবে সমৃদ্ধ করেছিল। আবার এই
দুই পথের পারস্পরিক বিরোধ প্রবলভাবে প্রকাশিত ছিল। সত্যজিত কোন পথে ছিলেন একথা
অন্বেষণ করাটাই ঐ যেটা বলছিলাম ‘তিনি আসলে কোন পন্থী’ সেই জাতীয় প্রশ্নের সামিল।
তবে একথা অনস্বীকার্য, সত্যজিত বারংবার তাঁর
সিনেমায় এই ‘বস্তুবাদী’ ফর্মের দুই মাত্রাকে একত্র নিয়ে চলতে চেয়েছিলেন। যদি নায়ক
(১৯৬৬) ছবিতে শংকর’দার জ্বলন্ত চিতা’র সামনে বসে অরিন্দম আর জ্যোতি’র কথোপকথন
খেয়াল করেন, এর উত্তর পাওয়া যেতে পারে –
“কিন্তু আশ্চর্য কী জানেন, শ্মশানে যখন মড়া পুড়ছে
তখন ফিল করলাম মনের ভিতর একটা চেঞ্জ আসছে -
-
পরজন্মে তোর বিশ্বাস আছে?
-
কার পরজন্ম!!!
-
মানুষের পরজন্ম - ধর তোর!
-
আমি যে আমি সেটা পরজন্মে বুঝছি কী করে? জ্যোতি বাঁড়ুজ্জে তো
আর জ্যোতি বাঁড়ুজ্জে হয়ে জন্মাচ্ছে না – আর জাতিস্মরও সবাই হয় না – ফলে বিশ্বাস
অবিশ্বাসের প্রশ্ন আসছে কী করে?
-
এক্সাক্টলি।
-
মার্কস আর ফ্রয়েডের যুগ ভাই – নো পরজন্ম, নো প্রভিডেন্স
-
হ্যাঁ জানি জানি একটাই লাইফটাইম একটাই চান্স।“
অর্থাৎ একদিকে সমকালীন বাস্তবতা যেখানে অভ্যাসমতো
মড়া পোড়াতে চিতার সামনে বসে থাকা, আর অন্যদিকে হঠাৎ বসে থাকতে থাকতে অচেতন থেকে
ভাবনার উদয় হওয়া, যে হঠাৎ ওঠা ভাবনা মনের ভিতরে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করতে শুরু
করে দিয়েছে। একদিকে সামাজিক বস্তুনিষ্ঠ কর্মময়তার আদর্শ অন্যদিকে একই ভাবে মনোজগতে
নতুন চিন্তার বস্তুনিষ্ঠা – এই দুইএর সহাবস্থান সত্যজিতকে অনন্যতা দিয়েছিল। এখন
প্রশ্ন হলো মনোজগতে এমন বৈপ্লবিক ভাবনার যেটা মুখ্য ভিত্তি তা হলো অভিপ্রায়ের
স্বাধীনতা বা স্বাধীন ভাবনার পরিসর। এই ভাবনাই আসলে মানুষের প্রবল অভিপ্রায় অর্থাৎ
কোনো কিছু করার, বলার, ভাবার প্রবল ইচ্ছা – এবং সেটা অনিবার্যভাবে স্বাধীন। আর
বলাই বাহুল্য সেটা সাধারণ জীবনে বিরোধ ডেকে আনবেই। যথেষ্ট বিরোধ ভুল বোঝাবুঝি এনেও
ছিল। এমনকি যুবসমাজ বিপথে যাচ্ছে এমন বিরোধিতাও এসেছিল। প্রশ্ন হলো এই বিরোধ ঠিক
না ভুল – ভালো না মন্দ – যে উত্তর তিনি ‘সীমাবদ্ধ’ ছবিতে প্রবলভাবে তুলে দিলেন।
দেখালেন যে এমন একটা বাইনারি বিরোধী অবস্থানে গোটা বিষয়টা আদৌ সীমাবদ্ধ নয়।
অরণ্যের দিনরাত্রি ছবিতে যুব জীবনের যে প্রগলভতা স্বাভাবিক স্বাধীন আকর্ষণনির্ভর
যৌনতার মধ্যে দিয়ে এক অতি পরিচিত দ্বন্দ্ব তিনি প্রকাশ করলেন তা তৎকালীন উত্তাল
সমাজে ঢেউ’এর বৈচিত্র তুলেছিল এতে সন্দেহ নেই। একটা সমভাষ জীবনে অনিবার্য অবভাষ’কে
বা বলা ভালো অবভাষিক সত্য’কে উদ্ঘাটন করলেন যা শুধুই শ্রেণীগত নয় বরং শহর জীবন আর
