সম্পাদকের কলমে

নারায়ণ দেবনাথ- সত্যি বলতে কি একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হল। একটা বিশাল বড় অধ্যায়, যেখানে বাবা/ মা, ছেলে/ মেয়ে বা দাদু/দিদা, পিসি, ঠাম্মা সব এক হয়ে গেছিল । চলে গেলেন শরীরের দিক থেকে কিন্তু সারাজীবন রয়ে গেলেন মনে, চোখে আর স্বপ্নে। কার্টুন তাও আবার নিখাদ বাংলা ভাষায়, বাংলা চরিত্র নিয়ে, কিন্তু সেই চরিত্র আবার খুব সাহসী। উনি সাহস দেখিয়েছিলেন বলেই বাংলার ঘরে ঘরে বাঁটুল, হাঁদা-ভোঁদা পৌঁছে গেছে। নারায়ণ দেবনাথ -এর প্রতি #গল্পগুচ্ছ এর পক্ষ থেকে সশ্রদ্ধ প্রণাম । ভাল থাকবেন, যেখনেই থাকবেন। আমরা কিন্তু আপনার দেশেই রয়ে গেলাম । নমস্কার সহ অঙ্কুর রায় সংখ্যার সম্পাদক অভিজিৎ চক্রবর্ত্তী প্রধান সম্পাদক

লেখা পাঠানোর জন্য

আপনার লেখা পাঠান আমাদেরকে
golpoguccha2018@gmail.com

Total Pageviews

By Boca Nakstrya and Gologuccha . Powered by Blogger.