অরণ্য জীবনের অবস্থানগত পার্থক্যের একটা উচ্চবর্গীয় ডমিনেশন’কে প্রতিষ্ঠা করে। প্রগতিবাদের
রাজনৈতিক উচ্চভাষের নেপথ্যে গোটা সমাজে আর একটা অবভাষিক চরিত্র রয়েছে তার প্রকাশ
হওয়াটা বৈপ্লবিক। এই প্রেক্ষাপটে প্রবলভাবে মার্কস, ফ্রয়েড আর রবীন্দ্রনাথ
উচ্চভাষে সহাবস্থান করছেন সেটা সত্যজিত এককথায় উদ্ঘাটন করে দিলেন। এখানেও প্রশ্নটা ভালো বা
খারাপের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং একটা সামাজিক দ্বন্দ্বের প্রকাশ যা শহর – গ্রাম, বা
উচ্চবর্গীয় – নিম্নবর্গীয় দ্বন্দ্বের প্রকাশ। সেই প্রকাশের যে গভীরতর অবভাষিক রূপ
তা তিনি প্রকাশ করেছেন।
সীমাবদ্ধ ছবিতেও বস্তুনিষ্ঠ মনের এক প্রগলভ
প্রকাশ এক সীমাবদ্ধ জীবনের উপর প্রবলভাবে আছড়ে পড়ার এক আখ্যান রচনা করলেন সত্যজিত।
এখানে ফর্মগত প্রশ্নে দুটি খেলা আছে। এক, সামাজিক এবং আত্মন এই বস্তুনিষ্ঠ দুই
ফর্ম’কেই একদিকে রেখে (টুটুল’এর মধ্যে) এদের বিপরীতে এক তৃতীয় সীমাবদ্ধ ফর্ম’কে
(শ্যামলেন্দু আর তার স্ত্রী অর্থাৎ টুটুলের দিদি) তুলে আনলেন। দুই, অন্যদিকে বস্তুনিষ্ঠ
আত্মন (সেলফ) সেখানে ঐতিহাসিকভাবে সমকালীন জীবনকে বারবার বিদ্ধ করছে, এই বলে যে, ঘটনাটা ভালো না
খারাপ কারণ সীমাবদ্ধ জীবনে (বলা ভালো মনোজগতে) ঘটনাক্রম পরপর আসে তাকে বৃহত্তর
কোনো ফর্মে দেখার ক্ষমতা সীমাবদ্ধদের থাকে না, যেমন বাবা-মা কেন সঙ্গে থাকেন না এ
প্রসঙ্গে অফিসের নিয়মের দোহাই এসে যায়। তবু মূল যিনি সীমাবদ্ধ, তাঁর একটা সাহিত্যপঠনের অতীত ছিল
তাই এই বিরোধ। যাইহোক স্বাভাবিক
জীবনে এই বাইনারিটি না থাকলেও তার যে সীমাবদ্ধ চরিত্র তা বাইনারি’তেই চলে অর্থাৎ
একটা ঘটনা আরেকটাকে নস্যাৎ করতে করতে চলে। বলা ভালো তুলনা করে ঘটনাগুলিকে
উপর-নীচে, ভালো-মন্দে, লাভ-ক্ষতিতে বিচার করতে করতে চলে। এদের কাছে প্রভিডেন্স‘এর
নামে জীবনে ভোগটাই মুখ্য।
তাই যখন গোটা কলকাতায় প্রাতিষ্ঠানিক অত্যাচারের রাজনৈতিক প্রতিবাদ হচ্ছে সেখানে
সেই প্রতিবাদেরই এক জীবন্ত প্রতিনিধির সামনে সীমাবদ্ধ বলছে ‘নতুন ফ্ল্যাট’টা
আটতলায়, এখান থেকে বোমের আওয়াজ তেমন শোনা যায় না’।
প্রতিদ্বন্দ্বী ছবিতেও স্বাধীন ভাবনা বা
অভিপ্রায়ের সাথে প্রবল সংঘর্ষ দেখানো হলো শুধু প্রতিষ্ঠানের নয়, শুধু
প্রাতিষ্ঠানিকতারও নয় তারও উপরে এক সামাজিক ঐতিহাসিক বাস্তবতার সীমাবদ্ধতার সঙ্গে,
যেখানে শিরদাঁড়া থেকে স্বাধীন ভাবনার বা অভিপ্রায়ের প্রকাশ দেখালেন যে অভিপ্রায়
একে একে (ক) উজ্জ্বল জ্ঞান চেয়েছে, (খ) দারিদ্রের কারণে তা অপূর্ণ থাকার ফলে
আর্থিক সুস্থিতি চেয়েছে, (গ) প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতাকে না মেনে শুধু মানিয়ে নিতে
চেয়েছে, (ঘ) এক বস্তুনিষ্ঠ ফর্ম (আত্মনের স্বাধীনতা) দিয়ে আরেক বস্তুনিষ্ঠ ফর্মের
(জনগণের জমায়েত) বিরোধিতা করেছে, (ঙ) শেষ পর্যন্ত আত্মনের স্বাধীনতা দিয়ে টোটাল
সামাজিক ডিসটোপিয়া’কে টেবিল উলটে দিয়েছে (চ) শেষে বেছে নিয়েছে সেই ধ্যাদ্ধেড়ে
জীবনটাকেই কারণ প্রতিষ্ঠানের বাস্তবতা তার সহ্য হয় নি শেষ পর্যন্ত।
যদি কেউ এ লেখা আদৌ পড়েন তাহলে একবার ভাবে দেখবেন
আজ আমরা কোন বস্তুনিষ্ঠতার সন্ধান করে চলেছি – আজ আমরা প্রাতিষ্ঠানিকতার মধ্যে
বস্তুনিষ্ঠতার অনিবার্যতাকে খুঁজে বেড়াচ্ছি যেখানে সমাজসেবাকেই প্রধানজীব্য করতে
হচ্ছে অথচ তথাকথিত সমাজসেবার মহতী কর্মের পরেও সামাজিক অভিপ্রায় এবং ব্যক্তি
অভিপ্রায়ের বস্তুনিষ্ঠতা পড়ে আছে যেখানে বিরোধ এখনো বাকি, দ্বন্দ্ব চিরকালীন,
প্রাতিষ্ঠানিকতার বিপরীতে, সীমাবদ্ধতার বিপরীতে, বাইনারি বিরোধের বিপরীতে দাঁড়ানোর
পরিসর খোলা পড়ে রয়েছে।
ফলে সত্যজিত কোন পন্থী এ নিয়ে আমেরিকান বাজারজাত
অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড পাবার পর থেকে সব আলোচনা স্তব্ধ করেও যেমন সুবিধা নেই তেমনি
তার আগের সামাজিক বস্তুনিষ্ঠতার বিচার দিয়েও কোনো উপসংহার নিরূপণ করার প্রয়োজন
নেই। কারণ যেটা সত্যজিত সজ্ঞানে করেছেন তা হলো একই বস্তুনিষ্ট ফর্ম’এর দুই মুখ
মার্কস এবং ফ্রয়েড’কে সমতুলে আলোচনা করেছেন তাঁর ছবিতে। এই দুই ফর্মের পরস্পরের
বিরোধিতা দেখিয়েছেন, আবার সাধারণ জনজীবনের দুর্দশার প্রতিকার হিসেবে কখনো এদের
সাফল্য দেখিয়েছেন আবার কখনো ব্যর্থতাও দেখিয়েছেন। তাই তিনি নিজের মতো করে
রাজনৈতিকভাবে সম্পূর্ণ একটা রাস্তায় হাঁটতে পেরেছেন। আক্ষেপ বা হতাশা থেকে প্রবল
বিক্ষোভমুখী বৈপ্লবিক হতে হয় নি, অথবা প্রথম থেকেই কমিটেড হয়ে থাকতে হয় নি। ফলে প্রশ্নটা সমর্থনে নয় বা
সঠিক কিনা সেটা বিচারেরও নয় যে তিনি কোন পন্থী বা বাকিরাও কোন পন্থী। সৃজনশীলতার প্রশ্নে এঁরা
প্রত্যেকেই প্রবলভাবে মনোজগত এবং সমাজগত বস্তুনিষ্ঠতার পূজারী ছিলেন। এঁদের প্রকাশ
ফল’এ নয়, অভিপ্রায়ে। কোনো বিশেষ উপস্থিতি, প্রকাশ, বা সমর্থনে সত্যজিত’কে বাঁধা যায় না। অভিপ্রায়ের প্রকাশই তাঁর পরিচয়, আর সেটা কখনোই সহজলভ্য
নয়। তাঁর কাজের মধ্যেই নানা
সংকেত প্রতীকের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে যা তাঁর রাজনৈতিক তথা দর্শনগত অবস্থানের ঝলক প্রকাশ
করে।
সমাপ্ত
[এই লেখার মূল ভাব বা ভিত্তি রয়েছে
লেখকের “মানবসত্ত্বার
অভিপ্রায়ঃ দ্বন্দ্বের নানা মুখ; একুশ শতক, ২০১৮” বইতে। বাকি সূত্র ইউটিউব থেকে
প্রাপ্ত।]
0 comments:
Post a Comment