 আত্মজ

আশা সাহু

      অনেক হয়েছে। যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নিয়ে ফেলেছি, আর নয়। এতো অপমান কি সহ্য করা যায়! গত পরশু ডিনারের পর যখন আমি ছাদে পায়চারি করছিলাম তখন সাপের মুখে পড়ে ব্যাঙটা কতয় না চিৎকার করছিল বাঁচার জন্য। পাশের আগাছা আবর্জনা ভরা পতিত জায়গাটা থেকে করুন চিৎকার ভেসে আসছিল আমার কানে। আমি কিছুই করতে পারি নি। অসহায়ের মতো কিছুক্ষণ পর নিচে নেমে যেতে হয়েছিল। ঠিক সেই সময়ই হয়তো ঐ অসহায় মেয়েটির উপর অকথ্য নির্যাতন চালিয়ে শেষ পর্যন্ত খুন করা হয়।
আর এই নির্মম কাজটি করেছে কিনা আমারই আত্মজ! উঃ আর ভাবতে পারছি না। আজ ডিউটি শেষ করে বেরোনোর সময় পাশের রুমে আমার উর্ধতন অফিসারের গলায় আমাকে শুনতে হলো, " কাল সকালে গ্রেফতার করবো সাত্যকি রায় কে। এখন কাউকে কিছু বলার দরকার নেই।" - লজ্জায়, অপমানে স্যারের মুখোমুখি হতে পারলাম না। একবার জিজ্ঞেস পর্যন্ত করতে পারলাম না, আপনারা কি কিছু প্রমাণ পেয়েছেন যে সাত্যকিই এই জঘন্য অপরাধের জন্য দায়ী? আমার মাথাটা যেন আপনা হতেই মাটিতে সেঁধিয়ে গেল।
     শান্তিরক্ষকের চাকরি করায় আইনের অমর্যাদা করতে করতে পারলাম না। চোরের মতো থানা থেকে বেরিয়ে সোজা বাড়ি। বাড়ি ফিরে তাজ্জব বনে গেলাম ডোডোর(সাত্যকি) চেহারার মধ্যে কোনো আপসোস, অনুশোচনার লেশমাত্র নেই। হেসে হেসে কি যেন জিজ্ঞেসও করছিল! ঘৃণায় আমি ওর দিকে তাকাতে পারলাম না। বাথরুমে ঢুকে অনেক জল ঢেলে স্নান করলাম। মনে মনে ভাবলাম, বাপ জল ঢাললে কি ব্যাটার পাপ ধুয়ে যাবে? ওকে ফেরার 
হওয়ার পরামর্শও দিতে পারলাম না।
       আবার ভাবলাম, ওর মা মারা যাওয়ার পর আমি হয়তো ঠিক করে ছেলেকে মানুষ করে তুলতে পারি নি। মা-হারা সন্তান ভেবে একটু বেশিই প্রশ্রয় দিয়ে ফেলেছি। ওর মা অকালে চলে না গেলে ছেলেটা হয়তো এতোটা নষ্ট হয়ে যেত না। নিজের মনে কত কি স্মৃতিচারণ করতে করতে বাথরুম থেকে বেরোলাম। ছেলে বলল, "বাবা, তোমার জন্য অমলেট আর ফ্লাস্কে চা রাখলাম, আমি ছাদে যাচ্ছি।" এমনিতে ছেলে আমার খেয়াল রাখে। রান্নার মাসি দু-বেলা রান্না করে দিয়ে গেলেও টুকটাক এটা ওটা বানানো, বাড়িরও কিছু কিছু কাজকর্ম ছেলেই করে। সাথে সাথে পড়াশোনা তো করেই। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনাতে ওতো খারাপ ছিল না। হঠাৎ যে এতো খারাপ চরিত্রের মানুষ হয়ে উঠবে তা আমার ধারণার বাইরে ছিল। কোনও কথা জিজ্ঞেস করতে পারলাম না। ঘৃণায় চা, অমলেটের দিকে তাকালাম না পর্যন্ত। অন্যদিন রান্নাঘরে ঢুকে দেখি রান্নার মাসি ডিনারে কি বানিয়ে রেখে গেছে। আজ ইচ্ছে হলো না। সোজা নিজের রুমে গিয়ে সজোরে দরজাটা বন্ধ করে দিলাম। আর তো মাত্র কয়েক ঘন্টা, তারপর যা হবে হোক আমি তো আর দেখতে আসবো না! চরম সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছি।
            পরশু রাতে খাবার পরও তো ডোডো ক্লাবে গিয়েছিল, সেদিন একটু বেশিই ঘামতে ঘামতে বাড়ি ফেরায় আমি জিজ্ঞেসও করেছিলাম, "এতো ঘামছিস যে!" - ও বলেছিল, "বাবা, আজ ব্যাডমিন্টন খেলেছিলাম"। তখন তো ঘূণাক্ষরেও বুঝি নি, ছেলে আমার কী সর্বনাশা খেলায় নেমেছে!
            আমাকে এই লজ্জা, অপমানের হাত থেকে পালাতেই হবে। এরপর ওর ফাঁসি হোক আর যাবজ্জীবন হোক আমাকে দেখতে হচ্ছে না।
              সোয়া ন'টা বাজতে ছেলে দরজার কাছে এসে বলল," বাবা! চা-টা কিছুই খাওনি? এসো বাবা, মাসি আজ চিকেন বানিয়েছে।" খুব রুক্ষ মেজাজে বললাম, "তুমি খেয়ে নাও, আমি পরে খাব, ক্লাবে যাবে তো?" - রাগের সময় কিছুতেই ছেলেকে "তুই" সম্বোধন করতে পারি না। - "হ্যাঁ বাবা, আজ ক্যারাম আছে।"
           কিছুক্ষণ পর খাওয়া - দাওয়া করে ডোডো বেরিয়ে গেল। এই সুযোগ! সার্ভিস রিভলভারটা বের করে রাখলাম। ডাইরিটা নিয়ে কলম খুলে বসলাম। আমার মৃত্যুর পর অন্তত আমাকে নিয়ে যাতে ঝামেলায় না পড়তে হয় তার ব্যবস্থাটা করা আমারই দায়িত্ব। হাত কাঁপছে, চোখের জলে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে, তবুও মনকে বোঝাচ্ছি - শক্তভাবে চরম সিদ্ধান্তটা নিতেই হবে।
           কলমের ঢাকনা লাগিয়ে ফেললাম, ডাইরির পাতা ছিঁড়ে বিছানায় রাখলাম। রিভলভার প্রস্তুত! এমন সময় হুড়মুড় করে ডোডো ঘরে ঢুকল হাঁপাতে হাঁপাতে। বালিশের তলায় রিভলভারটা লুকোতে লুকোতে ভাবলাম - সর্বনাশ যা হওয়ার হয়ে গেছে, পাড়ার মাঝখান দিয়ে পুলিশ নিশ্চয়ই আমাদের দরজায়!
    ডোডো বলল, "বাবা বাবা, আমার যে বন্ধুটা," সাত্যকি রায় " নামে! পরশুর ঘটনার জন্য ওকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে।" 
           আমার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গেল, কোনো রকমে রুম থেকে বেরিয়ে ডোডোকে জড়িয়ে ধরে আপ্রাণ চেষ্টা করলাম ওর উষ্ণতায় নিজেকে উষ্ণ করতে।।

0 comments: